শনিবার, ৩১ মে, ২০১৪

রম্য রচনা ৩ - ( উন্নয়ন চলছে ,রাস্তা বন্ধ ) ~ অবিন দত্তগুপ্ত

স্বপনদার সাথে আলাপ,বছর ৪এক আগে । শুক্রবার রাতে, বেলেঘাটায় এক বন্ধুর বাড়ি গেছি কোন এক অবভিয়াস নিমন্ত্রন রক্ষার্থে । খালপাড় থেকে রিক্সায় ৫ মিনিট (বেলেঘাটা টাইমলাইন অনুযায়ী মিনিট ১২ ) । স্বপনদা রিক্সা চালাত । যে সময়ের কথা বলছি তখন অসংখ্য জায়গায়, সৈনিকরা পরাক্রান্ত ( তবুও আমার শুক্রবার বদলায়নি ) ,কিন্তু বেলেঘাটায় (রিক্সায় বসা) আমার আর (রিক্সা টানা) স্বপনদার লাল ঝান্ডা তখনো পত্‌ পত্‌ করছে । এক জায়গায় দেখি হঠাতি রাস্তা বন্ধ,কাঁটা তারের বেড়া । স্বপনদা(নাম তখনো অজানা ) , কয়েক সেকেন্ড থেমে রিক্সার মুখ ঘোরালো । দুদিন আগে এসছিলাম, হঠাৎ পরিবর্তনে অবাক হয়েই জানতে চাইলাম " এটা কবে থেকে ? কেন ? " । গম্ভির গলায় জানালেন "উন্নয়ন চলছে ,রাস্তা বন্ধ । "

অবভিয়াস নিমন্ত্রনে,অবভিয়াস ভাবেই গৃহকর্তা তখনো অনুপস্থিত । সেই সুযোগেই স্বপনদার নাম জানা । যেখানে কাঁটাতার তার অন্য পাড়ে-ই আমার স্বপ্নের ঝান্ডা উড়ছিল । স্বপনদা জানালেন, ওটাই নাকি ভবিষ্যতের ঠিকানা,ওনাদের পার্টি অফিস,এবং ওদিকেই খালপাড়,ওদের বস্তি । জানালেন , বছরের পর বছর ধরে ঐ খালপাড় উচ্চবিত্তের উলটো দিকের কোঠা বাড়িকে , সকালে ঝি, সারাদিনে রিক্সা আর রাতে মেয়েমানুষ জুগিয়েছে । ওনারা শুনেছেন, কোঠা বাড়ির মেয়েরা আজকাল বস্তি ফেসিং ফ্ল্যাট পছন্দ করেন না, কোঠা বাড়ির বাবুরা আজকাল ছোট দোকান, প্যাচপ্যাচে কাদায় বাজার করা পছন্দ করেন না । মল-মুত্র কিসব অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । তাই উন্নয়ন প্রয়োজন,অতএব রাস্তা বন্ধ।

গৃহকর্তার মিসড্‌ কল ,ততক্ষনে ওনার ফেরার খবর জানান দিয়েছে । অতএব ব্যাস্ত আমি,মধ্যবিত্ত আমি, বিরক্ত হয়েই জানতে চাইলাম " এতো কিছুর পর-ও ঐ ওদিকে, তোমাদের দিকে লাল ঝাণ্ডা ওরে কেন ? "
একগাল হেসে, বিড়িটা ধরিয়ে উত্তর দিলেন " ওইটুকুই যা আছে । তোমাদের শহর,আমার-ও--- জানিয়েছিল যে ঝান্ডা । যে ঝান্ডা কাঁধে 'আমি মানুষ' জেনেছিল আমার বাপ,সেই ঝান্ডাই ওই বন্ধ ভাঙ্গবে । " রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে, ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতের এক ভুবনজয়ী হাসি নিয়ে স্বপনদা বলে গেছিল " যে মিছিলে তোমরা সবার আগে হাঁটো, সেই মিছিলের একদম শেষে আমরা যারা... যাদের দেখাই যায় না, মিছিলটা কিন্তু তাদের । মিছিলটা কিন্তু খালপাড়ের । কোঠাবাড়ির যারা,তারা বিভীষণের জাত। ওরা লাল ঝান্ডার নয় । ওরা ঠিক কেটে পড়বে । শেষের সেই মিছিল,আমাদের,খালপাড়ের,রিক্সার, মজুরের,বেশ্যার, মানুষের মতো মানুষের। লাল ঝান্ডা আমাদের ঝাণ্ডা । আমরা আছি,ঝান্ডা আছে । " ..

আর দেখা হয়নি ।

সোমবার, ২৬ মে, ২০১৪

রম্য রচনা -- ২ ~ অবিন দত্তগুপ্ত

( Utsav দার লেখা একটি গল্প অনুপ্রাণিত )

বহুদিন পর আজ আবার উনি আসবেন । এক বিশাল মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। রাস্তায়, ছাঁদে, জানলায় জানলায়,পুকুরের পাশে,ফুটপাথে তিল ধারনের জায়গা নেই । শেষ যখন এসেছিলেন, তখন সর্বত্র শ্মশানের নিরবতা ছিল । উনি আগুন জ্বালিয়েছিলেন। স্বপনের গান গেয়েছিলেন। সেদিন-ও এমনি ভিড় ছিল । সেদিন ভিড় পরিণত হয়েছিল লাভাস্রোতে । সেই গনগনে লাভাই,স্বপ্ন জিতেছিল । তারপর আস্তে আস্তে, উনি জনপদ থেকে হারিয়ে গিয়েছেন । পাহাড়ের উপরে এখন ওনার বাড়ি । আজ যখন সেই স্বপ্ন, বাজারে কিলোদরে বিকোচ্ছে , তখন ওনার আসার খবরে চাঞ্চল্য স্বাভাবিক ।

শেষ পর্যন্ত উনি এলেন । পাহাড় বেয়ে নেমে এসে,এক-ই ভঙ্গিতে মঞ্চে উঠলেন। বলতে শুরু করলেন । ভিড় যেন কোন কিছু খুঁজছিল। কিছু একটা,যা আগে ছিল,এখন নেই । অসহিষ্ণু ভিড় আস্তে আস্তে দেখতে শুরু করেছে ---- ওনার পোশাক এখন ভিড়ের পোশাক নয়,ওনার ভাষ্য এখন ভিড়ের কথা নয়,ওনার মন এখন আর ভিড়ের শরীরে থাকে না । আস্তে আস্তে ভিড়,নড়তে শুরু করল। পুকুর পাড়ের,ভাঙ্গা পুলের পাশে, মঞ্চে নয় মাটিতে দাঁড়িয়ে, এক যুবক অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে। ভিড় তাকে ঘিরতে শুরু করল ।

মঞ্চের উপর থেকে উনি ভিড়কে দেখছেন । মনে হচ্ছে ভিড় যেন কিছু একটা হারিয়েছে।আগে ছিল, কিছু একটা ---এখন নেই । উনি আস্তে আস্তে দেখতে পেলেন--- ভিড় তার ভাষ্য শোনার কান হারিয়েছে,হারিয়েছে তার মনে নৈকট্য। হয়তবা ভিড়ের পুরনো মনটাই হারিয়ে গিয়েছে। উনি দেখতে পেলেন ভিড় তার মুখ ঘুরিয়েছে পুকুর-পাড়ে,পুলের দিকে। কেউ একজন অনর্গল কথা বলছে । চেষ্টা করলেন মানুষটাকে চিনতে,আলাদা করতে পারলেন না। ভিড়ের মানুষ ।

চশমার কাঁচটা মুছে উনি আবার দেখার চেষ্টা করলেন। এবার দেখতে পেলেন। অবাক হয়ে দেখলেন ,পুলের পাশে দাঁড়ানো বছর ২২এর যুবক তো উনি নিজেই। বিস্মৃত যৌবনের উনি । আগুন ঝড়ানো উনি। তার হারিয়ে ফেলা ---আমি ।মঞ্চের উপড়ের আজকের উনি,অতিতের নিজের সাথে লড়াই-এ জিততে গলার পর্দা চড়ালেন । তবুও ভিড় ক্রমশই সরে যেতে থাকলে, উনি চিৎকার করতে চাইলেন ।আওয়াজ বেরল না। গলা দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে । ভিতরের রক্তক্ষরণ অবশ্য শুরু হয়েছে বহুদিন । উনি জল চাইলেন । কেউ শুনতে পেল না । ভিড় তখন আগুন দেখতে --- পুলমুখি ।

রবিবার, ২৫ মে, ২০১৪

একটি শেক-উলার পদ্য ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

স্লিপ খান তিন ভাঁড়, রাম, গড, আল্লা।

চৌপর দিনভর চলে দেওয়া পাল্লা।
কঞ্চির মন্দির, মসজিদ, চার্চে,
ভক্তির ঘোমটায় ভন্ডামি বাড়ছে।
চুপ চুপ! ঐ দ্যাখ ধম্মের ষণ্ড,
দ্যায় খালি শাস্তি, কাজে অপোগন্ড!
ব্যবসাই চলছে, শাস্তর আউড়ে,
ঘোর কলি, হায় হায়, ম্যাঁয় কঁহা যাউঁ রে!!

শনিবার, ২৪ মে, ২০১৪

নজরুলের প্রতি ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

বাবুদের তালপুকুরে হাবুদের নাইতে মানা।
জাতের এই বজ্জাতি আজ কাজীরও নয় অজানা!
বাগানের গাছ মুড়িয়ে উঠবে নতুন বাড়ি,
পালালো কাঠবিড়ালি, খুকুদের সঙ্গে আড়ি!
দুর্গম গিরি্র ভয়ে (লোকে আজ চালাক ভারি)
বাড়ি থেকে বেরোয় না কেউ, হুঁশিয়ার হে কান্ডারী!
দেখবি জগতটাকে? টিভি তো আছেই ঘরে!
দে তাদের গা ধুইয়ে, মিছে যারা তক্কো করে!
কী বলিস? কামাল পাশা? ইন্ডোর গেম কি কোনও?
বিদ্রোহী, আঙ্গুল চোষো, আর আমার গপ্পো শোনো!!

অবশ্য ~ শান্তনু ভট্টাচার্য্য

আমার গ্রামে এক প্পরিবারে ২২ জন বাস করতেন। ছোটবেলায় দেখেছি তাদের বাড়ীতে কত নিয়ম কানুন ছিল। বাসি জামাকাপড় পরে তাদের বাড়ীতে ঢোকা ছিল নিষিদ্ধ। খুব ধর্মপরায়ন ছিলেন। বাড়ীর গেটের বাইরে একটা নোটিস ঝোলানো থাকত আর তাতে লেখা থাকত " জুতা বাইরে খুলে রাখুন"

ধীরে ধীরে পরিবারের এক একজন কর্মসুত্রে বাইরে যেতে শুরু করলেন। সেই যে যাওয়া শুরু হল তারপর আর কেউই ফিরে এলেন না। আগে যে বাড়ীতে রোজ গ্রামের লোকজনের যাতায়ত থাকত সেখানে লোকজনের আনাগোনাও ধীরে ধীরে কমতে থাকল।

এখন ঐ বাড়ীতে দুজন মাত্র থাকেন। তাঁদের বয়স ও অনেক হয়েছে। দুজনেই ষাটোর্দ্ধ। এখন রাস্তায় লোকজন গেলে নিজেরাই বাড়ীতে ডাকেন একটু কথা বলার জন্য। দুএকজন অবশ্য সাড়া দেন। মাঝে মাঝে আসেনও। কিন্তু আগের মত সে ভীড় আর নেই।

এরই মাঝে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম । " জুতা বাইরে খুলে রাখুন" বোর্ড টা এখনো একই ভাবে লাগানো আছে।

ভাবছি এবার গিয়ে বলব এই জুতা বাইরে খুলে রাখার নোটিশ টা যেন খুলে রাখেন। লোকজন যখন আসেইনা তো এই নিয়ম রেখে আর লাভ নেই।

অবশ্য উনারা যে লেভেলের শৃঙ্খলাপরায়ন আমার কথা শুনলে হয়।

রম্য রচনা - ১ ~ অবিন দত্তগুপ্ত

হাসপাতালের ঘর । মেয়েটা আলতো চোখ খুলেছিলো । যন্ত্রণার নিদ্রা ,ভেঙ্গেছিল একটা পরিচিত কন্ঠস্বর । অথবা হয়ত ওইটুকু সময়ের জন্যই তাকে জাগতে হত । অরিত্রি চোখ খুলে ,তার অসীমদাকে দেখল। এম এল এ অসীম-কে দুচোখ ভরে দেখে অরিত্রি একি রকম মুখে জানালো ," অসীমদা, পাঞ্জাবির রঙটা বেশ ভালো। তুমি আজকাল জর্দা খাও ? " ... অসীম জানতো,গন্ধটা ওর শরিরের নয় । নিচেই স্করপিও তে বসে দুটো চুন সুরকিওয়ালা- দেড়টা প্রোমোটার । গন্ধটা ওদের নিশ্বাসের । অসীম জানতো , গন্ধটা অরিত্রি পাবেই...হয়ত গন্ধ চেনাতেই এই শেষ আসা " ...

মনে আছে ,একটা সময় অসীমের বাড়ি ফেরা,আর শ্মশান যাত্রা ছিল সমার্থক । বাড়িতে একা মা ,টিউশানের পয়েশা জুটিয়ে,বাড়িতে খাওয়ার পউছাতো এই অরিত্রি । তখন ও ১৬-১৭ ,অসীম বোধহয় ২২ । তারপর অনেক জল বয়ে গেছে গঙ্গায়-পদ্মায় । ওদের দুজনের স্বপনের ভোর এসেছে । বিয়ে করেছে অসীম । আগুনখেকো নেতা থেকে আজ মন্ত্রী । অরিত্রি মানুষ ছাড়েনি । আজ এতো বয়েসে ,আবারো মুখোমুখি ... জল বদলেছে,আকাশ বদলেছে,বদলেছে অসীমের বেঁচে থাকার মানে । অরিত্রি এখনো ধুলো মুখেই বাড়ি ফেরে । নেকড়ের দল , অসীম জানে যাদের লোক তার নিজের স্করপিওতে...কিন্তু নিরুপায় ,তাদের -ই নখে আজ অরিত্রি বিছানায় । তাদের-ই নখে লাল পতাকা শতছিন্ন ...অসীম জানে,অরিত্রি জানে এসব কথা । তবুও অসীম জানে, জোড়া ভুরু তুলে অরিত্রি-ই একমাত্র চাইতে পারে তার দিকে,সেলাইন লাগানো শিরা বের করা হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বলতে পারে " দেখ তো হাত-টা ধরতে পার কি না ? "

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

হিন্দু ভারত ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য়

তাজমহলটা ভেঙ্গে ফেলা হোক। শিবমন্দির চাই।
গোর কে প্রেমের প্রতীক বলিস, লজ্জা শরম নাই!
লাল কেল্লা বা কুতুব মিনার, সব ভেঙ্গে ফেল, আজই।
অহিন্দু কোনও স্থাপত্য আমি দেখতে নইকো রাজী।
ফোর্ট উইলি ও মনুমেন্ট। হ্যাঁ হ্যাঁ ভিক্টোরিয়ার স্মৃতি।
সৃষ্টিতে যদি হেরে যাই, তবে ধ্বংস খেলায় জিতি।
নতুন হিন্দু ভারত গড়ব, হিন্দু সিমেন্ট, বালি।
আমার চোদ্দ পুরুষের ভিটে গড়েছিল মীর আলি!

মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০১৪

​বিদূষকের হলফনামা ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

সব অপমান অবলীলায় নিচ্ছি মেখে গায়ে।
হুকুম করা মাত্র হেঁটে দেখাচ্ছি চার পায়ে।

প্রবলতম অনিচ্ছাতে লুকিয়ে মাথা চুলকে
সঠিক বলে মানছি তোমার চূড়ান্ত সব ভুলকে।

তোমার তুলি ম্লান করে দেয় পাবলো পিকাসোকে
রটাই রোজই(ভেতর পোড়ে অনন্ত এক শোকে)।

তোমার লেখা কাব্যমালায় গল্পে এবং গানে
নোবেল গন্ধ আমিও পাই সে'টা সবাই জানে।

পাথর কেটে খোদাই করা সকল প্রতিশ্রুতিই
চিরকালীন পাথর… তবু ঘটাই না বিচ্যুতি।

ফ্রি রিংটোনে তোমার ভজন শেখালো বাধ্যতা
তিনতলা ফ্লেক্স দেখলে বুঝি, তুমিই আরাধ্য তা'।

বাঁচতেই স্রেফ এ'সব করি। আসলে মনে মনে
নিজেকে খুব ঘেন্না করি… নিজস্ব নির্জনে…

রবিবার, ৪ মে, ২০১৪

দেশ ~ প্রকল্প ভট্টাচার্য্য

মুখেই যত জগত মারে বিজেপি, কংগ্রেস,
ভোটের নামে নিলামডাকে বিকিয়ে গেছে দেশ।
তর্জনীতে কালির ফোঁটা, গর্জনী তো ফাঁকা।
'শিক্ষা হবে, শিল্প হবে, উন্নয়ন চাকা
ঘুরবে ঠিক!' ঘুরবে চাকা? ইন্ধনই তো শেষ!
পুঁজিপতির গলিঘুঁজিতে বিকিয়ে গেছে দেশ।

শনিবার, ৩ মে, ২০১৪

স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন এবং আমাদের প্রত্যাশা ~ তমাল রাহা

শুরুতেই একটা ছোট গল্প বলি। আমি যে ভদ্রলোকের কাছে স্প্যানিশ ভাষা শিখি মাদ্রিদ-এ, তিনি হঠাৎ গত বছরে একদিন এসে বললেন যে তাঁর স্ত্রী-র ব্রেস্ট ক্যান্সার হযেছে। তারপর চিকিৎসা শুরু হলো। দীর্ঘ একবছর। প্রতি ২১ দিন বাদে Herceptin বলে একটি ওষুধ আর সঙ্গে কেমোথেরাপি। মাঝে একটা অপারেশন, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় মাস্টেকটোমি বলা হয়। পুরোটাই ফ্রি, সরকারী হাসপাতালে। আমি ভাবছিলাম, আমাদের দেশে কারো এই সমস্যা হলে খরচ তা ঠিক কত হতো ! শুধু Herceptin এর খরচ হত ২৩ লাখ টাকা ! প্রশ্নটা ক্রয়ক্ষমতা-র, তোমার টাকা থাকলে চিকিৎসা হবে, আর না থাকলে নয়।

স্বাধীনতার পর ৬৭ বছর কেটে গেল। আমাদের দেশে এখনো আমরা একক স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে উঠতে পারলাম না। কিছু কিছু সূচী বাস্তবায়িত হযেছে, যেমন রাজীব আরোগ্য যোজনা বা সেইরকম আরো কিছু , কিন্তু এর পুরোটাই হয়েছে ¨দাতব্য ¨ করার মানসিকতা নিয়ে, ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨ কে স্বীকৃতি দিতে নয় ! লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়েছে, আমরা ক´জন কে দেখছি ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨নিয়ে আলোচনা করতে ? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, তার নির্বাচন অথচ ¨পোলিও নির্মূল¨এর মত বিক্ষিপ্ত জয়লাভ আর সাইনবোর্ড এ তার বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কেউ কিছু নিয়ে চিন্তিত তো মনে হয় না ! স্বাস্থ্য বিশ্বের সর্বত্র একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু, ভারতের দুঃখজনকভাবে এটা শুধু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তেহার-এ ক্ষণস্থায়ী উল্লেখ হিসেবেই থেকে যায়। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা সোনার পাথরবাটি , ডাক্তার রোগীর অনুপাত স্বাভাবিক গড়ের নীচে , ৭৮% চিকিৎসার খরচ নাগরিক কে দিতে হয় নিজের পকেট থেকে, জনস্বাস্থ্যচিকিৎসা খাতে সরকারী ব্যয় GDP র ৩ শতাংশের নিচে ! ব্রাজিল এ সেটা ১০ শতাংশ, ফ্রান্স -এ ১২ শতাংশ। ভাবা যায় ! সমস্যাটা কিন্তু অনেক গভীর।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতে মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বে সর্বাধিক এবং এটা কিন্তু আমরা স্বাস্থ্যসেবায় কতটা টাকা খরচ করতে পারি তার সাথে সম্পর্কহীন। প্রতি বছর ১.৪ মিলিয়ন শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিন আগে মারা যায়। দুর্ভাগ্যবশত এই মৃত্যু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য এবং কম খরচেই সেটা করা সম্ভব। বর্তমান নীতি অনুযায়ী একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই এই কাজ করতে পারেন আর আগেই বলেছি যে এইসব বিশেষজ্ঞদের পর্যাপ্ত যোগান আমাদের দেশে নেই। দেশে আজ পর্যাপ্ত মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন যেখানে স্ত্রীরোগবিদ্যা, এবং পেডিয়াট্রিক্স মত ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা কোর্স ক´রা যাবে। গত কয়েক বছরে নার্সিংশিক্ষার কলেজ গুলিতে ভর্তির হার ৫০% এর নিচে ! কেউ কি ভেবে দেখেছে যে আগামী কয়েক বছরে দেশে নার্স একটি তীব্র ঘাটতি হবে ! কারণ টা কি ? নার্সিং এখন একটি মৃত শেষ পেশা মনে করা হয়। কারণ কেউ ভাবে না যে এই পেশায় কর্মজীবনে অগ্রগতি সম্ভব। একটু অন্যভাবে ভাবলেই হয়। নার্সের পেশাকে কি কিছুটা আকর্ষনীয় করে তোলা যায় না? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭% নার্স anesthetists এর কাজ করেন। আর আমরা আমাদের দেশে ২০ বছরের ক্রিটিক্যাল কেয়ার এ কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও কোনো নার্সকে paracetamol বিধান করার অধিকারটুকু দেই না। সবসময় যে বেশী টাকার প্রয়োজন তা কিন্তু নয়! মেডিকেল শিক্ষাকে দেশের দেশের উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ভাবতে হবে।

ভাবতে হবে যে কি করলে কলকাতা বা সিঙ্গুরে বসে একজন টাটা মেমোরিয়াল বা ভেলোরের হাসপাতালের ডাক্তারের মতামত নিতে পারবেন। ইনফরমেশন টেকনোলজি তে আমরা এতো অগ্রগতি করেছি, সরকার কি ভেবে দেখেছেন যে তার প্রয়োগ কিভাবে করা যায় ? একটি পরিকল্পিত Health eco -system এর প্রয়োজন আজ দেশে , যেখানে তথ্য-বিনিময় হবে সাবলীল। 

অভিমুখহীন গবেষণা। কোন জাতীয় গবেষণা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ? আজকে বোধহয় ভাবার সময় এসেছে। সরকার কোন গবেষণা কে আর্থিক সাহায্য দেবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে সেটাও ভেবে দেখা দরকার। ভ্যাকসিন সম্পর্কিত গবেষণা না মৌলিক গবেষণা, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে সেই নীতিটা কিন্তু সরকারের থেকেই আসা উচিত। সব জাতীয় গবেষণাই গুরুত্বপূর্ণ , কিন্তু সেখানে উচিত দেশের প্রয়োজন ও সরকারের ব্যয় এর মধ্যে একটি ভারসাম্য ।

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সার্বজনীন স্বাস্থ্যের অধিকার¨ নিয়ে অনেকদিন ধরে বললেও, কাজের কাজ খুব কি হয়েছে ? তাঁরা দাবি করেন যে National Rural Health Mission (NRHM) এর ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এই দাবি সংশয়াতীত নয়। এবারের ইস্তেহার-এ তাঁরা বলেছেন যে ¨ক্ষমতায় এলে সার্বজনীন ¨স্বাস্থ্যের অধিকার¨ কে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি (GDP র ৩%) করা হবে। প্রতিটি স্কুল এবং পরিবারের জন্য প্রায়োগিক টয়লেট নিশ্চিত করা হবে। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত মধ্যে একটি তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু হবে। প্রজেক্ট ভিশন ২০২০ তে স্বাস্থ্য খাতে ৬০ লক্ষ মানুষের নতুন চাকরি হবে।¨ কিছু অত্যাধুনিক মোবাইল medical service ভ্যান এর কথা বলা আছে, যা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান এর বিজ্ঞাপন ই মানায়, দেশের সর্ববৃহৎ (?) রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো তে বেমানান। রাহুল গান্ধী মহাশয় তাও সভাসমিতি তে এটা নিয়ে দু-চার কথা বলছেন।

BJP ইস্তেহার-এ সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগের কথা বলেছে। অপ্রচলিত/বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থ্যার (যেমন হোমিওপেথী, আয়ুর্বেদ, যোগ ইত্যাদি) কথা বলা হেছে ম্যানিফেস্টো তে। সবচেয়ে ভীতিপ্রদ এখানে FDI (Foreign direct investment) বিলগ্নির ইঙ্গিত !

Aam Aadmi Party বা আপ , এম্বুলেন্স এর বাইরে বেরোতে পারেন নি এখনো। জনস্বাস্থ্যনীতি আর এম্বুলেন্স এর পার্থক্য টা এখনো বুঝে উঠতে পারেন নি ওনারা। হয়তো আরেকটু সময় লাগবে। তবে জনস্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে দুর্নীতি-র যোগাযোগটা উল্লেখ করা আছে। এটা উপেক্ষা করার বিষয় নয়, করছিও না। তবে এই লেখাটা জনস্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কিত বলে এব্যাপারে আর বেশি আলোচনা করছি না।

অধুনা মিডিয়ার আশীর্বাদধন্য এই রাজ্যের শাসক দলের ইস্তেহার পড়লাম। স্বাস্থ্যনীতির সর্বাঙ্গীন পরিবর্তন (comprehensive change) এর কথা বলা গেছে তাতে। কিভাবে সেটা বলা নেই। কিছু কথা আছে যা অনেকটা দাতব্য করার মানসিকতা প্রকাশ করে। আর ম্যানিফেস্টোর বাইরে এসব নিয়ে কোনো উচ্যবাচ্য তো চোখে পড়ছে না !

কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তেহার-এ জন্যস্বাস্থ্য নীতি র ব্যাপারে অনেক বেশি সক্রিয়। কমিউনিস্ট পার্টি সার্বজনীন জন্যস্বাস্থ্য নীতি প্রয়োগের অঙ্গীকার করেছে। কমিউনিস্ট পার্টি GDP র ৫% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করার প্রস্তাব এনেছে। পার্টি স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিকরণ-এ বাঁধন আনার আহ্বান জানিয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী যে বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গুলি কিন্তু রাষ্ট্র আশ্রিত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর উদাহরণ দিয়েই লেখাটা শুরু করেছিলাম, সঙ্গে যোগ করব কিউবা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা, যেখানে স্বাস্থ্যের অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে এবং তা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত ও সফল। ভারতবর্ষের কথা বললে বলা যায় যে প্রতি বছর ৮ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যায় এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে গিয়ে যা আদতে স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিকরণ-এর ফল । কমিউনিস্ট পার্টি এছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা এবং বিনামূল্যে ডায়গনিস্টিক সুবিধা প্রদান, পাশাপাশি আরও জেনেরিক ওষুধ এর outlet খোলার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। ইস্তেহার-এ আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মেডিকেল ডিভাইস ও ওষুধের দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি র ব্যাপারে জোর দেওয়া। ক্লিনিকাল ট্রায়াল এ অংশ নেওয়া রোগীদের জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এর কথাও বলা আছে ম্যানিফেস্টো তে।

কোথায় ফাঁক সেটা বুঝতে হবে আর তা বন্ধ করার কাজটা করতে হবে একটা সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে আর সেটাই আমাদের আশা এই ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন এর পরিপ্রেক্ষিতে।

শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

সারদা ~ তমাল রাহা

আবাল বৃদ্ধ দেশজোড়া লোক 
ভুগছে ভীষণ সমস্যায় 
প্রাণপাত, তবু জানা যাচ্ছে না 
সারদার পিছে কেয়া হায় !

বাসে ট্রামে কত জল্পনা কথা 
মাঠে ময়দানে টেন্টে ,
মদনা ব্যাটাও পেছনে আছে 
বলে ওপাড়ার নন্টে।

গৌতম দিলো হাটে হাড়ি ভেঙ্গে 
হরিশ চাটুজ্যে বত্রিশ ,
কুনাল আবার জেলে বসে বলে 
আমের মুকুলে ভরা বিষ।

সুদীপ্ত বলে ছবি কিনি নাই 
পিসির তুলিও বন্ধ,
জনগণ দেখে হতবাক সব,
যাচ্ছে না মনে সন্দ !

মোদিবাবু বলে, হলেই PM 
ঢোকাবো পিসিরে গরাদে,
অর্পিতা ভাবে পরিলাম ফাদে 
কি জানি কি আছে বরাতে!

কেষ্ট-বিষ্টু আছে তল্লাটে,
সাথে আরা বা মনিরুল,
ঘাসের ডগার ফুলটাও বলে,
সব ভুল, আজ শুধু ভুল।