বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

মৌলবাদের আগ্রাসন ~ স্বাতী রায়

হঠাৎ করে একটি মেসেজ মোবাইলে ভাইরাল হচ্ছে, যেটার মূল বক্তব্য – রামমন্দির গড়তে ভোট চাই। খুব ভালো কথা, কোথায়? না বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপ হাটিয়ে। এখানে রাম মন্দির ছিলো, হিন্দুদের রক্তে তৈরি ইত্যাদি নানান রকম যুক্তি। মুসলিম রা হিন্দু মন্দির ভেঙেছে অতয়েব মুসলিম দের মসজিদ ভেঙে মন্দির হোক। যে এই কথাগুলি বলছে সে একটি বছর কুড়ির বাচ্চা মেয়ে। তার কথা অনুযায়ী
১. মুসলিমরা অতিশয় খারাপ। চোর, ডাকাত, রেপিস্ট ইত্যাদি।
২. এরা ধর্মান্ধ, কথায় কথায় হিন্দু মারে। ভারতে খুব শান্তিতে আছে, ভারত থেকে এদের তাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
৩. ভারত আদতে হিন্দুস্থান, তাই এটি হিন্দুদের বাসভূমি হওয়া উচিত।
৪. মুসলিম রা খুব খারাপ, মেয়েদের বোরখায় ঢেকে রাখে, স্বাধীনতা দেয় না।
৫. ভারতের রিজার্ভেশন সিস্টেম খুব খারাপ, তুলে দেওয়া উচিত।
৬. বিভিন্ন সময়ে মুসলিম রা অনেক হিন্দু মহিলা কে রেপ করেছে, তাই হিন্দুস্থানে মুসলিম থাকা উচিত নয়।
৭. কোরানে লেখা আছে অন্য ধর্মের মানুষ কে হত্যা করার কথা।
৮. সমস্ত মসজিদে অস্ত্র মজুদ থাকে।
৯. মসজিদে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
১০. একজন মুসলিম দিদির কাছে সে পড়ে, সে বেশ শিক্ষিত এবং "হিন্দুদের মতই"।
১১. পরিবারের উচ্চশিক্ষিত ( ডিগ্রিধারী) দাদা ও দিদিরা তাকে এই সব বোঝাচ্ছে।
ওহো মূল বক্তব্য – ১২. বাবরি মসজিদের জায়গায় হিন্দু মন্দির ছিল, বিষ্ণু মূর্তি পাওয়া গেছে। হিন্দুদের রক্ত দিয়ে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছে। মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানো হয়েছে। তাই মসজিদ ভেঙে ঠিকই করা হয়েছে, ওখানে মন্দির হওয়া উচিত।

এত কিছু শোনা/ পড়ার পর আমার যে আশঙ্কা হল বা দুশ্চিন্তা – আইসিস রাও ঠিক এই ভাবেই ব্রেইন ওয়াশ করে জঙ্গি বানায়। প্রথমত হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয় এটাই সত্তর শতাংশ মানুষ জানেননা।, দাবী করেন যে এটি প্রাচীনতম ধর্ম। আশা করি তারা আসীরীয়, সুমেরীয় ব্যাবিলনীয় সভ্যতার কথা শোনেননি। এমনকি সিন্ধুসভ্যতাও যে প্রাগার্য তাও স্বীকার করেননা। তাঁদের ধারণা পুষ্পক রথ আদতে বিমান ছিল, গোমূত্র পানে ক্যান্সার নিরাময় হয়। অদ্ভুতভাবে এই সমস্ত কথা গুলি ধর্মান্ধ এবং অশিক্ষিত অশীতিপর বৃদ্ধথেকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজ পর্যন্ত বিশ্বাস করছে, প্রশ্ন করছে না। আসলে গোয়েবলস থিয়োরি অনুযায়ী বারংবার একটি মিথ্যা বলে গেলে ও প্রচার করে গেলে সেটাই সত্যতে পর্যবসিত হয়। রাজনীতিতে এই প্রোপাগান্ডা খুব সফল। এবং অনিবার্যভাবে ধর্ম সব থেকে বড় রাজনীতি হওয়ায় এখানে "বিগ লাই" থিওরি খুবই সফল। এই থিওরি দ্বারাই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আগামী পঞ্চাশ বছরে বিবর্তনবাদে হোমোসেপিয়েন্স কে বস ট্যরাস বানিয়ে দেবে।

এবার পূর্বোক্ত পয়েন্ট অনুযায়ী আমার উত্তরে আসি।
১. আঠেরো বছর বয়েস থেকে বাড়ি ছাড়া হওয়ার পর থেকে আমি "ভালো" মুসলিমদের সংস্পর্শেই বেশি এসেছি। চোর ছ্যাঁচোড় রেপিস্ট মুসলিম দের কথা এখনো অবধি নিউজপেপারেই পড়েছি। সেখানে লাইন দিয়ে প্রচুর হিন্দুদের নাম ও থাকে। নির্ভয়ার ধর্ষণকারী ছয়জন অপরাধীর পাঁচ জনই হিন্দু ছিলো।

২. ধর্মান্ধতায় হিন্ধুরাও কিছু কম যায় না, ডিটেলস লিখতে গেলে একটি উপন্যাস হয়ে যাবে। কিন্তু যে সমস্ত মুসলিম ভারতে জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, জনগনমন শুনলে আমার মতই আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন, মুসলিম দাঙ্গাবাজ দেখলে লজ্জায় মুখ লুকোন ( সংখ্যা গরিষ্ঠ) তাঁরা কি দোষ করেছেন? একটা বড় দোষ অবশ্য এই যে তাঁরা সংঘবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদও করেন না।
যে সমস্ত হিন্দুকে দেশভাগের সময় পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ছেড়ে আসতে হয়েছে তাঁরা কি এখনো লাহোর বা ঢাকা শুনলে স্মৃতিচারণ করেন না? "দ্যাশ" এর কথায় চোখে ঘোর লাগে না? সাদাত হাসান মান্টো শেষ জীবন অবধি তাঁর "দেস" ছেড়ে মুহাজির হওয়ার কষ্ট বয়ে বেরিয়েছেন।

৩. সিন্ধু – সিন্ধ – ইন্দাস থেকে হিন্দু – একথা কি আর পাঠক্রমে পড়ানো হয়না? না হলে কেন হয়না?

৪. পর্দাপ্রথা হিন্দুদের মধ্যেও প্রবল। আধ হাত ঘোমটা আর বোরখা-হিজাব একই জিনিস। যে সমাজে নারী পুরুষের ও পরিবারের সম্পত্তি সেখানে পর্দাপ্রথার মত বর্বরোচিত প্রথা সানন্দে পালিত হবে এ আর নতুন কি? এখনো নতুন বউয়ের শ্বশুর -ভাশুরের সামনে ঘোমটা দেওয়া সৌজন্যমূলক। এর পর নারীর অবমাননা – আবার উপন্যাস হওয়ার সম্ভাবনা রাখে, এক দুটোই যথেষ্ট। বেদে বলছে – " ভুক্ত্বোচ্ছিষ্টং বধ্বৈ দদাৎ" অর্থাৎ কি না খেয়ে এঁটোটা স্ত্রী কে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া পুত্র‍্যার্থে ক্রিয়তে ভার্যা। সুকুমারী দেবীর কথায় বেদে এরকম অসংখ্য মণিমুক্তা আছে। সর্বগুণান্বিতা নারীও সবচেয়ে নির্গুণ পুরুষের অধম।
ব্যাপার টা অনেকটা আমার নম্বর খারাপ হয়েছে এ কথায় বকা খাওয়ার পর বাচ্চাদের বলার মত যে "অমুক তো আরোও কম পেয়েছে"। অন্যের সমালোচনা ভালো, কিন্তু তারও আগে আত্মসমালোচনা প্রয়োজন, আত্মশুদ্ধির জন্যই।
এখানে বলার কথা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মগুরু নিজমতে ও ধ্যান ধারনা অনুযায়ী কোরান অনুবাদ করে গেছেন। এখানে আমার যা বলার তা রাহুল সাংকৃত্যায়ন ইসলাম ধর্মের রূপরেখায় বলে গেছেন, আমি হুবহু তুলে দিলাম।
" প্রবাদ আছে যে শয়তানও তার মতলব হাসিল করার জন্য শাস্ত্রের দোহাই পাড়ে, ঠিক সেই ভাবেই মুসলমান পুরুষের এটা ঘোরতর অন্যায় যে কোরানশরিফে বর্ণিত পর্দায় সন্তুষ্ট না হয়ে তারা মেয়েদের পুরু পর্দার আড়ালে বন্ধ করে রেখেছে। কোরানশরিফ তো শৃঙ্গার, আদি রসভাবের যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য কয়েকটি বিশেষ নারী অঙ্গকে ঢাকার কথা বলেছেন। কিন্তু সেই সুযোগে পুরুষেরা, মেয়েদের সমস্ত শরীরে বোরখা চাপিয়েও সন্তুষ্ট হয় না। তাদের অন্তঃপুরে বন্ধ করে রাখা টা কেই উচিত মনে করে।" এই পর্দাপ্রথা হিন্দুসমাজে শুধুমাত্র মুসলিমদের দান নয়, ভিক্টোরিয়ান আদব কায়দারও দায় আছে। নগ্ন টেবিলের পায়াকে মোজা পরিয়ে শ্লীলতা বজায় রাখার মত।

৫. কতজন প্রকৃত শিডিউলড কাস্ট/ ট্রাইব এর সুবিধা পান? রিজার্ভেশন হওয়া উচিত ছিল আর্থিক সঙ্গতির ভিত্তিতে। দেখা গেছে ভারতবর্ষে দারিদ্রের প্রভাব মূলঃত এই অনগ্রসর জনজাতির মধ্যেই। আম্বেদকর সাহেব যা প্রস্তাব করে গেছিলেন, সেটা সেই সময়ের নিরিখে। পরবর্তী কালে মন্ডল কমিশনে ১৯৭৯ এ ফলপ্রসু হয়। আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য যে সময় বদলের সাথে আইন বদলায় না। ভোটব্যাঙ্ক বড় বালাই।

৬. দাঙ্গা বা যুদ্ধের সময় প্রথম কোপ নেমে আসে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধদের উপর কারণ এরা শারীরিক ভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। যে কোনো বড় যুদ্ধ বা দাঙ্গার সময়ে একটা জনজাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে অন্যতম হাতিয়ার ধর্ষণ। সে জার্মানদের ইহুদি মহিলা ধর্ষণ হোক, বা আমেরিকার জাপানী মহিলা। দেশভাগের সময়ে কাতারে কাতারে হিন্দু ও মুসলিম মহিলা অন্য ধর্মের মানুষের হাতে ধর্ষিত, নিহত হয়েছেন। এমনকি একাত্তরের বাংলাদেশে প্রচুর বাঙালি মুসলিম মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন খান সেনা অর্থাৎ স্বধর্মের মানুষের হাতে। যুদ্ধ স্বধর্ম -বিধর্ম রেয়াত করেনা, এটা যুদ্ধনীতি।

৭. আসলে কোরানে আছে – ইসলামে সম্পূর্ণ রূপে প্রবিষ্ট হও (২:২৫:১২), যারা ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে স্বীকার করেছে, কদাপি তারা স্বীকৃতি পাবেনা এবং কেয়ামতের দিন তারা লোকসানের সম্মুখীন হবে। ( ৩:৮৫)
অন্য ধর্মের মানুষ কে হত্যা করার কথা কোরানে নেই, তা পুনরায় কোনো ধর্মান্ধ কূপমণ্ডূক ধর্মগুরুর নিজ মস্তিষ্কজাত শয়তানি। কোরান যা বলছে – " পূণ্য হল ঈশ্বর, অন্তিম দিন, ফেরেস্তাগণ, পবিত্র গ্রন্থ এবং প্রাচীন নবীগণের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা। ধনসম্পদ কে প্রেমিক, আত্মীয় সম্বন্ধী, অনাথ, দএইদ্র, পথিক, ভিক্ষুক এবং দাসত্বমোচনের জন্য ব্যয় করা। উপবাস (রোজা) রাখা, দান করা, প্রতিজ্ঞা করলে তা পালন করা, বিপত্তিতে, ক্ষতিতে এবং যুদ্ধে সহিষ্ণু থাকা। যারা এরকম করে, তারা সত্যপরায়ণ ও সংযমী।" (২: ২২:১)
বর্তমানে বিভিন্ন বাংলাদেশি সাইটে কোরানের যা ব্যাখ্যা দেখা যায় তাতে অন্য ধর্মের মানুষের মুসলিমদের ঘৃণা করাই অত্যন্ত স্বাভাবিক।

৮. এই তথ্যটি কোথায় প্রকাশিত জানা নেই, কিন্তু দাঙ্গার সময় বা নিদেন পক্ষে পাড়ার মারপিটেও সব ক্লাব থেকেই হকি স্টিক, ব্যাট বা সাইকেলের চেন জাদুবলে বেরিয়ে পড়ে। তার মানে সমস্ত ক্লাবগুলি ও সেখানকার সদস্যরা সন্ত্রাসবাদী!
এবার যদি মসজিদে সংরক্ষিত মহরমের তাজিয়া এবং শোভাযাত্রার অস্ত্রও কেউ দাঙ্গা উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত অস্ত্র ভেবে মসজিদকে সন্ত্রাসবাদের আঁতুর ঘর বলেন তাহলে সবার আগে তাঁদের দেবী দুর্গা বা কালীর হাত থেকে খাঁড়া ত্রিশুল, তরবারি ইত্যাদি কেড়ে নিয়ে নানাবিধ ফুলের তোড়া ধরিয়ে দেওয়া উচিত।

৯. ব্যক্তিগত ভাবে আমি দিল্লীর জামা মসজিদ, ফতেহপুর সিক্রীর সেলিম চিস্তির দরগা সংলগ্ন মসজিদ, মুম্বাইয়ের হাজি আলআলি দরগার, তাজমহল সংলগ্ন মসজিদ, এবং কলকাতার নাখোদা মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদে প্রবেশ করেছি। মহিলাদের মাথায় ওড়না দিয়ে ভালো করে ঢেকে ঢুকতে বলা হয় এবং পুরুষ হলে ফেজ টুপি বা রুমাল দিয়ে মাথা ঢেকে নেওয়া আবশ্যক। কোথাও বলা হয়নি মহিলা তাই ঢুকতে পারবে না। যেখানে বলা হয় তাঁরা আর কেরলের সবরিমালা মন্দিরের অছি'দের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই যেখানে রজঃস্বলা হওয়ার "অপরাধে" দশ থেকে শুরু করে পঞ্চাশ অবধি মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

১০. চারপাশে যত হিন্দু চোখে পড়ে তাঁদের সত্তর শতাংশই ধর্মভীরু দেখি। হিন্দুরা উন্নত বা উদার কোনদিক দিয়ে তা আমার চোখে পড়ে না। যেটুকু পড়ে তা অধিকাংশই মুখোশ।

১১. সেই শিক্ষার মানে কি যা মানুষ কে বিভ্রান্ত করে? প্রায় শত বছর আগে লিখে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধে যে সমাজের চিত্র ধরা পড়েছে বর্তমানেও সেই একই চিত্র। বরং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ পরিচালিত সরস্বতী শিশুমন্দিরের বাড়বাড়ন্ত ও পাঠক্রমে দেবদেবীর বন্দনা, স্কুলে ধর্মীয় উৎসব পালন বেড়েই চলেছে।

১২. হঠাৎ করে এই রামমন্দিরের জিগির। ভারতীয় ইতিহাসের কালো দিন ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২, পঞ্চদশ শতাব্দীর বিখ্যাত স্থাপত্য বাবরি মসজিদ ধ্বংস। তালিবানদের বামীয়ান বুদ্ধ ধ্বংসের মতই এ লজ্জা লুকোবার জন্য সঙ্ঘীদেরও স্ব-স্ব গুহ্যদ্বার একমাত্র স্থান। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮০ অব্ধি বারংবার প্রত্ন উৎখননেও কোনো রামমন্দিরের চিহ্ন তো পাওয়া যায়ই নি বরং ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক এ কে নারায়ন ও বি বি লাল বলেন ১১শ শতক থেজে ১৫শ শতক পর্যন্তকালের বহু মুসলিম গৃহস্থালির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর থেকে প্রমাণ হয় ওই অঞ্চলে এর আগে কোনো মন্দির ছিলনা বরং মুসলিম বসবাস ছিল।
এবার আসি রক্ত দিয়ে তৈরি মসজিদ প্রসঙ্গে – যে কোনো স্থাপত্য মজদুরের পরিশ্রম দাবী করে। বার বার এই পরিশ্রম ঘাম রক্ত ইত্যাদি দিয়ে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এরকম ধরনের স্থাপত্য তৈরির সময়ে ডিউ পন্টের সেফটি মেজারমেন্ট না থাকায় দুর্ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হত। তা বাবরি মসজিদ হোক বা তাজমহল বা কোনার্কের সূর্যমন্দির। কত শত প্রাণ বলি গেছে এই স্থাপত্যগুলি নির্মাণ করতে তা ঐতিহাসিকরা বলতে পারবেন। হালফিলের কলকাতায় সাউথ সিটি বিল্ডিং তৈরি করতে গিয়ে বেশ কিছু মজদুর অসাবধানতা বশত মারা গেছে। তাহলে গরীব মজদুরের রক্তে তৈরি সাউথ সিটি ইমারত ভেঙে ফেলা হোক!

ছোটশিশুর প্রতি বাবা মা আত্মীয় সবাই একটু বেশিই খেয়াল রাখেন, প্রকারান্তরে রক্ষণশীল হয়ে থাকেন। সপ্তম শতকের শুরুর দিকের একটি ধর্মের প্রতি যে সেই ধর্মের দালালরা অতিরিক্ত রক্ষণশীল হবেন এ আর নতুন কথা কি? প্রকৃত শিক্ষার প্রসার পাছে তাদের যুক্তিবাদি করে তোলে সেই ভয়ে "হারাম, গুনাহ'র" শিকল পরিয়ে বোরখা আবৃত করে রাখা সহজ। যেমন দীর্ঘদিন ধরে ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা বাকিদের পাপের ভয় দেখিয়ে করে এসেছেন। সময়ের নিরিখে বলা যায় ধর্মভীরু মুসলিম এখনো ৭০০ বছর পিছিয়ে আছে, এবং আমাদের বর্তমান রাজনীতিবিদেরা তারই ফায়দা তুলে একদা উদার হিন্দুদেরও অচ্ছেদিনের লোভ দেখিয়ে সেই আঁধারেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে ধর্মের বিরুদ্ধে খুব কম লোক প্রশ্ন তোলার সাহস রাখেন, প্রশ্ন তুললে পরিনাম হয় চাপাতি নয় বন্দুকের গুলি। অভিজিত ওয়াশিকুর কালবুর্গীরা প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন আসলে ধর্ম যুক্তির সামনে ভয়ে সদা কম্পমান।

হোয়াটস অ্যাপ বা ফেসবুকের যুগে টেকনোলোজির সাহায্যে নিপুণ ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ধর্মের খোলসে সর্বনাশা বিষ। বিস্ময়কর হলো এই যে কারো রক্ত লাগবে এ কথা অতিকষ্টে প্রচার করতে হয়। অনায়াসে ছড়িয়ে যায় রামমন্দির-বাবরিমসজিদ সংক্রান্ত দ্বেষ।

সমাধান একটাই। শিক্ষা মানে শুধুই ডিগ্রী নয়, যে শিক্ষা যুক্তিবাদী করে তোলে, অন্ধের মত অনুসরণ করতে শেখায় না সেই শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করে তুলুন, মনের প্রসার বাড়ান, প্রমাণ চান- স্বর্গ বা জন্নত কে দেখেছে?

কৃতজ্ঞতা স্বীকার – রাহুল সাংকৃত্যায়ন ( ইসলাম ধর্মের রূপরেখা); সুকুমারী ভট্টাচার্য ( উত্তরাধিকার)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন