শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০১৪

বাজেট ~ সংগীতা দাশগুপ্তরায়

​আমাদের কলকাতার মত এদেশে পার্কিং নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় না তেমন। সব দোকানের সামনেই দোকানের দেড়া সাইজ পার্কিং লট। তাতে আবার ফ্রি পার্কিং দিব্যি গিয়ে নিজের পছন্দমত পার্ক করে দোকানে ঢুকে পড়লেই হল। আমিও আজ দুক্কুরবেলায় কি করি কি খাই কি দেখি কি ভাবি করতে করতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। একখানা তেপান্তর পার্কিং লটে গিয়ে গাড়ি পার্ক করে নামতেই মুখোমুখি এক দম্পতি। দেখেই বোঝা যায় আইটিওয়ালার মা-বাবা। আমাদের ছোটবেলায় ফেরিওয়ালারা যেমন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরত বড়বেলায় তেমনি আইটিওয়ালারা দেশে দেশে ঘোরে (আমার ফ্রেন্ড লিস্টে হাজার খানেক আইটিওয়ালা আছে এই মুহুর্তে। ভাগ্যিস তাদের মধ্যে মাত্র পঁচিশ শতাংশ বাঙালি এবং সেই পঁচিশের মধ্যে দশ আবার "আমি ঠিক বাংলা পড়তে পারিনা, বলতে পারি অবশ্য" টাইপ বাঙালি, তাই এ যাত্রা বেঁচে গেলাম হয়ত) । তবে এই দম্পতির কপালে চন্দন তিলক এবং বাকি পোশাক দেখেই বোঝা যায় দক্ষিণী। ভদ্রমহিলা একটুঁ পিছিয়ে থাকলেও ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন হাসিমুখে

তুমি কি এখানেই থাক?
হ্যাঁ, মাঝে সাঝে থাকি ... আমিও হাসলাম
আচ্ছা। বাজার করতে এসেছ?
হুঁ... এর পর আর কি বলব বুঝে পাই না।
খুব তাড়া আছে তোমার?
না না, কেন বলুন তো? কিছু বলবেন?
ভদ্রমহিলা এবার এগিয়ে এলেন... বাড়িতে কফি ফুরিয়ে গেছে। ছেলে গেছে ডেট্র্য়েটে। আজ ফিরবে। এই পিছনেই থাকি' ... হাত দিয়ে একটুঁ দূরের সারি সারি সাজানো কাষ্ঠকুটির দেখালেন।
আমি ঠিক বুঝছিনা কি করা উচিত।
জিজ্ঞেস করলাম কফি খাবেন? কফি খেতে ইচ্ছে করছে?
ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন, না না, কফি তো কিনেছি।
তাহলে? বাড়ি অব্ধি রাইড চাইছেন?
মহিলা স্পষ্টই বিব্রত ... না না, আমরা হেঁটেই যেতে পারব, কাছেই তো।
তাহলে? অন্য কোন সমস্যা?
ও নো নো... নো প্রবলেম।
তাহলে!!
মহিলা হেসে বললেন, তোমার নাম কি?
সঙ্গীতা
ও, সঙ্গীথা ...
উঁহু, সঙ্গীতা
হ্যাঁ, সঙ্গীথা...

হাল ছেড়ে দিলাম। দক্ষিনীদের দিয়ে ত বলানো খুব চাপের ।
এত সিনিয়র কাউকে তো তাদের নাম জিগ্যেস করা যায় না। ওরা নিজেরাও নাম বললেন না। ভদ্রমহিলা আর একটুঁ হেসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললেন , উই নিড লিটল হেল্প।
কি হেল্প? বলুন, পারলে নিশ্চই করব
মাই সান ইজ ডেটিং ...আমেরিকান গার্ল ...
হেসে ফেললাম। আচ্ছা। ভাল তো ... আরন্ট ইউ হ্যাপি?
নো নো, হ্যাপি আ লট।
তবে?
আমার ছেলে মেয়েটির সঙ্গে আমাদের দেখা করাতে চায়। তুমি কি বলতে পারবে ওর জন্য আমাদের কি গিফট কেনা উচিত?
আহা, এমন আনন্দ এ বিভুঁইয়ে! শপিং সাজেশন দিতে হবে !
পার্স দিতে পারেন, কিম্বা একটা সুন্দর পেন্ডেন্ট, অথবা পারফিউম কিংবা ইয়ারিং, জুয়েলারি বক্সও দারুন হয়... আমি আপনবেগে পাগলপারা
ভদ্রমহিলা ভুরু কুঁচকে থামিয়ে দিলেন "কি রকম দাম পড়বে"?
আপনাদের বাজেট কেমন?
বাজেট? কর্তা গিন্নি ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের স্পিডে কিছুক্ষন কথা বলে ডিসাইড করলেন ছেলেকে জিজ্ঞেস করবেন কত দামের মধ্যে দেওয়া উচিত ... "মানে, আমরা তো ঠিক জানিনা কতদিন থাকবে এই সম্পর্ক তাই বেশি দামী দেওয়া ঠিক হবে কিনা... কাল এসে কিনব বরং "
খুবই যুক্তিযুক্ত কথা ।

মনে হল বলি একজোড়া জুতো দিয়ে দিন সুন্দর দেখে। সম্পর্ক টিকলে ভাল না টিকলেও জুতো সেক্ষেত্রে পারফেক্ট। তবে সেটা বলার আর সাহস দেখালাম না। মাথার চাঁদি অলরেডি গরমে তেতে ফাটবে ফাটবে করছে। আর কথা না বাড়িয়ে দ্যাটস আ গ্রেট আইডিয়া বলে দোকানে ঢুকে গেলাম।
কাল আর একবার ঠিক ওই সময় ওই দোকানের সামনে যাব ভাবছি...বাই চান্স যদি দেখা হয়ে যায়।
কারন আবার কি? কিস্যু না... স্রেফ কৌতূহল ... পারমানেন্ট রিলেশনের বাজেট কত আর টেম্পের বাজেট কত এটা জানা জরুরী না?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন