মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘ফ্লপ শো’ ~ সুশোভন পাত্র

​এবং, অবধারিত ও অনিবার্য কারণেই, অন্যান্য অনেকবারেই মতই আরও একবার, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে 'ফ্লপ শো' উপহার দিল, সি পি আই এম। ব্রিগেড সমাবেশ থেকে 'ক্যাডার'দের কোনরকম বার্তা দিতেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ সি পি আই এম'র 'পক্ককেশ' নেতারা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, চিট-ফান্ডে প্রতারিত মানুষদের টাকা ফেরৎ, দোষীদের শাস্তি, আয়করের আওতায় না পড়া প্রত্যেকের জন্য দু-টাকা কেজি দরে চাল, ফসলের দাম না পেয়ে কৃষকদের লাগাতার আত্মহত্যা, একশো দিনের কাজের নিয়মিতকরণ, বকেয়া মেটানো, অর্ধাহার-অনাহার-অপুষ্টি ও বিনা চিকিৎসায় চা বাগান শ্রমিকদের মৃত্যুমিছিল, এসএসসি-টেটে নিয়মিত ও স্বচ্ছ নিয়োগ, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-শালবনী-রঘুনাথপুর-নয়াচরে শিল্প, নারী সুরক্ষা --এসব আবার কোন বার্তা নাকি? 'পক্ককেশে'র আবার নেতা হয় নাকি? ঝিন-চ্যাকের যুগে কেউ আবার শহীদ স্মরণ করে নাকি? যত সব আহাম্মক!
বার্তা হবে, 'পাগলু' ড্যান্সের মত। বার্তা হবে, আগের রাতে যুবভারতী ভাড়া করে,খিচুড়ি মাংসের মত। বার্তা চুইয়ে পড়বে মদের বোতলের গা বেয়ে। বার্তা দুলে উঠবে ঝিঙ্কু-মামনিদের কোমরের তালে। শহীদ স্মরণ হবে কনটেম্পোরারি স্টাইলে, মহাগুরুর ডায়লগে, "শালা মারবো এখানে, লাশ পড়বে শশ্মানে..."। নেতা হবে নায়ক দেবের মত; মঞ্চে উঠে মাসেল ফুলিয়ে বলবে--"থোড়া সা করলো রোমান্স।" নেতা হবে মালদহের ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃনমূলের সভাপতির মত। যিনি তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারার অপরাধে সাইকেল আরোহীর উপর তৎক্ষণাৎ গুলি চালাতে পারবেন। সাংসদ হবে, মুনমুন সেনের মত, যিনি বাঁকুড়ার গরমে ভোটের প্রচারের জন্য নতুন 'সানস ক্রিম' খুঁজবেন। মঞ্চের ঘোষক হবেন কুনাল ঘোষের মত। যিনি আর্থিক নয়-ছয়ের কারণে জেলের ঘানি টানতে পারবেন। শুধু পরিবারতন্ত্রের জোরেই প্রধান বক্তা হবেন 'কচি' ভাইপো। তাহলেই আর চুল পাকবে না। 'পক্ককেশ'ও থাকবে না।
শিল্পমন্ত্রীর দিব্যচক্ষু'র অবসারভেশেন, পিছন থেকে ব্রিগেড মাঠ ছিল খালি। আমি তো বলি, সাইড থেকে আরও খালি। মঞ্চের কাছে তো একেবারেই খালি। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় যেসব 'বার্ড আই ভিউ'-টিউ আপনার দেখেছেন, সেগুলির প্রায় সবই আসলে 'আই অয়াশ'। নিজদের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের পিছনে লেভির এক পয়সা খরচা করতে না পারা, একটা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এইরূপ উদ্যোগ আসলে 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর' উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 'সাইন্টিফিক রিগিং' ও ফটোশপীয় নিপুণতার চরম নমুনা। দুর্ভাগ্য যে, এই 'নিবেদিতপ্রাণ' টাইপের কর্মীগুলো 'গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার' অভাবে প্লেনামের ব্যর্থতা নিয়ে গবেষণা না করে, 'কালীঘাট কেন্দ্রিকতার' অবসানে অযথা 'জান কবুল' করছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "চাইলে রাস্তায় ঘোরাফেরা করা মানুষদের নিয়ে দু-পাঁচ লাখের একটা সমাবেশ করাই যায়।" আসলে 'চাইলেই' সপ্তাহে একটা-দেড়টা ব্রিগেড করতে অভ্যস্ত দিলীপ বাবুর সংখ্যাতত্ত্বে অযথা উদার হয়ে 'লক্ষ'-এ পৌঁছে গেছেন। বাস্তবে ওটা মেরেকেটে দু-পাঁচ শ বেশী না। 'পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক' দলের কেন্দ্রীয় সমাবেশে, নরেন্দ্র মোদী কে ডেকে, আড়াআড়ি মঞ্চ বেঁধেও, ব্রিগেড ভরাতে না পেরে, ক্ষুরধার মস্তিষ্কের রাজনীতিবিদ রাহুল সিনহার মত বাংলার মানুষ কে 'দিদিভাই-মোদীভাই 'র 'লাড্ডু' খাওয়ানোর সাহসিকতা সি পি আই এমের নেতারা আর দেখাতে পারলেন কই বলুন?
যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের রাজনীতি সচেতন এবং কলকাতার রাস্তাঘাট সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা 'উন্মাদ' 'হার্মাদ', চেয়ার মোছা কবি এবং উভচর --সবাই জানেন এসপ্লেনেড, রানী রাশমনি রোডের চৌমাথা বা সিইএসসি চত্বরের ধারণ ক্ষমতা ব্রিগেডের থেকে কয়েকশ গুন বেশী। স্বাভাবিক কারণেই কেন্দ্রীয় সমাবেশ করে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ভরানোর থেকে এসপ্লেনেড, রানী রাশমনি রোডের চৌমাথা বা সিইএসসি চত্বর ভরানো আসলে অনেক কঠিন। আর এই কঠিন কাজটাই দীর্ঘদিন ধরে অবলীলায় করে আসছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ব্রিগেডে সমাবেশ করার মধ্যে কোন বীরত্বেই তো নেইই, বরং রাস্তাঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিল মিটিং করলেই, পুলিশে হেসেখেলে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পারে, যানজটের সমস্যা এড়ানো যায়, অফিস ফেরৎ মানুষদের সুবিধা হয়, অ্যাম্বুলেন্স কে ভিড়ে আটকে থাকতে হয় না, স্কুল ফেরৎ পড়ুয়াদের ভোগান্তিও হয় না। কারণ সেদিন কলকাতায় গাড়ি-ঘোড়া তো আর রাস্তায় চলে না, চলে, ব্রিগেড গ্রাউন্ডের নাক বরাবর।
তাই ডিগবাজি স্পেশালিষ্ট পঞ্চায়েত মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন যে "কাল ব্রিগেডের থেকে চিড়িয়াখানাতে ভিড় ছিল বেশী"। কারণ, উনি জানেন, ২১ শে জুলাই'র সমাবেশে, রাস্তা বয়ে এসে, বৃষ্টি মাথায় বসে, মঞ্চে, সরীসৃপ, গিরগিটি, পাগলু-ছাগলু, চোর, ডাকাত ও উন্মাদদের দেখার থেকে চিড়িয়াখানায় কিছু বড় জন্তু জানোয়ার দেখার অভ্যাস করা ভালো। অনেক ভালো..


সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

ব্রিগেড ~ আশুতোষ ভট্টাচার্যী

​গতকাল যারা ব্রিগেডে এসেছে দিনবদলের লক্ষ্যে
তৃণমূল ভাবে একি জ্বালাতন, একা রামে নেই রক্ষে
সাথে ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত ভাষণ দিচ্ছে সেলিমে
দিদি বললেন , মিথ্যুক এরা এসব দেখেছি ফিলিমে;
সাইকেল বিলি করেছি আমরা মঞ্চ, টঞ্চ খাটিয়ে
সিপিএম তার সিম্পাথি নেই! ক্যাডার এনেছে হাঁটিয়ে!
যারা এসেছেন, তাঁদের মেয়েরা বালা, চুড়ি কিছু পায়নি?
সত্যি বলুক, দুটাকা কিলোর বিপিএল চাল খায়নি?
ক্লাবে শুধু শুধু অনুদান দেওয়া, ঘুমোচ্ছে নাকি অন্ধ
ব্রিগেডে মিটিং জেনেশুনে সব, রাস্তা করেনি বন্ধ!
সব দেখেশুনে জনতার মন দিদি ভয়ানক রুষ্ট
কেউ বলে এতো গোষ্ঠীদন্ধ বিরোধী মদতপুষ্ট;
চুলকিয়ে দাড়ি পার্থ বলেন মিডিয়ার ষড়যন্ত্র
তিল থেকে তাল এদের বানানো, জনগণ বিভ্রান্ত।
পুলিশ বলেছে 'বলা তো বারণ',কত লোক ছিল গুনিনি
মিটিং এ সেদিন আধখানা মাঠ ভর্তি হয়েছে শুনিনি!
যেসব মানুষ এসেছে ব্রিগেডে, মিলিয়েছে পা মিছিলে
বলে কমরেড, ব্যারিকেড গড়, ভেবে দ্যাখ তুমি কি ছিলে;
কমিশন যদি আশ্বাস দেয়, ভোট হয় যদি অবাধে
আবার ফিরবে সিপিএম দ্যাখো পরিনত হব প্রবাদে।।


মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫

সার্কাসের মজা ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

মজাটা হচ্ছে,
সবাই বোঝে সার্কাস চলছে

তবু টিকিট কেটে
(পড়ুন, সংগঠনের চাঁদা দিয়ে)
সে সার্কাস দেখতেও ঢুকছে সবাই।

মজাটা ডবল হয়ে ফিরছে
যখন ক্লাউন দেখা দিচ্ছে রিং মাস্টারের বেশে…
চমকে উঠছে চাবুক

ক্ষুধার্ত বাঘের পাতে
ঢালা হচ্ছে
দু'টাকা কিলোর আফিম মেশানো চাল

কাকপ্রসন্ন ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

​কাক এক্কে কাক
আমার মাথায় টাক,
তোর তাতে কী, মুখ্যু ঢেঁকি? যেমন আছিস থাক!
কাক দু'গুনে তুলি,
মেলাচ্ছি wrong গুলি,
ধান্দা উঁচা আমার রহে, কাণ্ড হোক, বা মূলই!
তিন কাক্কে তিনু
লোভী আগেই ছিনু,
মওকা পেলাম, টেক্কা গোলাম, কেমনে ছাড়িনু!
চার কাক্কে চাঁই,
বাড়ছে টাকার খাঁই!
লাভের গুড়ে বালি, তবু জুটলো সিবিয়াই!
পাঁচ কাক্কে পাড়ি,
গোটাবো পাততাড়ি।
কপাল ঠুকে নেপাল যাবো, আর কামাবো দাড়ি।
ছয় কাক্কে ছক,
সব ব্যাটা বুড়বক,
জানিস, আমি স্যাণ্ডো করি? (আসলে নাটক!)
সাত কাক্কে থাম,
সুবা সে অব শাম
এখানে ফ্ল্যাট, ওখানে ফ্ল্যাট অনেক তো কিনলাম!
আট কাক্কে আঁটি
প্যাল্যান সবই মাটি!
বাজেয়াপ্ত হচ্ছে সবই, ভিটে মাটি চাঁটি!
নয় কাক্কে নো,
নইকো প্রসন্ন,
জেলখানায় কি ডাকাত থাকে! চোরেদের জন্য!
দশ কাক্কে দুশশশ
স্বপ্ন মহল ফুসসস!
পেপ্সি, না না, লপসি খেয়ে চালাচ্ছি দুরমুশ!!

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

অনুদান ~ আশুতোষ ভট্টাচার্যী

এটা কোন ক্লাব? যুবক সংঘ! গত ভোটে খুব খেটেছে
দেওয়াল লিখেছে,মিটিং করেছে, মিছিলে খানিক হেঁটেছে;
এদের তো চিনি, বলাকা স্পোর্টিং একশো তরুণ তুর্কি
যেটুকু সাধ্য তাতেই বিলোয় নাড়ু, বাতাসা কি মুড়কি;
ওই কোনে দ্যাখো ঝিকিমিকি ক্লাব, ওদের নিবাস কালনা
গতবার ভোটে লাঞ্চের মেনু পোলাও ডিমের ডালনা;
এবার বুঝেছি তোমরা এসেছ সুভাষ ক্লাবের তরফে
পার্টি অফিসে তোমাদের নাম লেখা আছে গোটা হরফে!
রানাঘাট থেকে এসেছেন যারা বাংলা কিশোরে বাহিনী
ষ্টেজে উঠে এস, বলনা একটু মহান রিগিং কাহিনী;
মঞ্চে আসুক ক্ষুদিরাম ক্লাব দেশের গর্ব তোমরা
তোমরা অ্যাসেট যেকোনো দলের পার্টির প্রানভোমরা;
নবারুণ ক্লাব অ্যাকটিভ খুব রক্তদানের ক্যাম্পে
জলসা হয়েছে সারারাত জুড়ে, নায়িকা হেঁটেছে র‍্যাম্পে;
হাসি হাসি মুখে দুর্জয় ক্লাব, ছেলেগুলো ভারী দস্যি
ছাপ্পা ভোট কি বুথ ক্যাপচার ওদের কাছে তো নস্যি;
ভুলেই গিয়েছি পতাকা সংঘ, বোমা, পিস্তল, পটকা
বিরোধী শূন্য কাটোয়া, কালনা যদি মনে লাগে খটকা;
ধুনুচি সংঘ পূজো, টুজো করে, বলুন কাদের স্বার্থে
বিরোধীরা বলে এসব হচ্ছে, জনগণেশের অর্থে;
এই নাও তুমি উন্নতি কর, শুধু এক লাখ তঙ্কা
নিন্দুকে বলে পিকনিক হবে, বৃথা করে কেন শঙ্কা?
এই নাও তুমি দুই লাখ টাকা, কেটেছে দুঃখে, অভাবে
পাড়াপড়শিরা কন্ট্রোলে থাক তোমার নম্র স্বভাবে;
বস চুপ করে মন দিয়ে শোন কেউ করবেনা ঝগড়া
ক্লাব শিল্পের জোয়ার আসুক দিনহাটা থেকে মগরা;
মন দিয়ে সব প্র্যাকটিস কর, তাস, ডাংগুলি, ক্যারামে
টিভি, ফ্যান দেব এসি দিতে পারি সিণ্ডিকেটের ব্যারামে;
পরে হবে ডিএ আসছে বছর, গরিবের মুখে অন্ন
ক্লাব কালচার দেশের গর্ব, পেয়েছে যৎসামান্য।। 

---- সব ক্লাব ও চরিত্র কাল্পনিক।

আমাদেরই বাংলা রে ~ অমিতাভ প্রামাণিক

কোন দেশেতে গরুর কথা
সকল গরুর চাইতে হাসির?
কোন দেশেতে চলতে গেলেই
দলতে হয় রে নোংরা মাসির?
ট্যাঁক ফাঁকা, তাও দেদার টাকা
ক্লাবের মাথায় ঢালে রে।
সে আমাদের বাংলাদেশ,
আমাদেরই বাংলা রে...

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

ধর্ম ~ ইমতিয়াজ প্যাভেল

ধর্ম তুমি কোথায় থাকো
চুল, ত্বক না গোঁফের তলে ?
সত্যি তুমি থাকছো কোথায়
টাক, টিকি না দুই বগলে ?
ধর্ম তোমার কোথায় নিবাস
বোরখায় না লাল সিঁদুরে ?
ধর্ম কাকে দিচ্ছো মদত
মৌলবি না জাত হিঁদুরে ?
ধর্ম তুমি থাকছ কোথায়
চুল দাড়ি না পৈতে গিঁটে ?
কোথায় তোমার আসল ঘাটি
মক্কায় না তারার পিঠে ?
ধর্ম তুমি কোথায় ঘোরো
বাবরিতে না রাম-দুয়ারে ?
ভাসছো নাকি শুনতে পেলাম
রাজনীতি আর ক্রোধ জোয়ারে।
ধর্ম তুমি তৃপ্ত কিসে,
কুরবানি না বলিদানে ?
কখন তুমি নাড়াও মাথা
আজান নাকি গীতার গানে ?
ধর্ম নাকি আড্ডা মারো
ব্লাডব্যাঙ্ক আর হোটেলগুলোয় ,
আড্ডা নাকি মারছ শুনি
কবরখানায় শ্মশান চুলোয় ;
ধর্ম তোমার ইচ্ছেটা কি
বিচ্ছেদ আর রক্তমাখা
স্রষ্টার সব সৃষ্টিকে কি
ধন্দ দিয়ে সরিয়ে রাখা ?

আবোলতাবোল ~ আশিস দাস

বেজায় গরম। গাছতলায় দিব্যি ছায়ার মধ্যে শুয়ে আছি, তবু বোঁটকা গন্ধে অস্থির। ঘাসের উপর নোংরা পুরনো গেরুয়া চাড্ডিটা পড়ে ছিল; ফেলে দেবার জন্য সেটা যেই তুলতে গেছি অমনি চাড্ডিটা বলল, 'হাম্বা'! কি আপদ! চাড্ডিটা খামোকা হাম্বা করে কেন?
চেয়ে দেখি চাড্ডি তো আর চাড্ডি নেই, দিব্যি মোটা সোটা সাদা ধপধপে একটা গরু শিং উঁচিয়ে আমার দিকে প্যাট প্যাট করে তাকিয়ে আছে আর মোবাইল থেকে স্ন্যাপডিল আন-ইনস্টল করছে।
আমি বললাম, 'কি মুশকিল! ছিল চাড্ডি, হয়ে গেল একটা গরু।'
অমনি গরুটা বলে উঠল, 'গরু নই গরু নই, আমি গোমাতা। তাছাড়া মুশকিল আবার কি? ছিল আমির খান আর শাহরুখ খান, হয়ে গেল ঘোর শয়তান দেশদ্রোহী; ছিল দাঙ্গার মুখ, হয়ে গেল প্রধানমন্ত্রী। এতো হামেশাই হচ্ছে।'
আমি খানিক ভেবে বললাম, 'তাহলে এখন তোমায় কি বলে ডাকব? তুমি তো সত্যিকারের গরু, থুড়ি গোমাতা নও, আসলে তুমি হচ্ছ চাড্ডি।'
গরু বলল, 'গোমাতা বলতে পার, চাড্ডিও বলতে পার, অনুপম খেরও বলতে পার'। আমি বললাম, 'অনুপম খের কেন?'
শুনে গরুটা বলল, 'তাও জানোনা?' বলে এক চোখ বুজে ফ্যাচ ফ্যাচ করে বিশ্রী রকম হাসতে লাগল। আমি ভারী অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। মনে হল ওই অনুপম খেরের কথাটা নিশ্চয় আমার বোঝা উচিত ছিল। তাই থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি বলে ফেললাম, 'ও হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি'।
গরুটা খুশি হয়ে বলল, 'হ্যাঁ, এতো বোঝাই যাচ্ছে- চাড্ডীর দ, খের-এর তালব্য শ, অনুপমের প, আর গোমাতার ম- হল দেশপ্রেমী। কেমন, হল তো?'
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, কিন্তু পাছে গরুটা আবার সেই রকম বিশ্রী করে হেসে ওঠে, তাই সঙ্গে সঙ্গে হুঁ হুঁ করে গেলাম। তারপর গরুটা খানিকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল, 'এই দেশে বোঁটকা গন্ধ লাগে তো পাকিস্তান গেলেই পার'। আমি বললাম, 'বলা ভারী সহজ, কিন্তু বললেই তো আর যাওয়া যায়না?'
গরু বলল, 'কেন? সে আর মুশকিল কি?'
আমি বললাম, 'কি করে যেতে হয় তুমি জানো?'
গরু একগাল হেসে বলল, 'তা আর জানিনে, গুজরাত, ইনটলারেন্স, বিফ ব্যান, দাদরি- ব্যাস। সিধে রাস্তা, সওয়া একঘন্টার পথ, গেলেই হল'।
আমি বললাম, 'তাহলে রাস্তাটা আমায় বাতলে দিতে পার?'
শুনে গরুটা হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, 'উহুঁ, সে আমার কর্ম নয়। আমার মোদীকাকা যদি থাকত, ঠিক ঠিক বাতলে দিতে পারত'।
আমি বললাম, 'মোদীকাকা কে? তিনি থাকেন কোথায়?'
গরু বলল, ' মোদীকাকা আবার কোথায় থাকবে? প্লেনেই থাকে; তবে মাঝে মাঝে হিমালয়ের চূড়ায় বসে ধ্যান-ও করে '।
আমি বললাম, 'কোথায় তার সাথে দেখা হয়?'
গরু খুব জোরে জোরে শিং নেড়ে বলল, 'সেটি হচ্ছে না, সে হবার জো নেই'।
আমি বললাম, 'কি রকম?'
গরু বলল, 'সে কিরকম জানো? মনে কর তুমি যখন যাবে দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, তখন তিনি থাকবেন ম্যাডিসন স্ক্যোয়ার। যদি ম্যাডিসন স্ক্যোয়ার যাও তাহলে শুনবে তিনি আছেন মারিয়ানা খাতের তলায়। আবার সেখানে গেলে দেখবে তিনি গেলেন আদানির প্রাইভেট জেটে। কিছুতেই দেখা হবার জো নেই'।
আমি বললাম, 'তাহলে তোমরা কি করে দেখা কর?'
গরু বলল, 'সে অনেক হাঙ্গামা। আগে হিসেব করে দেখতে হবে ক্যামেরা কোথায় নেই; তারপর হিসেব করে দেখতে হবে আডবানি আর অমিত শাহ এখন কোথায় থাকতে পারে; তারপর দেখতে হবে আদানি আর আম্বানি এখন কোথায় আছে।তারপর দেখতে হবে সেই হিসেব মত যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছবে তখন মোদীকাকা কোথায় থাকবে। তারপর দেখতে হবে-'
আমি তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে বললাম, 'সে কিরকম হিসেব?'
গরু বলল, 'সে ভারী শক্ত। দেখবে কিরকম?' এই বলে সে একটা ত্রিশূল দিয়ে ঘাসের উপর একটা লম্বা আঁচড় কেটে বলল, 'এই মনে কর মোদীকাকা'। বলেই খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে চুপ করে বসে রইল।
তারপর আবার ঠিক তেমনি একখানা আঁচড় কেটে বলল, 'এই মনে কর তুমি', বলে ঘাড় বেঁকিয়ে চুপ করে বসে রইল।
তারপর হঠাৎ আবার একটা আঁচড় কেটে বলল, 'এই মনে কর পহেলাজ নিহালনি'। এমনি করে খানিকক্ষণ কি ভাবে আর একটা করে লম্বা আঁচড় কাটে, আর বলে, 'এই মনে কর বিহার বিধানসভা' – 'এই মনে কর যশোদাবেন পাসপোর্ট অফিস যাচ্ছে' – 'এই মনে কর জেমস বন্ড চুমু খাচ্ছে, ও না না ওটা তো সেন্সরড-'
এইরকম শুনতে শুনতে শেষটায় আমার কেমন রাগ ধরে গেল। আমি বললাম, 'দুর ছাই কিসব আবোল তাবোল বকছে, একটুও ভালো লাগেনা'।
অমনি গরুটা শিং বাগিয়ে জোরে একটা ঢুঁ মেরে বলল, 'তুই বেটা নিশ্চয় পাকিস্তানি! দেশদ্রোহী কোথাকার, যা দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যা'।

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

মহাভারতের মর্মস্থল - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

মহাভারত? সেরেচে! চাটুজ্জ্যের পো তো আর কালী সিঙ্গী নয় যে বাংলায় মহাভারত লিখে সাড়া ফেলে দেবে। অথবা নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়িও নয় যে মহাভারতের অজানা সব গপ্প টপ্প শোনাবে। তার ওপর আমার বিদ্যেবুদ্ধির দৌড়ে, মহাভারত যদি লিখেও ফেলি, সেটা সাকুল্লে দেড় পাতাতেই শেষ হবে। তবুও মহাভারত ধরে কেন টানাটানি করছি তার কারনটা খুলে কই। ছোটোবেলায় স্কুলে পড়তে আমার বাবা একখানা অক্সফোর্ডের ম্যাপবই কিনে দিয়েছিলো বইমেলা থেকেআমার ভূগোলের বিদ্যে মন্দ নয়অন্ততঃ আমার নিজের হিসেবে আফ্রিকায় নেকড়ে বা চায়নার হায়নার মত আমার ভুগোল জ্ঞান, মন্দার বোসের সঙ্গে খানিকটা তুলনা করা যেতে পারে। তা সেই ম্যাপবই নিয়ে আমি খুব জমে গেলুম। আমাদের ছোটবেলায় অমন রঙচঙে বই খুব একটা বেশি ছিলোনা। প্রায়ই উলটে পালটে দেখতাম। এই করে করে মানচিত্র দেখাটা কেমন একটা নেশার মত দাঁড়িয়ে গেল। যা কিছুই পড়িনা কেন, ম্যাপবইতে সেই জায়গা খুঁজে বের করা চাই। তখন আমি বোধহয় ক্লাস সিক্স, নিজের চোখে বেশ ডেঁপো গোছের মিচকেঅন্যের চোখে হাবুলচাঁদ অবস্থাভেদে উল্টোটা। বই পত্র হাতের গোড়ায় যা পাই তাই পড়ি। খুব সম্ভবত শুকতারা পত্রিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কিত একটা লেখায় পেলাম ১৯৪১ সালে সোভিয়েত-জার্মান যুদ্ধের একেবারে শুরুতে ব্রেস্ত দুর্গের লড়াইয়ের কথা। সে লড়াই নিয়ে একখানা আস্ত লেখার ইচ্ছে রইলো, তাই এখানে ভ্যানতাড়া না করে সংক্ষেপে সারি। ম্যাপে দেখলাম ব্রেস্ত শহর সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেকটা ভেতরে। তাহলে লেখায় সীমান্ত শহর বলা হলো কেন? সমাধান পেলাম, ধুলো ভর্তি বইয়ের তাক ঘেঁটে বের করা ১৯৩৯ সালের আর একখানা অক্সফোর্ড অ্যাটলাস ম্যাপবইতে। একই বই। কিন্তু একি? দেশ গুলো সব অন্যরকম যে! সীমানাগুলো নতুন মানচিত্রে অনেকটা এদিক ওদিক সরে গেছে। ইয়োরোপের যুদ্ধের আগের মানচিত্র দেখে কেমন ঘোর লেগে গেল। কি মনে হলো, পাতা উলটে ভারতের মানচিত্র দেখতে গেলাম। গোলাপী রঙ দিয়ে ভারতের অবস্থান বোঝানো রয়েছে বইতে। আর সে ভারতবর্ষ পশ্চিমে কোহাট-বান্ন থেকে পূবে আরাকান পর্য্যন্ত বিস্তৃত। নতুন মানচিত্রে দেখলাম সেই ভূভাগের পূবদিকের নাম বাংলাদেশ, পশ্চিমদিকের নাম পাকিস্তান আর বাকিটুকু ? মনে মনে নাম দিয়েছিলাম বাকিস্থান।

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

চা বাগানের "ওরা " ~ অবিন দত্তগুপ্ত

শীতের সকালে , ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে চুমুক না দিলে , ঠিক দিন শুরু হয় না । কি বলেন ? আমার তো হয়ই না । দার্জিলিং চা হলে তো কথাই নেই , গন্ধই আলাদা ।ডুয়ার্স বেড়াতে গিয়ে বীরপাড়া চা বাগানে , অস্তগামি সূর্যের রাঙা আলোয় তোলা সেল্ফি মনে আছে ? আর আশেপাশের লোকগুলো ? সকাল সকাল সেজে গুজে ,খোপায় ফুল লাগিয়ে , মলিন শাড়ী পরে যারা চা পাতা তুলতে যেতো ? জানি মনে আছে । মনে করে দেখুন , ওদের সাথে দাঁড়িয়ে , ওদের মতো করে আপনি চা পাতা তুলেছিলেন (ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ...মিষ্টি হেসে ) , গুনে গুনে দুটো । একটা প্রোফাইল অন্যটা কভার । ডুয়ার্সের মমতাশঙ্কর বা দীপঙ্কর দে তো তখন আপনি । মনে পড়ে ?
যেটা মনে পড়ে না ,সেটা মনে পড়িয়ে দিতেই এই গৌরচন্দ্রিকা ।আপনার মনে পড়ে না,যারা চা শ্রমিক ,তাদের দিন মজুরি ঠিক কতো ? খুব কম , ওদের মাসের টাকায় , আপনার দিন গুজরান । আপনার মনে পড়ে কি , ওদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে , বছর খানেক আগে , সমস্ত চা বাগানের "ওরা " , আপনার আমার শহরের উদ্যেশ্যে লং মার্চ করেছিল ? হাঁপ ছাড়ুন , ওরা পৌছাতে পারেনি । যাদের হারানোর কিস্যু নাই , তারা রাজপথে হানা দিলে রাজধানীর কি ভয়ংকর অবস্থা হয় ,তা তো আপনারা নবান্ন অভিযানে দেখেছিলেন । চাষি -খেতমজুররা দেখিয়েছিল । দায়িত্ব নিয়ে বলছি ,ওটা ট্রেলার ছিল । চা বাগানের শ্রমিকরা পৌঁছালে পুরো সিনেমাটা দেখতে পেতেন । যাই হোক , চা শ্রমিকদের মাইনে কিছুটা বাড়ে , এবং ওরা সে যাত্রা , শহরকে রেহাই দেয় । যাদের কিচ্ছু নাই , কিছুটা জিতে নেওয়াও তাদের কাছে বিশাল জিত । শ্রমিক ইউনিয়ানগুলির যৌথ লড়াইতে , ওরা একটা লড়াই জিতেছিল । যুদ্ধ কিন্তু তখনো চলছে ।
তারপর আচ্ছেদিনের আগমনের সাথে সাথে , জিনিসপত্রের দাম বাড়ল । মজুরি আর বাড়ল না , যে যৎসামান্য রেশন পেয়ে ওদের বাচ্চারা বুড়োরা দুর্ধর্ষ ভাবে বেঁচে থাকত সেটা বন্ধ হয়ে গেল । অনাহারে প্রথম যে চা শ্রমিক মারা গেলেন , তার নাম আপনার মনে নেই । মালবাজারে মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ,আইফোন হাতে পোজ দিয়ে ফটো তুলেছিলেন । অসামান্য সেই ছবি আপনার মনে আছে । কিন্তু মনে নেই , যে ওই জায়গার থেকে মাত্র ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে না খেয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে একের পর এক মানুষ । মুখ্যমন্ত্রী জানতেন , উনি যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি । মিডিয়া বুম-ও ওনাকে ছাড়ার প্রয়োজন বোধ করেন নি । অতএব আপনার মনে রাখাকে আর দোষ দি কী করে বলুন ?
মনে রাখবেন , আজকে নিয়ে গত এক মাসে , ২৯ জন চাশ্রমিক অনাহারে মারা গেছেন । একমাত্র সি আই টি ইউ ছাড়া কেউ পাশে দাড়ায়নি । মনে রাখবেন তো বললাম , কিন্তু জানি মানুষ লেখার থেকে ছবি মনে রাখে বেশী । বীভৎস ছবি , অনাহার ক্লিষ্ট মানুষের ছবি , মানুষ মনে রাখে , বহুদিন পরে রমান্টিসাইজ করে । তাই আপনাদের ছবি দিচ্ছি । অনাহারে মাটির সাথে মিশে যাওয়া মানুষের ছবি দিচ্ছি । দেখুন , মনে রাখুন , আর প্রার্থনা করুণ মরলে যেন এরা সবাই মরে । কারণ একটা প্রজন্ম বেঁচে গেলেও , তাদের সামনে আপনাকে আমাকে জবাবদীহি করতে হবে । দেখুন ,
পুনশ্চ : আপনার পাড়ার ক্লাবে ২ লক্ষ টাকা ঢুকেছে ,আশা রাখি । 



 
 

সিনেমার নামঃ- দেওয়া-নেওয়া বা প্রেমপূজারী ~ অনামিকা

​হাপ্প্যান্ট কেঁদে বলে, প্রিয়তম তিনো
গলাগলি ভাব ছিল এই সেই দিনও।
কালিঘাট টালিঘরে নিয়ে দলবল
মাসিমা মালপো খামু, বলেছে অটল।
তারপরে যা ঘটল, কী যে বলি আর,
আমি সেন্ট্রালে, আর তুই সেকুলার।



তিনো বলে হাপ্প্যান্ট, তবে বলি শোনো,
নিজের ধান্দা ছাড়া চলিনি কখনও।
তবুও আশায় থাকি। ভুলে যাস তোরা
নরেনকে পাঠিয়েছি গোলাপের তোড়া।
তোদেরই তো ঘাড়ে চেপে রেলে কয়লায়
করেছি দেদার চুরি… মন যত চায়।
ট্রাপিজের এ' খেলায় ঠিক দড়ি ছুঁয়ে
পৌঁছে গিয়েছি সোজা 'ইউপিএ টু'এ
তারপর মাও-খাও-সারদার তেজে
পেয়ে গেছি নবান্ন। ইতিহাস সে' যে।
কেজরি ও লালুভুলু আরও কত শত
রয়েছে চেয়ার-লোভী ঠিক আমার মত।
গ্রুপ ফটো তোলা হল সে'গুলোর সাথে।
দেখিস পিএম হবো, নেক্সট চান্সটাতে।


হাপ্প্যান্ট কয়, কেস সোজা নয় ভাই
তোর সারদার পিছে মোর সিবিআই।
চেন বাঁধা সে কুকুর হাঁকে ডাকে জোরে
বললেই খ্যাঁক করে কামড়াবে তোরে।
তিনো বলে বৃথা কেন এত খ্যাঁচখ্যাঁচ
সোজা ও সরল এই গট আপের ম্যাচ।
উপরে কুস্তি আর তলে তলে প্রেম।
কী করবে নীতিহীন গাধা ছিপিয়েম?
তোর আছে গরুপূজা। বিপরীতে আমি
অভিনয়ে করে যাই সেকু-ভণ্ডামি।
এই ভাবে দুই স্থায়ী প্রেমিক প্রেমিকা
ভাগ যোগ হিংসার নিয়ে নিল ঠিকা।

বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫

ভালবাসলে ঠিকই মরে যেত একদিন - শুভাশিষ আচার্য্য

ভালবাসলে ঠিকই মরে যেত একদিন
মায়ার এই সংসারকে বলে দিত বাই।
এখন খুব চিন্তা হয় কি হবে?  কি বলে
কাগজ দেখি? টিভি  খোলোতো ! হ্যাঁ হ্যাঁ এটা চাই......  
হত্যা দেখি টি আর পিতে  তুঙ্গভদ্রা,    
ঝালমুড়ির মতন দেখি খুন করা গুলো,
টাইম-পাস,জনচেতনা,বাইট বিলাস-
সব ত হল! সব ত হবে ! ওরা কি বলল?

“বস, মেরেছি। খুন হয়েছে একগুঁয়েটার,
রাতটা গেলে সব মিলিয়ে খান পঁচিশেক.
কিন্তু গুরু কি কিচাইন রক্ত কোথায়?
যতই মারি, চাক্কু, ছুরি, আগুন বেরোয়
নলি কাটলে মাথা কাটলে আগুন বেরোয়
দেশটারে না জাগায়ে দ্যায় অ্যাত্ত আলো...”

ভালবাসলে ঠিকই মরে যেত একদিন
মায়ার এই সংসারকে বলে দিত বাই।
হত্যা করা হয়েছে তাই আলোর উৎস
মরে যাবার আর কোনই পথ খোলা নাই।

শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫

হাসির সপ্তক ~ অরুনাচল দত্তচৌধুরী

হাসির সপ্তক
--------------------

১)
ট্যাব-এ ছবি তোলা হবে, হয়েছে হুকুম
হাসিমুখে পোজ দাও
চা বাগান, ভুলে যাও খিদে মরসুম

মরে গেছো? মরে যেতে পারো।
উড়োকথা শোননি কি?
শোননি কি হাসছে পাহাড়ও…

২)
জাতপাতই সত্য শুধু,
বাকি সবই ভান
ভাগ্যিস ছিল পাকিস্তান
উবে গেছে ডিজিটাল ইন্ডিয়া অছিলা

পতনের যাত্রাপথে
হেসে ওঠে উন্নয়নশিলা

৩)
লুকোই না, লুকিয়ে কী লাভ
হাসি দিয়ে মুছেছি বিলাপ

আমনধানের মাঠে  জড়ো হয় তুষ
জল নেই অজুহাতে
বিষ খায় অভাবী মানুষ

৪)
বলব না, শুনব না, ওই দৃশ্য দেখব না চোখে
এমনকি ভাবব না, কারা খুবলে খেয়ে নিল তোকে।

মেয়ে,
তোর মৃতদেহ চিবোতে চিবোতে
মুচকি ঠোঁটে তর্ক করব সান্ধ্য টক শোতে।

৫)
অনাহার মেঘ নেই,
হেথা শুধু মিঠে কড়া রোদ।
একপ্লেটে বিফ খায় বিকাশ-সুবোধ।

কেন, শুধু গরু কেন?

অকারণ এই সব জেরা।
আপাতত বেঁচে গেছে
ভীতু আর বোকা শুওরেরা।

৬)
দানাপানি খুদকুঁড়ো নিশ্চয়তা পেলে
পায়রারা রোজ হাসে সকালে বিকেলে
কবুতরশাস্ত্র আজও পুরনো রকম
ক্ষমতার খোপে বসে অবিরত বকম বকম

৭)
হাসিমুখে বাধ্য বাঁচো,
না বাঁচলে সব কিছু মাটি
আহারে বাহারে নাও সমস্ত মজাটি

খাদ্য উৎসব হোক
জল-উৎসব বোতলে বোতলে
সব পাবে,
ভাগ্যবলে বেঁচে আছো বলে।

গরুর কবিতা ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য


একটি গরু দুগ্ধ দেয়
গোয়ালা তাতে জল মেশায়;
একটি গরু দুইটি শিং
ক্যানিং থেকে দার্জিলিং;
একটা গরু চারটি পদ
হোয়াংহো কি সিন্ধু নদ-
একটি গরু একটি নাক
দ্বন্দ্ব বিভেদ নিপাত যাক;
একটি গরু একটি লেজ
কালো গরুর ভীষণ তেজ;
গরুও ফেলে মাথার ঘাম
ঘণ্টা, উলু, লাল সেলাম;
গরুর অতীত বর্তমান
কে হিন্দু কে মুসলমান;
গরুর তবু বুদ্ধি বেশ
ছোট্ট বড় নির্বিশেষ;
গরুর গোবর ষাঁড়ের নয়
হিংসা, বিভেদ, যুদ্ধজয়-
গরুর কষ্ট, গরুর ক্লেশ
ভারতবর্ষ আজব দেশ।।

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

এক সন্ধ্যের গল্প (উদ্ভুট্টে সিরিজ) - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

( লিখছি তো উদ্ভুট্টে সিরিজ, তাহলে উদ্ভট লিখবোনা কেন? )

শীতের বিকেল বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়। আর চায়ের তেষ্টাও পায় বেশী। ১৮৯৪ শকাব্দ শেষ হয়ে আসছে, আর মাত্র কয়েক দিন, তার পরেই ১৮৯৫ শকাব্দ শুরু হবে। কিন্তু আজকাল ভারতে সরকারি শকাব্দ কেউই আর মনে রাখেনা। সাল জিজ্ঞেস করলে ১০০ জনে ১০০ জন ভারতীয়ই বলবে এটা ১৯৭২ সাল, মানে ১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দ। আহমেদাবাদের উপকণ্ঠের এই নতুন মহল্লায় সব বাড়ির বাসিন্দারাই বাড়ির সঙ্গে একটু করে বাগান রেখেছেন। শেষ বিকেলের ঝিরি ঝিরি ঠান্ডা হাওয়া আসছে জানলা দিয়ে। গায়ে কাজকরা কাশ্মিরি শালটা ভাল করে জড়িয়ে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসলেন অধ্যাপক। সামনে চশমা চোখে নবীন ছাত্রটিকে তাঁর বেশ পছন্দ। তার প্রশ্নের শেষ নেই খুঁটিয়ে জানতে চায় সব কিছু

বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫

দলিতদের শিক্ষা ও আর এস এস ~ পুরন্দর ভাট

কাল ফরিদাবাদে দুটি দলিত শিশুর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে রাজপূতরা। রাজস্থানের রাজপূতরা এককালে মৃগয়া করতে গিয়ে হরিন, বরাহ শিকার করার সঙ্গে সঙ্গে ভিল উপজাতির মানুষদেরও "শিকার" করতো বলে শোনা যায়। সেই ক্ষাত্রতেজ বোধয় জাগ্রত হয়ে উঠেছিলো ফের, তাই দুটি শিশুকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিলো। আসলে দলিতদেরই দোষ। খবরের খুটিনাটি পড়ে যা বুঝলাম যে মাস কয়েক আগে এক রাজপূতের মোবাইল ফোনটি ফসকে নর্দমায় পড়ে যায়। রাজপূতের মোবাইল নর্দমায় পড়ে গেলে দলিতদের তো ডিউটি সেটা উদ্ধার করে দেওয়া, হিন্দু শাস্ত্রমতে তো সেটাই সঠিক। দলিত উপস্থিত থাকতে রাজপূত ক্ষত্রিয় নর্দমায় হাত দেবে!! এরকম ঘটনা রাম রাজ্যে কখনো ঘটতেই পারে না। অগত্যা কয়েকজন দলিতকে "অনুরোধ" করা হয় নর্দমায় নামতে, বোধয় টাকা পয়সা দিতেও অরাজি ছিলো না তবুও দলিতদের সকলে নর্দমায় নামতে অস্বীকার করে দেয়। কি আস্পর্ধা ভাবা যায়!! দলিতদের শিক্ষা দিতে এক দল রাজপূত চড়াও হয় দলিত বস্তিতে। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে দলিতরা মাথা নোয়াবে না ঠিক করে, রুখে দাঁড়ায় রাজপূতদের গুন্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে, বাড়ির মেয়েরাও হেঁসো আর বঁটি নিয়ে বেরিয়ে আসে এবং গণপিটুনিতে তিনজন রাজপূত গুন্ডার অকাল মৃত্যু ঘটে। পুলিশ এগারো জন দলিতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে এবং গ্রেফতার করে। কিন্তু রাজরক্ত কি এতে শান্ত হতে পারে? তা ছাড়া আসল অপরাধের জন্যে তো কোনো শাস্তিই হলো না - নর্দমা থেকে মোবাইল তুলে দেওয়ার "অনুরোধ" উপেক্ষা করেছে দলিতরা। আর ঠিক মতো সায়েস্তা না করা গেলে যদি দিকে দিকে দলিতরা এরকম সাহসী হয়ে ওঠে? তাহলে? নাহ এ বরদাস্ত করা যায় না। তাই রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে, দলিত বস্তিতে আক্রমন করে, শিশুদের হত্যা করে নিজের ক্ষাত্রশক্তির প্রমান দেওয়ার খুব প্রয়োজন ছিলো। এরকম আক্রমন যে হতে পারে তা দলিতরা সন্দেহ করেছিলো এবং সেই অনুযায়ী পুলিশী পাহাড়া চেয়েছিলো আগেই, দলিত বস্তির ওপর কড়া নজর রাখার কথা ছিলো পুলিশের। কিন্তু রাজপূতরা দলিতদের হাতে অপমানের বদলা নেবে আর তাতে পুলিশ বাধা দেবে, এতো বড় অনর্থ কখনো হিন্দু হৃদয় সম্রাটের রাজত্বে হতে পারে? রাম রাম!


হরিয়ানা এবং তার সংলগ্ন পশ্চিম উত্তর প্রদেশ, ও উত্তর রাজস্থানে, দলিতদের ওপর নানা রকমের অত্যাচারের ঘটনা গত এক বছর ধরে হু হু করে বেড়েছে। খুবই স্বাভাবিক, দেশব্যাপী বর্ণ হিন্দুর ক্ষমতার পুনর্জাগরণ চলছে, সেখানে এরকমই হবে। কোথাও মুসলমান তো কোথাও দলিতদের এই ক্ষমতার বলি হতে হবে। হরিয়ানায় মুসলমান ৫%-এরও কম, তাদেরকে মেরে খুব একটা শক্তিপ্রদর্শন হবে না, বরং দলিত মারলে বর্ণ হিন্দুদের বেশ এককাট্টা করা যাবে। সোনেপাতে তিন চার মাস আগেই একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। দলিত বস্তির কতগুলি শিশু ক্রিকেট খেলতে খেলতে বল গিয়ে পড়ে আরএসএসের জেলা দফতরের ভেতর। সেখান থেকে বল আনতে গেলে একটি শিশুকে মেরে খোঁড়া করে দেয় হিন্দু বীরেরা। শিশুটির মা বাবা ঘটনাটি নিয়ে দফতরে অভিযোগ জানাতে এলে বেদম মারা হয় তাদের, শিশুটির বাবা দুটি হাতের একাধিক জায়গায় হাঁড় ভাঙ্গে। সেখানেই থেমে থাকেনি, এরপর আরেসএসের দফতর থেকে ৪০-৫০ জনের বাহিনী দলিত বস্তিটিকে আক্রমন করে, যথেচ্ছ মারা হয় লাঠি, হকি স্টিক, শাবল দিয়ে। ১০ জনেরও বেশি দলিত হাসপাতালে ভর্তি হোন মারের চোটে। এরপর তারা পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাদেরকে আরএসএসের সাথে মিমাংসা করে নিতে চাপ দেয়। বস্তির পাশেই একটি দোকানে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরায় আরেসএসের হনুমানদের তান্ডবের ফুটেজ থাকা সত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেওয়া হয়নি। পুলিশকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় যে বস্তিবাসীরা আরএসএসের সাথে নিজেরাই মিটমাট করে নিয়েছে কিন্তু বস্তিবাসীরা স্পষ্ট বলে যে পুলিশের চাপে পড়েই তারা বাধ্য হয়েছেন। 
এখন এরকমই চলবে, কথায় কথায় মুসলমান ও দলিতদের মারধোর খুন করা হবে। আমার তো মনে হয় খুব শীঘ্রই এই তালিকায় খৃষ্ঠান আদিবাসীরাও সামিল হবেন। 
একটু ভেবে দেখুন তো যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগের দশ বছর কি নিয়ে মানুষ চিন্তিত ছিলো? কি নিয়ে সংবাদপত্রগুলো খবর করতো? মনে পড়ে? চাষী আত্মহত্যা, বেসরকারিকরণ, জমি অধিগ্রহণ, খাদ্যের অধিকার, অরণ্যের অধিকার, কেন্দ্র সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলোর চুরি জোচ্চুরি, মূল্যবৃদ্ধি এসবগুলোই আলোচ্য বিষয় ছিলো তাই না? গত এক দের বছর ধরে তার জায়গা নিয়েছে গোমাংশ, লাভ জিহাদ, ধর্মান্তকরণ, মুক্তমনাদের হত্যা। 
প্রশ্ন হচ্ছে যে আগে যে বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামাতাম সেগুলো কি আর নেই? 
চাষী আত্মহত্যা বন্ধ? বরং উল্টে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঞ্জাবে তুলা চাষ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে এই বছর, আত্মহত্যার মহামারী লাগতে চলেছে আগামী কয়েকদিনের ভেতর। একই অবস্থা মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রে। 
অথবা মূল্যবৃদ্ধি? পেঁয়াজের দাম কমতে না কমতেই হু হু করে বাড়ছে ডালের দাম। সবজির দামও কমার নাম গন্ধ নেই। 
ভ্রষ্টাচার? কেন্দ্র সরকারের সবে এক বছর হয়েছে, প্রথম ৫ বছর তো কংগ্রেসের চুরিও ধরা পড়েনি। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে একের পর এক কান্ড বেরিয়ে চলেছে। ব্যাপাম কেলেঙ্কারীর পর এখন বেরোচ্ছে চাষীদের ঋণ নিয়ে বিশাল কেলেঙ্কারী। 
জমি অধিগ্রহণ আইন কেন্দ্র সংসদে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলেও রাজ্যগুলো তাদের আইন বদলাতে শুরু করে দিয়েছে। জমি রাজ্যের আওতায় পড়ে তাই রাজ্যে আইন বদলেই জমি লুঠ করা যায়। দেশের ৭-৮ টি বড় রাজ্য বিজেপির শাসনে, তারা জমির আইন বদলে পুঁজিপতিদের সুবিধে করে দেবে। বাকি রাজ্য থেকে শিল্পপতিরা চলে যেতে থাকবে ওই রাজ্যগুলিতে আর তাই বাকি রাজ্যগুলিও এরপর বাধ্য হবে তাদের জমির আইন বদলাতে। কে কতো পুঁজিপতিদের হয়ে জমি লুঠ করতে পারে তার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হবে রাজ্যগুলোর মধ্যে। হবে কি হয়ে গেছে। 
শ্রম আইন বদলানোর পরিকল্পনা চলছে, চালু হতে চলেছে ইচ্ছে খুশি মতো "হায়ার এন্ড ফায়ার", চাকরির সুরক্ষা, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ক্ষমতা সবই খর্ব হবে। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেসরকারীকরণ চলছে, রেলকে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা পাকা, লাইনে আছে স্টেট ব্যাংক এবং এলআইসি। 
এবং এরই সঙ্গে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোয় লাল বাতি জ্বালানো শুরু হয়েছে। প্রথম ইউপিএ সরকার অনেক ভুল কাজ করলেও নতুন বেশ কয়েকটি জনকল্যাণ প্রকল্প শুরু করেছিলো। যেমন ১০০ দিনের কাজ, গ্রাম সডক যোজনা, ইন্দিরা আওয়াস যোজনা, জাতীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য মিশন প্রভৃতি। তারই সঙ্গে বাজপেয়ীর আমলে শুরু হওয়া সর্ব শিক্ষা অভিযানে বরাদ্দ টাকা বাড়ানো হয়েছিলো অনেকটাই, কেন্দ্রীয় সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারগুলোতেও টাকা বরাদ্দ বেড়েছিলো অনেকখানি। কিন্তু এই সরকার শুরু থেকেই সব রকম জনকল্যাণ প্রকল্পে টাকা ছাঁটাই করার প্রতিজ্ঞা করেছে। আইআইটি, এনআইটি গুলোর পড়াশুনোর সমস্ত খরচ ছাত্র ছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে যার ফলে এসব কলেজে পড়বার খরচ ৪ বছরে ৮-১০ লক্ষ টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ কমিয়েছে সরকার। এসব জায়গার সায়েন্টিস্টরা আশংকায় ভুগছেন ভবিষ্যত সম্পর্কে। আজকেই তার ওপর ঘোষণা করেছে যে নেট-জেআরএফ বাদ দিয়ে আর কোনো স্কলারশিপ সরকার দেবেনা। এর ফলে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বহু ছাত্র ছাত্রী বিপদের মুখে, কারণ খুব কম ছাত্র ছাত্রীই জেআরএফ পান। ইউপিএ আমলে নিয়ম চালু হয়েছিলো যে নেট-জেআরএফ না থাকলেও পিএচডি ছাত্র ছাত্রীদের মাসে ৫ হাজার টাকা স্কলারশিপ দেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা উঠে গেলো। অনেক কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়তে এর পাশাপাশি ছিলো মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপ, অর্থাৎ গরিব ঘরের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কিছু মাসোহারা দেওয়া হতো যাতে হোস্টেলে থেকে পড়তে তাদের অর্থকষ্ট না হয়। উঠে যাবে তাও। উচ্চশিক্ষায় খরচ কমিয়ে এই টাকা যদি প্রাথমিক শিক্ষায় দিতো তাহলেও একটা কথা ছিলো কিন্তু বাজপেয়ীর তৈরী সর্ব শিক্ষা অভিযানের টাকাও কমানো হচ্ছে। এমনকি হাত পড়েছে মিড ডে মিলেও! কেন্দ্র বাজেটে শিক্ষা খাতে খরচ মোট খরচের শতাংশ হিসেবেই কমিয়ে দিয়েছে সরকার, এর আগে এই কাজ আর কোনো সরকার বোধয় করেনি, এরাই প্রথম। সরকারের উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট, শিক্ষাকে সরকারের ঘাড় থেকে নামিয়ে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়া। পাল্লা দিয়ে কমেছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খরচ। গত বাজেটে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশু ও নারীর পুষ্টির পরিকল্পনাগুলো। অবস্থা এতোই শোচনীয় যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, থাকতে না পেরে। কিন্তু মানেকা হয়তো জানেন না যে এই কাজগুলো করার জন্যই এই সরকার এসেছে। পুঁজিপতিরা তাদের ভাঁড়ার খুলে টাকা ঢেলেছিলো এদের নির্বাচনী প্রচারে। দেশে উচ্চবর্ণ ও ধনী যারা (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুটো সমার্থক) তাদের একনায়কতন্ত্র চলছে। গণতন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র আর এই দেশে নেই। মুশকিল হলো ভোটে গরিব মানুষের ভোটটাও প্রয়োজন হয়, শুধু তো আর শাইনিং ইন্ডিয়ানদের ভোটে জেতা যায় না। তাই কখনো ধর্ম আর কখনো জাতের নামে চলছে মেরুকরণ। 
এই বিষবৃক্ষকে শেষ করতে হলে শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললে হবেনা, শুধুমাত্র সংবেদনশীলতার কথা বা বহুত্ববাদের কথা বললে চলবে না। কয়েকটা ডালপালা কাটলেই বিষবৃক্ষ মরে না, ফের ডালপালা গজিয়ে যায়। যদি এই বিষবৃক্ষকে শেষ করতে হয় তাহলে তার জল ও সারের যোগান আটকাতে হবে। যে পুঁজিপতি এবং ব্যবসায়ীরা এই বিষবৃক্ষকে জল ও সার দিয়ে লালন পালন করছে লড়তে হবে তাদের বিরুদ্ধে, তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে। ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই, দলিতদের লড়াইকে মেলাতে হবে জমির অধিকারের লড়াই, বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়াই, জনকল্যাণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমানোর বিরুদ্ধে লড়াই, ছাত্র ছাত্রীদের স্কলারশিপ কমানোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে। তা যদি করা না যায় এই বিষবৃক্ষকে ধ্বংশ করা অসম্ভব।

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৫

আব্বুলিশ ~ অনামিকা মিত্র

মরতে থাকিস প্রাণের ভয়ে
তবুও তোরা কী সংশয়ে
ইভিএমএর বোতাম ছুঁতে
ভিড় করে যাস পাড়ার বুথে?

ডেমোক্রেসির কারখানাতে
ব্যস্ত আমরা ভোট বানাতে।
গণতন্ত্রের পিণ্ডি চটকে
বাগে আনব সবার ভোটকে।

কমিশনটা পোষ্য চাকর
খুব প্রতিবাদ করবি? তা' কর।
শিডিউলড সবই, ঘটবে কী কী।
ওর যা' করার করবে ঠিকই

অবাধ্য সব সাংবাদিককে
রামপিটুনির দিলাম শিক্ষে।
সবটাই খুব ভদ্র শালীন
চ্যানেল চেঁচাক, সান্ধ্যকালীন।

জয় শাঁওলির শ্রীমুখ বন্ধ
বিদ্দজ্জন… দেখেও অন্ধ
ঘাড়ের ওপর বসল ডাইনি।
খুব পস্তায়… এমন চাইনি।

ভার্টিব্রেট দু'একখানার
জন্য ধার্য বুলেট দানার
হিসেব না হয় রাখবে পুলিশ
খেলবি না আর? কী, আব্বুলিশ?

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

"ইন্টারনেট.অর্গ" - জুকার্বার্গের মহানুভবতা? - পুরন্দর ভাট

"ডিজিটাল ইন্ডিয়া" নিয়ে ফেসবুক সরগরম। অনেকেই ফেসবুক কর্তা জুকারবার্গের দেখাদেখি নিজেদের প্রফাইল পিকচারে তেরঙ্গা লাগিয়েছেন এই প্রকল্পের সমর্থনে। আবার অনেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অভুক্ত শিশু বা আত্মঘাতী কৃষকের ছবি লাগিয়েছেন তাঁদের প্রফাইলে। প্রথমেই বলে নি যে আমি মনে করি না যে দেশে অভুক্ত শিশু রয়েছে বলে ইন্টারনেটের প্রয়োজন নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে, ফেসবুকে বসে, যখন অভুক্ত শিশুদের কথা বলছি তখন স্বীকার করে নেওয়ার সৎ সাহস থাকা উচিত যে ইন্টারনেট একটা প্রয়োজনীয় জিনিস। ইন্টারনেট মানুষকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বহু গুন। গত ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্ঠি হলো ইন্টারনেট। যে যুক্তিতে লোকে বলে যে লক্ষ লক্ষ অভুক্ত শিশু যেখানে রয়েছে সেখানে "ডিজিটাল ইন্ডিয়া"-র কি প্রয়োজন তারা ভেবে দেখবেন যে একই যুক্তিতে কেউ বলতে পারে যে যদ্দিন না সবাই খেতে পরতে পাচ্ছে তদ্দিন শিক্ষা দীক্ষার কি প্রয়োজন। ইন্টারনেটের অধিকার শিক্ষার অধিকারের মতোই একটা মৌলিক দাবি হওয়া উচিত আমার মতে। হ্যা এটা হতে পারে যে অনেকেই অভুক্ত শিশুদের ছবি লাগাচ্ছেন এটা মনে করিয়ে দিতে যে ভারতবর্ষের মানে সিলিকন উপত্যকায় বসবাসকারী প্রযুক্তি তারকারা নয় ভারতবর্ষ মানে হলো অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, নিরক্ষর নারী এবং ঋণগ্রস্ত কৃষক। তাদের সাথে আমি একমত, সরকারের হাবভাব দেখে মনে হয় আজকাল যে সেটা তারা ভুলেই গেছে। এটা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার কিন্তু "ডিজিটাল ইন্ডিয়া"-র বিরোধিতা অভুক্ত শিশুদের জন্যে করবো না। তাহলে ডিজিটাল ইন্ডিয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, তাকে সকলেরই সমর্থন করা উচিত?

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হাড়হিম হিমবাহ - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

আমার খুব ইচ্ছে, জীবৎকালে একটিবার, লালমোহনবাবুর মত একখানা রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লিখবপারব না ভাবছেন? আরে দাদা, এই যে দর্জিপাড়া লেনের সেদিনের ছোকরা গিরিশ চাকলাদারসে কিনা নিশাচর নাম নিয়ে ক্যাপটেন স্পার্ক আর র‍্যাক্সিট সমেত রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস নামিয়ে দিতে পারলআর আপনি আমার উচ্চাশা শুনে ......? নাহয় আমার এডিশনও “তিন মাসেও কিস্যু হবেনা”। তবে খটকা অবিশ্যি একটা আছেই। ভাবছেন ফেলুদা থাকতে হঠাৎ জটায়ু কেন? একটু ভেবে দেখুন দিকি। এই অধমের দ্বারা ফেলুদা হওয়া কি কখনো সম্ভব? মগজাস্ত্র অনেক দুরের কথা, শিশুকাল থেকে আমার মগজের উপস্থিতি নিয়েই অসংখ্যবার অসংখ্য মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ফেলুদা তো কোন ছার, তোপসের তুলনায়ও আমি নেহাতই পানসে। কিন্তু লালমোহন গাঙ্গুলির সঙ্গে এই চাটুজ্যের অনেক মিল। কু-লোকে বলে আমি নাকি কিঞ্চিত লাল, আবার এদিকে আমি মোহন(বাগান) ও বটে যদিও উটে চড়ে আরব বেদুইন হবার কথা ভাবলে রোমাঞ্চের বদলে তলপেটটা কেমন জানি ......কিন্তু ইংরিজি বলুন, সাধারন জ্ঞান বলুন (নর্থপোলে সিন্ধুঘোটক, বা উটের পাকস্থলি), গরম কচুরি প্রেম বলুন, এই সব ব্যাপারে জটায়ুর সঙ্গে আমার যাহারপরনাই মিল রয়েছে।

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

"violent" ছবি ~ পুরন্দর ভাট


পিজার বিজ্ঞাপনের পাশে পথশিশুর যে ছবিটি আমার দেওয়ালে পোস্ট করেছিলাম সেটা অনেকেই দেখেছেন, ছবিটি দের হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে। আজকে দেখছি কেউ একজন এটা ফেসবুকে রিপোর্ট করেছে "violent" বলে এবং এখন ছবিটি ফেসবুকের বিবেচনাধীন, তারা যদি মনে করে যে ছবিটি ফেসবুকে থাকার যোগ্য না সেটা তারা মুছে দেবেন।

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ ? - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ ?
সখীরি মোরি ডগর চলত মোসে করতহর
চঞ্চল চপল নটখট
মানতি নেহি কউ কি বাত
বিনতি করত ম্যাঁয় তো গেয়ি রে হার
সখী নীর ভরন ক্যায়সে যাউঁ?

সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শিক্ষক দিবস ~ স্বাতী ব্যানার্জী

সকাল থেকে শুধু শুভেচ্ছা স্তুতি আর ভালোবাসায় ভেসে যাচ্ছে হৃদি অলকনন্দা জলে ..... আলবাত ভালো লাগে.... শিক্ষক দিবস..... আমাদের জন্য .......সুমনের গানের মতো .....শুধু আমাদের জন্য ...... তবুও কিছু ভিন্ন খন্ডদৃশ্য গড়ে তোলে আমার শিক্ষক দিবস.... অন্য রকম....

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বেসিক্যালি আমি 'অ্যাপোলিটিকাল' ~ সুশোভন পাত্র


বেসিক্যালি আমি 'অ্যাপোলিটিকাল'। মোটা দাগে 'অরাজনৈতিক'। শ্রী শ্রী বব মার্লে আমার গুরু আর শাকিরা আমার রাধে মা। আমার বাথরুমের পাশে ষ্টার-জলসা। জীবন মানেই জি-বাংলা। আমি গাছেরও খাই, তলারও কুড়োই। ডালে-ঝোলে-অম্বলে সবেতেই আমি আছি। আদা আর কাঁচকলা দুটোই আমার সমান পছন্দের। আমি সাপের মাথায় চুমু খাই, নেউলের গায়েও হাত বোলাই। চায়ের দোকানে দেশ-দুনিয়ার খবর শুনে, জীবন ও জীবিকার সমস্ত সমস্যার দায়, সিস্টেমের উপর চাপিয়ে, পিছনে দুটো ইংলিশ গুঁজে, চায়ের কাপে ঝড় তুলে, একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলি "ডার্টি পলিটিক্স। দিস হোল ব্লাডি সিস্টেম ইস ক্র্যাপ।"... উফ কি শান্তি যে পাই! ঐ যে বললাম, বেসিক্যালি আমি 'অ্যাপোলিটিকাল'। 

শিক্ষক দিবস ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য

বলতো দেখি সরস্বতী বানান

ব্যাসবাক্য সমাস বীণাপানি
পানিপথের যুদ্ধ কত সালে
পলাশী,ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি?

হ্ব্র্স ই না দীর্ঘ ঈ কার হবে?
কোন স হবে আন্দাজে ঢিল ছুড়ি
সন্ধি সমাস কারক বিভক্তি তে
আমার মাথায় শুধুই লাটাই ঘুড়ি….

মলিন পোশাক পায়জামা পাঞ্জাবি
সিঁড়িভাঙ্গা বোঝান হাজার বার
ভালোবাসা আদর বেত্রাঘাতে

শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বিষয় - আয়ালান কুর্দি ~ জাগরী ব্যানার্জী

" সমুদ্রে ফিরিয়ে দিলে !!!! ওহে আফলাতুন !"
কহিলেন ইমাম গাজ্জালী ।
"পাঠালাম মাতৃ হস্তে নিরাপদ তোমাদের দেশে !
দর্শনে , পঠনপাঠনে , গুরুকুলে ক্যাফেটেরিয়ায় ,
মহা তর্কে বহুদিন যাপন করিবে এই আশে ! বড়ো হয়ে উঠতে সেখানে ।
পাঠালাম তিন বর্ষীয় যে বালক !
ওহে আফলাতুন! সমুদ্রে ফিরিয়ে দিলে !!
দেখ দিকি কত যত্ন করে , কিনে দিনু লাল রঙা জামা
দেখ দিকি অভিমান ভরা পিঠ , ফিরে শুয়ে আছে আনমনা ।

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বন্ধ ~ পুরনদর ভাট

বন্ধ নিয়ে ন্যাকাচোদা মধ্যবিত্বের নাকি কান্না চলছে। 
খিস্তি মারলাম বলে খারাপ লাগলো? শাট শাট! কি করবো বলুন, সারা বছর একবারের জন্যেও যারা মজুর, কৃষকদের কথা বলে না তাদের হঠাত করে বন্ধের দিনে শ্রমিক কৃষকদের কি হবে বলে নাকি কান্না দেখে খিস্তি ছাড়া কিছুই আসছে না। শালা একের পর এক কারখানায় তালা ঝুলে যাচ্ছে, চা বাগানে না খেয়ে লোকজন টপাটপ মরে যাচ্ছে, সারা বছর তা নিয়ে রা কাড়া নেই, বন্ধ হলেই "কর্মনাশা" বলে ঢ্যামনামো। এমন হাবভাব যেনো বাকি ৩৬৪ দিন একেবারে কাজ করে ফাটিয়ে দিচ্ছে আর মাইনের টাকা পেলেই তা নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে গরিবের সেবা করতে। 

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

খাদ্য আন্দলন ~ শতদ্রু দাস


"মা! একটু ফ্যান দিবি?"
মানিক, সন্দীপন বা কমলকুমার প্রভৃতি সাহিত্যিকের লেখায়, গায় কাঁটা দেওয়া এই আর্ত চিতকার অনেকে শুনেছেন। গ্রামে খাবার না পেয়ে, ক্ষুদার্ত মানুষের ভিড় ৫-এর দশকে আকছার দেখা যেতো কলকাতায়। তাঁরা হাতে এলুমিনিয়ামের পাত্র নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরতেন ভাতের ফ্যান (মাড়) চেয়ে। আমি বাংলা সাহিত্যে পড়বার অনেক আগেই বাবার কাছে এই গল্প শুনেছিলাম। কিন্তু সেই মানুষ শুধু ভিক্ষে করেনি, মরতে মরতেও খাদ্যের দাবিতে এক ঐতিহাসিক লড়াই করে গেছিলেন যাকে আমরা বলি "খাদ্য আন্দোলন।"

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

হীরক রানী

রাজা = ব্যারিকেড ভাঙলো কেন! কোথায় ছিলো প্যায়াদাদের চোখ!
রক্ষামন্ত্রী = মহারাজ বুঝতে পারিনি সমাবেত হবে এতো লোক।
রাজা = তবে কি প্যায়াদা ছিলো না যথেষ্ট!
রক্ষামন্ত্রী = আজ্ঞে প্যায়াদারা লাঠি হাতে ছিলো সর্বদা সচেষ্ট।
রাজা = মিছিলের কন্ঠ স্তব্ধ করাই প্যায়াদাদের একমাত্র কাজ।
রক্ষামন্ত্রী = মহারাজ টেবিলের নিচে, ফাইলের তলে লুকায় নি কেউ আজ।
রাজা = নিরীহ লোকেদের উপর লাঠি চালানো মোটেই নয় দৃষ্টি কটু।
রক্ষামন্ত্রী = আজ্ঞে সে কাজে প্যায়াদারা যথেষ্ট পটু।

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৫

নবান্ন ~ অনির্বাণ মাইতি

তারপর সেলিম যাহা করিলেন তাহা কহতব্য নহে, ইতিহাসের স্বর্নাক্ষরে সে বীরত্বের কাহিনী লিপিবদ্ধ থাকিবে। এক পকটে থান ইট ও ওপর পকটে পরমানু বোমা লইয়া (ইহা শঙ্কু নির্মিত, নাকি কালাম নির্মিত সে বিষয়ে নিশ্চিত কেহ নহে) পুলিশের পশ্চাতে ধাবমান হইলেন । পাঠককে স্মরণ করাইয়া দিবার প্রয়োজন নাই আমাদিগের পুলিশ সচরাচর এই ধরনের আক্রমণের ক্ষেত্রে টেবিলের তলদেশ অথবা ফাইলের আড়ালকে বাছিয়া লয়। কিন্তু পথমধ্যে টেবিল অথবা ফাইল অপ্রতুল থাকিবার হেতু তাহারা পলায়নকেই শ্রেয় মনে করিয়া, এস এস কে এম অবধি তীব্রগতিতে ধাবমান হইলেন এবং সেইখানে পৌছোনমাত্রেই সরকারী চিকিৎসক গন তাহাদিগকে ভর্তি করিয়া লইলেন। দীর্ঘ পথ ধাবিত হওয়ায় অনেকেই অসুস্থ বোধ করিতেছিলেন কিনা তাই।

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০১৫

ক্ষুদিরামের ফাঁসি ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য়্য

​১৯০৮ সালে আজকের দিনে ফাঁসি হয় ক্ষুদিরামের।কতই বা বয়স তখন, এমন অনেকের প্রাণদান,আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম ১৯৪৭ সালে। তারপর থেকে তো লুণ্ঠন চলছে দেশের সম্পদ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি সবকিছুর। তবে স্বাধীনতা দিবস আমরা খুব ধুমধাম করে পালন করি, সকালে পতাকা উত্তোলন, পাড়ার কাউন্সিলর ভাষণ দেন, টফি বিলি করা হয়, দুপুরে মাংস ভাত, বিকেলে বিগবাজার ব্যাপক সেল দেয়, আর রাতে পিকনিক, বক্স বাজিয়ে, সাথে নাচ। সকালে অবশ্য মাইকে একবার বিদায় দে মা, সারে জাহাসে আচ্ছা বাজাই...

আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু ~ পরিচয় পাত্র

​বাদুড় বলে, ওরে ও ভাই সজারু
আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু।
আজকে হেথায় রামদা হাতে পেঁচারা
আসবে সবাই, মরবে ব্লগার বেচারা।
কাঁপবে ভয়ে বাঙালি সব ব্যাঙাচি,
ঘামতে ঘামতে ফুটবে তাদের ঘামাচি,
ছুটবে জঙ্গি লাগবে দাঁতে কপাটি
দেখবে তখন মস্ত ঢ্যাঙা চাপাতি।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্র রাজনীতি ~ অনিমেষ বৈদ্য

এক বন্ধুর বাবার মৃত্যু হয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে শোক সভা। সদ্য প্রয়াত কাকু ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অবসর নিয়েছেন কিছু বছর আগেই। যাই হোক সেই শোক সভা উপলক্ষ্যে বর্ধমান যাওয়া।
এই সেই বর্ধমান। এই সেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। হঠাৎ করে বর্ধমান এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করে মনে করিয়ে দেওয়ার কী প্রয়োজন? প্রয়োজন আছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ছবিটাকে বোঝার জন্যই প্রয়োজন আছে।

সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০১৫

ঈশ্বর ~ অনির্বান মাইতি


একটা ঈশ্বর থাকা না খুব জরুরি জানেন ? মানে ধরুন আমি যে কথাগুলো বলতে চাইছি লোকে সেগুলো বুঝতে চাইছে না, আমি যদি টুক করে আমার লেখার নিচে একটা ঈশ্বরের নাম লিখে দেই তা হলেই বেশ একটা জনসমর্থন জুটে যাবে। ধরুন আমি লিখলাম
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে ।
নাস্তিক সেও পায় বিধাতার বর ,
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর ।
শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো ,

সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫

​ শিল্প বিচার ~ কৌশিক সেনগুপ্ত

সিংহাসনে বসল রানি, বাজলো কাঁসর ঘন্টা,
ছটফটিয়ে উঠল কেঁপে সুব্রতদার মনটা,
রানি বলে, 'মন্ত্রী আমার রাজ্যে নেইকো শিল্প?'
মন্ত্রী বলে, 'ল্যাংচা সেটা শিল্প তো নয় অল্প।'
রানি বলেন 'অল্প বেশি দেখুক গিয়ে ববি',
ববি বলে 'আমার কেবল চেতলাটুকুই লবি'।
রানি হাঁকেন 'বোলাও তবে...বেহালার ঐ পার্থ',

মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০১৫

কদিন হল – শুভাশিষ আচার্য্য

কদিন হল সাহস গুলো বেড়াতে গেছে কিছুনা বলে
কেন্নো যেন কুঁকড়ে থাকি, বুকেতে হাত, বল নেইতো
পণ্য জন্ম হয়েছে কবে, কে জানে কখন লুঠ চলছে
জন্ম ভর দাস জন্ম, মাথাটা নুয়ে নিচের দিকে
কদিন হল সাহস গুলো বেড়াতে গেছে কিছুনা বলে

ওর চোখ দিয়ে – শুভাশিষ আচার্য্য

-- হ্যালো বাবা..
-- হ্যাঁ মা বল
-- কি করছিলে বাবা
-- এই একটু শুয়ে আছি একটু ক্লান্ত লাগছে তাই
-- ... তুমি ভাল আছ বাবা
-- হ্যাঁ রে মা ভাল আছি তুই চিন্তা করিস না
-- হ্যালো বাবাইরে
-- হুমম

না-মানুষের উপকথা - সুদীপ্ত চক্র

স্কুল থেকে ছেলে ফিরতেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল স্কুলের সাদা জামাটায় লাল ছোপ ছোপ দাগ, চুলগুলো সব এলোমেলো কাঞ্চন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ছেলেকে
- কি হয়েছে বাবা ? জামায় এত রক্ত এলো কোথা থেকে !
ছেলে চুপ করে থাকে
কাঞ্চন কি বলবে ভেবে পায় না তার ছেলেতো এমন নয় শান্ত স্বভাবের ছেলের আজ হঠাত্ কি হলো ! ভেবে পায় না কাঞ্চন
- কি হয়েছে বাবা বল আমায়, কেউ কি তোকে মেরেছে ? রাস্তায় কোন দুর্ঘটনা হয়েছে ? চুপ করে থাকিস না বল আমায়

রবিবার, ১২ জুলাই, ২০১৫

মেঘমুলুকে ঝাপসা পথে... - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

সোঁদা সোঁদা গন্ধ, ভিজে ভিজে রাস্তা, ঝিম ঝিমে নিস্তব্ধতা আর গোল গোল চোখ নিয়ে দেখি ওই উঁচুতে মেঘের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে আস্ত একখানা আইফেল টাওয়ার। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে আমার জ্ঞানগম্যির উচ্চতা পেয়ারাগাছ পেরোয় না। পাথর বা ইঁটের তৈরি স্তম্ভ মানেই কলকাতা ময়দানের মনুমেন্ট আর লোহা বা ইস্পাতের তৈরি উঁচুপানা কিছু দেখলেই আইফেল টাওয়ার, এর বাইরে অন্য কিছুর তুলনা টানতে পারিনা। আর এখানা দেখতেও অনেকটা আইফেল টাওয়ারেরই মত। ইয়াব্বড় হাঁ করে তাকিয়েছিলুম। গোটা দুয়েক সাহসী পাহাড়ি মাছি হাঁয়ের ভেতর ঢুকে সরেজমিনে দেখে নিয়ে আবার উড়ে বেরিয়ে গেল। শেষে ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকুনিতে চোয়াল বন্ধ হয়ে কটা কথা বেরিয়ে এল – ওটা ওখানে উঠলো কি করে?  

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

সাংসদ ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য

​সংসদে কেউ গলা ফাটাবেন আম জনতার স্বার্থে
প্লেনে চড়ে তাঁরা যাতায়াত করে কর দাতাদের অর্থে,
কেউ থাকে শুধু চুপচাপ বসে, বলেন যৎসামান্য
বিস্বয়ে কেউ হতবাক হন, বলেন জীবন ধন্য-
পেছন বেঞ্চে বসে দেন কেউ সামান্য দিবানিদ্রা
গালি দেন কেউ, মন দিয়ে শোনে দিকপাল ভাষাবিদরা;
গরম লাগছে ভয়ানক স্যার, অভিযোগ যায় স্পিকারে
কেউ ঘন ঘন পায়চারি করে গলা ভেজালেন লিকারে,
সংসদে কেউ বক্সিং লড়ে, চলে হাতাহাতি কুস্তি

​অনুগল্প ~ আশুতোষ ভট্টাচার্য্য


রোজকার মত দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথ ধরতে আজও ১১ তা বেজে গেল কাজলের। স্টেশানের পাশে ছোট চায়ের দোকান কাজলের, গ্রাজুয়েশান করে কিছুদিন টাইপ, শর্টহ্যান্ড শিখে বা সরকারি চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছিল কিছু, তারপর এই চায়ের দোকান।বেশ চলে দুজন কর্মচারী, চা, বিস্কুট চায়ের আবার হরেক রকম লাল চা, লেবু চা, দুধ চা, চিনি ছাড়া যার যা পছন্দ।অনেকে খবরের কাগজ পড়ে, খেলা , রাজনীতি নিয়ে মত দেয়, তর্ক চলে বেশ লাগে কাজলের।

​কাল ছিল ডাল খালি ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

​কাল ছিল ডাল খালি (ভাত আর ডাল, ব্যাস?)
আজ ফুলে যায় ভরে (হোলো তো পেটেতে গ্যাস?)
বল দেখি তুই মালি (অন্তরা? ও কী জানে!)
হয় সে কেমন করে? ( বোঝো! কোনও হয় মানে!)
গাছের ভিতর থেকে ( জাইলেম, না কি যেন?)
করে ওরা যাওয়া আসা (ওরা কারা? যাবে কেন?)

বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

নীল সাদা, সাদা নীল ~ অমিতাভ প্রামাণিক


ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি বেশ।
দু:খ হয়, জহরলাল জেনে যেতে পারলেন না
তার একটা জুড়ুয়া ভাই ছিল,
কুম্ভমেলায় নয়, সাঁওতাল বিদ্রোহে সে
হারিয়ে গেছে ভীড়ে।

মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০১৫

তেরো - সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়


রাত এখন কোপার কোপে। যাঁরা জানেন, তাঁরা তো জানেনই। আর যাঁরা আমার মত, বুঝতে না পারলে মুচকি মুচকি হাসেন, আর ভান করেন যেন সব বুঝেছেন, তাঁদের বলি, কোপা হলো কোপা আমেরিকা। আমেরিকা কাপ। ফুটবলের আসর। লাতিন ফুটবলের ধুন্ধুমার লড়াই। গেল হপ্তায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বার্সিলোনা জুভেন্তাস ঘটে গেছে। শেষ রাতে সেই নিয়ে ফোনে মেসেজ চালাচালি করতে গিয়ে দেখলুম, অনেক বড় বড় ফুটবলপ্রেমীই কেমন যেন আড়ো আড়ো ছাড়োছাড়ো করছেন। সকালে বাসে অফিস যাবার সময় নিত্যযাত্রিদের জোরদার আলোচনায় দেখলুম বার্সিলোনা, কোপা, এমন কি হিউমের আতলেতিকো কলকাতায় যোগদানের আলোচনাও কেমন যেন ঝিমিয়ে। শেষে বলেই ফেললুম, হলোটা কি? কোপা তে মেসি-নেইমার-সাঞ্চেজ-সুয়ারেজ, আর সবাই এত ঠান্ডা? হই হই করে উত্তর এলো বেলো টা চলে গেল যে, বল্লুও নাকি যাবে যাবে করছে...। অন্য দিক তাক করেই ছিলো, এবার দাগল তোদের সঞ্জয় সেন তো আছে রে ভাই, ওটাই আসল, কাতু-সোনি উপরি। ব্যাস। বুঝলুম ফুটবল আছে ফুটবলেই। শুধু টিভির পাশে, পাশের মাঠের ছোঁয়ার আরো রঙিন হবার চেষ্টা চলছে মাত্র।

মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০১৫

ডেসপাইট বিয়িং এ উওম্যান ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

মানে পাতি মেয়েছেলে হয়েও 
যে'ভাবে তুমি সন্ত্রাস রুখেছ… 

ইতিহাসে শূন্য পাওয়া
ভোটে জেতা লোকটা জানতই না
মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও, আজ্ঞে হ্যাঁ, মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও,
ক্যুরি বাড়ির মেয়েটা, দু' দু'বার নোবেল মঞ্চ আলো করেছিল।
কোনও শিশ্নউদ্ধত পুরুষ যে' সাফল্য ভাবেনি কখনও
একবার ফিজিক্সে অন্যবার কেমিস্ট্রিতে
কী সাহস ভাব একবার
মহামহিম ঐশ্বরিক প্রভু অবশ্য সে ঔদ্ধত্য মেনে নেয় নি
সওগাত পাঠিয়েছিল মৃত্যুমাখা রক্তরোগ