শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯

মা দুগ্গার বর ~ মনিপর্ণা সেনগুপ্ত মজুমদার

কাল রাত দু'টো নাগাদ বারান্দায় ফুল দেখতে গেছি, হঠাৎ দেখি একেবারে সামনে সাক্ষাৎ জগৎ জননী মা দুগ্গা দাঁড়িয়ে! হেব্বি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলাম কারণ, দেখি দিব্যি দু'খানা মাত্র হাত। বাকি আটটা হাত কোন অজুহাতে কোথায় রেখে এসেছেন জিগানোর আগেই একেবারে খ্যাক খ্যাক করে উঠলেন, 

-- এত রাত অবধি জেগে থাকিস। বাদুড়ের মত ঘুরঘুর করিস সারা বাড়িময়, লজ্জা করে না? নির্ঘাৎ সিঁধেল চোর ছিলি আগের জন্মে... চিত্রগুপ্ত-কে শুধোলেই জানা যাবে... 😡

-- অপরাধ নিও না, মা। এই বেগমবাহার গাছে কুঁড়ি এসেছে, তা, দেখতে এসেছিলাম যে ফোটা'র কাজ কদ্দূর এগোলো। সব শা... ইয়ে মানে শান্তি নেই, জানো তো 😟 গাছগুলো পর্যন্ত তাড়া না লাগালে ঠিকঠাক কাজ করে না...(রাতদুপুরে উনি রোঁদে বেরিয়েছেন কেন, জিজ্ঞেস করা'র ইচ্ছে থাকলেও সাহস পেলাম না)

-- (কিঞ্চিৎ নরম হয়ে) গাছ-ফাছ লাগিয়েছিস ভাল কথা। ঠিকমত দেখভাল করবি। যা অবস্থা করে রেখেছিস দেশটা'র! 

বাই দ্য ওয়ে, ভাবছিস আমি কেন এত রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তাই তো?  শোন রে অর্বাচীন, আমি মাঝেমাঝেই হারুন-অল-রশিদ-এর মত নিজের রাজ্যপাট ঘুরে ঘুরে দেখি। সামনেই তো তোদের মোচ্ছব আসছে আমায় নিয়ে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঘোড়াড্ডিমের প্যান্ডেল করবি কিন্তু ভুলেও ক'টা পুকুর কাটবিনা বা গাছ লাগাবিনা। ওই সব ইয়ের (খুব সন্দেহ হল বাল বলতে গেছিলেন :( ) প্যান্ডেল আমি দেখতেও যাইনা, বুঝলি? 

-- বুঝেছি, মা। ইয়ের প্যান্ডেল দেখতে আমিও যাইনা বেশ কয়েক বছর হল। তেঢ্যাঙা একটা কিম্ভূত টাইপ করে তোমাকে বানিয়েছিল একবার...ক্কি বলবো মা, সেলফিতে সেলফিতে ফেসবুক ভরে গেছিল গো... সেবার পর্যন্ত আমি যাইনি! এইসব প্যান্ডেল যারা বানায়, তাদের মাথায় চাম-উকুন দাও, মা... লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি, অর্বুদ নির্বুদ চাম-উকুন.... চুলকিয়ে মরুক বোকাইয়ের দল! 😠😠

-- এমনি উকুন দিলে কাজ হবেনা বলছিস? (একটু চিন্তিত দেখায় মা-কে) 

-- আহা! হবেনা কেন, কিন্তু টেকো যারা? তারা তো মজাসে পার পেয়ে যাবে, না?  চাম-উকুন বেস্ট। চাই কী মাথা-পেট-গুহ্যদ্বার .... সব জায়গায় দাও...😊

-- হুঁ। ঠিক বলেছিস। তোর ওপর আমি বেশ খুশি হয়েছি। বর নিবি? 

-- (আঁতকে উঠে)  নান্নান্নান্নান্না!!😢😢😢😢 তুমি এসো গিয়ে!!!!

-- আরে, দূর পাগলী, এ বর সে বর নয়। ইচ্ছেপূরণ বলছি... 

-- (কিঞ্চিৎ ধাতস্থ হয়ে) ওঃ! 

তাহলে, মা, (আহ্লাদী আদুরে স্বরে) আমার কত্তদিনের শখ একটা আসলি মসলিন-এর উপর, ওই যেগুলো নাকি আংটি দিয়ে গ'লে যেত, বুঝলে তো, ওই মসলিন, ১৮ ক্যারাট সোনার জরি দিয়ে ইন্ট্রিকেটলি এমব্রয়ডারি করা শাড়ি, সব্যসাচী এক্সক্লুসিভলি আমার-ই জন্য বানাবে...😍😍 প্লিজ, মা, প্লিজ...

-- (ভেংচি কেটে) আমারই জন্য বানাবে! ইঃ! শখ দ্যাখো! ন্যাতা জাম্বুবানি এসেছেন আমার!!  ঠিকঠাক কিছু চাওয়ার থাকলে, বল। 

-- (গোঁ গোঁ করে) এক কাজ করো তাহলে। বর দাও যে, সারাদিনে একটিমাত্র ঘন্টা রোজ আমার নিজের জন্য বরাদ্দ হবে। ওই এক ঘন্টা কেউ যেন আমায় ডিস্টার্ব করতে না পারে। নো অফিশিয়াল ফোন কল, নো মা আমার জিন্স কোথায়, নো বৌদি আজ কী রান্না হবে, নো মা'র ব্লাড সুগার রিপোর্ট আনতে হবে, নো এই যে বাজারটা রাখো, নো একি বাথরুমের কল কে ঠিকমতন বন্ধ করেনি, নো....

আবেগের বশে বেগ এসে গেছিল, বলেই যাচ্ছিলাম। এন্ডলেস লিস্ট। কিন্তু এই অবধি শুনেই কী হল কে জানে 😢 মা হঠাৎ ফুঁপিয়ে উঠে "তুই একটা পাষণ্ড, নরাধম... যা আমার নিজের নেই, তা তোকে আমি কী করে দেব রে...উফ! মনে করিয়ে দিল সব...!!!" বলতে বলতে সাঁত করে মিলিয়ে গেলেন। 

ভগ্ন হৃদয়ে বসে রইলাম 😟😟

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন