'তারপর একদম অন্তিমলগ্নে এসে ওরা মরিয়া হয়ে উঠলো। আর মরিয়া হলেই মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে। টিক্কা খানের তত্ত্বাবধানে শুরু হলো 'অপারেশন সার্চলাইট'। বেছে বেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকারদের তালিকা বানানো হলো। সিদ্ধান্ত হলো, একসাথ এদের সবাইকে নিকেশ করতে হবে। বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মকে যেন বুদ্ধির চর্চা করানো, প্রশ্ন করা শেখানো, ভাবানোর জন্যে কেউ না থাকে। যারা ভাবতে পারে না, প্রশ্ন করতে পারে না, তারা বাধ্য, অনুগত প্রজা হয়ে থাকবে।'
'তারপর কি হলো?'
'তারপর ওরা রাতের বেলায় অন্ধকারে এলো। সরকারি উর্দি পড়া এক দল আর উর্দি ছাড়া তাদের চ্যালাচামুন্ডারা। ঘরে ঘরে ঢুকে তালিকা মিলিয়ে শুরু করলো ধরপাকড়। চোখে কাপড় বেধে, পিছমোড় করে হাত বেধে, একে একে নিয়ে যাওয়া হলো রায়েরবাজার, মিরপুর, রাখালপাড়া, মহম্মদপুরের টর্চার ক্যাম্পে।'
'কাদের নিয়ে গেলো?'
'দেশদ্রোহীদের। তখন তো দেশ মানে পাকিস্তান। তাই যারা পাকিস্তান বিরোধী তারাই তো দেশদ্রোহী। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রফেসর হুমায়ুন কবীর, জ্যোর্তিময় গুহঠাকুরতা, গোবিন্দচন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, রশিদুল হাসান, সিরাজুল হক খান। ছিলেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্রকার জাহির রায়হান। ছিলেন সংগীতশিল্পী আলতাফ মেহমুদ। ছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, আইনজীবি এবং ছত্তিসগড়ে দীর্ঘদিন মানবাধিকার আন্দোলনের নেত্রী সুধা ভরদ্বাজ।'
'ছত্তিসগড়? দাঁড়াও দাঁড়াও, আমরা তো অপারেশন সার্চলাইট..'
'ছিলেন দলিত আন্দোলনের কর্মী প্রফেসর আনন্দ তেলতুমড়ে। ছিলেন কবি ভারভারা রাও। আরও ছিলেন সাংবাদিক গৌতম নভলাখা। যিনি গত একবছর ধরে অনুসন্ধান করে একের পর এক লেখায় রাফায়েল স্ক্যামের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন।'
'রাফায়েল স্ক্যাম? দাদু, তুমি কিসব বলছো?'
'এখানে শেষ না। তারপরে ছিলেন উত্তরবাংলার চা বাগানের চা শ্রমিক সমন পাঠক। ছিলেন উত্তর ৩৪ পরগনার শ্রমিক নেতা আহমেদ আলি খান..'
'আরে দাঁড়াও তো। বাংলাদেশ থেকে কোথায় চলে এলে! তোমার বয়সের সাথে সাথে মাথাটা গেছে! সব গুলিয়ে ফেলছো।'
'গুলিয়ে ফেলছি? না না। গোলাচ্ছি না। কিচ্ছু গোলাচ্ছি না।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন