সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭

শ্রেণীসংগ্রাম ~ আর্কাদি গাইদার

আইরিশ স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং তার পরবর্তী সময়ের আইরিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে তৈরি কেন লোচের সিনেমা - 'দ্য উইন্ড দ্যট শেকস দ্য বার্লি'। দুই ভাইয়ের গল্প। আইরিশ গৃহযুদ্ধের দুই যুযুধান পক্ষ - ন্যাশনালিস্ট আর সোশ্যালিস্ট। দুই ভাই, যারা স্বাধীনতার জন্যে পাশাপাশি লড়েছে, তারা এই দুই পক্ষে ভাগ হয়ে গেলো। সিনেমার শেষে, যে ভাই সোশ্যালিস্ট, সে ন্যাশনালিস্টদের হাতে বন্দী। ফায়ারিং স্কোয়াডের অপেক্ষায়। কারাকক্ষে দেখা করে অন্য ভাই বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে, আমরা একসাথে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছি, তোমাদের আমরা মারতে চাইনা, তোমরা অস্ত্র কোথায় লুকিয়েছো জানিয়ে দাও, তাহলে আমি তোমায় বাঁচাতে পারবো। স্মিত হেসে উত্তর আসে - It is important to know what you are fighting against. But it is more important to know what you are fighting for.

বাংলা জুড়ে কানহাইয়ার সভাগুলোকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত কমরেডদের মধ্যে উচ্ছাসের জোয়ার এসেছে - ফ্যাসিস্টদের প্রতিহত করতে পেরে, তাদের ওপর পালটা আঘাত হানতে পেরে, প্রতিটি জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরে - তাদের ফ্যাসিস্টদের প্রতি ঘৃণা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু ঘৃণা দিয়ে নিজেদের চেতনার উন্মেষ কতটা ঘটানো যায়, এই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রেক্ষিত ছাড়া ঘৃণা ক্ষতিকর। চর্চার মধ্যে দিয়ে ঘৃণাকে যদি শ্রেণীঘৃণায় পরিণত করা যায়, তাহলেই তার থেকে আগামী দিনের দীর্ঘমেয়াদী লড়াইর রসদ পাওয়ার সুযোগ থাকে। 

আর শ্রেণীঘৃণার পূর্বশর্তই হলো শ্রেণীপ্রেম। ফ্যাসিস্টদের 'বিরুদ্ধে' লড়ছি, শুধু এইটুকুই যথেষ্ট নয়, শ্রেণীর 'পক্ষে' লড়ছি, এই বোঝাপড়ার জায়গা থেকেই আগামীদিনের লড়াই। শ্রেণীপ্রেম ছাড়া শ্রেণীঘৃণার কোন মূল্য নেই। শ্রেণীশত্রুর প্রতি ঘৃণার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন শ্রেণীমিত্রর প্রতি ভালোবাসা। যে শ্রেণীর পক্ষে লড়ছি, সেই শ্রেণীর প্রতি প্রেম, তাদের সাথে একাত্মবোধ, এবং তাদের আগামীদিনের সমস্ত লড়াইতে যুক্ত হওয়া, যুক্ত করা, এটা করতে আমরা কতটা আগ্রহী? ফ্যাসিস্টদের মারতে আমরা যতটা আগ্রহী, গরীব মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমরা ততটা আগ্রহী কি? মানুষের বেসিক দাবিদাওয়াগুলো নিয়ে লড়াই সংগঠিত করতে ততটা আগ্রহী কি? দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী গড়ে তুলতে ততটা সক্রিয় কি?

এই প্রশ্নগুলোর মাঝেই নিচের খবরটা। 
বাঁকুড়া জেলার সিমলাপোলে তালডাঙ্গরা বিধানসভার ভ্যালাইডাহা গ্রাম। ২০১৬ র নির্বাচনের পর পরেই জমিদার জোতদারদের উত্তরসূরিরা জবরদখল করে নিয়েছিলো ১৩৯ জন পাট্টাদারদের জমি। আজকে সংগঠিত ভাবে লাল ঝান্ডার মিছিলে সেইসব জমি আবার পুনর্দখল করলেন পাট্টাদাররা। কোন সংগঠনের ফ্ল্যাগ, নাম করলাম না। সংগঠনের নামে কি এসে যায়? লাল ঝান্ডা তো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন