বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯

স্বাধীনতা ও নৌবিদ্রোহ ~ ডঃ সমুদ্র সেনগুপ্ত

২৩শে ফেব্রুয়ারি, সকাল ৬টায় বিদ্রোহী নৌসেনারা তুললেন শান্তির সাদা পতাকা, আত্মসমর্পণ এর পতাকা। তাদের চোখে জল, বুকে আগুন। সেই পতাকা তোলার সাথে শেষ হয়ে গেল ইন্ডিয়ান রোয়াল নেভি এর সেই বীরত্বপূর্ণ অভ্যুত্থানের ইতিহাস। 

বোম্বে থেকে করাচি, বাহারিন থেকে সিঙ্গাপুর, ২০,০০০ নৌসেনা, ৭৮ খানা জাহাজ এর যে বিদ্রোহ কাঁপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত, তাদের সাথে জাতি কি করেছিল ? সেই ভারতের সর্ববৃহৎ তিনটি রাজনৈতিক দল কংগ্রেস, মুসলিম লীগ  ও কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে প্রথম দুটি দল তাদের পাশে দাঁড়ায় নি। দাঁড়িয়েছিল কেবল কম্যুনিস্ট পার্টি। 

৩০০ এর বেশি শহীদদের স্মৃতিতে কেবল বেদী বানিয়ে জাতি কৃতজ্ঞতা সেরেছে। ওই বিদ্রোহী নৌসেনাদের ঠাঁই হয়নি স্বাধীন ভারত বা পাকিস্তানের বাহিনীতে। সেই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক যে লর্ড মাউন্টব্যাটেন। 

সারা রাত তর্কবিতর্ক এর পরে প্রস্তুত হয়েছিল সেই বিদ্রোহী সেনাদের আত্মসমর্পণ এর দলিল। আজ স্বাধীনতা দিবসের দিনে আত্মবিস্মৃত জাতি আরেকবার স্মরণ করুক সেই দলিলের শেষ ক'টি লাইন:-

আমাদের ধর্মঘট ছিল জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এই প্রথমবার একই কারণে সেমবাহিনীর রক্তের সাথে সাধারণ মানুষের রক্ত বয়ে গেল। আমরা ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি, করেছি আমাদের নিজেদের জনগণের কাছে"

১৯৪৬ এর ফেব্রুয়ারির ১৮ থেকে ২২ এই ভারত কাঁপানো পাঁচদিনের একটু কথা হোক আজ স্বাধীনতা দিবসে। বোম্বের রাজপথে লরিভর্তি বিদ্রোহীরা আজাদীর স্লোগান দিতে দিতে শহর পরিক্রমা করছে, তাদের একহাতে লেনিন এর ছবি, আর অন্যহাতে নেতাজির। বিদ্রোহী জাহাজ গুলোর মাস্তুল থেকে পতপত করে ওড়া তেরঙ্গা পতাকা, মুসলিম লীগের পতাকার পাশাপাশি সগৌরবে উড়ছে লাল পতাকা।

দেশের স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন