শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

এই সময়ের গান ~ অমিতাভ প্রামানিক

(আরো) ধারালো কিছুর দরকার
(আর) পেরে উঠছে না পেন –
হাটে মাঠে বাটে গজিয়ে গিয়েছে
লাখো সুদীপ্ত সেন।।

(এরা) কোথায় যে ছিল অ্যাদ্দিন
(আমি) পারিনি তা কেন জানতে –
(আমার) পান্তা যে গেল ফুরিয়ে
(আমি) গিয়েছিনু নুন আনতে।
(আমার) শাঁখা-পলা সব নিয়ে গেল ওরা
আজ নেই লেনদেন।
(পালালো) কোথা সুদীপ্ত সেন?

আমি ছুটে যাই জনপ্রতিনিধি-বাড়ি
চ্যালা বলে, যা তো, সর –
টাকা পেয়ে যাবি, আমরা বসাবো
বিড়ি সিগারেটে কর।
(দ্যাখো) ছেলেমেয়ে কাঁদে, কী দেব ওদের
কেউ কিছু বলবেন?
কই সুদীপ্ত সেন?

(আমি) কাগজে দেখছি মন্ত্রীরা নাকি
এই সারদার গোষ্ঠী,
আমাদের টাকা লুটে নিয়ে তারা
করছে ফষ্টিনষ্টি।
(ওরে) রাজ্যের গদি তোদের দিলাম
চালাচ্ছিলি তো ট্রেন!
(এখন) হলি সুদীপ্ত সেন!

বঙ্গরঙ্গ ~ অমিতাভ প্রামানিক

শনি রবি ছেড়ে মান্‌ডে,
টাকা ঢেলে চিটফাণ্ডে
ভাবি জমি পাবো, চীপ তো,
বলেছিলেন সুদীপ্ত।
পালালো কোথা সে হারামি?
সব পথে বসে, আর আমি
'পোতিদিন'-এ গিয়ে, ও হরি –
দেখি কাগজটা তো ও
নারই!
মা সারদা, এ কী শুনালে!
গিয়ে ঠেকি আমি কুণালে!
সিইও না তো সে, কর্মী!
ঘাসের শিকড়ধর্মী।
জমি থেকে চোষে রস সে,
ঘি ঢালেনা কভু ভস্মে।
আগুন জ্বালিয়ে রাজ্যে
যায় সে তো রোজ বাহ্যে।
শির'পরে যদি শিকড়ই
এখন যে আমি কী করি!

উঠে দাঁড়াও হে, বোসো না,
টাকা পাবে, হল ঘোষণা।
ভানুমতী খেল, দ্যাখ্‌ শো –
টাকা জোগাবেন ট্যাক্সো!
বিড়িতে বাড়ছে শুল্ক,
ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস পাছা চুল্‌কো!
দ্যাখা দে মা, ও মা সারদে –
পুরে দে পাগলাগারদে।

২৫শে এপ্রিল, ২০১৩

শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৩

সন্নোযুগ ~ অমিতাভ প্রামানিক

কেষ্টঠাকুর, তার যে মাসি, তার শ্বশুরের ভাগনেবৌ
দ্বাপরে খুব মুখোশ পরে পুরুলিয়ায় নাচতো ছৌ।
সে নাচ দেখে বীর হনুমান ঢাকায় গিয়ে পান্তাভাত
শুঁটকিমাছের সঙ্গে খেয়ে করলো ভীমের মুণ্ডুপাত।
কী আর করা, ভীমবাবাজি ঘুরিয়ে দুপাক গদাই তার
দেখলো বিদুর চাইছে টাকা, ধুত্তেরিকা, সদাই ধার!
কৃষ্ণকে সে বলল, শোনো, আর যা করো রাত্রিদিন
কলম্বোতে কলকাঠিটা নাড়লে হবে অন্তরীণ।
সিংহলেতে কুম্ভকরণ দিচ্ছিল ঘুম বছরভর,
থার্মোমিটার তার বগলে দিতেই দ্যাখে হাজার জ্বর!
বদ্যি ডাকো, ওষুধ লে আও, কোথায় ভরত-শত্রুঘন্‌?
সব শকুনির উকুন বেছে দিচ্ছে চালান দু'দশ টন।


এই মরেচে, এই স্টোরিখান বেবাক এমন যাচ্ছেতাই –
ঠিক যে রকম বাংলা-নেতা রাজ্য চুষে খাচ্ছে, হায়!

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৩

পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের রাজনীতি ~ অ মি তা ভ প্রা মা ণি ক

দূর থেকে যতটা নজর করতে পারি, তাতে এটা হৃদয়ঙ্গম করতে কোন অসুবিধাই হয় না, যে বাংলার অবস্থা যাচ্ছেতাই। একেবারে জঘন্য।

ধরে নেওয়া গেল, এর সবকিছুর জন্যে বর্তমান টি এম সি সরকারই দায়ী। কিন্তু উপায়টা কী? বাকিরা কে কী করছেন?

কাগজে যা দেখি, তাতে অবাক হই। প্রধান বিরোধী দল বাম-গোষ্ঠী, তারা শুধুই গরমে ঘাম-ছে। সরকার কী ভুল করছে, তারা সরকারে থাকলে কী করত, এই ব্যাপারে কোন মন্তব্যও দেখি না। বাংলা বা ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কেউ কোথাও দেখেছেন ইদানীং? বামপন্থায় ব্যক্তি, সে যত বড় নেতাই হোক, দলের চেয়ে ছোট। কিন্তু এখন তাদের একমাত্র কর্মসূচী 'প্রোজেক্ট সুদীপ্ত'। একটা যুবকের এই রকম মৃত্যু, কোন নিন্দাই যথেষ্ট নয়, কিন্তু শক বা শোকের চেয়ে সেটাকেই কী করে পলিটিক্যালি ক্যাপিটালাইজ করা যায়, সেটাই একমাত্র বিষয় মনে হচ্ছে। বাংলায় তাদের হৃত 'গৌরব' পুনরুদ্ধারের জন্য নিজেদের সক্রিয় ভূমিকার চেয়ে শাসকদলের ক্রমাগত ভুলের ওপরেই তাদের আশা দোদুল্যমান। ভারতীয় রাজনীতিতে তৃতীয় চতুর্থ ফ্রন্টের আশা দুরাশা মাত্র, সুতরাং কেউ মুখও খুলছে না।

বেঙ্গল কংগ্রেস বুঝে পাচ্ছে না, বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টক্কর দিয়ে লাভ, না তেল দিয়ে? সামনা সামনি টক্কর দিতে গেলে হয়ত তাকে কিছুটা টলিয়ে দেওয়া যাবে, কিন্তু লাভের গুড় খেয়ে যাবে বামেরা, ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে তারা। কংগ্রেসের কী লাভ? আবার তেল দিয়েও যে বিশেষ কিছু লাভ, তাও না, উনি উনার মতই চলবেন। নিজেদের দলের সবার ওপর ছড়ি ঘোরান, তেল দিলে ওদের ওপরেও ছড়ি ঘোরাবেন। দেশের বাজারে কংগ্রেসের পপুলারিটি এমনিতেই কমছে। রাহুল-বাবা ছড়াচ্ছে এখানে ওখানে। মোদীর পপুলারিটি বাড়ছে। এই অবস্থায় টি এম সি'র সাথে পাঞ্জা লড়া মানে নিজের পায়েই কুড়ুল মারা। কিন্তু আঁতাত করাও তো এক মূল্যহীন এক্সারসাইজ! আর লেফ্‌টের সঙ্গেও যে কিছু করবে তলায় তলায়, সে সুযোগও বিশেষ নেই। কথা বলবেই বা কার সাথে? আগে জ্যোতিবাবু ছিলেন, তার সাথে একটা বোঝাপড়া করা যেত, এখন কাকে কে পোঁছে? সুতরাং, কোন পথই খোলা নেই। 

বিজেপি বাংলায় কোনোদিনই তেমন পপুলার নয়। যাও বা কিছু এস্‌টাব্লিশ করেছিল আগে, সেও মমতার সাথে হাত মিলিয়ে। পরে মমতা ডিগবাজি খেয়ে কংগ্রেসের সাথে হাত মেলালো। মোদীকে সামনের সারিতে এগিয়ে দিয়ে বাংলায় বিশেষ লাভ হবে না। বাঙালীরা মোদীর গোধরা আর অ্যান্টি মুসলিম স্ট্যান্ড একদম পছন্দ করে না। আর মোদী সেন্টারে পি এম হলেই বা বাংলার কী? এখানে টি এম সি, লেফ্‌ট্‌, কংগ্রেসের সঙ্গে লড়ে বিজেপি যে বিশেষ কিছু করতে পারবে, তা মনে হয় না। প্লাস, সেন্টারে কংগ্রেস-লেড ইউ পি এ-কে ফোটাতে গেলে টি এম সি'কে সঙ্গে নেওয়ার দরকার হবে, কিন্তু এর রিলায়েবিলিটি একদম নিল। কথায় কথায় ডিগবাজি খাওয়া পাব্লিক সঙ্গে নিয়ে লাভ কী? বামেরা তো কথাই বলবে না, কংগ্রেসও না। সুতরাং চুপ করে থাকাই ভাল।

এ রকম হতদরিদ্র রাজনৈতিক অবস্থা পশ্চিমবঙ্গে আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। মাত্র কয়েক পিস এম এল এ নিয়েও আগে কংগ্রেস বা টি এম সি ক্ষমতাসীন বামেদের জমানায় আন্দোলন করেছে, তাদের কাজের সমালোচনা করেছে। এখন সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, কেউ জানে না কী করা উচিত।

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

জেলখানার চিঠি

মা, আমি এখানে ভাল আছি। যেহেতু আমরা রাজনৈতিক বন্দী তাই আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে।...আমাকে নিয়ে লজ্জিত হবা না। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবা মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে জেলে গেছে। আর এ কাজটা আমার করতে ভালো লাগে, তুমি আগাগোড়াই জানো।...আমার জন্য তোমার গর্ব হওয়া উচিত।...মনে রাখবা আমরা রাজনৈতিক বন্দী, অপরাধী না।...ওষুধ খাও ঠিক করে আর শরীর ঠিক রেখ। শরীর খারাপ হলে এখানে আমার চিন্তা বাড়বে আর অসহায় লাগবে। আই লাভ ইউ, মা। ইতি টুকাই। 

জেলখানা থেকে পাঠানো ছেলের চিঠিটা মায়ের হাতে এসেছিল শুক্রবার। কিন্তু সেই চিঠিও মায়ের মনে স্বস্তির স্পর্শ লাগাতে পারল না। 

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন মা বাণী দে। পরিবারের লোকেদের কথায়, ছেলের জন্য উদ্বেগেই মৃত্যু হল বাণীদেবীর।

স্বামী ধ্রুব দে মারা গেছেন তেইশ বছর আগে। একমাত্র সন্তান অমিতের বয়স তখন দেড় বছর। ছেলেকে নিয়েই শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ায় থাকতেন বাণী দে।

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৩

আবাহনী ~ অ মি তা ভ প্রা মা ণি ক

~ আবাহনী ~

বলেছিলাম পয়লা বৈশাখ পড়ছে মধ্যে, সেদিন অফিস ছুটি থাকবে, শুনলো না, কলকাতা আপিসে এসে হাজির বিদেশী সাদা চামড়ার বড়বাবু। কী আর করা, গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকারটাকে বললাম, বাবু যা খেতে চায়, ভালোমন্দ খাওয়াস। যদি বেরোতে চায়, আমাকে একটা ফোন করিস।

সেই পয়লা বৈশাখে সন্ধ্যে অবধি ফোন আসেনি। আমিই সন্ধ্যেবেলা হাজির হলাম গেস্ট হাউসে।

গিয়ে দেখি, দিব্যি আছে, টিভিতে বাংলা চ্যানেলের প্রোগ্রাম দেখছে। হঠাৎ উঠে গিয়ে একটা চিরকুট বের করে আমাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, আর ইউ শ্যিওর দিস ওয়াজ পেন্‌ড্‌ বাই টেগোর?

দেখি, লেখা আছে, Yes, oh. Hey boy, suck. Yes, o yes, show.

আমি বললাম, হোয়্যার ডিড ইউ গেট ইট ফ্রম?
বললেন, টিভিতে এই চ্যানেলেই প্রোগ্রাম দেখছিলেন। একটা গানের সঙ্গে দুলে দুলে কতগুলো নাইসলি ড্রেস্‌ড্‌ ইয়াং গার্ল্‌স্‌ বডি মুভমেন্ট করছিল। কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞেস করলে, সে বলেছে টেগোর সং।

আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আই থট টেগোর ওয়াজ অ্যা ফিলোজফার।

আমি আর কী বলি! বৈশাখের আহ্বান-সঙ্গীতের কী দশা করেছে এই ম্লেচ্ছ!

১৬ এপ্রিল, ২০১৩ // ২রা বৈশাখ, ১৪২০

ফেলে আসা পয়লা বৈশাখ ~ সম্বুদ্ধ আচার্য্য

একটা পইলা বৈশাখ এসে গেল, হই হই করে, ফেসবুক কাঁপিয়ে. এই ডিজিটাল যুগে আমরা কিন্তু সেটুকু ই মাতি, যেটুকু সুযোগ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং আমাকে দেয়. মানে এই একটু স্ট্যাটাস আপডেট দিলাম: "শুভ নববর্ষ, সকলের ভালো হোক" বা দু লাইন কবিতা.একটু বিদ্রোহী যারা বা ফেসবুক এ নতুন, কিম্বা যারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর নামে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন, তারা লিখবেন একটু বাঙালি হায় হায় জাতীয় বাক্য. অনেকে ই আছেন যারা ফেসবুক ইত্যাদি দু-চোখের বিষ বানিয়ে রেখেছেন, কিন্তু সুযোগ পেলেই একটু সমালোচনা, একটু কড়া ভাষায় স্ট্যাটাস আপডেট দিতে ভোলেন না. অনেকে আবার একটু মিষ্টি, একটু দই এর ছবি লাগাবেন. অনেক লাইক পড়বে, অনেকে কমেন্ট ছাড়বেন "জিভে জল এসে গেল". অনেক প্রবাসী বাঙালি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন আর পিপিটি বানাবেন অফিসে বসে. মোটের উপর, বেশ একটা সাজো সাজো রব, একদিনের জন্যে. অনলাইন কবিতা কম্যুনিটি আর লিটিল ম্যগাজিন এর সাইট গুলোতে কবিতা দেওয়ার ধুম পরে যাবে. কেউ লিখবেন রাবীন্দ্রিক ছন্দে, কেউ জীবনানন্দের ট্রামে কাটা পরা স্টাইলে আবার কেউ বা ভয়ানক বিদ্রোহ দিয়ে, তৃনমূল-সিপিয়েম এর গুষ্টি উদ্ধার করে, একটু কাঁচা খিস্তি দিয়ে ক্ষুধার্ত জেনারেশন কে ফিরিয়ে আনতে চাইবেন. ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে নতুন পোশাক টোশাক পরে ছবি লাগাবেন. ছেলেদের ছবিতে বন্ধুরা খিস্তি মেরে যাবে, মেয়েদের ছবিতে হাজার বিশেক লাইক আর কমেন্ট পড়বে. একটা দিনের উত্সব, বাঙালির নববর্ষ। 


ফিরে যাই বছর কুড়ি আগে. যেদিন ১৩৯৯ থেকে ১৪০০ সন এলো. এই সময়টা আমার বিশেষ করে মনে আছে. কারণ নতুন শতাব্দিতে পা রাখার দিন. আমাদের স্কুলে এর আগের দিন একটু বিশেষ অনুষ্ঠান রাখা হয়েছিল, প্রধানশিক্ষক এর বক্তৃতা, সহ-প্রধানের স্মৃতিচারণ, গান, কবিতা পাঠ এইসব.  মনে আছে সে সময়টা ছিল ভয়ানক গরম. আমাদের মফস্বল শহর, অদূরে কর্কটক্রান্তি রেখা গেছে কৃষ্ণনগর এর উপর দিয়ে. তাই চরম-ভাবাপন্ন আবহাওয়া. এই সময় স্কুল এর কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া র ছায়ায় ঢাকা চত্ত্বর, পুরনো মত কালো করিবর্গা দেওয়া ঠান্ডা আর অন্ধকার ঘর, পাশের চুর্নী নদীর ঠান্ডা বাতাস, আমাদের ঘরের চেয়ে স্কুল ই বেশি আকর্ষণ করত. আর সে সময় সোশ্যাল নেট\ওয়ার্কিং দুরে থাক, কম্পিউটার এর নাম ই পরেছি শুধু  আনন্দমেলায়. আমাদের সময় কাটানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল খেলা. কাদা মাঠে ফুটবল, স্কুল শেষ হওয়ার পর স্কুল এর লম্বা করিডোর এ ৫০ গ্রাম বল এর ক্রিকেট আর কখনো স্কুল থেকে পালিয়ে হ্যাপী ক্লাব এর মাঠে "ফুল হ্যান্ড" ক্রিকেট. এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আমাদের ক্রিকেট ছিল দু রকম. ছুড়ে বল করে ছোট করে খেলা হত "শর্ট হ্যান্ড". এখানে ৬ মারলে আউট হতে হত. আর লেদার বা টেনিসের ভারী বলে পরিপূর্ণ ক্রিকেট ছিল "ফুল হ্যান্ড". আরেকটু ছোটবেলায় খেলা হত সলিড রাবারের বলে, যাকে বলা হত "রাবার ডিউস". রাস্তায় খেলার সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল ড্রেনে বল পড়া. সচরাচর ছোট ড্রেন হলে যে কেউ বল তুলে আনত. কিন্তু একটু বড় ড্রেনে বা ঘন ঝোপে বল গেলে তা খুঁজে তুলে আনার দায়িত্ব ছিল ব্যাটস্ম্যান এর, অর্থাত বলটার দুর্দশার যে কারণ, তার. আর বলাই বাহুল্য, রাবারের বলের সাথে ড্রেন এর পাঁক এর অদ্ভুত দুর্গন্ধ মিশে একটা খোলতাই গন্ধ বার হত, পরবর্তীকালে যে গন্ধ সচরাচর পেয়েছি দক্ষিনভারতীয় কুন্দরি দেওয়া রসম খাওয়ার সময় অথবা যে কোনো রোড সাইড অন্ধ্র ভাতের হোটেল এ। 


সেই কুড়ি বছর আগের কথা, এখন স্মৃতিচারণ করতে গেলে একটু নস্টালজিক লাগে. সে বাড়িতে গরমের দুপুরে বসে বিকেলের কালবৈশাখীর জন্যে অপেক্ষা করাই হোক বা হালখাতায় সোনার দোকানে বাবার সাথে সাইকেল চরে গিয়ে কিছু ভালোমন্দ খাওয়াই হোক. তখন বছরের ছটা ঋতু আলাদা করে বোঝা যেত, আর দেখা যেত কালবৈশাখীর ঝড়. যারা নদীর উপরে কালবৈশাখী দেখেছেন, তারা জানেন যে সেরকম দৃশ্য শুধু বাংলাতেই দেখা যায়. আর হত শিলাবৃষ্টি. অ্যাসবেসটস আর টালির চালে চটর পটর শব্দ, মাঝে মাঝে মনে হত এই বুঝি চাল ভেঙ্গে মাথায় পড়ল. আবার কখনো স্টিলের গামলায় শীল ধরে সেটা রুটি দিয়ে খাওয়া, এখন সে সব ই স্বপ্ন মনে হয়। 
 

নস্টালজিক হতে হতে একটা ভিশন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাদ চলে গেছিল. পইলা বৈশাখ এর সাথে যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত. সেটা হলো নতুন জামাকাপড়. আমার নতুন জামাকাপড় তখন সব ই আসত দাদু আর ঠাকুরদার কাছ থেকে. জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যে পইলা বৈশাখ এর কথা প্রথম মনে আছে, সেটা ছিল বোধ করি বছর ২৭ আগে. আমার বয়েস তখন ৪. তখন সকলের মুখে শুনে শুনে পয়লা বৈশাখ আমার নিজের মস্তিষ্কে পরিচিত বস্তুসমূহের সাথে সাদৃশ্য খুঁজতে গিয়ে পরিনত হয়েছে কয়লা বৈশাখে. প্রায় আরো দুই বছর আমি পয়লা বৈশাখ কে কয়লা বৈশাখ বলতাম, এবং শেষ বছর শুধু বাড়ির সকলকে নির্মল আনন্দ-প্রদানের জন্য. এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে. তো সেই কয়লা বৈশাখে, ২৭ বছর আগে, আমার দাদু আমাকে দিয়েছিলেন একটা নীল রঙের জামা. সেই জামার কাপড়টা ছিল অত্যন্ত কড়কড়ে আর মোটা. অত গরমে বার দুয়েক পরেই ওই জামার প্রতি আমার ভয়ানক বিতৃষ্ণা জন্মেছিল. আমি বলতাম কুটকুটে জামা, আর মা জামাটা বের করলেই ছুটে পালিয়ে যেতাম, যাতে পড়তে না হয়. দাদু বোধ হয় আমার এই বিসদৃশ ব্যবহারে কিছুটা বিব্রত হয়ে কিছুদিন বাদে আমাকে একটা লাল নোটবই, একটা চেল্পার্ক এর নিবপেন আর একটা স্টিলের জগ কিনে দিয়েছিলেন। 


দাদু চলে গেছেন আজ প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল. চাকরি পাওয়ার পর, বিদেশে যাওয়ার পর, বাংলা ছাড়ার, নিজের বাড়ি ছাড়ার পর অনেক গুলো পয়লা বৈশাখ কেটে গেছে. অনেক সুন্দর, আরামদায়ক জামা ও কিনেছি আর উপহার পেয়েছি. কিন্তু সেই নীল কুটকুটে জামা আমৃত্যু ভোলা সম্ভব নয়। 


আজ আমার ছেলের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে দেখিনি. কারণ জানি, এটা আলাদা সময়, যে দূরত্ত্ব, যে জেনারেশন গ্যাপ তৈরী হয়, সেটাকে জোর করে মুছে ফেলার বা অস্বীকার করার চেষ্টা না করে, সেটাকে প্যরালাল ওয়ার্ল্ড এ রেখে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ, বিচক্ষনতাও বটে। 


আজ যে ফেসবুক নিয়ে পয়লা বৈশাখে মেতে আছি, আমাদের আগের জেনারেশন বা আমাদের ছোটবেলায় তা কল্পনাতীত ছিল. আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এমন একটা সন্ধিক্ষণে জন্মেছি, যারা দুটো বিশ্বকেই দেখেছে. ডিজিটাল হওয়ার আগের মানবিক সময় আর ডিজিটাল ভার্চুয়াল একটা সময়ের বিশ্ব. কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ এর বিচার করার কোনো প্রয়োজন বা সার্থকতা দেখিনা. শুধু মনে মনে আগের সেই সময়গুলো বড় বেশি করে টানে. হয়ত ঠিক সেই কারণেই, যে কারণে শিশুরা মাতৃগর্ভে থাকার সময় বা জন্মানোর পর বিচিত্র মুখভঙ্গি করে হাসে, যাকে বলে দেয়ালা, আগেকার দিনে ঠাকুমা বা দিদিমা রা বলতেন "আগের জন্মের কথা ভেবে হাসছে". আমরা ও ঠিক সেইরকম ফেলে আসা সময়ের কথা ভেবে স্বস্তি পাই, নস্টালজিক হই, হাসি বা ভালোলাগার অনুভূতি নিই. আজ পয়লা বৈশাখের দিনে সেই সময়ে ফিরে যেতে পারলে মনে হয় বেশ ভালো হত. কুড়ি বছর আগের সেই পয়লা বৈশাখ, সেই স্কুল এর মাঠ, সেই চুর্নী নদী, সেই কালো করিবর্গার ঘর, সেই গরমের দুপুরে বেল এর সরবত, সেই চৈত্রের সেল, সেই সব মানুষগুলো, যাদের বেশিরভাগ ই হারিয়ে গেছেন। 

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

ইতিহাস, ফিরে দেখা ... ১ ~ অ মি তা ভ প্রা মা ণি ক

যা হয়নি সিন্নিটা দিয়ে দরগায়
আন্দোলনের নামে তাই হয়ে গেল, বর্গায়।
ভেঙে গেল সব বড় বড় মৌচাক।
খেটে খেত যারা, তারা পেল দু' ছটাক।
এ সবে কি মিটে গেল নিরন্নের ক্ষুধা?
খণ্ড-ক্ষুদ্র হয়ে গেল বঙ্গ-বসুধা!


এখন মজাটা দ্যাখো, ওহে পুঁথিধর –
শিল্প গড়তে লাগে কত শ' একর!
হাজার মালিক সব রাজী হলে তবে
সম্ভব, এ যুগে তা হয় বাস্তবে?
তাই চলে ফিতে কাটা, শিলান্যাস আদি –
ছিঁড়ে যায় চটিখানা, পরণের খাদি।


তবু ওড়ে ধর্মঘট, ব্রিগেড গলিতে জমে সেই জনস্রোতও –
বুঝতে তাকালে পিছে
'এ গলিটা ঘোর মিছে,
দুর্বিষহ মাতালের প্রলাপের মত'।

শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

আমি তোমার, তুমি আমার ~ সুকন্যা ধর

তুমি আমার উদাস কানাই বেন্দাবনের ঘাটে,
তুমি আমার টাটকা ইলিশ উদয়পুরের হাটে।
তুমি আমার গরম কালের ঈষদুষ্ণ ঘাম,
তুমি আমার কচি প্রেমিক যদিও বুড়ো ভাম।

তুমি আমার ঠান্ডা মালাই কচি বেলের পানা,
তুমি আমার রাম মোদোকের পুষ্টিদায়ক ছানা।
তুমি আমার ঘুমের ঘোরে ঘুরুরঘুরুর নাক,
তুমি আমার ঘাড় ভর্তি ঘামাচিদের জাঁক।

বেশ তো তবে আমি তোমার শিঙ্গাড়া চমচম,
লস্যি কিম্বা ঘোড়ার গাড়ি শিউড়ি বা দমদম.
আমি তোমার হাল্কা টাকে গজিয়ে ওঠা চুল,
আমি তোমার নিষিদ্ধ ফল হাসিনা বুলবুল।

আমি তোমার মাস পয়লায় ইলিশ কিনে আনা,
আমি তোমার মাসের শেষের ছোট্টো চারাপোনা।
আমি তোমার মনের মাঝে বুজকুড়ি ভরপুর,
আমি তোমার ইষ্টি কুটুম ফুর্তিতে ফুরফুর ।

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

তুচ্ছ ঘটনা ~ সম্বুদ্ধ আচার্য

এইসব তুচ্ছ ঘটনা,
এসব তো শিল্প বা কলার মত না |
এইখানে রবিদাদু বাজে না মায়িকে-
কেউ কেউ মরে গেলে আসলে দায়ী কে-
সেসব করেন ঠিক রাজা নয় রানী,
আমরা তো ঘরে বসে এইসব ই জানি.
প্রতিবাদী যারা তারা শুধু জানে মাও-
তিরিশের ঋণে ডুবে গড়াগড়ি খাও.
অথবা সাজিয়ে নিও ধর্ষণ কিছু-
রেপের প্রসাদী টাকা পাবে মাথাপিছু |
কিম্বা কার্টুন এঁকো দেওয়াল লিখনে-
উপহার কারাগার এই শুভক্ষণে.
মোদ্দা কথাটা হলো পাপেটিয় খেলা,
তোমার কোমর ধরে নাচানোর পালা.
কোমর তোমার যদি তালে নাই নাচে,
ভাবো তো কেমন করে প্রশাসন বাঁচে?
সহমর্মিতা বোঝো, ভাবের দ্যোতনা,
তাই সব ই তুচ্ছ ঘটনা |

বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

ব্যায়লা বাজায় নিরো ~ শঙ্খ করভৌমিক


ক্রিকেট খেলা আলোর মেলা বলিউডের হিরো,
রোম পুড়ছে, বোম পড়ছে, ব্যায়লা বাজায় নিরো।

যাচ্ছে মরে পরের ছেলে, নিচ্ছি দেখে খবর।
মুখটি বুঁজে শান্তি খুঁজে খুঁড়ছি নিজের কবর।

শিরদাঁড়াতে শিরশিরানি, ধুকপুকুনি বুকে
ঠান্ডা ঘরে রুদ্ধ স্বরে তবুও আছি সুখে।

মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

স্বপ্নদীপ্ত অনুজ আমার ~ অনামিকা মিত্র

স্বপ্ন তোকে বলেছিলাম, ঘুম পেলে চলবে না।
রাত পাহারায় ফাঁক পড়লেই পুড়িয়ে দেবে ডেরা।

একটা মাত্র ঘর। এখনও মহাজনের দেনা
করছে তাড়া। জাগতে থাকুক দীপ্ত অনুজেরা।

স্বপ্ন তোকে বলেছিলাম, জেগে থাকাই কাজ।
ঝড় আসবে আজকে রাতে দক্ষিণ দিক থেকে।

আকাশও খুব উগড়ে দেবে আগুন মাখা বাজ, 
তোরা না হয় সকাল এলে ঘুমোবি প্রত্যেকে।

স্বপ্ন তোকে বলেছিলাম ইতিহাসের কথা।
এমনি ভাবেই এগিয়ে আসে অন্ধকারের ঢেউ।

প্রত্যেকবার জিতবে মানুষ, হবে না অন্যথা
হারিয়ে যাবার কথা শুনেও ভয় পাবো না কেউ।

এই ঘরটাও হাঁটুক না হয়। চাই না পিছু ফেরা।
স্বপ্ন নিয়ে হাঁটতে থাকুক দীপ্ত অনুজেরা।

কুশল ~ সুকন্যা ধর

তোমাকে কি সাপে কেটেছিল?
তাই বুঝি আছারিপিছারী 
ছেড়েছিলে দেশ, আত্মজন, ঘরবাড়ি ?
ফিরেছিলে পথে খুঁজে বিষ নিরাময়,
পাওনি কোথাও....বেলা শেষ হয় হয়।
মরে আসা দিনে আমি তোমার ভিতরে,
দেখলাম মৃত্যু তার ছায়া ফেলে ওড়ে।
জন্মদোষে জানগুরু শরীরে আমার,
পূর্বপুরুষের মন্ত্র তারস নামার।
শঙ্খ হয়ে ঘন্টা হয়ে বাজলো সেই থেকে,
বিবশ তোমার ক্ষত দুইহাতে ঢেকে। 
দুই ঠোঁটে চুষে নিই মৃত্যুগন্ধী বিষ, 
দুইকানে মন্ত্র বলি গুপ্ত ফিসফিস। 
সাড়ে ফিরে ক্রমে ধীরে অর্ধস্ফুট স্বরে ,
বললে ঘর জমিন ঠিকানা....
তোমার জীবনপঞ্জী তোমার অমাত্য পাত্র মিত্রদের নাম ,
শিকারী বাজের পায়ে তোমার রাজত্ব মুখে
তোমারই কুশল পাঠালাম ৷