শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৪

​জনমাসটমি : একটি রচনা - পরিমল সেনগুপ্ত

সাজেসান মেলেনি, তাই বানান ভূল খমা করে দেবেন।

কোসচেনটা কমন পড়েনি স্যার। তাই রচনাটা তেমন ঘ্যাম হবে না। পাস করিয়ে দেবেন স্যার। আসলে কী হয়েচে জানেন, আপনি সরসোতি পুজো নিয়ে রচনা দিতেন, আমি ওই ভিজে ভিজে ডাল মাখা, লুচি, বাঁদাকপি, তার পর হলুদ সাড়ি পরা ডালিং – এ সব নিয়ে জমিয়ে লিখে দিতাম স্যার। দুগ্গো পুজো দিতেন, কিসমাস এমন কি ইদ। কিন্তু জনমাসটমির কোনও সোয়াদ আমার জিভে নেই।
যাগ্গে, জনমাসটমি বিসয়ে আম যাহা জানি লিখি। জনমাসটমির দিন সিকিসন তাঁর নিজের বংসে জনমান। কিন্তু তাঁর মামা কংস তখন ভাবেন যে, এই ভাগনে আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে। তখন তিনি পুলিস পাঠান। কিন্তু আমাদের নতুন সিসুটি তখন রান্নাঘরে ছিলেন, কারণ তখন তিনি মায়ের ফ্রিজ থেকে আমুল ননী চুরি করছিলেন। কিন্তু পুলিস ফিরে এলে আনন্দে সবাই মিলে ঝুলন উৎসব করে। কারণ, পুলিস কিছু না পারলে সব যুগেই পাবলিক হেভি খুসি হয়। ইতিমধ্যে সেই সিসু নানান রকম মারপিটে জড়িয়ে পড়ে। ইস্কুল থেকে ড্রপ আউট হয়ে গরু-ফরু চরায়। তখন সে দেশে মিড ডে মিল চালু ছিল না বলে মনে হয়। সিসুটি ইতিমধ্যে নানা রকম গুন্ডাদের ঠেঙিয়ে হেভি জনোপিয় হয়ে ওঠেন, বিসেস করে কালীয় বলে একটি খতরনাক গুন্ডাকে লেকের মধ্যে মারায় এলাকার জন সাধারণ তাঁকে নিজেদের পতিনিধি বলে মনে করে। এই সময় খুব সম্ভবত তিনি ভুল করে একটা কাছিমও মেরেছিলেন। কিন্তু পরবত্তি কালে তিনি বিপন্নো জানোয়ারদের আর খুন করেননি। যদিও ময়ূরের পালক ব্যাপারট একটু গণ্ডগোলের।
যাই হোক, এর মধ্যে দিয়ে এই জনমাসটমির মহান ব্যাপারটা আমরা বুঝতে পারি, কারণ জনমাসটমি না হলে তো বাকি লাইফটাই হত না। তাই আমরা সকলেই জানি যে জনমাসটমি একটি মহান উতসব। বলা যেতে পারে যে, আগস্ট মাসে আমাদের দুটি উতসব। একটি এই জনমাসটমি আরেকটি আমাদের সাধিন ভারতের জনম দিন। সে দিক থেকে দেখতে গেলে আগস্ট মাসটি এই দুই জনমের জন্য বিখ্যাত। এক জন সিকিসন আরেক জন ইনডিয়া।
যাই হোক, সিসুটি যখন বড় হলো, তখন সাভাবিক ভাবেই সে জানতে চাইল যে চোলিকে পিছে কেয়া হ্যায়? তখনকার দিনে ইস্কুলে জিবনবিগ্যান পড়ানো হোত না বলে সে নদির ধারে ওই সব গোয়ালিনীদের চান দেখতে গেল। আর জলের মধ্যে পুরোটা দেখা যায় না বলে গোয়ালিনীদের জিনস লুকিয়ে রেখে আরও মন দিয়ে দেখে সুনে সব সিখতে চাইল। এতেই বোঝা যায় যে, জনমাসটমির দিন জনম নেওয়া দেবতার সমস্ত বিসয়ে খুব উতসাহ ছিল।
এখন এই ছেলেটি রাজ বংস থেকে কংসের তাড়া খেয়ে গোয়ালা বংসে চলে আসায়, ওর মামিমাও গোয়ালার বউ হয়ে ওঠেন। সেই মামিমার নাম ছিল স্রিমতি রাধারাণি ঘোস, পতি স্রি আয়ান ঘোস। এই বয়েসে সব ছেলেই স্যার মাসিমা, মামিমা, বৌদির সঙ্গে একটু ইনটু-মিনটুতে জড়িয়ে পড়ে, মানে ওই গোঁপ গজানোর সময়, সে আপনাকে আর কি লিকবো। আপনিও জানেন। সে আর আপনাকে বলে লজজা দেবো না। সিনেমা হলে ধারের সিটে এই বয়সে কি আপনি যাননি? কিন্তু আমি লিখলেই নম্বর কাটবেন।
যাই হোক, জনমাসটমিতে জনম নেওয়া সিকিসন এই সময়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে দিল্লি চলে যান। কিন্তু ভুলে ইউপি-তে নেমে পড়েন। সেখানে তখন কুরুখেতর বইটার সুটিং হচ্ছিলো। আমাদের ভাইটির গায়ের রঙ নীল বলে হিরো হতে পারেননি। হিরোর ডেরাইভার হয়ে যান। কিন্তু তিনি এমন হেবি ডায়লগ দেন যে, সেই ডায়লগগুলো সব নিয়ে বই ছাপা হয়ে গেলো। সোনা যায়, ওই হিরোদের ফ্যামিলিতে বউ নিয়ে পোবলেমেও আমাদের সিকিসন জড়িয়ে পড়েন। সেই সব নিয়ে আমি বেসি জানি না। ফ্যামিলির কেচ্ছা স্যার না ঘাঁটাই ভালো।
ওই কুরুখেতর ছবিটা রিলিজ হল না কেন? কেন পরে ওর মেকিংটা টিভিতে দেখাল? কেন আমাদের সিকিসন যে হিরোকে গ্যান দিলো, সেটা আলাদা বই হয়ে গীতা নামে ছাপা হলো? গীতা কি তবে মামিমা রাধার ছোট বোন? স্যার। এ-ই কোসচেনটা আমাকে কুরে কুরে খায়।

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

খুঁজে ফেরা – গোধুলি শর্মা মিত্র

রোববার মানেই সাফসাফাইয়ের দিন।সেই ছোটবেলার সহজপাঠে মনটা ফিরে যাওয়া... “আজ মঙ্গলবার, আজ জঙ্গল সাফাইয়ের দিন।”দিন বদলে এখন মঙ্গল হয় রবিতে।দার্জিলিং চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে ডাস্টার নিয়ে লেগে পড়লাম।মানুষ মোটে তিনটে, তবু ছ’ছটা কামরা যেন কম পড়ে যায় গুনতিতে। চকচকে তকতকে ফ্ল্যাটটা আরও আধুনিক, আরও সুন্দরী হয়ে ওঠে। হালফ্যাশানের আসবাবগুলোর ফাঁকে দু-একছিটে ময়লাও কেমন যেন চোখে লাগে (চোখ টানে)অথচ হরলাল মিত্র লেনের সেই ঘুপচি ঘরটায় কামরা ছিল মেরেকেটে আড়াইখান।শোবার ঘরের এক কোণায় খবরের কাগজের পাহাড়ে নিশিন্তে ঘুমিয়ে থাকতো ময়লা।তবু চোখে লাগতো না।আঙুলের কড়ে ওই সাকুল্যে আড়াইমাত্রাই ছিল এক পৃথিবীর মতো। যেন মায়ের ছিঁড়ে যাওয়া , পুরনো হয়ে যাওয়া জংলা শাড়িটা ,আদতে রংচটা, তবু তার পরতে পরতে হলুদ স্নেহ মাখা গন্ধ।বেশ লাগছিল, বয়সের ভার নেমে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে
“বাবা এগুলো কি বলোতো?”।ডোডো ছুট্টে এলো ওঘর থেকে। হাতে একগাদা দোমড়ানো মোচড়ানো জঞ্জাল
“একি তুই আবার নোংরা ঘাঁটছিস?”। হালকা চোখরাঙ্গানি পেরিয়ে ডোডো নাছোড়বান্দা।
“বলো না বাবা, এগুলো কি?”
হাতবদল হয়ে ছেঁড়াখোঁড়া কাগজগুলোর জট খুলতে থাকে একটু একটু করে...
ফর্দ – ঐকতান সংঘের সার্বজনীন দূর্গাপুজা
মূর্তি – একচালা, ডাকের সাজ, টানাটানা চোখ তার নীচে আবার দাগটানা মানে ওটা আবশ্যিক।
প্যান্ডেলের কাপড় – লাল হলুদ হাইফেন মেরুন সবুজ তারপর ব্র্যাকেটে বড় বড় করে লেখা সব বাদ শুধু বেগুনী-সাদার কলকা।মনে পড়ে গেল নচেদা সেবার খুব রেগে গেছিলো। অম্বর ডাক্তারের চেম্বারে আগুন লেগে যায় প্রায়। তপনটা পাক্কা ঘটি, হাত-পা নেড়ে ব্যাটার সে কি দাপট।আমরাও দমবার পাত্র নাকি?লালু, বাপী সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলামশেষে নচেদা রেগেমেগে বলে উঠেছিল “পূজো ক্যানসেল”ব্যাসস আর কি, অমনি সবাই ভিজে বেড়াল।“তুমি যা বলবে সেটাই ফাইনাল, তুমি লিখে দাও গুরু...”সেবার প্যান্ডেলটা হয়েছিল খাসা।ডোবা পুকুরের পেছনের মাঠটায়, আসমানি রঙের টুকরোগুলো বাঁশের খুঁটির গায়ে লেগে যখন উড়ছিল আলতো হাওয়ায়, মনে হচ্ছিলো আকাশে মাটিতে একাকার হয়ে গেছে পেঁজা তুলোঢাকে কাঠি পড়তেই বেয়াদব একটা ধুকপুকুনি দৌড়ে বেড়াতো শিরায় শিরায়, নিখুঁত হওয়ার দ্বন্দে, আধুনিক হওয়ার দ্বন্দে সেই ধুকপুকুনিটাই কেমন যেন লজ্জা পায়, লুকিয়ে পড়তে চায়। ভাবতে ভাবাতে পাতা উল্টে যাই অন্যমনে

পূজোর উপকরণ- ব্যানার্জিদা। কি অসাধারণ দেখতে ছিলেন, ছফুটের চেহারায় যখন ষষ্ঠীর বোধনে গমগম করতো ”...”, গিঁট বাঁধা খড়ের মণ্ড, গঙ্গামাটি ,পাটের দড়ির চুল জুড়ে জুড়ে জেগে উঠত প্রাণ, ছুঁয়ে যেত রক্তমাংসে।সেই শুরু, তারপরের কয়েকটা দিন তুমুল হইহইমুদিখানার বাচ্চুদা, রেল-কলোনির টুকাই আর তার ভাইগুলো, মুখার্জী বাড়ির টিপটপ সুমিত সকলের আনন্দগুলো কেমন যেন মিলেমিশে এক হয়ে যেত।এখনকার মতো মাপা হাসি, হিসেবী হাতমেলানো নয়। নকুলদার লড়ঝড়ে ঠেলায় বাসি তেলে ভাজা এগরোলটাও এমনিই ভালো লাগতো, কোন চকচকে মোড়ক ছাড়াই।প্যান্ডেলের পেছনে জড় হওয়া সার সার জিলিপি-নিমকি-বাদামের অস্থায়ী আস্তানায়,সদ্য পাট-ভাঙ্গা জামদানীটায়, খানিকটা বুঝেও না বোঝার অজুহাতে ছুঁয়ে যাওয়া আঙ্গুলগুলোয়, সব জায়গায় কেমন একটা ঘোর।ঘোর এখনো লাগে, তবে সেটা জাঁকজমকের,চোখ ধাঁধানো চমকেরমনে পড়ে গেল অষ্টমীর ভোগ যেত আমাদের বাড়ি থেকে। মা সক্কাল সক্কাল স্নান সেরে লাল টিপে ঠিক (কেমন) যেন অন্নপূর্ণাপাড়ার বড় বড় দিদিরা, বৌদিরা সব জড় হয়ে বসত মায়ের পায়ের কাছটায়। হাতে হাতে রান্না হত ধোঁওয়া ওঠা আনন্দ। তারপর বিলি হত সারা পাড়া জুড়ে আত্মীয়তা।নবমীর সন্ধ্যায় আবার শব্দদূষনটা একটু বেশি। শুরু জগাদার হেঁড়ে গলায় রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে,তারপর তোতলা পল্টুর সেই এক “পূজার সাজ”আমরাও এটা-ওটা এদিক-সেদিক ছন্দ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম মাইকের সামনে, যদি কোন বনলতা সেন জুটে যায় এই মওকায়তখন মঞ্চসজ্জার আড়ম্বর ছিল না,ডলবি-ডিজিটাল প্রক্ষেপণ ছিল না, ,তবুও ঘ্যাড়ঘ্যাড়ে চোঙ্গামুখ দিয়ে যে অবাঞ্ছিত শব্দগুলো বেরিয়ে পড়তো মাঝেসাজে, তারাও কেমন একটা অনুরণন (সুর) বেঁধে দিতো, খুব অল্পে খুব সাধারণে বেঁচে থাকার সুর। ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপে রাখা পুজো ২০১৪ ফোল্ডারটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হল।ইন্টারনেট ঘেঁটে বাছাই করে রাখা তাক লাগানো সব কনসেপ্ট আর থিমগুলো ভীষণ ম্যাড়ম্যাড়ে একঘেয়ে আর সস্তা হয়ে হারিয়ে যেতে লাগলো। সময়ের সাথে সাথে পূজোর বাজেটে বাড়তে থাকা শূন্যর সংখ্যাগুলোও কেমন অযথা হয়ে মুছতে লাগলো একটা একটা করে। পড়ে রইলো মন্ডপের পাশে ভাঙ্গাচোরা সহজ-সরল বেঁচে থাকাটা, পাঁচ ছটাক সাদাকালো হইহুল্লোড় আর শালপাতায় মোড়া ঝাপসা নস্ট্যালজিয়া।

রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

নির্মল ভাষণ ~ অনামিকা

তুমি নির্মল আজি, জঙ্গল কর এই বাংলাকে গুছায়ে।

তব উস্কানি ভরা ভাষণ আজ দিক
আইনের ভয় ঘুচায়ে।
ঘাস-ফুল ধ্বজা উঁচায়ে।
তুমি, নির্মল কর, জঙ্গল করো বাংলাকে আজ গুছায়ে।

লক্ষ্য-শূন্য শিল্প-বাসনা ছুটিছে গভীর আঁধারে,
জানি না কখন ডুবে যাবে কোন্
অকুল-গরল-পাথারে!
এসো মা-মাটি-মানুষ হন্তা,
তুমি দাঁড়াও, রুধিয়া পন্থা;
আইন ও কানুন রুখে দিয়ে এসো
সংবিধানকে মুছায়ে
মলিন বিধান ঘুচায়ে ।
তুমি, নির্মল কর, জঙ্গল করো বাংলাকে আজ গুছায়ে।

আছ, ত্রিফলা মিছিলে, সাদা আর নীলে, গভীর সলিলে, গহনে;
আছ, লতায়-পাতায়, দেওয়ালের গায়, চিট-সারদায় গোপনে।
আমি, নয়নে ন্যাকড়া বাঁধিয়া,
খাই মুড়ি চানাচুর চা দিয়া;
মোরা দেখি নাই কিছু, বুঝি নাই কিছু,
তিনি তা দেবেন বুঝায়ে।
আমরা দিতেছি ফুঁ চায়ে ।
তুমি, নির্মল করে, মানুষ পোড়াও দলের পতাকা উঁচায়ে।
তব, জ্বালাময়ী কথা দিয়ে যাক্, সব
আইনি শাসন ঘুচায়ে।
মলিন মর্ম মুছায়ে ।
তুমি, নির্মল আজি, জঙ্গল কর এই বাংলাকে গুছায়ে।

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

​অনামিকার কবিতা!

অবাধ্য খুব। দেখছে না সে বুদ্ধিজীবির দল বদল,
জয়ধ্বনির হিড়িক দিয়ে বদলে নিচ্ছে যে যার ভোল।

সেই সময়েও অবাক কথা, লাল পতাকাই চিহ্ন তার।
বাড়ির লোকও শিখতে ব্যর্থ রাজনৈতিক ডুবসাঁতার।

ঘর ছেড়েছে পুরুষরা সব। একলা মেয়ের সকল দায়।
কাজেই মেয়ে অরক্ষিত… সব অপমান করাই যায়।

মুচলেকা দাও, জরিমানাও, তাদের হাতেই সব অস্ত্র।
নইলে মেয়ে ধর্ষিতা হও। যাও হেঁটে যাও বিবস্ত্র।

আইসিডিএস ভরসা মাত্র, সেই মেয়েটা কোত্থেকে
বারো লক্ষ করবে জোগাড়, ভেবেই অবাক প্রত্যেকে।

স্রেফ অজুহাত। অন্য কিছুর লক্ষ্য ছিল স্পষ্টতই।
আমরা বোধহয় খুব নাবালক, এই যে এত অবাক হই।

পোস্টমর্টেম রিপোর্ট রাণীর ইচ্ছেমতন হচ্ছে হোক।
বৃহন্নলা স্বদেশ আমার দিব্যি এখন ধর্মাশোক।

গল্প শেষে একটা মেয়ে গলায় দড়ি ঝুলছিল
আসল কথা তার বাঁচবার পদ্ধতিটাই ভুল ছিল।

মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

​বাঙালনামা - ১ ~ তমাল রাহা

বাঙালনামা - ১ প্রথম উপলব্ধি "আমি বাঙাল"। ৭ জুলাই, ১৯৭৭ মাঠে যাওয়া বাবার সাথে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ দেখা। এর আগে ভরসা ছিল রেডিও। বাবার সাথে অজয় বসু, পুস্পেন সরকার এর গলায় ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে মানসিক ভাবে মাঠে থাকলেও, ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান এর ম্যাচ মাঠে বসে দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা। সে বছরেই লীগের ইস্টবেঙ্গল আর পুলিশ টীম এর খেলা দেখতে গিয়ে টিকিট পাই নি, বাবার কাঁধে বসে রাম্পার্ট এ দাঁড়িয়ে খেলা দেখা হযেছিল মনে আছে। সঙ্গে বাবার প্রতিশ্রুতি 'দুঃখ কোরো না সেজদা (বাবা আমায় ওই নামেই ডাকেন, একান্নবর্তী বাড়ির সেজ ছেলে বলে), তোমায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ দেখাতে নিয়ে আসব। উফফ , এত্ত লোক। মাঠে এসে দেখি গ্যালারি তে প্রচুর লোক, যারা আমার ঠাম্মার মতো করে কথা বলে, বাঙাল ভাষায়। বাবার কিঞ্চিত অস্বস্তি। চারপাশে বাচিক শিল্পীর দল। অবশ্য তখন সেটা appreciate করার মতো বয়স হয় নি। শিহরণ জাগানো অনুভূতি ৭ বছর বয়সের এক বালকের। খেলা শুরু, মিহির বসুর দুরন্ত শট বিশ্বজিৎ দাসের হাত এড়িয়ে মোহনবাগানের জালে আছড়ে পড়তেই ঘর ফেটে পড়ল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের চিৎকারে। হাবিব নাচে, উল্গা নাচে, পি কে বাজায় ঢোল / দেখবি যদি আয়রে তোরা মিহির বোসের গোল। এরপর আবার পিন্টু চৌধুরীর ফ্রিকিক মোহনবাগানের জালে , বাবার সাথে মাঠে চিত্কার। কেমন যেন একটা ঘোর। জন্ম এই বাঙাল এর।

"বাঙাল মনুষ্য নয়, উড়ে এক জন্তু/ লম্ফ দিয়া গাছে ওঠে ল্যাজ নাই কিন্তু"… অনেকবার শুনেছি, বন্ধুদের কাছে। সত্যি কথা বলতে কি এটাকে মজা হিসেবে নিতে শিখেছি। জন্ম এদেশে হলেও বাঙাল গন্ধটা গা থেকে ঘোচে নি। তার ওপর ইস্টবেঙ্গল এর সাপোর্টার ! আর মজাটা হলো এই যে, ওই ছড়াটা লেখাও আবার এক বাঙালের , সুকুমার রায় , যিনি জন্মসূত্রে ছিলেন পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জের লোক। ভারী মজার … বাঙাল নিয়ে ছড়া লিখল আরেক বাঙাল, আর তাই নিয়ে বাঙাল খেপায় ঘটিরা। আর আমার মতো বাঙাল রাও ছেড়ে কথা কয় না, ফলে চলতে থাকে কথার লড়াই .... বাঙাল-ঘটি, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ইলিশ-চিংড়ি …. (চুপিচুপি বলি, চিংড়ি কিন্তু বেজায় খেতে লাগে আমার ) … নীহাররঞ্জন রায় "বাঙালির ইতিহাস" এ লিখেছিলেন প্রাচীন বঙ্গদেশের একটি বিভাগের নাম ছিল বঙ্গাল , সেখানকার অধিবাসীরাই কি প্রথম বাঙাল? তবে বাঙাল কথাটার চল ছিল না তখনও। মনে হয় এই কথাটা আসে আরো কিছুদিন বাদে। মোটামুটি বাংলার নবজাগরণের পরেপরেই। নব্যশিক্ষিত জমিদার সম্প্রদায়, যারা সেসময় বাংলার সংস্কৃতির ধারক-বাহক মনে করতেন নিজেদের, তারাই বোধহয় ওনাদের ততাকথিত শিক্ষিত শ্রেনীর বাইরের সকলকে 'বাঙাল' ভাবতেন। আমি ভুলও হতে পারি। যদিও হুতুম প্যাঁচার নকশা'য় বাঙাল জমিদারের বিবরণ থেকে স্পষ্ট, 'বাঙালের ভূত' নাগরিক জীবনে নেহাতই বেমানান।

তাহলে বাঙাল ব্যাপারটা কি সংস্কৃতিক, নাকি ভৌগলিক? অভিধান দেখছিলাম, সেখানে বলছে বাঙাল (বিদ্রুপে) [bāṅāla (bidrupē)] 1 পূর্ববঙ্গবাসী; 2 (বিরল) গ্রাম্য লোক। মানে কালীপ্রসন্ন বাবু ঠিক আভিধানিক অর্থেই শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। আসলে, খুঁজছিলাম বাঙাল কথাটার উত্‍স। হেমেন্দ্রকুমার রায়ের 'ভীমে ডাকাতের বট' গল্পে দুই বন্ধু ঝগড়া করতে করতে একে অপরকে 'বাঙাল' ও 'ঘটিচোর' বলে সম্বোধন করে। ঘটিচোর থেকে ঘটি? বাংলা অভিধানে 'ঘটি' শব্দের মানে খুঁজলে "লোটা, জলের পাত্র…" পেলেও 'পশ্চিমবঙ্গবাসী' পাওয়া যায় না। ঘটির পাল্টা হলো লোটা। আসলে ওই আর কি "ইসে" আর "কচু"র পাল্টা হিসেবে "নেবু, নুচি, নংকা, এলুম, গেলুম" নিয়ে মজা করা। যেমন যখন বলতে শুনি, "শালা সত্যযুগের পাবলিক মাইরি, হাতের লেগে থাকা ঘি পচে যাওয়ার পর-ও সেই পচা গন্ধ শুঁকে চলেছে, ছ্যাঁ ছ্যাঁ ;-))... উত্তরের দেরী নাই "সইত্যযুগ? গন্ধ কি হে, এখনও তো হাতের চট্‌চটে ভাবটাও যায় নাই! :-)))"

মাঝে মাঝে যদিও আমার মজাটা ঠিক মজা লাগে না। আসলে মজা করা আর হ্যাটা করার মধ্যে একটা সূক্ষ লাইন আছে, যেটা অনেকেই অতিক্রম করে যাই। যেমন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এর সেই বিখ্যাত ডায়লগ। মনে পড়ে? "বাঙাল পুংলিঙ্গ আর বাঙালি স্ত্রীলিঙ্গ।" 'বাঙালি' অর্থে পশ্চিমবঙ্গের লোক। পিতৃতান্ত্রিক ভাষ্যটি গোষ্ঠীগত শ্রেষ্ঠত্ব দাখিলে ব্যবহৃত হয়ে সমবেত বাঙালের হাততালি কুড়োল, ঠিক হলো কি? ফিরে আসি আবার ফুটবলের কোথায়। আজ বাঙাল-ঘটি র লড়াই কেবল ফুটবল মাঠে। বাড়িয়ে লাল পার্টি বলুন, গেরুয়া পার্টি বলুন আর সবুজ পার্টি বলুন, সেখানে তো বাঙাল-ঘটি মিলে মিশে একাকার। বাঙালের ছেলে মোহনবাগানের সাপোর্টার হলে সে "ঘটি" (যেমন বাবলু ভটচাজ্জি না চুনীবাবু), আর ঘটির ছেলে/মেয়ে ইস্টবেঙ্গলের প্রতি সদয় হলে সে "লোটা" (যেমন মিহির বসু)। আমার অবাঙালি বন্ধুরাও এই লোটা-ঘটির বেড়াজালে বন্দী। আর সেকারণেই ভেঙ্কটেশ, আপ্পারাও, ধনরাজ, আমেদ আর সালে এই পঞ্চপান্ডব, বঙ্গদেশের অধিবাসী না হয়েও পারফেক্ট বাঙাল।

কমলকুমার মজুমদার একবার বলেছিলেন, "বাঙালদের হিস্ট্রি আছে, জিওগ্রাফি নেই।" বাড়িতে গপ্পো শুনেছি ঠাম্মার কাছে। ফরিদপুর এর ভাঙ্গা থানা, সদরদিহি গ্রাম, নদী , পুকুর, মাছ , সেখানকার মানুষজন। সবটাই হিস্ট্রি, ভূগোল টা আমার দেখা হয় নি। কে যেন বলছিলেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব টা বোধহয় সেই হারিয়ে যাওয়া ভূগোল বই !

শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৪

ইলিশের বিরিয়ানি ~ প্রতীক দাস

বিরিয়ানি আর ইলিশ! কেউ আগে ভেবেছিল দুই প্রান্তের দুই প্রিয় খাদ্য একসাথে বিয়ে করে ইলিশের বিরিয়ানি হলে কেমন হয়? চেষ্টা করে দেখুন! অসম্ভব ভাল!


বিরিয়ানির চাল ভিজিয়ে রাখুন আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা। 

আলাদা করে একটা হাঁড়ি তে জলের মধ্যে নুন বেশি করে দিয়ে, আর এলাচ, দাড়চিনি, তেজপাতা দিয়ে ফোটান। এই জল টা তে কতটা নুন দেবেন? যতটা দিলে সমুদ্রের জলের মত নোনতা হয়, ঠিক ততটা। যখন টগবগ করে ফুটবে, তখন চাল দিয়ে দিন। চাল গলে যাওয়ার আগে একটু শক্ত শক্ত থাকতে নামিয়ে ফেলুন। ফ্যান টা ফেলে দিন। ভাত যেন একদম ঝুরজুরে হয়। 


ইলিশ মাছ কয়েকটা পিস আধঘন্টা আগে নুন, কাঁচা লংকা বাটা, অল্প একটু সাদা তেল, বেশি করে ঘী দিয়ে মাখুন। মাখার পরে দশ পনের মিনিট রেখে দিন। কড়াই তে সাদা তেল ৫০ মিলি (এক টেবিল চামচ সাদা তেল) ৭৫ মিলি ঘী এক সাথে মিশিয়ে গরম করুন। গরম হয়ে গেলে মাছ গুলো ছেরে দিন। খুন্তি দিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে নিয়েই দুধ ঢেলে দিন। ( ৫০০ গ্রাম মাছে ৫০০ মিলি লিটার দুধ)। ভাল করে ফুটিয়ে নিন, ফোটার পরে যখন অর্ধেকের একটু কম হবে দুধ, তখন নামিয়ে নিন।  

অন্য একটা হাঁড়ি নিন। ভিতরের ভাল করে ঘী মাখিয়ে নিন। ঝুরঝুরে ভাগ টা কে এই হাঁড়ি তে ঢেলে দিন। ভাতটাকে হাঁড়ির মধ্যে সমান করে দিয়ে মাছ গুলো ওপরে সাজিয়ে দিয়ে দিন। আর মাছ তৈরী করার সময় যে ঝোলটা থাকবে সেটা হাঁড়ির মধ্যে ছড়িয়ে দিন এই ভাতের ওপরে। গ্যাসে বসিয়ে সিম এ (কম ফ্লেম এ) করে ৫ - ৭ মিনিট রাখলেই হয়ে যাবে। দেখবেন যেন এই হাঁরির ঢাকনা টা ভাল করে চাপা দিয়ে বন্ধ থাকে। এই শেষ টা হল সেই যাকে বলে দম দেওয়া। 

আর কি, খেয়ে নিন গরম গরম! 

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০১৪

বাজেট ~ সংগীতা দাশগুপ্তরায়

​আমাদের কলকাতার মত এদেশে পার্কিং নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় না তেমন। সব দোকানের সামনেই দোকানের দেড়া সাইজ পার্কিং লট। তাতে আবার ফ্রি পার্কিং দিব্যি গিয়ে নিজের পছন্দমত পার্ক করে দোকানে ঢুকে পড়লেই হল। আমিও আজ দুক্কুরবেলায় কি করি কি খাই কি দেখি কি ভাবি করতে করতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। একখানা তেপান্তর পার্কিং লটে গিয়ে গাড়ি পার্ক করে নামতেই মুখোমুখি এক দম্পতি। দেখেই বোঝা যায় আইটিওয়ালার মা-বাবা। আমাদের ছোটবেলায় ফেরিওয়ালারা যেমন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরত বড়বেলায় তেমনি আইটিওয়ালারা দেশে দেশে ঘোরে (আমার ফ্রেন্ড লিস্টে হাজার খানেক আইটিওয়ালা আছে এই মুহুর্তে। ভাগ্যিস তাদের মধ্যে মাত্র পঁচিশ শতাংশ বাঙালি এবং সেই পঁচিশের মধ্যে দশ আবার "আমি ঠিক বাংলা পড়তে পারিনা, বলতে পারি অবশ্য" টাইপ বাঙালি, তাই এ যাত্রা বেঁচে গেলাম হয়ত) । তবে এই দম্পতির কপালে চন্দন তিলক এবং বাকি পোশাক দেখেই বোঝা যায় দক্ষিণী। ভদ্রমহিলা একটুঁ পিছিয়ে থাকলেও ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন হাসিমুখে

তুমি কি এখানেই থাক?
হ্যাঁ, মাঝে সাঝে থাকি ... আমিও হাসলাম
আচ্ছা। বাজার করতে এসেছ?
হুঁ... এর পর আর কি বলব বুঝে পাই না।
খুব তাড়া আছে তোমার?
না না, কেন বলুন তো? কিছু বলবেন?
ভদ্রমহিলা এবার এগিয়ে এলেন... বাড়িতে কফি ফুরিয়ে গেছে। ছেলে গেছে ডেট্র্য়েটে। আজ ফিরবে। এই পিছনেই থাকি' ... হাত দিয়ে একটুঁ দূরের সারি সারি সাজানো কাষ্ঠকুটির দেখালেন।
আমি ঠিক বুঝছিনা কি করা উচিত।
জিজ্ঞেস করলাম কফি খাবেন? কফি খেতে ইচ্ছে করছে?
ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন, না না, কফি তো কিনেছি।
তাহলে? বাড়ি অব্ধি রাইড চাইছেন?
মহিলা স্পষ্টই বিব্রত ... না না, আমরা হেঁটেই যেতে পারব, কাছেই তো।
তাহলে? অন্য কোন সমস্যা?
ও নো নো... নো প্রবলেম।
তাহলে!!
মহিলা হেসে বললেন, তোমার নাম কি?
সঙ্গীতা
ও, সঙ্গীথা ...
উঁহু, সঙ্গীতা
হ্যাঁ, সঙ্গীথা...

হাল ছেড়ে দিলাম। দক্ষিনীদের দিয়ে ত বলানো খুব চাপের ।
এত সিনিয়র কাউকে তো তাদের নাম জিগ্যেস করা যায় না। ওরা নিজেরাও নাম বললেন না। ভদ্রমহিলা আর একটুঁ হেসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললেন , উই নিড লিটল হেল্প।
কি হেল্প? বলুন, পারলে নিশ্চই করব
মাই সান ইজ ডেটিং ...আমেরিকান গার্ল ...
হেসে ফেললাম। আচ্ছা। ভাল তো ... আরন্ট ইউ হ্যাপি?
নো নো, হ্যাপি আ লট।
তবে?
আমার ছেলে মেয়েটির সঙ্গে আমাদের দেখা করাতে চায়। তুমি কি বলতে পারবে ওর জন্য আমাদের কি গিফট কেনা উচিত?
আহা, এমন আনন্দ এ বিভুঁইয়ে! শপিং সাজেশন দিতে হবে !
পার্স দিতে পারেন, কিম্বা একটা সুন্দর পেন্ডেন্ট, অথবা পারফিউম কিংবা ইয়ারিং, জুয়েলারি বক্সও দারুন হয়... আমি আপনবেগে পাগলপারা
ভদ্রমহিলা ভুরু কুঁচকে থামিয়ে দিলেন "কি রকম দাম পড়বে"?
আপনাদের বাজেট কেমন?
বাজেট? কর্তা গিন্নি ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের স্পিডে কিছুক্ষন কথা বলে ডিসাইড করলেন ছেলেকে জিজ্ঞেস করবেন কত দামের মধ্যে দেওয়া উচিত ... "মানে, আমরা তো ঠিক জানিনা কতদিন থাকবে এই সম্পর্ক তাই বেশি দামী দেওয়া ঠিক হবে কিনা... কাল এসে কিনব বরং "
খুবই যুক্তিযুক্ত কথা ।

মনে হল বলি একজোড়া জুতো দিয়ে দিন সুন্দর দেখে। সম্পর্ক টিকলে ভাল না টিকলেও জুতো সেক্ষেত্রে পারফেক্ট। তবে সেটা বলার আর সাহস দেখালাম না। মাথার চাঁদি অলরেডি গরমে তেতে ফাটবে ফাটবে করছে। আর কথা না বাড়িয়ে দ্যাটস আ গ্রেট আইডিয়া বলে দোকানে ঢুকে গেলাম।
কাল আর একবার ঠিক ওই সময় ওই দোকানের সামনে যাব ভাবছি...বাই চান্স যদি দেখা হয়ে যায়।
কারন আবার কি? কিস্যু না... স্রেফ কৌতূহল ... পারমানেন্ট রিলেশনের বাজেট কত আর টেম্পের বাজেট কত এটা জানা জরুরী না?

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০১৪

বিবাহিত জীবনের মধুরতম অঙ্গ - সিদ্ধার্থ দে

গত সপ্তাহে আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল | প্রথম বছর দিনটা বেশ ঘটা করে উদযাপন করেছিলাম ক্যালকাটা ক্লাবে জনা ত্রিশেক বিশিষ্ট আত্মীয় বন্ধুদের নিয়ে একটা জমায়েত করে | পরবর্তীকালেও চেষ্টা করেছি দিনটিকে বিশেষ ভাবে উপভোগ করতে | বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনটির গুরত্ব যেন আরও বাড়ছে – আশংকা হয় – পরেরটি আসবে তো ?

৩৩ বছর আগের কথা | তখন কলকাতায় ডিসিপিএল নামে একটি সংস্থায় কাজ করি | কিছু সহকর্মী কে নিমন্ত্রণ করেছি | একজন বেশ বড় কর্তা গোছের ব্যক্তি খবর পেয়ে আমার ডেস্কে এসে মজা করে বললেন “তোমায় তো আমি বেশ ভিতু বলেই ভাবতুম – দারুন একটা সাহসী কাজ করে ফেলেছ তো দেখছি – বাউনের মেয়েকে বিয়ে করছ !” লজ্জা পাবার ভান করলেও নিজেকে বেশ বিপ্লবী বিপ্লবী ভেবে গর্ব হচ্ছিল একটু যদিও |

৩৩ বছরে সমাজ অনেক পাল্টেছে | ইদানিং স্বজাতে বিয়ে করা তো ছেড়ে দিলাম – ছেলে মেয়েরা অবাধে রাজ্য, ভাষা, ধর্ম , বর্ণকে তুচ্ছ করে মনের মানুষ চয়ন করছে | বছর খানেক আগে “২ স্টেটস ” নামের একটি বেশ উপভোগ্য উপন্যাস পড়েছিলাম – যার একটা মুখ্য বার্তা ছিল জাতীয় সংহতি | এ সপ্তাহের আউটলুক পত্রিকাতেও এই বিষয়ের ওপর একটি ফিচার আছে | বেশ ভাল লাগল- আজকের যুবসমাজ ভিন্নতার মধ্যে আকর্ষণ খুঁজে পাচ্ছে | আমাদের এই ছোট ক্যানবেরা বঙ্গসমাজেও বেশ কিছু মিশ্র দম্পতি আছেন |

কোথায় বলে না – স্বভাব যায় না মলে ! এই আপাত গম্ভীর আলোচনার মধ্যেও একটু ইয়ার্কি না করে পারছি না | বার্নার্ড শ সাহেবের সম্বন্ধে সেই বহু ব্যবর্হিত গল্পটি মনে পড়ছে | একজন বোকাসোকা সুন্দরী সাহেবের প্রেমে পড়ে বিয়ের আর্জি জানান এই যুক্তি দিয়ে যে তাঁদের সন্তান তাঁর রূপ আর বার্নার্ডের গুণ সম্পন্ন হবে | বার্নার্ড শ নাকি আশংকা প্রকাশ করেছিলেন “যদি উল্টো টা হয়? ” আমারও ভয় হয় – বাঙালি -পাঞ্জাবীর পরিণয়ের ফসল যদি বাঙালির শ্রমবিমুখতা পাঞ্জাবীর রসবোধ পায় ? ( বলে রাখি -এটা কিন্তু নিছক ঠাট্টা | কিছু স্টিরিওটাইপিং ব্যতীত আড্ডা জমে না | )

একটা ছোট গল্প দিয়ে লেখাটা শেষ করছি | আমার কর্মক্ষেত্রে এক দম্পতির সঙ্গে পরিচয় হয় – ভদ্রলোক বাংলাদেশী , ওনার স্ত্রী রাশিয়ান | দুজনেই উচ্চশিক্ষিত মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক | ভদ্রলোক একটু বিদঘুটে ধরনের – বাংলা বলতে ভীষণ অনীহা – অথচ ইংরিজিও মারাত্মক | ভদ্রমহিলার খুব নম্র স্বভাব , কিন্তু ইংরিজিতে আরষ্টতার জন্য সম্ভবত কিছুটা স্বল্পভাষী | একদিন কথাপ্রসঙ্গে মহিলা ভাঙ্গা ইংরিজিতে আক্ষেপ করেছিলেন.

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে রসিকতা একটা বড় সেতু – ভিন্ন ভাষা একটা বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ ব্যাপারে | শুনে মুজতবা আলীর একটা লেখা মনে পড়েছিল- বিবাহিত জীবনের মধুরতম অঙ্গ মাতৃভাষায় চুটিয়ে ঝগড়া করা !

শনিবার, ২ আগস্ট, ২০১৪

গোয়ালন্দ স্টিমারের মুর্গী ঝোল ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

মুজতবা আলীর লেখায় পাবেন সবচেয়ে বেশী। পাবেন আরো অনেক বাংলা সাহিত্যে। যাঁরা ধীরাজ ভট্টাচার্য্যের "যখন পুলিশ ছিলাম" পড়েছেন, তাঁরা মনে করতে পারেন, ধীরাজ ভট্টাচার্য্যও এ রান্নার সুখ্যাত করেছেন প্রান খুলে। আমাদের পশ্চিম বাংলার সুন্দরবনের দিকেও এ রান্নার চল আছে। কিন্তু ডাঙার মানুষ এ রান্না রাঁধে না। এ হলো একান্তই জলের মাঝি-মাল্লার রান্না। শুনেছি অনেক এই মুর্গির ঝোলের কথা, কিন্তু কোথাও এ রান্নার পাকপ্রনালী পাইনি। যেহেতু গোয়ালন্দ স্টিমারে পাওয়া যাবার কারনেই এই পদের এত নাম, তাই আমি সেই নামই রাখলাম।

যদিও অনেকেই অনেক জায়গায় এ রান্নার পাকপ্রনালি লিখেছেন, কিন্তু আমি তার সঙ্গে কোথাও বাঙালি মুর্গির ঝোলের খুব বেশী পার্থক্য পাইনি। মনে হচ্ছিল লোকে না জেনেই লিখেছে। অনেক খুঁজেও পাচ্ছিলাম না পাকপ্রনালি, শেষে আমার এক বন্ধু কিছুটা আন্দাজ দিলো রান্নাটার। তারপর আবার খোঁজা শুরু। অবশেষে বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনে আর যা তথ্য সংগ্রহ করেছি, তার ভিত্তিতে রান্না করেছি আর দেখেছি কেন এই মুরগির ঝোল খেয়ে এত মানুষ মুগ্ধ হয়ে গেছে। বাংলার মাঝি মাল্লা যে বহু কাল যাবৎ বর্মা-মালয়-শ্যাম পাড়ি দিয়ে আসছে, তার প্রমান ও আছে এতে। আর বোধহয় সেই কারনেই এই রান্নার স্বাদ, আমাদের পরিচিত মুরগির ঝোলের থেকে একদম আলাদা।

গোয়ালন্দ স্টিমারের মুর্গি খাবেন এক থালা সাদা গরম ভাতের সঙ্গে মেখে। দয়া করে রুটি, লুচি পরোটা পাউরুটির সঙ্গে খেয়ে রান্নার বারোটা বাজাবেন না। যাঁরা ঝাল খেতে পারেন না। একটু সাবধানে খাবেন।

কি কি লাগবে
মুরগি ৫০০ গ্রাম, মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ৩ খানা , ছোটো রসুন একটা গোটা, আদা এক ইঞ্চি পরিমান, বড় কাঁচা লঙ্কা ৪-৫ টা, শুকনো লঙ্কা ২-৩ খানা, হলুদ এক চামচ, নুন পরিমান দেখে আন্দাজে, সরষের তেল (পরিমান টা নিচে বলেছি), কুচো চিংড়ি মাছ ১০০ গ্রাম (হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। এখানেই তো ওস্তাদের মার)।

প্রনালী
পেঁয়াজ একদম ছোটো কুচি কুচি করে কাটতে হবে। ঝাল মুড়িতে মাখার সময় যেমন কুচি করে, সেরকম। আদা রসুন আর লঙ্কাও(কাঁচা ও শুকনো) সেই ভাবে ছোটো ছোটো কুচি করে কেটে নিতে হবে।

এবারে মুরগি ভালো করে ধুয়ে একটা কাচ বা প্লাস্টিকের পাত্রে রাখুন। পেঁয়াজ, রসুন আদা, লঙ্কা , হলুদ আর নুন দিন। ৬ টেবিল চামচ সরষের তেল দিন। কোনো রকম সাদা তেল দিয়ে এ রান্নাটা হবে না। আর একটা জিনিষ খুব মন দিয়ে খেয়াল করুন, এ রান্নায় কোনো রকম টক জিনিষ ব্যবহার করা হয় নি। খুব ভালো করে দু হাত দিয়ে মাখুন বেশ সময় নিয়ে। এবারে ২ ঘন্টা রেখে দিন ঢাকা দিয়ে।

কুচো চিংড়ি ভালো করে ধুয়ে মাথা, খোলা ও পা বাদ দিয়ে দিন। এবারে বাকি চিংড়িটা খুব মিহি করে বেটে নিন। ছুরি দিয়ে বার বার করতে থাকলেই হবে। হামান দিস্তা বা শীলনোড়ার দরকার নেই। খুবই কম পরিমান হয়ে যাবে চিংড়িটা। কিন্তু ওই টুকুই লাগবে। তার বেশি না।

রান্না
একটা ছোট ডেকচি বা কড়ায় ৩-৪ চামচ সরষের তেল দিন। চিংড়ি বাটা টা মুরগিমাখায় মিশিয়ে দিন। তেল গরম হয়ে গেলে মুরগি মাখা টা কড়ায় ছাড়ুন। চড়া আঁচ রাখবেন না। আঁচ অর্ধেক কমিয়ে রাখুন। ৩-৪ মিনিট নাড়ুন। তার পরে আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন আর ঢাকা দিন ভালো ভাবে, যেন খুব বেশী বাস্প বেরিয়ে যেতে না পারে। আধ ঘন্টা পর ঢাকা খুলে আধ কাপ জল দিন, আর আবার ঢাকা চাপা দিয়ে ১০ মিনিট খুব কম আঁচে রান্না করুন। এবারে উনুন বন্ধ করে দিন। কিন্তু কড়ার ঢাকা খুলুন আরো ১০-১৫ মিনিট পর।

রান্না করে, খেয়ে মতামত জানালে ভালো লাগবে।

"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃনা যেন তারে তৃণ সম দহে।" – পারমিতা ব্যানার্জী



একদা বিশ্বকবি, বাঙালি জাতির অতি সাবধানী,ভীতু আর নির্বিবাদী চরিত্রের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে এই উক্তিটি করেছিলেন এখানে অন্যায় যে করে' থেকে অন্যায় যে সহে' প্রতি কবির বিদ্বেষ বেশী প্রকাশ পেয়েছিল

এই অন্যায় সহার ব্যাপারে বাঙালির চিরকালই এক অদ্ভুত গুরুচন্ডালি দোষ আছে এরা রোজ সকালে খবরের কাগজে প্রকাশিত সমগ্র নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ দের প্রতি সমব্যথায় ,ক্ষোভে ,আবেগে ভেঙ্গে পড়বে অথচ নিজের বাড়ির ভাড়াটে বৌটিকে তার স্বামীর রোজ রাতে মদ খেয়ে পেটানোর প্রতিবাদ করবেনা

ফুটপাথের বাসিন্দা মানুষের মর্যাদা পাবে তখন যখন তারা মাঝরাতে কোনো বলিউডি হিরোর গাড়ির তলায় এসে মারা যাবে অন্য সময় ফুটপাথ বাসী আর গার্বেজ বিন এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

৩১ শে ডিসেমবর রাতে কোনো ট্রাফিক সার্জেন্ট ইভ টিজিং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেয়ে মারা গেলে প্রায় সব বাঙালিই  চায়ের কাপে ঝড় তুলে পারলে সমগ্র ইভ টিজার কুলের টুটি টিপে মেরে ফেলে, কিন্তু পাড়ার রকের মার্কা মারা, সোনালী রং করা চুলের লোফার গুলো যখন কোনো অষ্টাদশী তন্বী কে দেখে হিন্দি গানের বুলি আউড়ে যায় তখন 'পৃথিবীর সব মেয়েই তো আর আমার বোন নয়' ভেবে তড়িঘড়ি  রিক্সায় উঠে পালায়

একাধারে ঘোর প্রতিবাদী এবং নির্বিবাদী চরিত্র বাঙালি ব্যতিত অন্য কোনো সমাজে বড়ই বিরল বলে আমার বিশ্বাস এরই মধ্যে যদি বা দু একজন বাঙালি যৌবনের তেজে বা বিবেকের তাড়নায় কালে ভদ্রে একটু আধটু অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে যায় তবে তাকে হয় মাঝরাতে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে এমন পেটায় যে সে অন্যায় তে কোন '' তাই ভুলে যায় আর নয় তো কোনো এক নেতার পাড়াতুতো ভাইরা মাথার পেছনে আইস্যা রড এর বাড়ি মারে যে প্রতিবাদী ভাই টি কযেক সপ্তাহেই পাড়ার মোড়ে শহীদ মঞ্চে স্থান পায়

আরো এক প্রকার বাঙালি আছে ,যারা আবার প্রতিবাদীর প্রতিবাদ করে আনন্দ পায় এবার এদের সাথে পরিচিত হনএই ধরনের বাঙালি আবার দুই প্রকার সাধারণ -সাধারণ উপরে উল্লিখিত উদাহরণ টিতে যারা প্রতিবাদী ভাইটির ইহলীলা সাঙ্গ করে তাদের সাহস এবং সাধ্য (রাজনৈতিক নেতার মদত ) দুই আছেঅর্থাত এরা সাধারণ মানুষের মত অসহায় নয়, এক কথায় -সাধারণ

আর যে সব বাঙালির সাহস আর সাধ্য দুই এর অভাব তারা নিতান্তই সাধারণউদাহরন? দিচ্ছি
এই ধরুন বাজারে এক সব্জিওয়ালা এক খরিদ্দার কে ওজনে কম দিচ্ছে  দেখে খরিদ্দার রেগে দু এক কথা শুনিয়ে দিলে আপনি তৎক্ষনাত সেই সব্জিওয়ালার  বাবার আমলের খরিদ্দার হয়ে যান আর সে যে কোনদিন ওজনে বেশি বই কম দিতেই পারেনা সে বিষয়ে দু চার কথা শুনিয়ে দু তিন জনকে টপকে নিজের কাজ টা সেরে নিয়ে মুচকি হেসে পালালেন

আবার ধরুন খুচরো দিতে না পারায় আপনার এক সহযাত্রী কে যখন অটোওয়ালা সেই যাত্রীর গুষ্টির তুষ্টি উদ্ধার করে চলেছে তখন কিভাবে যেন অটোওয়ালার ময়লা হয়ে যাওয়া ছেঁড়া জামা আর সহযাত্রীর ঝাঁ চকচকে জামাকাপড়ের মধ্যে একটা অর্থনৈতিক বৈষম্যের গন্ধ আপনার মন কে পীড়িত করে তোলে আর সব যাত্রীরই কোনো এক অলীক এটিএম থেকে পকেট ভর্তি করে খুচরো জোগাড় করে অটোতে বসা উচিত এই বিষয়ে আপনি একটি সংক্ষিপ্ত তাৎক্ষণিক বক্তৃতা দিয়ে ফেলেন

এই ধরনের বাঙালিরা কখনো দিল্লির নির্ভয়া কান্ডে অভিযুক্ত নাবালক এর শাস্তির বিরুদ্ধে ,কখনো ধর্ষক খুনীদের ফাঁসির বিরুদ্ধে আবার কখনো খামখেয়ালী নেতা নেত্রীর অসংলগ্ন মন্তব্যের সপক্ষে ফেসবুক ,টুইটার গলা ফাটান এরূপ অসহায় ঢাল তরোয়াল হীন সাধারণ বাঙালির  প্রতিবাদী সম্প্রদায়টির প্রতি বিশেষ আলার্জি আছে অবশ্য তার পেছনে কযেকটি নিদারুন সত্য লুকিয়ে আছে

প্রথমত -  আশেপাশে প্রতিবাদী চরিত্র দেখলে বিবেক নামের প্রায় অকেজো হয়ে যাওয়া যন্ত্রটা খুব বিরক্ত করতে থাকে

দ্বিতীয়ত  -  এসব প্রতিবাদী লোকজন কে বেশি ঘেঁষতে দিলে নিজের জীবনে একটা সংযম এর প্রয়োজন হয়ে পরে কারণ এরা কখনো কারোর ভাই বোন  বা বন্ধু হয়না এরা যখন তখন যেখানে সেখানে যে কোনো কারোর হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গতে পারেতাই এদের থেকে শত হাত দুরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ

তৃতীয়ত -  প্রতিবাদী লোকজনকে তোল্লাই দিলে যখন তখন রাস্তা ঘাটে মার খেতে হতে পারে কিম্বা নেহাত গলা মেলানোর অভিযোগে থানায় রাত্রি যাপন হয়ে যেতে পারেকি দরকার সুখে থাকতে ভূতে কিলোনোর

চতুর্থত সর্বশেষ - প্রতিবাদী লোকেদের সাথে থাকার আরো একটা হ্যাপা আছে এদের সাথে থাকলে চারপাশের কিঞ্চিত চারিত্রিক দোষ সম্পন্ন,অল্প বিস্তর ঘুষখোর বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত লোকগুলো আপনার পাশ মাড়াবেনা আর এসব লোকের হাঁড়ির খবর ছাড়া আপনার মদ সহযোগে সান্ধ্য আড্ডাটাই বা জমবে কিভাবে আর বাড়ির বৌদিদের পি.এন.পি.সি. গুলোই বা হবে কাদের নিয়ে ?

তার চেয়ে প্রতিবাদ থাকুক প্রতিবাদ এর জায়গায় আর বাঙালি থাকুক বাঙালির জায়গায়

আর রবি ঠাকুরের সেই উক্তি? তা না হয় জানা রইলো ছেলের বাংলা খাতায় ভাব সম্প্রসারণ লিখে দেওয়ার জন্যই