শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯

মাস্টারদা ~ চন্দন দাস

নেত্র সেনের 'খুনী' কে?
সাভারকারের নামে বিমানবন্দর কেন?

আজ মাস্টারদার জন্মদিন। কিন্তু আজ আগে একজনের মৃত্যুর কথা বলবো ---নেত্র সেনের মৃত্যুর কথা। 
নেত্র সেন খেতে বসেছিল। তখন রাত। তবে বেশী নয়। তার স্ত্রী খাবার বাড়ছিলেন। এমন সময়ে ঘরে এক কিশোর ঢোকে। কোন কিছু বোঝার  আগেই কিশোরটি দায়ের এক কোপে নেত্র সেনের মুন্ডুটা ঘাড় থেকে নামিয়ে দেন। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি!
নেত্র সেন ধরিয়ে দিয়েছিল মাস্টারদাকে। তাই নেত্র সেনের 'শাস্তি'। কিন্তু দুটি প্রশ্নের সমাধান আজো হয়নি। নেত্র সেনকে শাস্তি দেওয়া সেই অগ্নিকিশোর কে ছিলেন? নাম জানা যায়নি। যিনি জানতেন সম্ভবত সেই নেত্র সেনের স্ত্রীকে দিয়ে কিছু বলাতে পারেনি ব্রিটিশ! 
নেত্র সেন সেই মহিলার স্বামী ছিলেন। কিন্তু সূর্য সেন? স্বপ্নের মানুষ, ভালোবাসা, মুক্তির স্বপ্নের নায়ক। এক কিশোরের পরিচয় গোপন করে মহিয়সী হয়ে ওঠা সেই মহিলার নাম? ইতিহাস মনে রাখেনি। 
এখন সেই সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের নামে শহরতলির একটা সাধারন মেট্রো স্টেশন। সাভারকারের নামে সমুদ্রের ধারে বিমানবন্দর! 
তুমি কে হে? কী তোমার ভূমিকা দেশের জন্য লড়াইয়ে? স্বাধীনতা সংগ্রামে কী করেছো তুমি? স্বাধীনতা সংগ্রাম মানে তুমি তো বাবর, হুমায়ুন, আকবরের বিরুদ্ধে লড়াই বুঝেছো, বুঝিয়েছো চিরকাল। ফাঁকতালে ব্রিটিশের সঙ্গে বোঝাপড়া। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিন দখলদারি, দাদাগিরি, তেলের ভাণ্ডারের লোভে দেদার, দু' কান কাটা বোমাবাজি — তুমি তো দেখতেই পাও না। 
সব গডসের ভাইবোন। সবসময় সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেবে। 
কী করেছিল তোমাদের নেতা 'বীর সাভারকার', আন্দামানের জেলে? ১৯১৩-র চিঠিটি মনে আছে? ব্রিটিশ সরকারকে কী লিখছেন 'বীর' সাভারকার? ''...অন্যভাবে যা পাওয়া যেতে পারে সে তুলনায় আমাকে জেলে আটকে রাখলে কিছুই পাওয়া যাবে না। শক্তিশালীর পক্ষেই একমাত্র ক্ষমাশীল হওয়া সম্ভব। কাজেই অনুতপ্ত সন্তান পিতৃতুল্য সরকারের দরজায় ছাড়া আর কোথায় ফিরে যাবে? মহামান্য হুজুর অনুগ্রহ করে বিষয়গুলি বিবেচনা করবেন এই আশা রইল।''
স্বাধীনতা সংগ্রামীর অনুতাপ। তাও আবার ব্রিটিশের কাছে। তাঁর অনুগতদের কাছে এখন কিনা দেশপ্রেমের সংজ্ঞা শিখতে হচ্ছে?
আর একজন? মাস্টারদা। লন্ডনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন মানুষটি, সঙ্গীদের নিয়ে। গ্রেপ্তার হয়েছেন। মুচলেকা দেননি। জাত-পাত-বোষ্টম-মুসলমান কিচ্ছুটি কোনদিন বিচার করেননি। জেলবন্দী সূর্য সেন সম্পর্কে লিখছেন তাঁর সহকর্মী, পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট নেত্রী হয়ে ওঠা কল্পনা দত্ত —''জেলে গিয়েও দেখি মাস্টারদা চুপ করে নেই। তিনি জানতেন, তাঁর ফাঁসি সুনিশ্চিত, তাই তিনি সমস্ত কাজ বুঝিয়ে দিতেন তারকেশ্বর দস্তিদারকে কাঠগড়ায় বসে। তাঁর ধারণা ছিল — তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি হবে না। শুধু কাঠগড়ায় বসে নয়। জেলের ভেতরেও। ...মাস্টারদা একদিন আমাকে বললেন— জেল থেকে বেরিয়ে এসে শহীদদের জীবনী প্রকাশ করবার চেষ্টা করি যেন আমরা। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েও তাদের কথা তিনি ভুলতে পারেননি।''
এই লোকটি আমার ধমনীতে। আমাদের ঐতিহ্য। দেশপ্রেম ও মুক্তির স্বপ্ন আমাদের সম্পদ। তোমরা সাভারকারের ধ্বজাধারী, 'স্বাধীনতার' বানিয়া। তোমাদের কী যোগ্যতা আছে দেশপ্রেমের ব্যাকরণ শেখানোর?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন