মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১

অসামাজিক ~ উৎসব গুহঠাকুরতা

অসামাজিক

 

 

ভোরের বেলার ঘুমটা বড়ই পছন্দ পাগলটারকিন্তু কলকাতায় জুন মাসের গোড়ার দিকে সকাল ৭টা নাগাদ রোদের এতই তেজ যে তেতে ওঠা ফুটপাথে বেশিক্ষন পড়ে থাকা যায় না, গা চিড়বিড় করে। তারওপর যেদিন থেকে এখানে নতুন মলটা হয়েছে সেদিন থেকেই বেলা একটু বাড়লেই মলটার সিকিউরিটি গার্ডগুলো বেজায় খিস্তি দেয়। মাঝেমধ্যে লাথিটাথিও মারে। পাগলের সঙ্গে স্বাভাবিক মানুষ যেমনভাবে ব্যাবহার করে আরকি। তাই আজকাল পাগলটাকে একটু তাড়াতাড়িই ফুটপাথের নিজের ভাগের অংশ ছাড়তে হয়। তারপর সে একটু ছায়া দেখে বসে চটজলদি হাগু আর হিসুটা সেরে নেয়। এসব ব্যাপারে জলটল তার লাগে না, কারন সে তো পাগল। আজকাল সিকিউরিটি গার্ডগুলোর ওপর মাথাটা গরম থাকে বলে চেষ্টা করে মলের বাউন্ডারি দেওয়ালটার গায়ে কাজকর্ম সারতে। ইচ্ছে আছে একদিন মলের ভেতরে ঢুকেই সকালের কাজটা করবে। তার জন্যে দুএকটা খিস্তি বা লাথিটাথি খেতে হলে খাবে।

এরপর পাগলটার কাজ হচ্ছে রাস্তার ওপরে যে চায়ের দোকানগুলো তার সামনে কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা। পাগল বা ভিখিরিদের ফাইন ডাইনিং রেঁস্তোরা বা লাউঞ্জ বারের সামনে দাঁড়িয়ে বিশেষ সুবিধে হয় না, কিন্তু চায়ের দোকানের লোকজন খালি হাতে ভাগায় না। পাগলটার কপালেও সকালে এক গ্লাস লিকার আর দু একটা খাস্তা বিস্কুট জুটে যায়। মাঝেমধ্যে কোন খদ্দের প্রজাপতি বিস্কুট বা বাপুজি কেকও কিনে দেয়। পাগল হোক আর যাই হোক, তার ইন্দ্রিয়গুলো তো সচল, পাগল বলেই হয়তো বেশি সচল। তাই মাঝেমধ্যে ঘুগনি পাউরুটির ডিশগুলোর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু পাগলকে ফ্রীতে ঘুগনী খাওয়ানোর মতন শৌখিনতা চায়ের দোকানদার বা খদ্দের কারুরই পোষায় না।

আজকে পাগলটা এসব কিছুই করলো না। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা নেড়ি কুকুরের বাচ্চার উদয় হয়েছে কোথা থেকে। অন্য পাড়া থেকে কেউ ছেড়ে গেছিলো বোধহয়। প্রথমরাত্রে বাচ্চাটা পাগলটার ঘুমন্ত দেহের পাশে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকে। রাতের ফুটপাথে ওটাই একমাত্র উষ্ণ দেহ ছিলো বলে হয়তো। সকালে উঠে পাগলটা দেখে কোলের কাছে কুকুরের বাচ্চা। সেই থেকে বাচ্চাটি রয়ে গেছে। সকাল হলে কেঁউ কেঁউ করে খিদে জানান দেয়। একটি চায়ের দোকানে একটি বাচ্চা ছেলে কাপ ডিস ধোওয়ার কাজ করে, সে প্রথম দিনই একটা চায়ের গ্লাসে করে গরম জোলো দুধ আর কোয়ার্টার পাউন্ড পাউরুটি জোগাড় করে এনেছিলো। পাগলটার সামনে দাত বার করে বলেছিলো,  -হারুদা, বাচ্চাটারে দিও। তুমি খাইয়া নিও না আবার।

সেই থেকে সকালে কুকুরটার বরাদ্দের দুধ পাউরুটি বাচ্চাটা দিয়ে যায়। পাগলটা অনেক সময় নিয়ে কুকুরটাকে খাওয়ায়। পাগল না হলে ওর মনে স্বাভাবিক প্রশ্ন আসতো যে চায়ের দোকানের বাচ্চাটা রোজ যে দোকান থেকে দুধ পাউরুটি নিয়ে আসছে এর পয়সা কে দিচ্ছে? এবং পাগল না হলে এই প্রশ্নটা নিয়ে একটা গোটা ইস্তেহার নামিয়ে ফেলতে পারতোকিন্তু এসব কিছুই হয়নি, শুধু মাঝখান থেকে কুকুরের বাচ্চাটার সকালের দুধ পাউরুটির ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। আজকেও অনেক সময় নিয়ে কুকুরের বাচ্চাটাকে খাওয়ালো । বাচ্চাটার কোন নাম দেওয়ার কথা পাগলটার জট লাগানো মস্তিষ্কে কখনও আসেনি। বাচ্চাটার সাথে বিড়বিড় করে কথা বলবারও চেষ্টা কোনদিন করেনি। বাচ্চাটা শুধু মাঝেমধ্যে কেউ কেউ করে আর ও গায়ে হাত বোলায়।

 

বিকেলের দিকে মলের সামনে গাড়ির ভিড় বাড়তে থাকে। পাগলটাও ফুটপাথের একটা কোনায় বসে নানারকম গাড়ি আর মানুষ দেখে। এইসময়টায় সে একটু অন্যমনষ্ক থাকেই বলেই হয়তো সেদিনকে খেয়াল করলো না যে কুকুরের বাচ্চাটা ঘুরঘুর করতে করতে রাস্তায় নেমে গেছে। মলের সামনে যে গাড়ি পার্ক করবার জায়গা সেখানে যখন তীব্র গতিতে ছুটে এসে সাদা গাড়িটা আর্তনাদ করে ব্রেক করলো তখন ব্রেকের আওয়াজে পাগলটা একটু চমকে গেলেও একই সময়ে কুকুরের বাচ্চাটার চিৎকার তার কানে আসেনি। গাড়িটা যে ছেলেটা চালাচ্ছিলো তারও বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না। সদ্য কলেজে ওঠা ছেলেটার সকাল থেকেই মেজাজটা বিগড়ে আছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই কলেজে একটি মেয়ের পিছনে ছুকছুক করবার পরে আজকে বাবার গাড়িটা, মানে ওই স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেলটা নিয়ে কলেজে গিয়ে মেয়েটাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো গাড়িটা নিয়ে একটা কফিশপে গিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া যেতে পারে। মেয়েটা বলেছিলো,

-   কফি! হঠাত তোর সাথে কফি খেতে যাবো কেন!

-   তাহলে আমরা লং ড্রাইভে যেতে পারি একটু কোলাঘাটের দিকে

-   আর ইয়ু ফাকিং নাটস! বাজে হ্যাজাস না। তোকে আমি ঠিকমতন চিনিই না, একই কলেজে পড়ি, ব্যাস! লং ড্রাইভ ফাইভ মাথা থেকে কাটা।

কলেজের বাকি ক্লাসগুলো করবার আর ইচ্ছে ছিলো না। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটি বারে বসে ড্রাই চিলি চিকেন দিয়ে কয়েক বোতল বিয়ার সাবাড় করেছিলো, আর মেয়েটিকে যথাক্রমে বিচ, হোর, ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে প্রভুত আনন্দ লাভ করেছিলো। ফেরবার পথে মুত্রথলিতে বিয়ারের চাপ অনুভব করায় মনে হয়েছিলো মলের মধ্যে গিয়ে হিসুটা সেরে ফেললে হাল্কা লাগবে। মানে পাগলটার ইচ্ছের মতন নয়, সঠিক ভাবে ফ্রেশনারের গন্ধওয়ালা বাথরুমের মধ্যে। বিয়ারের আমেজে একটু ঢুলুঢুলু ছিলো, গাড়িটাকে পার্ক করতে গিয়ে সামনের চাকাটা কুকুরের বাচ্চাটার পেটের ওপর উঠে গেলো

প্রথম নেশার রেশটা কাটে আসেপাশের কিছু লোকজনের চিৎকারে। তারপরে ইলেকট্রিক শকের মতন আরেকটা চিৎকারে নেশা ফেশার পেছনে মেরে যায়। ছেলেটি দেখে কোথা থেকে একটি লোক আলুথালু বেশে চিৎকার করতে করতে কুকুরছানাটার সামনে মাটিতে বসে পড়েছে।

পাগলটা যখন কুকুরের বাচ্চাটির থ্যাতলানো দেহটার সামনে বসে অদ্ভুত জান্তব স্বরে চিৎকার করে কাঁদছে, সেইসমইয় চায়ের দোকানের কাপ ডিস ধোয়া ছেলেটা দৌড়ে আসে। কয়েক মুহুর্ত থমকে দাঁড়িয়ে সে আবার দোকানের দিকে ছুট লাগায় কারন তার মনে পড়েছিলো যে একবছর আগে মা মারা যাওয়ার সময়ে কেউ একজন বলেছিলো মুখে একটু জল দেওয়ার কথা। জলটা নিয়ে ফিরে এসে সে দেখলো পাগলটা তখনও চিৎকার করছে আর তার মুখ চোখ দিয়ে জল নাল গড়িয়ে একসা। এরপরে যে ব্যাপারটা ঘটলো সেইটার জন্যে অবশ্য ছেলেটি বা হাল্কা করে জমে যাওয়া ভিড়ের লোকগুলো, কেউই প্রস্তুত ছিলো না। পাগলটা হঠাত লাফিয়ে উঠে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা একটা বাঁশ তুলে নেয় এবং চিৎকার করতে করতে সাদা গাড়িটাকে পেটাতে শুরু করেগাড়িটার মধ্যে ছেলেটি এবং তার দুজন বন্ধুর তখন নেশা মাথায় উঠে গেছে। তবে সামনের ফগলাইটগুলোকে তছনছ করে পাগলটা যখন বনেটের ওপর উঠে সামনের কাঁচটায় প্রথম বাঁশের আঘাতটা করলো, তখন ওই তিনটি ছেলেই আর্ত চিৎকার করে উঠেছিলো। যে ছেলেটি গাড়ি চালাচ্ছিলো সে টেরও পেলো না যে তার অনেকক্ষনের মুত্রথলির চাপ হঠাত হাল্কা হয়ে গেছে এবং তার লিভাইজ ৫০১ এর সামনেটা উষ্ণ হয়ে ভিজে গেছে। বাঁশের দ্বিতীয় আঘাতের সামনের কাঁচটা অনেকগুলো টুকরো হয়ে ভেঙ্গেছিলো এবং চুল আর জামা থেকে সেই টুকরো গুলো ঝাড়তে ঝাড়তেই তিনজন গাড়ি থেকে লাফ মেরে নেমে দৌড়ে ফুটপাথে উঠে পড়ে। পাগলটা এক মুহুর্তের জন্যে তাদের দিকে লাফায় কিন্তু আবার ফিরে এসে গাড়ির বাকি কাঁচগুলোয় মননিবেশ করে। সাদা গাড়িটাকে তছনছ করে যখন সে পার্ক করা বাকি গাড়িগুলোর দিকে এগোচ্ছে তখন রাস্তায় লোক জমে গেছে আর একদিকের গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে গেছে।

মলের মধ্যে যাতে কেউ বিষ্ফোরন না ঘটায় তাই আজকাল মলের সামনে একটা কপুর গাড়ি থাকে। এই ক্ষেত্রেও কপুর গাড়িতে একজন এস আই আর গুটিকয়েক সার্জেন্ট বসে গুলতানি মারছিলো। হঠাত হট্টগোলে দেখে তারা গাড়ি থেকে হুড়মুড় করে নেমে এসে কিছুক্ষন থমকে গেলো। সামনের পাগলটা দ্বিতীয় গাড়িটার হুলিয়া পালটাতে ব্যাস্ত তখন। যে তিনটি ছেলে ফুটপাথে থমকে দাঁড়িয়ে এই বিচিত্র তান্ডব দেখছিলো, পুলিশ দেখে তারা হঠাত মনে একটু সাহস পেলো। গাড়ির চালক ছেলেটি আর্তনাদ করে উঠলো,

-   থামান স্যার! কিছু করুন! একটা খুনটুন হয়ে যাবে।

অপেক্ষাকৃত অল্পবয়েসি সার্জেন্টটি সিনিয়রের সামনে বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে পাগলটাকে থামানোর জন্যে কিছুটা এগিয়েছে, ভিড়ের থেকে একটা ফচকে গলার স্বর শোনা গেলো,

-   এগোস না, পাগল আছে, কামড়ে টামড়ে দিলে পোদে টেটভ্যাক নিতে হবে।

 

পাগলটিকে ছেড়ে কিছুক্ষন ভিড়ের দিকে একটু চোখ গরম করে সার্জেন্টটি আবার গাড়ির সামনে এলো। সাদা গাড়ির সেই তিনটে ছেলে ততক্ষনে এস আই কে ঘটনার বিবরন দিচ্ছে আর হাপাচ্ছে,

-   বিশ্বাস করুন, দেখতে পাইনি! আর ব্যাপারটা এইরকম হয়ে যাবে ভাবিনি! ইট ওয়াজ জাস্ট আ ফাকিং ডগ! ওর পোষা জানতাম না।

-   হুঁ! রাস্তার পাগলের আবার পোষা কুকুর! শালা কত কিছুই যে দেখবো।

-   ঠিকই বলেছেন স্যার, কিন্তু কিছু একটা করে থামান! একটাও গাড়ি আস্ত রাখবে না নাহলে! আরে আপনাদের তো আর্মস আছে, ভয় টয় দেখান!

-   আরে পাগল কি আর্মস বুঝবে নাকি! আর্মস তো ব্যাবহারও করতে পারবো না! তারওপর উলটে আক্রমন করলে মুশকিল। আঁচড়ে কামড়ে দিলে তো জান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।

-   তাহলে...!

-   দাড়ান, একটু ওয়াচ করি, নিজের থেকে থামলে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে পেদাবো। থানায় একটু ইনফরমেশনটা দিয়ে দিচ্ছি ওয়্যারলেসে।

-   আরে দেখুন দেখুন, গাড়ি ছেড়ে এবার মলের দিকে এগোচ্ছে!

এর পরে কয়েক মুহুর্ত একটি অদ্ভুত নিস্তব্ধতার মাঝে, যা ভিড়ের লোকেদের কাছে কয়েক শতাব্দীর সমান, পাগলটি মলের বাইরে প্রথম ডিস্পলে উইন্ডোর কাঁচটার ওপর বাঁশটা দিয়ে আঘাত করলো, এবং দ্বিতীয় নয়, তৃতীয় আঘাতে যখন কাঁচটা ঝনঝন করে ভাঙ্গলো, পাগলটা মনের মধ্যে একটি চরম প্রশান্তি অনুভব করলো। একের পর এক ডিস্পলে উইন্ডোতে আঘাত করে কাঁচগুলি কে সে যত চুরমার করলো, তত যেন তার মস্তিষ্কের জটগুলো খুলতে শুরু করলো। ওই জটগুলোর মধ্যেই অনেকদিন আগের একটা লুকিয়ে থাকা স্মৃতি হঠাত সারা মাথাটাকে আক্রান্ত করলো সেই যখন মলটা তৈরি হবে বলে কারখানাটা ভাঙ্গা হচ্ছে, এই রাস্তার সামনে কিছু হাঁড়গিলে কালো কালো মানুষ আকাশের দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ছে আর একসাথে কবিতা পাঠের মতন করে স্লোগান দিচ্ছে। স্লোগানটা বিড়বিড় করতে করতে চিৎকারে পরিনত হলো পাগলটার গলায়। চিৎকারটা করে সে খুবই আনন্দ পেলো, এবং তাই বারবার চিৎকার করতে লাগলো, সাথে মিলিয়ে খিস্তিও দিলো যদিও সে কথাগুলোর মানে বোঝে না, তবুও মনে হলো চিৎকার করে কথাগুলো বলে কাঁচ ভাঙ্গলে দ্বিগুন আনন্দ পাওয়া যায়।

মলের সামনে সেই ভিড়ের মানুষ দেখলো, একটা পাগল মলের কাঁচগুলো ভাঙ্গছে আর চিৎকার করছে ভুখা মজদুর করে পুকার! এই শালা শুয়োরের বাচ্চা! মেরে ফেলবো! করে পুকার! করে পুকার! ভুখা মজদুর জিন্দাবাদ!

অঞ্চলের থানার ওসির কাছে ততক্ষনে ঘটনাস্থলে এস আইর খবর ছাড়াও ওপরতলা থেকে দুটো ফোন চলে এসেছে,

-   ওয়াট ইজ দিস! এটা কি মগের মুল্লুক? চেম্বার অফ কমার্স আমায় বাঁশ করছে! কোন এন্টি-সোশ্যাল নাকি গাড়ি আর মল ভাংচুর করছে! তোমাদের ফোর্স নেই ওখানে?

-   আছে স্যার! ফোর্স আপডেট দিচ্ছে! আমরা আরও ফোর্স পাঠিয়েছি। এন্টি-সোশ্যাল না স্যার, পাগল! সাবভার্সিভ স্লোগান দিচ্ছে। ভুখা মজদুর টজদুর বলছে।

-   পাগল স্লোগান দিচ্ছে! ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকছে! পাগল হঠাত মল আক্রমন করবে কেন! তাও আবার বামপন্থী স্লোগান দিচ্ছে! না ব্যাপারটা লাইটলি নিও না! আজকাল শহরেও উপদ্রব বাড়ছে জানো তো! মনিটর করতে থাকো। আর শোনো...।

-   হ্যা সার!

-   দরকার পড়লে সেরকম ব্যাবস্থা নিতে হবে। অনেক উচু তলার থেকে ব্যাপারটা নিয়ে চাপ আসছে। বোঝোই তো, ওই মলের সাথে অনেক বড় বড় মানুষ জড়িত। আমি কথা বলে নিচ্ছি।

-   ওকে স্যার!

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওসি আবার ওপরতলায় ফোনটা করে নিলো,

-   স্যার, ওখান থেকে ফোর্স আপডেট পাঠালো। লোকাল লোকজন বলছে সত্যি পাগল!

-   হুম শোনো, আমি কথা বললাম। একদম সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ এসেছে, ব্যাপারটা এখানেই ইতি টানো। তার জন্যে যা দরকার হয়, করো। বুঝলে তো? যা দরকার...! আফ্টার অল, এই ডিস্ট্রাকশন অফ প্রপার্টি ছাড়াও তো আশেপাশে সিটিজেনদের সেফটির ব্যাপারটা আমাদের দেখতে হবে। কারুকে যদি এরপর আক্রমন করে ফেলে! বুঝতেই পারছো, আমাদের ওপর একটা দায়িত্ব চলে আসবে। মিডিয়া ছেড়ে কথা বলবে না। এমনিতেই এতগুলো গাড়ি আর মলের ক্ষতি হয়ে গেলো, আমাদের ইন্যাকশন নিয়ে খবর হবে তুমি জেনে রেখো!

-   হ্যা স্যার!

-   ওকে, আমাকে রিপোর্ট দিও।

-   ওকে।

ওসির ঘর থেকে পুলিশের গাড়িতে নির্দেশ যেতে আর কয়েক মিনিটের বিলম্ব হলো। পাগলটার চোখের সামনে তখন নাঁচছে ভুখা শ্রমিক, রাক্ষুসে মল আর ভাঙ্গা কাঁচ। প্রথম গুলিটা কাঁধে এসে লাগলো বলে সেই ধাক্কায় সে একটু টলে গেলো। অল্পবয়েসী সার্জেন্টিটির হাত কেপেছিলো, সার্ভিস রিভলভারটাও বেশ ভারি ছিলো। দ্বিতীয় গুলিটা কিন্তু সোজা পেটে লাগলো, আর কালচে রক্ত ছিটকাতে ছিটকাতে পাগলটা মাটিতে আছড়ে পড়ে কিছুক্ষন নড়লো, তারপর আস্তে আস্তে স্থির হয়ে গেলো। প্রথম গুলির আওয়াজেই ভিড়ের অনেকে পিছনে ছিটকে গেছিলো, এবার হঠাত করে ভিড়টা খালি হয়ে গেলো। সার্জেন্টটি গটগট করে পাগলটির দেহের পাশে গিয়ে লাথি মেরে বাঁশটা সরিয়ে দিলো, তারপর কুকুরছানাটির দেহের কাছে গেলো, এবং কিছুক্ষন দেহটাকে নিরীক্ষন করে সজোরে বুটটা দিয়ে মাথাটা থেৎলে দিলো।

-   বিশ্বাস করবেন না স্যার! মালটা এখনো বেঁচে ছিলো, একটু একটু নড়ছিলো। একটু পরেই মরতো যদিও। শালা ওইটুকু একটা জিনিস, তার জন্যে কত ঝক্কি পোয়াতে হলো!

 

 

 

 

ভগবান যখন দেবদূত কে বলেছিলো, যাও, আমার জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান দু্টো জিনিস নিয়ে এসো, দেবদূত পৃথিবীতে এসে পাগলের হৃদয় বা কুকুরছানাটির দেহ, কোনটাই খুজে পায়নি, কারন তিন দিন কাঁটাপুকুর মর্গে ফেলে রাখবার পর বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পাগলটার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো, আর কুকুরছানাটার দেহ ময়লার গাড়ি তুলে নিয়ে গেছিলো, সে ধাপার মাঠে ফুলকপিদের সারে পরিনত হয়েছে।


শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১১

এ এম আর আই ~ উৎসব

আজ আমরি অগ্নিকান্ডের ঘটনার ব্যাপারে একটু খোজখবর নিলাম। অনেক দুঃখ, ক্ষোভ, দোষারোপ, ক্রোধের মধ্যে দিয়ে যা জানতে পারলাম - প্রাথমিক উদ্ধারকার্জ চালিয়েছেন পঞ্চাননতলা বসি আর রেললাইন কলোনির লোকজন। প্রথম যখন আগুন লাগে তখন এই বস্তির লোকজনই ছুটে আসে, গার্ডরা গেট বন্ধ করে দেয়। অনুরোধ করা হয় গেট খুলে দিতে যাতে কিছু লোককে বাচানো যায়। কিন্তু হাসপাতালের যন্ত্রপাতি চুরি করে নেবে ( বস্তির গরীব লোক তো), এই জন্যে ওদের কে ঢুকতে দেয় না হাসপাতাল কতৃপক্ষ। শেষে কতৃপক্ষ পালায়, গার্ডরা পালায়, ডাক্তাররা (মানে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় পাশ করা ডাক্তাররা) পালায় - আর এই বস্তির লোকগুলো জোর করে ঢুকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে।

মনুষ্যজাতির কলঙ্ক কিছু শিক্ষিত চকচকে শুয়োরের বাচ্চার সাথে এক সারি তে দাঁড়িয়ে আমরা শাইনিং ইন্ডিয়ানরা শপিং মল, রাস্তা, কফি শপের নতুন মেকওভারের কলকাতাবাসী যখন বস্তিবাসীদের দিকে তাকিয়ে নাক সিঁটকোই, বস্তি উচ্ছেদ হলে নোংরা ঝেটানোর সম আনন্দ লাভ করি, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ওরা। আজ কয়েকটি দগ্ধ মৃতদেহের জ্বলন্ত আভায় শাইনিং কলকাতার মধ্যে বেমানান গাঁজা, পাতা, ডেন্ড্রাইটের ঠেক পঞ্চাননতলার বস্তি, আর তার বস্তিবাসীদের লাল সেলাম!





কেননা তুমি তো ফেটে পড়ছো না রাগে
এখনো তোমার ভন্ডামি ভালো লাগে
ভন্ডামি কিছু আমারও মজ্জাগত
শ্রেনীর সুবাদে আমিও তোমার মত
কেননা তুমি তো ইচ্ছে করেই অন্ধ
চেয়েছ বলেই তোমার দুচোখ বন্ধ
আমিও অন্ধ তোমার মতন সখা
শ্রেনীর সুবাদে তোমারই মতন বোকা
অথবা চালাক সেয়ানে সেয়ানে দুই
তুমি আর আমি এসো পাশাপাশি শুই
সুবিধের খাটে আমাদের খুনসুটি
শ্রেনীর সুবাদে সমঝোতা লুটোপুটি
চুলোয় যাকগে যা আছে চুলোয় যাবার
আমাদের আছে অঢেল খাবারদাবার
কেননা তুমি তো ফেটে পড়ছো না রাগে
এখনো তোমার ভন্ডামি ভালো লাগে
ভন্ডামি কিছু আমারও মজ্জাগত
শ্রেনীর সুবাদে আমিও তোমার মত

~ কবীর সুমন 

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১১

২০১২ ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

মেসো-আমেরিক সভ্যতায় একধরনের দিনপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হতো, যাকে বলা হয় লঙ কাউন্ট ক্যালেন্ডার। বর্তমান আমাদের চলতি ক্যালেন্ডারে চেয়ে অনেকটা আলাদা এই ক্যালেন্ডারের একক ছিলো কিন, যা কিনা আমাদের এক দিনের সমান। ২০ কিন এ হতো ১ উইনাল, ১৮ উইনালে ১ তুন ( যা কিনা ৩৬০ দিন, অর্থাৎ প্রায় আমাদের এক বছরের সমান) এবং ২০ তুন এ ১ কাতুন এবং ২০ কাতুন এ ১ বাকতুন। এই বাকতুন নিয়েই সমস্যার শুরু। মায়া সভ্যতার পুরনো নথীপত্র থেকে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে করে, খ্রীস্টপূর্ব ৩১১৪ সালের ১১ই অগাস্ট এই মেসো-আমেরিক ক্যালেন্ডারের শুরু। আর সেই হিসেব বলছে, ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর ১৩ বাকতুন সম্পুর্ন হবে। পোপুল ভু নামের এক বইতে পাওয়া যাচ্ছে, ওই দিন চতুর্থ মানব সভ্যতা শেষ হবে, এবং পঞ্চম মানব সভ্যতার সূচনা হবেপ্রত্যেকবার এক একটি মানব সভ্যতা শেষ হয়, আর ক্যালেন্ডার আবার শুন্য থেকে শুরু হয়। পোপুল ভু বইটি প্রাচীন মেসো-আমেরিক সভ্যতার নিদর্শন, খুব সম্ভবত ওলমেক ভাষায় লেখা বই।  

কিছুটা এই বই এবং ক্যালেন্ডারের সূত্র ধরেই ২০১২ সালে মহাপ্রলয় দেখা দেবে, এবং সমগ্র মানবসভ্যতা ধ্বংশ হবে, এরকম একটা প্রচার অনেক কাল ধরেই চলছে। দেখতে দেখতে ২০১২ দোরগোড়ায় চলে এলো। ২০১১র অক্টোবরের পর থেকেই বিভিন্ন কাগজপত্রে প্রলয় নিয়ে লেখালিখি বৃদ্ধি পেল। ডিসেম্বরে দেখাগেলো ইন্টারনেটে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ  পর্নো ছেড়ে প্রলয় নিয়ে মেতেছেগুগল বলল, তাদের সার্চ ইঞ্জিনে মানুষ "ডুমস ডে" শব্দ দিয়ে সবচেয়ে বেশিবার সার্চ করা হয়েছে। ডিসেম্বর যত শেষের দিকে যেতে শুরু করলো, ততই জনমানসে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। বড়দিনের উৎসবের মধ্যেই গীর্জায় গীর্জায় প্রার্থনা হতে লাগলো। জেরুজালেমে পুন্যার্থির ঢল নামলো, ভ্যাটিকানের উঠোনে এক খানা ছুঁচ পড়ার জায়গা পাওয়া গেলোনা। ওয়েস্টমিনিস্টারে ভিড় কিছুটা কম, কারন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি আর মাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের লিগ খেতাব নিয়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিটা ইংরেজদের মন থেকে আধ্যাত্মিকতাকে একটু হলেও স্থানচ্যুত করেছে। মস্কো আর সেন্ট-পিটার্সবার্গে মানুষ বরফ উপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাতে মোমবাতি নিয়ে প্রেয়ারে অংশ নিচ্ছে। পশ্চিম এশিয়া প্রথমটা তেমন গা না করলেও ডিসেম্বর পড়তেই মসজিদে মসজিদে ভিড় বাড়তে লাগলো। শেয়ার বাজারের অবস্থা সাঙ্ঘাতিক। সুইৎজারল্যান্ডের সার্ণ থেকে বিজ্ঞানিরা বললেন, এ যাত্রা রক্ষে নেই, শেয়ারে ধ্বস নেমে গেলো কয়েক মিনিটে। দুপুরের দিকে পোপুল ভু এর নতুন ব্যাখ্যা হাজির করলেন কোন এক ওলমেক পন্ডিত, শেয়ার বাজার ওমনি চড়া, কেননা, পৃথিবী ধ্বংশ হচ্ছে না।

ভারতে দু রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো। শহর গুলোতে চাপা উত্তেজনা। খবরের কাগজে রাজনীতি চাপা দিয়ে নানা রকম ভবিষ্যতবানী এবং তার বৈজ্ঞানিক, জ্যোতিষ, ইউনানি এবং ফেং সুই ভিত্তিক ব্যাখ্যা বেরোতে লাগলো। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বিতর্ক জমে উঠলো, সর্বত্র একটা কি হয় কি হয় ভাব। তীরুপতি মন্দির কতৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিলেন, তাঁরা আর সোনাদানা গ্রহন করবেন না, কারন রাখার যায়গা নেই। গত এক মাসে প্রায় দু খানা ফুটবল মাঠ ভরতি হয়ে যায়, এত সোনাদানা মানুষ দান করেছেন। মাথা মোড়ানোও বন্ধ, কেননা, মন্দিরের নাপিতরা টানা এক মাস দিন রাত এক করে প্রায় কোটি খানেক মাথা ন্যাড়া করার পর, ধর্মঘট করেছে। অন্যদিকে গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে ব্যাপারটা অনেকটা উড়ো খবরের মতো ছড়ালো। কিছু একটা হবে, কিন্তু কি হবে, সেটা কেউ বলতে পারলো নাহিংচেপোতার বটতলার বুড়োরা বললো, পয়রা গুড়ে আর গন্ধ থাকবে না, সব্বনাশ হবেআটঘরার শাষক পক্ষের নেতা বললেন বিরোধীরা ২০১২ সালের ওই ২১শে ডিসেম্বর একটা বড়সড় ঝামেলা পাকাবার তাল করছে, সেটা শক্ত হাতে দমন করা হবে। বিরোধী পক্ষও কিছু একটা বলেছিলো, কিন্তু সে কন্ঠস্বর এতই দুর্বল, যে কিছুই শোনা গেলোনা। উত্তরে পাহাড়ের মাথায় মিছিল হলো, কেননা খবর পাওয়া গেছে, ওই দিন নাকি লাখে লাখে বাঙালি পাহাড়ে উঠে, গোর্খাদের সংখ্যালঘু করে দেবার চক্রান্ত করেছে। তাই টানা একবছরের পাহাড়ে বন্ধ্‌ করাযায় কিনা, সেটা ভাবা হতে লাগলো। জঙ্গলমহলে প্রচার চললো, জোরদার আঘাত হেনে নিশ্চিহ্ন করে দেবার ফন্দি আঁটা হচ্ছে। প্রচার করল সরকার এবং মাওবাদী, দু-পক্ষই। কেবল আদিবাসীদের কোন হেলদোল দেখা গেল না। এ জিনিস তাদের গা সহা।

ভারতের তথা বিশ্বের তাবৎ নেতৃবৃন্দও এই খবর থেকে নিরাশক্ত থাকতে পারলেন না। হোয়াইট হাউসে  ক্লাসিফায়েড মিটিং হতে লাগলো। ইংল্যান্ডের মহারানি ঘন ঘন ডাউনিং স্ট্রীটে দেখা দিতে লাগলেন। ইজরায়েল "শেষের সেদিন ভয়ংকর" মেনে নিয়ে প্যালেস্টাইনের আরবদের কিছু অধিকার দিতে রাজি হল, এবং গাজার চারদিকে যে বিশাল প্রাকারের ওপর তাদের সেনাবাহিনী পাহারা দিতো, সেই প্রাকারের উচ্চতা ৬ ইঞ্চি কমিয়ে দেবার প্রস্তাব করল গ্রীক আর তুর্কিরা সাইপ্রাস ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবলো, তবে কেউই গেলনা। পাকিস্তান বললো, সবই যখন শেষ, তখন আর কেন? শেষ একটা বছর কাশ্মীরটা নাহয় পাকিস্তানেই থাক। সেই শুনে "অখন্ড ভারত" এর প্রবক্তারা বললেন, বরং শেষের একটা বছর পাকিস্তান আর বাংলাদেশ কে জুড়ে নিয়ে অখন্ড ভারত তৈরি হোক। সি আই আই বললো মুক্ত করো, খুলে দাও সব, মানুষ শেষের আগে মুক্তি পাক। শোনা যাচ্ছে কয়েকটি নারীবাদি সংগঠন এই বক্তব্য নিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে, এবং আদালতের শরনাপন্ন হয়েছে।

সতনাম সিং পাঞ্জাবি, তবে পড়াশোনা করেছে প্রধানত সিমলায় আর তার পরে চেন্নাই আই আই টি তে। পরে বৃত্তি নিয়ে স্ট্যানফোর্ডে যায়। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে কয়েক বছর পর দেশে ফিরে এসে ভারতের ভুতাত্বিক সর্বেক্ষন বিভাগে চাকরি নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে আস্তানা গাড়ে। এখানে এসে পেশাগত কাজের বাইরে, সতনাম আরো বেশী সময় ব্যয় করতে থাকে নিজের গবেষনার কাজে, এবং ২০০৯ সালে সে তার স্ট্যানফোর্ডের সহপাঠী ডক্টর এড্রিয়ান হেমস্‌লে কে নিজের গবেষনার কিছু ফলাফল পাঠায়, ও সাহায্য চায়। ডক্টর হেমসলে একজন জিওলজিস্ট, এবং মার্কিন সরকারের উপদেষ্টা। গবেষনার ফলাফল দেখে, ডক্টর হেমস্‌লের চোখ কপালে ওঠে, এবং তিনি, হোয়াইট হাউসের মুখ্য উপদেষ্টা কার্ল আনহাউজার কে সঙ্গে সঙ্গে জানান। ওভাল অফিসে জরুরি মিটিং বসে। সতনাম সিং গবেষনায় আরো এগোবার জন্য মার্কিন সরকারের কিছু তথ্যভাণ্ডার এবং কিছু ক্লাসিফায়েড সিস্টেম ব্যবহার করবার সুযোগ চান। সি আই এ জানালো, সতনাম ছোকরা "ক্লিন"স্ট্যানফোর্ডে কয়েক বার পার্টিতে মাতলামো, র‍্যাশ ড্রাইভিং এর জন্য পুলিসের টিকিট খেয়েছে। দেশে থাকতে এস এফ আই নামক ছাত্র সংঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলো, যা কিনা ভারতের "নন ভায়োলেন্ট" কমিঊনিস্টদের ছাত্র সংগঠন। তবে সেখানে মিছিল মিটিং এর থেকে, ছাত্রী সংগঠনের এক নেত্রীর সঙ্গেই ছোকরাকে বেশি দেখা যেত। আর ভারতে এখন যা রাজনৈতিক সমীকরন, তাতে ভারতের "নন ভায়োলেন্ট" কমিঊনিস্টদের ভয় পাবার কিছু নেই। কার্ল আনহাউজারের পূর্বপুরুষ জার্মান, এবং প্রথাগতভাবে এনারা পেশায় শুঁড়ি। অনেকটা হিটলারের বিদেশমন্ত্রি আলফ্রেড রোজেনবার্গের মতো। আনহাউজার বেশি বিশ্লেষনে গেলেন না। খালি একটাই প্রশ্ন করলেন ডক্টর হেমসলেকে, যে এই ইন্ডিয়ান ছোকরা কাজের কিনা। ডক্টর হেমসলে বললেন, সতনামের ওপরে তিনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন। আর সময় নষ্ট না করে, আনহাউজার, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দিয়ে ছোকরার ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিলেন। সতনাম এখন থেকে নাসা পেন্টাগন এবং কিছু পরিমানে ন্যাটো গোষ্ঠিভুক্ত দেশগুলোর তথ্যেও নাগাল পাবেন। সতনামের সঙ্গে কাজ করছে কয়েক জন সদ্য কলেজ থেকে বেরোনো তরুন তরুনি। তাদের যৎসামান্য মাসোহারার ব্যবস্থাও করা হলো। চিপ ইন্ডিয়ান লেবার। আনহাউজার একটা ছোট্টো একপেশে হাসি হাসলেন। ডক্টর হেমসলে আগামি কয়েক মাসে বেশ কয়েক বার গুন্টুর যাওয়া আসা করবেন। সতনামের হিসেব অনুযায়ী ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর মহাপ্রলয় দেখা দেবে। নিঊট্রিনো কনিকার সৌরঝড়ের কারনে পৃথিবীর অন্তস্থলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিপজ্জনক হারে। এই উষ্ণতা বাড়তে বাড়তে একটা সময় পৃথিবীর পেটের ভেতরের তরল লাভার ওপরে ভাসতে থাকা টেকটোনিক প্লেট (তরল লাভার ওপর ভাসতে থাকা পাথরের স্তর, যার ওপরে আমাদের আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া আফ্রিকা রা রয়েছে) গুলো স্থানচ্যুত হবে। দেখাদেবে অগ্নুৎপাত, ভুমিকম্প এবং অতিকায় সুনামি। গোটা বিশ্ব জলমগ্ন হবে। গড হেল্প আমেরিকা।

পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটি। এত মানুষ স্রেফ ভয় পেয়ে দৌড়োদৌড়ি করলেও যে কোন পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। তাই গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রপ্রধানরা খুব গোপনে মিলিত হলেন, কয়েক জন প্রতিনিধি পাঠালেন নিজেরা আসতে না পারার জন্য। পরিকল্পনা অতি বৃহৎ। ৭০০ কোটি মানুষকে বাঁচানো সম্ভব না। কেবল মাত্র কিছু মানুষকে বাঁচানো যেতে পারে। বাইবেলে আছে, আসন্ন বিপর্জয়ের খবর পেয়ে নোয়া এক অতিকায় জাহজ তৈরি করে সমস্ত প্রানীজগতের একটি করে মদ্দা ও একটি করে মাদী নমুনা তাতে বোঝাই করেন। তার পরে প্রলয়ংকর বর্ষণ শুরু হয়। গোটা বিশ্ব জলমগ্ন হয়। কেবল নোয়ার আর্ক বা জাহাজ ভাসতে থাকে। সাত মাস পর, নোয়া একটি ঘুঘু আর একটি কাক কে উড়িয়ে দেন। ঘুঘু টি ফিরে আসে ঠোঁটে একটি টাটকা অলিভ পাতা নিয়ে। আরো সাত দিন পর নোয়া ঘুঘুটিকে আবার উড়িয়ে দেন, এবারে আর সে ফিরে আসে না। নোয়ার আর্ক ইতিমধ্যে ভাসতে ভাসতে গিয়ে আটকায় মাউন্ট আরারাতের চুড়ায়। এই আর্কের পরিকল্পনাটিকেই অনুমোদন করা হলো। কিন্তু একটা নয়, ১০ খানা আর্ক তৈরি হবে। আর তাতে স্থান পাবে প্রানীজগতের সব রকম নমুনা আর প্রায় লাখ খানেক মানুষ। হ্যাঁ, এই লাখ খানেক মানুষই রক্ষা পাবে আসন্ন বিপর্যয়ের থেকে। বাকি দের রক্ষা নেই। এই এক লাখ মানুষের আধাআধি রাষ্ট্রপ্রধানরা পছন্দ করবেন। বাকি আসন খুব গোপনে সেরা ধনি দের মধ্যে বন্টন করা হবে, চড়া অর্থমূল্যে। কারন এই প্রকল্পের খরচ অনেক। সতনাম এবং ডক্টর হেমসলে এসবের বিশেষ কিছু জানলেন না। তাঁদের শুধু জানানো হলো, ঠিক সময়ে তাঁরা তাঁদের পরিবার সমেত নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত হবেন। তাঁদের এই স্থানন্তরের দায়িত্ব বর্তালো ভারত সরকারের ওপর। দক্ষিন তীব্বতের এক অগম্য পর্বত এর গুহায় অতিকায় আর্ক গুলো তৈরি শুরু হলো এ জায়গা হলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু, আবার চিনে মজুরদের মজুরি খুব কম, আর দক্ষতা? সেটাও প্রশ্নাতীত। গত ৩০ বছরে পৃথিবীর যাবতীয় উৎপাদনের সিংহভাগ তাদেরই উৎপাদিতঅসংখ্য চিনা মজুর এবং গনমুক্তি ফৌজ কাজ শুরু করলো, সেই সঙ্গে রইলেন হাতে গোনা কিছু বিজ্ঞানি এবং ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ারদের বেশিরভাগ আনা হলো পাশের দেশ ভারত থেকে। কেননা, এরা পয়সা পেলেই খুশি, কি তৈরি হচ্ছে সে নিয়ে কৌতুহল নেই। আবার ভাষা বোঝেনা বলে, চিনে মজুরদের সঙ্গে বেশি কথাবার্তাও বলবেনা। নিট ফল, এত বড় জিনিসগুলো যে আসলে কি, সেটাই একটা ধোঁয়াসা থেকে যাবে। কেননা এই কারিগর এবং পাহারাদারদের কাউকেই আর্কে স্থান দেবার প্রশ্ন নেই।

লোকসভা এবং তাদের সদস্যরা তালিকায় স্থান পেলেন ভারত সরকারের। প্রাদেশিক বিধানসভা এবং পরিষদের সদস্যরাও স্থান পেলেন। সামান্য কয়েকজন অন্য পেশার লোকজনকেও নেওয়ার কথা হয়েছিলো, তবে সে প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাশ হয়নি। টাটা, আম্বানী সমেত ভারতের বড় বড় শিল্পপতিরাও নিজেদের আসন সংরক্ষন করলেন প্রচুর অর্থমূল্যেদেশভেদে ব্যবস্থার তারতম্য হলো না। যাবতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ব্যবসায়ীরা নিজেদের আসন সংরক্ষন করলেন। লেখক, শিল্পী গায়ক গায়িকা ইত্যাদিকে নেওয়ার একটা প্রস্তাব উঠেছিলো, কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানরা অনুমোদন করেন নি। অনেক কষ্টে এদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে। আবার এক খানা "উই শ্যাল ওভার কাম" কিম্বা "ব্লোইন ইন দ্য উইন্ড" লিখে ফেলুক আর কি। বরং যে সব শিল্পীদের টাকা আছে, তারা এমনিতেই টিকিট কিনে আর্কে উঠতে পারবে। শোনা গেল দাউদ ইব্রাহিম জাতীয় অনেক ধনীই টিকিট পেয়েছেন উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে।

ডক্টর হেমসলে গুন্টুরেই আছেন সতনামের সঙ্গে। সতনামের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০০ নব্য প্রযুক্তিবীদ দিনরাত কাজ করে চলেছে। এদের বেশিরভাগই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ডক্টর হেমসলের পূর্বপুরুষ আফ্রিকার কালো মানুষএখানে, এই গুন্টুরে অধিকাংশ মানুষেরই গাত্রবর্ন অনেকটা তাঁরই মতো। আর এখানকার কৃষ্ণনয়না তরুনিদের ভারি ভালো লাগতে শুরু করেছে, বিশেষ করে দ্যাট হোয়াইট ফ্লাওয়ার, যেটা এরা এদের আজানুলম্বিত বেনীতে জড়িয়ে রাখে। সতনামের দলের একটি মেয়ে, যার নাম সুধা, তাকে ডক্টর হেমসলের খুব মনে ধরেছে। মেয়েটি তাঁকে কাঁসার গেলাসে কাপি (যাকে আমেরিকানরা বিকৃত উচ্চারনে কফি বলে) খেতে শিখিয়েছে, ভাত সাম্ভার আর রসম চাখিয়েছে, রজনীকান্ত বলে এক ইন্ডিয়ান সুপারম্যানের সিনেমাও দেখিয়েছে। এবং ডক্টর হেমসলে স্বীকার করেন, রজনী ইজ বেটার দ্যান সুপারম্যান। তবে ডক্টর হেমসলে সুধাকে রাজি করিয়েছেন, সে যেন সপ্তাহে একদিনের জায়গায় ৩ দিন তার ফুলের মালাটি বদলায়। জেসমিন ফ্লাওয়ার, যত সুগন্ধীই হোক, পচে গেলে......... ।

২০১২ সালের মাসগুলো খুব তাড়াতাড়ি পেরোতে লাগলো। জনমানষে আশঙ্কা বাড়ছে দেখে ভারত সমেত বেশ কিছু দেশে ইন্টারনেটের সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এবং ব্লগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বসলো। যদিও টেলিভিশন এবং খবরের কাগজে অবিশ্রান্ত নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা চলতেই থাকলো। শেষে এদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা বসলো। জম্মুর কাছে ভারত আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কয়েক দিন কিছু গোলাগুলি ছোঁড়াছুঁড়ি করলো, এবং এই যুদ্ধ নিয়ে মেডিয়া মেতে উঠলে, দু দেশের দুই সরকার একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কয়েক দিন পরেই তাঁরা ৬ নম্বর আর্কে একে অপরের প্রতিবেশী হবেন। গোটা পৃথিবী থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রানী এবং উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করার কাজ চলছে দ্রুতগতি তে। এমনিতে অসুবিধে হবার কথা নয়, তবে পরিবেশবীদ দের এড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে একটু রেখে ঢেকে চলা হচ্ছে। অবাঞ্ছিত ঝামেলা আর কে চায়?

ডিসেম্বর মাস। সতনামের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেমে এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে টেকটোনিক প্লেটের ভঙ্গুর দশা। বড় বড় কম্পিউটার পর্দা জুড়ে ছবি এবং তথ্য। পৃথিবীর অভ্যন্তরে উথাল পাথাল হচ্ছে। সতনাম একখানা ঘড়ি তে কাউন্ট ডাউন চালিয়ে রেখেছে। ডক্টর হেমসলে স্থির থাকতে পারছেন না। সতনাম মাঝে মাঝে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা চালায় তাঁর সঙ্গে। আলোচনা করে, কি ভাবে টেকটোনিক প্লেটের ভাঙ্গন দেখা দেবে। কোথায় কি ভাবে সুনামী শুরু হবে, এবং কি ভাবে সেই ঢেউ এসে আঘাত করবে স্থলভাগে। ডক্টর হেমসলে কিছুতেই স্থির থাকতে পারছেন না। এক দিকে কম্পিউটারের পর্দায় দেখছেন, যে কি ভাবে তাঁর বলা প্রত্যেকটি সম্ভাবনা মিলে যাচ্ছে একে একে। জিওলজিস্ট হিসাবে গর্ব হচ্ছে তাঁর, কিন্তু যখনই চার ধারে দেখছেন, এই গাছপালা, মানুষ, রাস্তায় চরতে থাকা গরু, তাঁর মেড বুড়ি, যার বিদ্ঘুটে নামটা কিছুতেই মনে করতে পারেন না, পার্ক, বাচ্ছারা, রজনীকান্ত আর সুধা, কিছুই থাকবেনা, দারুন একটা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। কাউকে বলতে পারছেন না। সতনাম কে দেখছেন, আর ভাবছেন, কি ভাবে এই ইন্ডিয়ান গুলো এতো শান্ত থাকতে পারে? জিজ্ঞেস করেও দেখেছেন। ভেবেছিলেন সতনাম কোন হিন্দু দর্শণের কথা শোনাবে, কিন্তু সতনাম উলটে তাঁকে হেগেল এর স্ব-বিরোধ এবং বিলোপ (কন্ট্রাডিকশন্‌ এন্ড নেগেশন্‌) এর ব্যাখ্যা দিয়েছে। কাউন্ট ডাউন ক্লক চলছে। ১৩ বাকতুন শেষ হয়ে আসছে। শেষ হয়ে আসছে চতুর্থ মানব সভ্যতা।

ডিসেম্বর ১৮, ২০১২। মাঝরাত্রে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙালো সতনাম। হিসেবে একটু ভুল ধরা পড়েছে। ৩ দিন নয়, হাতে মাত্র ৩৬ ঘন্টা সময়। রাষ্ট্রপ্রধান এবং বাকি আর্কের টিকিটধারীরা যদিও বেশিরভাগই তীব্বতের অজানা সেই গিরিগুহায় ঢুকে পড়েছেন, কয়েকজন তখনো বাকি ছিলেন। তাঁদের সবাইকে রওনা হয়ে যেতে বলা হলো। ১৯ তারিখ সকাল থেকেই সতনাম আর তার দলের তরুন তরুনি রা খুব ব্যস্ত হয়ে শেষ মুহুর্তের কাজ করছে। কি শান্ত সকলে। যদিও এরা সবাই জানে কি ঘটতে চলেছে। রাত্রে একটা মিলিটারি হেলিকপ্টার আসবে, সতনাম, তার স্ত্রি, পুত্র এবং ডক্টর হেমসলেকে নিয়ে তীব্বত উড়ে যাবে। বিকেল বেলা পাশের একটা মসজিদে নামাজের আজান শুনে খুব মন খারাপ লাগছিলো এই পুরোনো নোংরা পচে যাওয়া মৃত্যু পথযাত্রি পৃথিবীটার জন্যে, তাই একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলেন ডক্টর হেমসলে শেষ বারের মত। দেখলেন সন্ধ্যের মুখে মন্দির গুলোতে প্রদীপ জ্বলে উঠছে, আরতী শুরু হয়েছে। জনমানসে উত্তেজনা যদিও যথেষ্ট পরিমানেই আছে ২১শে ডিসেম্বর নিয়ে, কিন্তু মিডিয়া নিয়ন্ত্রনের কারনে সেই উত্তেজনা, উন্মাদনায় পরিবর্তিত হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রি টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদপত্রে বার বার বিবৃতি দিয়েছেন, কিছু ঘটবেনা, সবাই শান্ত থাকুন। নিশ্চিন্ত থাকুন। বিদেশী প্ররোচনায় পা দেবেন না।

রাত ১১টা ২৫ মিনিট। হেলিকপ্টার নেমেছে সামনের মাঠে। সতনাম অন্য একটা কপ্টারে পরে আসবে। ডক্টর হেমসলে সঙ্গে কিছু নথিপত্র নিয়ে এটায় যাবেন। হেলিকপ্টারের কান ফাটানো আওয়াজে এত রাত্রেও লোকে ছুটে আসছে। ডক্টর হেমসলে হেলিকপ্টারে ওঠার সিঁড়িতে পা রাখলেন, পেছনে তাকালেন শেষবারের মত। সবার আগে ও কে ছুটে আসছে? কার চুলের টাটকা সাদা যুঁই ফুলের সুবাস তাঁকে টানছে?

২০শে ডিসেম্বর। আর্ক - ৩ এর ভেতরেই কন্ট্রোল রুম। আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি। বিশাল কম্পিউটারের পর্দায় দেখা যাচ্ছে মহাসুনামীর ঢেউ এগিয়ে আসছে। গোটা ভারতীয় উপমহাদ্বীপ ডুবে গেছে। টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অবশ্য ফোন ধরার মত কেউ নেই আর। কার্ল আনহাউজার রুমালে মুখ মুছলেন। অনেক পরিশ্রমের ফসল এই আর্ক। ঢেউ এগিয়ে এলে আর্ক গুলো আপনা থেকেই জলের ওপরে ভেসে উঠবে এমন ব্যবস্থা করা আছে। আগামী এক বছর তাঁরা স্বচ্ছন্দে ভাসতে পারবেন মহাসমুদ্রে। তার পর খুঁজতে হবে কোথাও কোনো ডাঙা জমি বেরিয়েছে কিনা। ৭০০ কোটির মধ্যে ১ লাখ মানুষ   কে বাঁচানো গেলো। তিনিই নোয়া। এ যুগের নোয়া। ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁকে অমর করে রাখবে। আর মাত্র এক মিনিট। ডক্টর হেমসলে এসে পৌঁছতে পারেন নি। মাঝরাত্রের কিছু পরে শেষ মেসেজ পেয়েছেন ডক্টর হেমসলের, যে তিনি পারলেন না পৌঁছতে। সতনাম সিং ও পারেনি। যাক গে ভেবে লাভ নেই আর। এসে গেছে মহা-সুনামী। দুলে উঠলো অতিকায় আর্ক। প্রবল ঠান্ডা হয়ে যেতে শুরু করলো সব কিছু। হিমালয়ের বরফ......। জ্ঞান হারালেন সকলে।

হাত চেপে ধরেছিলো সুধা। পেছনে সতনামের দলের ছেলে মেয়েরা। এদের ফেলে কি করে যাবেন তিনি? তাজা মুখ গুলোর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কেঁদে ফেললেন ডক্টর হেমসলেসুধা এগিয়ে এসে হাত ধরলো তাঁর। পেছনে ও কে? সতনাম না? ওর তো এগিয়ে যাবার কথা। ও নিজেও .........?

ভোর হতে বেশী বাকি নেই। ডক্টর হেমসলে বাক্‌শক্তি হারিয়েছেন। সত্যকে স্বীকার করার শক্তি হারিয়েছেন।

ভোর হতে বেশী বাকি নেই। পূব আকাশে লালচে আভা। আর্কের ধাতব পাত গুলো ঝকঝক করছে। সুনামীর ঢেউ এসে আঘাত করলে এই কুয়োর মতো মহাকায় গুহা জলে ভরে উঠবে, এবং আর্ক জাহাজ গুলো জলে ভেসে উঠবে। কর্মী বাহিনী অনেক দিনই কাজ সেরে চলে গেছে এখান থেকে। গত কিছু সপ্তাহ গোটা বিশ্ব শাষিত হয়েছে এখান থেকেই। আর কেউ নেই আসে পাশে বেশ কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে। কাউন্ট ডাউন ঘড়ি চলছে, আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড। হঠাৎ আর্ক গুলোর ছাতের দিকে, যেখানে এয়ার কন্ডিশনিং এর হাওয়া চলাচল করে, সেখান থেকে এক ঝলক অস্বাভাবিক ঠান্ডা হাওয়া ভেসে এলো। তার পরে হুড় হুড় করে ঢুকতে শুরু করলো তরল নাইট্রোজেন। কয়েক মাইক্রো সেকেণ্ডে সবাই জমে গেলো। গোটা জাহাজ গুলো পরিনত হলো দৈত্যাকৃতি ক্রায়োপ্রিজারভেশনে। এই প্রযুক্তি মানুষের জানা। তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে -১৯৬ ডিগ্রি শীতলতায় কোষের মৃত্যু হয়না। আবার কোষ সক্রিয়ও থাকেনা। অনেকটা কোমার মত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই মানুষ গুলো জীবিত ও না, মৃত ও না। এই অবস্থায় অনন্তকাল তাদের রেখে দেওয়া যেতে পারে, হিমালয়ের এই অগম্য জায়গায়। মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন এই মানুষগুলো পর্দায় দেখেছে, প্রলয় এগিয়ে এসেছে। সতনাম আর তার ছেলে মেয়েরা প্রানপন খেটে গেছে বিশ্বাসযোগ্য সিমুলেশন তৈরি করতে। কিছু তথ্য এসেছে হ্যাকিং করে। বাকিটা শাষকরা নিজেরাই তুলে দিয়েছে সতনামের হাতে। স্যাটেলাইট, মেইনফ্রেম কম্পিঊটার, সামরিক তথ্য সব কিছু মিলিয়ে তৈরিকরা হয়েছে দানবীয় ভাঁওতা। তথ্য ব্যবহারের অছিলায় হ্যাক করা হয়েছে পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় কম্পিঊটার সিস্টেম। ঢোকানো হয়েছে ভাইরাস। আর সব কিছুই করা হয়েছে তাদেরই টাকায়। অকল্পনীয় অর্থভান্ডার উজাড় করে দেওয়া হয়েছে সতনামের হাতে। সেই টাকা দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে ধরা পড়ার আশংকাকে উৎকোচ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় ইঞ্জিনিয়রদের মধ্যে সতনামের আই আই টির সহপাঠিরা ছিলো। তরল নাইট্রোজেনের কেরামতীটা তাদেরি।

ভোর হতে বেশী বাকি নেই। ডক্টর হেমসলে বাক্‌শক্তি হারিয়েছেন। সত্যকে স্বীকার করার শক্তি হারিয়েছেন। শুধু প্রশ্ন, কেন? কি হলো এই সব করে? সুধা কফি নিয়ে এসেছে। জানলা দিয়ে ভোরের রোদ এসে ঢুকছে। সতনাম বলে চলেছে।

"আজ ভোরের বাতাসে, পৃথিবীর শাষক নেতারা, ধনি শোষকরা শেষ বারের মত নিশ্বাস নিয়েছে এড্রিয়ান। আগামী কাল, ২১শে ডিসেম্বর, ২০১২ সালের ভোর, আর এদের নিশ্বাসে বাতাস কলুষিত হবে না। চতুর্থ মানব সভ্যতা শেষ। আগামী কাল শুরু হবে পঞ্চম মানব সভ্যতা, শুন্য বাকতুন। মুক্ত মানুষের মুক্ত পৃথিবী"

 

[*এই গল্পের কিছু চরিত্র ২০১২ সিনেমাটি থেকে নেওয়া]

সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১১

মধ্যবিত্ত ~ অংশুমান ব্যানারজী

আমি দেখেছি মানুষটাকে রাত্রের অন্ধকারে একা ঘরে
ইজি-চেয়ার এ হেলান দিয়ে শুয়ে, মুখে ছিলো জ্বলন্ত সিগেরেট, হাতে মদের পেয়ালা -
চিন্তায় অসার !!!!!
ঠিক তখনি কে যেন বলে ওঠে :
(হয়ত ব্যঙ্গ করে)
"ওহে! মধ্যবিত্ত কেমন আছো?"

চন্দ্রাহত ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

ও চাঁদ, আমাদের পুড়িয়ে দিয়েছিলে!

চামড়া দেখ ঝলসানো।

বদলে আমরাও ঢালব স্থবিরতা।

স্থবিরতার মানে জানো?

 

প্রতীক্ষায় সব জটিল দিন কাটে...

আদালত ও একটি মেয়ে ~ অরুণাচল দত্তচৌধুরী

ত্যাগ করেছি লজ্জাভূষণ, জবাব দেব পাঁজর খুলে

যা জানতে চান প্রশ্ন করুন ... মহামান্য ধর্মাবতার ...

প্রতিরোধের চিহ্ন সকল, সব দেখাব  আঁচল তুলে।

হিসেব দেব অন্ধকারটা কেমন আমায় খাচ্ছিল, তার!

 

আমি শুধুই একটা শরীর, আমার কোনও মন ছিল না

নানান ধারাউপধারায় একটাই কাজ বিচারসভার,

আজকে মেয়ের চরিত্রতে কালির ফোঁটার সংখ্যা গোনা

প্রশ্ন দিয়ে ছিঁড়বে শরীর! নতুন করে ছিঁড়বে ?... 'বার?

 

দেরি হচ্ছে। হোক না দেরি। আমি তাতেও রাজিই আছি।

অন্ধ কুরুপতির সামনে ছিন্ন মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।

যুগের পরে যুগ চলে যায় ... ক্ষতস্থানে উড়ছে মাছি।

এই বেহায়া বিচারসভায় তাড়া থাকলে চলবে নাকি?

 

একুশ শতক পৌঁছে তবু,সেই কথাটাই বুঝছি খালি

আপনি হুজুর আজ এখনও আগের মতই পুরুষালি!

শব্দ ~ অঙ্কিতা ঘোষ

শব্দের একটা নিজস্ব ছেলেমানুষি আছে।
এই তাকে তুমি বসিয়ে গেলে কোথাও,
শাসিয়ে গেলে, 'নড়বে না একদম'।
কাজের শেষে দেখবে ফিরে এসে
চুপটি করে সেখানেই সে আছে।
অথচ সে জায়গায় আর তাকে
কোনমতেই মানাচ্ছে না যেন,
তখন তোমায় আবার তাকে তুলে
অন্য কোথাও রাখতেই হয় দেখো।
শব্দের একটা আশ্চর্য সাহসিকতা আছে।
নিজের চারিপাশের সমাজকে
জাদুবলে বদলে ফেলে যেন।
তখন তোমার উপায় তো নেই আর,
তোমারি বেছে নেওয়া শব্দের
তখন তুমি বাধ্য ক্রীতদাস।

শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১১

ভালো থাকা ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরী

ভালো আছি বললেই
মনে পড়ে এরও চেয়ে ভালো
সময় আসবে যারা বলেছিল ... সে ছেলেরা কোথায় হারালো!
তারাও কি ভালো আছে মেঘমাখা আবছায়া দিনে?
ভালোমন্দ যাই থাকি ... জেগে থাকি 
ফিরে এলে নিতে হবে চিনে...

কী কী ~ অনির্বাণ মাইতি

আমার কাছে পরিষ্কার আমার কী কী চাই
প্রথমত আগুন
দ্বিতীয়ত ছাই, 
আমার কাছে পরিষ্কার আমার কী কী আছে
আছে কিছু অগ্নি-বলয় 
ছাইচাপা তোর কাছে ,
আমার কাছে পরিষ্কার আসলে কী হয়
উদ্ধত সব চাউনিগুলোর আড়ালে এক ভয় ,
আমার কাছে পরিষ্কার এবার কী কী হবে
লক্ষ খালি পায়ের দাপে
আগল ভেঙ্গে যাবে...

ছায়া ~ অঙ্কিতা ঘোষ

ছায়াদের ঘিরে থাকা বৃত্তে
আরো ছায়াঘন হয়ে ওঠে স্মৃতি ।
বিস্মৃত কাজ, যত অসময়
কথকতা, কত কথা না বলা,
শৈশব ছেঁকে আনা বিষ্ময় 
চুরি করে চেনা যত খেলাঘর ।
সন্ধির উল্টো কি যুদ্ধ? 
খঁুজে পেয়ে জানিয়েছে উত্তর?
ছায়া আর ছবিদের দ্বন্দ্বে 
যাদুছোঁয়া হারিয়েছে ল্যুমিয়ের ।


ছায়াদের ঘিরে থাকা বৃত্তে
আরো ছায়াঘন হয়ে ওঠে,
স্মৃতি।  

বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১১

কেন্দু পাতা ~ শ্রাবণী গুপ্ত

কেন্দু পাতায় স্বপ্ন বাসা বঁাধে 
শাল-মহুয়ার ঘেরাটোপে ওরা হাঁটে
খালি পায়েই, কালো শরীর ঝঁুকিয়ে, পিঠ বাঁচিয়ে চলা
রাষ্ট্রযন্ত্র বেয়োনেট হয়ে চেপে ধরে রোজ গলা
পায়ে পায়ে চলা সরু পথে মেশে শেষ বিকেলের রোদ
আমার ভাইএর লড়াই, পেটে আজন্ম খিদে-বোধ
সবুজ এ লাল মাখামাখি আর চোয়াল ওড়ানো খুলি
রাষ্ট্রযন্ত্র বেয়োনেট তোলে, ঝাঁকে ঝাঁকে ওরে গুলি। । 

রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১১

চড়াই ~ নবারুন ভট্টাচার্য

মদ না খেলেও
স্ট্রোক না হলেও
আমার পা টলে যায়
ভূমিকম্প উঠে আসে বুকে ও মাথায়

মোবাইল টাওয়ার চিত্কার করে
চড়াই পাখীরা পরে থাকে মরে
ওদের আকাশ ফুরিয়ে গেছে
আকাশ চুরি করেছে তস্করে

পরে থাকে, বড়ই একাকী
চড়াইপাখি
পালকে কী জংলি ছাপ
ঠোঁটে, চোখে লেগে ও কি নীল
পাশে থাকে খড়কুটো, একে ফর্টিসেভেন
এভাবেই শেষ হলো এবারের লেনদেন

একটু চুপ করবেন, বিশিষ্ট শকুনেরা
থামাবেন আপনাদের কর্কশ হাঁকডাক
কিছুক্ষণ, বিনা শ্রবনযন্ত্রে, চড়াইয়ের
কিচিরমিচির
শোনা যাক

নবারুন ভট্টাচার্য
২৫ নভেম্বর

সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১১

তবুও ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরী

এই যে আমাকে দেখছ,
কিছুটা গোঁয়ার, কোনও নির্দেশে থামিনা ...
এটা কিন্তু আসলে আমি না!
কোটি কোটি অর্বুদ ভিতু আর বোকা অনুপ্রাণী
একা একা বেঁচে থাকা অসম্ভব জেনে আশাহত, হয়নি তবুও!
ভাগ করে নিল কাজ ... রেচন জনন
গাঢ় রক্ত চলাচল, মন্দ্রিত মনন!
যৌথখামার এক ... এ শরীর নেহাত্ই কলোনি!
অভিশাপ বাক্য যত, জেনে রাখো, ওদের বলেছ ...
কোনও দিনই ... আমাকে বলোনি!
মহামারী উল্কাপাত যুদ্ধ ঝড় ... ইতিহাস ... বোবা সাক্ষী থাকে,
অভিশাপ ছুঁইনি তাই, বিশালাক্ষি আমিও তোমাকে,
নালন্দা তক্ষশীলা নদীতীরে সমুদ্রে গুহায়
স্থাপন করেছি নির্দ্বিধায়।
মেঘের নিবাস ছেড়ে ,ভুল করে ... যদি ঘরে আসো সৌদামিনী ...
দেখে যেও বেঁচে আছি।
অন্বেষণ করে যাচ্ছি ... এখনও থামি নি!

লীলা ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরী

এসো নবকৃষ্ণ ... এসো ... বসে আছি ... এসো মনিটরে
বাজাও প্রতিটি তন্ত্রী কি বোর্ডে বোবা অক্ষরে
চ্যাটে কি চন্দ্রাবলী? ওকে আজ একটু থামিও।
জানি তুমি একা নও। একা নই জানো তো আমিও!

প্রতিটি সাইটে করি সাইন ইন দ্রুত যাতায়াত
সবাইকে অকাতর ভালবাসা দিই দিনরাত
একশ' আটটি নামে ভূগোলক জুড়ে চলে লীলা
তুমি বহুগামী, তাই আমি নই তেমন সুশীলা

ভার্চুয়াল ফাঁসে টানো ডিজিটাল চির পরকীয়া
অফিসে কাজের চাপে ঘরে নেই নিজের পুরুষ
না কি সে নিজেও কোনও অজুহাতে নির্জনতা খুঁজে
নিষিদ্ধ অক্সিজেনে ধুয়ে নিচ্ছে ক্লান্ত ফুসফুস

অশরীরী ওগো শ্যাম, সাইন অফ কোরো না এখুনি
ক্রীতদাস এ'শরীরে ঢালো প্রেম নিষিদ্ধ আমোদ
ছবি আপলোড কর ... ব্ল্যাকমেল কর ... হও খুনি
এমএমএসএ ভেসে যাক টলটলে তিলক কামোদ

মুখোসে আড়াল খোঁজো। বয়ে যাচ্ছে বসন্তের সেল।
ডেটিংএর প্রথামত হাতে নাও প্রথম আপেল
নতুন সফটওয়্যার হরমোনে করে নাও লোড।
এখুনি আরম্ভ হবে আকাঙ্খার নেক্সট এপিসোড।

ভবিতব্য ~ অরুণাচল দত্ত চৌধুরী

আমি সিস্টেম ভাঙতে পারিনি,
সে'ই বরঞ্চ অল্পে অল্পে
গিলেছে আমাকে। আজ আয়নায়
নিজেকে খোঁজার নয়া প্রকল্পে
নেমেই অবাক, দর্পণ ভাঙা
জলে ঝাঁপাবার প্রাকমুহূর্তে
যে'রকম ভাবে বোঝে মাছরাঙা
জলের ভেতর হাজার টুকরো করছে নিজেকে

অযথা তুচ্ছ মাছের জন্য
আসলে তার এই লোককে দেখান
সাহসিকতাটা ... অযথা বন্য ...

ছিন্নমস্তা প্রেমের খাতিরে
আরও কত কাজ বাকি পৃথিবীর
দু'দিকে সাজানো অক্ষৌহিনী
বড় মেজো ছোটো সৈন্যশিবির
মধ্যে নিঝুম অভয়ারণ্য,
পায়ে চলা পথ ... হাঁটি অগত্যা ...
যদি দেখা হয় ... চোখে চোখ ... বলি
অনুমতি দাও করব হত্যা

আমি সিস্টেম ভাঙতে চাইছি
কিন্তু ব্যর্থ। সে'ই বরঞ্চ
আমাকে মহান করার জন্য
পুষ্পে সাজায় ফাঁসির মঞ্চ

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

তোমাকে লেখা শেষ কবিতা ~ শবনম ব্যানার্জী

শহরের বৈশিষ্ঠহীন কানাগলি
রঙ ওঠা দেওয়াল, দো'তলা বাড়ি,
পারিপার্শিকের সাথে মানিয়ে নিতে
বদ্ধপরিকর, নিরন্ত গতানুগতিক
মধ্যবিত্ত অস্তিত্বের কারাগারে বন্দি
সকালের খবর আর সন্ধের নিউজ
লোহার গরাদের ফাঁক দিয়ে দেখা বিশ্ব...
লেখার উপাদান ছিলো না,
তাই কবিতা লিখতাম না।

তারপর তোমার সাথে দেখা, মুক্তির স্বাদ...
সত্যি বলি, সেই আমার লেখালেখির শুরু,
প্রথম কবিতা লেখা - তোমাকে নিয়ে।
তারপর... তারপর কবিতাই আমাকে জগত চেনালো
দেখালো শহরের নৈশব্দের নিচে বয়ে চলা চোরা জনস্রোত...
দেখালো প্রতিদিন অপমানের বোঝা টানতে টানতে একদিন
কিভাবে মানুষ দাবানলে পরিনত হয়...
দেখালো তোমার পরেও কিভাবে বেঁচে থাকা যায়...
এই শেষেবার আমি তোমাকে কবিতা লিখছি...
তাই, আমার কবিতা লেখা আজ'ই শুরু হোল।।

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১

রাজি? ~ দুর্জয় রায়

চাপা সন্ত্রাসে গুমরায় রাত, রবীন্দ্র-গানে মোড়া
মনের ভিতর যন্ত্রনা হয়, আগুন হৃদয়-জোড়া
লুঠ হয়ে যায় ভাতের থালা, বুলেট ছিঁড়ছে পেশী
লাল লাল চোখে সবুজ শাসানি...'কথা বলবিনা বেশী।"
জীবন-জীবিকা বিপদের মুখে, ইজ্জত রেখে বাজি
প্রতিবিম্বকে শুধাও সাথী, পাশে দাঁড়াতে কি রাজি?

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১১

তোর আমার হাতে... শবনম ব্যানার্জী

ব্যাকপ্যাকেতে বই খাতা
আরেক গোছা প্যাম্ফলেট
মুড়ির ঠোঙায় স্বপ্ন মাখা
মিশে নেই regret
বাজারের সাথে আপোষ না মানা
শিরদারা টানটান
শক্ত মুঠিতে ধরা পতাকায়
লাল তারা অম্লান
ক্যাম্পাসে রাজপথে রোজই
দেখা হয় তোর সাথে
নতুন পৃথিবী গড়া হবে
তোর আমার হাতে হাতে...

রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১১

অতি সংক্ষিপ্ত সংবাদ ও স্বাধিনতা


প্রাসাদ গাত্রে মুতিব, ভাঙিব আইন
ফরসা ধুতির গাড়ি দেখিলে, সমুখে পাতিব দুপিস মাইন
নকু বলিয়া সকলে মিলিয়া, দিদির পিছনে মারিব লাইন
প্রণামান্তে 
- আকাশ গাইন
- বাতাস বাইন
স্বাধিনতা দিবসের প্রাক্কালে ঠিক সন্ধে সাতটা বেজে চুয়ান্ন মিনিটে এই মর্মে শেষ ইস্তেহারটি লেখা হয়ে  গেল। ভাঙাভাঙি ভাগাভাগির খেলা সেই ১৯৭২ সাল থেকে চলছিল, আপাতত খেলা শেষের বাঁশি বেজে গেছে। কংকাল বাবুদের মহান নেতা জেলে গেছেন, তাত্ত্বিক নাড়ুদাকে লাইবাড়িতে ফাঁসানোটা শুধুই সময়ের অপেক্ষা এখন। বাকিরা নাটক লিখবেন অথবা রিটায়ার করবেন। তাই সামনে মেকি বিপ্লবের ধ্বজাধারিরা হাওয়া হাওয়া, তাই আজ খুশির দিন কারণ বিপ্লব এবারে হবেই, আজ নাহোক কাল, বিপ্লবের মূল শত্রু  খতম, খতমের তালিকা প্রকাশের ইতি হোল অবশেষে। এই আনন্দঘণ পরিবেশে একটু রবীন্দ্রসঙ্গীত তারস্বরে পাড়ার মোড়ে  বাজানো হোক। মানে বাজাতে হবে। মানে ওটাই আজকের আইন। যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজবে, সে  জায়গাতে  সাধারন মানুষ থাকেন, যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীত তারস্বরে বাজছে না, সেখানেই কংকাল অথবা অস্ত্র পাওয়ার সম্ভাবনা। 
ইতিমধ্যে ভারতের রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা কমে গেছে। এত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এই কয়েক  মাসে যে সামনের দশ বছরে আর নতুন অস্ত্রের বরাত  দিতে হবে না কাউকে, তা নিয়ে ঘ্যাম  চাচা একটু ক্ষার খেয়ছে    যদিও শত্তুরের বিনাশে তিনিও খুশি। ঘ্যাম চাচাকে আনবিক চুক্তি দিয়ে ঠান্ডা করা গেছে, আর ইস খুসি মে দিদিও নেমন্তন্ন পেয়েছেন। শুধু জানা যায়নি দিদি জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন কিনা। খবরে প্রকাশ,  হনু সিং ঘ্যাম চাচা কে বরাত দিয়েছে ওদেশে জর্জিয়া নামক এক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে, যারা দিদিকে অনারারি ডাক্তারএর শংসাপত্র প্রদান করবে। তাই নিয়ে ঘ্যামচাচার দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে, এই কাজটা কোন দেশকে আউটসোর্স করা যায়। 
এদিকে বন্যার তোড়ে ঘর বাড়ি ভেসে গিয়ে, বাপ মা ভাই বোন হারিয়ে ন্যাংটা ছেলেটা স্বাধিনতা দিবসের সকালে  গান ধরেছেঃ
দিদিমনি যায়
লাল সুতো
নীল সুতো
হলুদ সুতো
সবুজ সুতো 
নেই  তার গায়ে
আসলে হয়ত ন্যাংটা ছেলের ন্যাংটাকে ন্যাংটা বলতে ভয় করে না। 
পাগলু ড্যান্স! 
   

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১১

পরিবর্তন আসিলো ~ সায়ন্তন চট্টোপাধ্যায়

পরিবর্তন আসিলো গুরু-র,
সার্ধ-শত-বর্ষে;
বঙ্গ মজিলো মমতা-মায়ায়,
"অভূত-পূর্ব" হর্ষে।

পরম শ্রদ্ধা - শহীদ-উৎসবে,
সাংস্কৃতিক প্লাবন,
"হ্যাপি বাড্ডে টু কবিগুরু",
কামিং বাইশে শ্রাবন!

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

আসিল বদল ~ সায়ন্তন চট্টপাধ্যায়

শাসক চেয়ার পাইতে কতই,
যাত্রা থ্যাটার করিচি,
যেইনা আসিলো বদল, অমনি,
বামে-দের টুঁটি ধরিচি।

হাড়োয়া? সেথা তো ঘরোয়া পুলিশে,
পিটায়েছে কটা চাষা,
press-রে কইনু, বেটাচ্ছেলেরা,
আস্ত বদের বাসা!

একদা বঙ্গে, সাথে ছিলো মাও,
লাগিয়াওছিলো কাজে,
এখন তো আমি মালিক-পক্ষ,
লেজুর কি পোষা সাজে?

শুন সমগ্র বং-"জেনেগেন",
একখান কথা দামী,
সবার উপরে ডলার সত্য,
তাহার পিছনে আমি!

বি. দ্র. : স্থান-কাল-পাত্রে-র সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজিলে নিজ দায়িত্বে খুঁজিবেন... Subject to market risk!!

বুধবার, ৬ জুলাই, ২০১১

“এ মা, রাজা ন্যাংটা” – উলঙ্গ রাজা ~ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

বল্লে নাকি হুল দিবস। সেরেচে,  সে আবার কি গো? মেরে মুক পরোটা করে দেবে বল্লে, শুনিচি। কিলিয়ে কাঁটাল পাকাবে, সে ও নাহয় দেকিচি। তাই বলে ভাই হুল ফোঁটাবে? তুমি কি ভাই মৌমাচি? দেকে তো মানুষ বলেই ঠাওর হচ্চে। বেশ তেল চুকচুকে, পাকা সোনা বরন। একখানা নেয়াপাতি ইয়ে ও আচে দেকচি। গায়ে কি একটা মেকেচো বলোতো? পার্ক অ্যাভেনিউ কি? না কি কি ওই যে যেটা মাকলে কয়েকটা ধিঙ্গি মতো মেয়ে দৌড়ে আসে, সেইটে? না না, হুল টুল বড্ডো খারাপ কতা। সে ছিলো মেজোতরফের লাটু কত্তা। খেঁটে একগাছা লাঠি নিয়ে কত্ত পিটিয়েচে এককালে। গনা গুন্ডাকে তো সেবার হেদো পার করে দিয়ে এলো ওই লাঠি পেটা করে। তা সে লাটু কত্তাও হুল টুল নিয়ে কাজ কারবার করেনিকো।

 

কি বল্লে? সাঁওতালদের হুল? ও বাবা। ওদের হুল আচে নাকি? অ সেই হুল নেই বলচো? ওরা খেপে গেচিলো গোরাদের ওপর? তা সে তো আমাদের বটঠাকুদ্দাও গোরাদের ওপর খেপেগেছিলো। খেপে গিয়ে স্বদেশী হয়ে গেল। দেশের স্বাধীনতা এনেচে। এক গোরা সায়েব বটঠাকুদ্দা কে - ইউ ইস্টুপিড বলেছিলো। সে কি রাগ। রেগে মেগে ঠাকুদ্দা চরকা কিনে আনলো স্বদেশী মেলা থেকে। সুতো কাটলো, তাই দিয়ে গামচা বুনেও ফেল্লো। সেই গামচা একটু ফাঁকফাঁক বলে অনেক কিচু দেকা যেত, কিন্তু কে শুনবে সে কতা। ওই গামচা পরেই বটঠাকুদ্দা রোজ সক্কাল বেলা পায়...।

 

পিটিয়েচিলো? গোরাদের? ওই সাঁওতালরা? ও বাবা। পুলিস ধরবে তো? ফাটকে দেবে। আর সে কি যে সে ফাটক? গোরাদের জেলে কেউ ঢুকলে আর বেরোয়? ভয় ডর নেই গা? তা কেন গেল এমন খেপে? ইস্টুপিড বলেচিলো নাকি? কেনো মারামারি করে বাপু বুঝিনা। চরকা কেটেও তো স্বদেশী হয়। সেটা করলেই হতো। আর গোরাদের খেপানো কি সোজা কতা? গোরার মার সইতে পারবে? পারেনি? মরে গেচিল? অনেক লোক? তা তো যাবেই। যেমন কম্ম তেমনি ফল। বেশ হয়েচে। ও, হয়নি? ওই মারামারিটাই হুল? ওইটার দিবস? তা ভালো। চাঁদা চাই? বেশি দিতে পারবোনাকো। এই সেদিন দিয়েচি। ভোটে জিতে ফিস্টি কল্লে ছেলে গুলো। বল্লে কাকু ২ কিলো রেওয়াজি মাল আর এক খাম্বা বিলিতির দাম ফেলে দিন, আর আসবোনা। তা দিলাম। আবার চাই? বেশি দিতে পারবোনাকো বলে রাকলুম হ্যাঁ।

 

অ, চাঁদা চাই না? তা চাই টা কি? তুমি, মানে আপনি সরকারি আপিসার? ওরে বাবা। বলেন কি স্যার ? বসুন বসুন। কি খাবেন বলুন। একটু চা বলি? খাবেন না? তাহলে একটু ঠান্ডা? আর চাচা থেকে দু খানা কাটলেট আনাই? ওরে... কে আচিস? না না স্যার, না বল্লে শুনচি না। এ বাড়ি থেকে শুদু মুকে কেউ কখনো যায়নি। আগে একটু ঠান্ডা হোন। ওরে, ও জহর, পাকা টা জোরে করে দে না বাবা। দেকচিস নে, স্যারের মুক খানা লাল হয়ে গেচে গরমে। এ পাকা টা স্যার আমার জ্যাটামশায় কিনেচিলেন অকশনে। খাঁটি বিলিতি। কেবল একটু অয়েলিং করানো হয়নি অনেক দিন। আপনি ভালো করে উঠে বসুন স্যার। পা তুলে দিন।

 

ও কে ডাকবো? জহর কে? ও তো আমার চাকর। বহুকাল আচে এবাড়ি। ওর বাপ দাদারাও ছিলো। বাড়ি? তা থাকে তো এখানেই। মানে, দেশ আচে একটা। ওই পুরুলিয়ার ওদিকে কোতায় যেন। কিচু পবলেম নাকি স্যার? আমি ছাপোষা গেরস্ত মানুষ। ধনেপ্রানে মারা যাবো স্যার। না মানে, ওর নাম ই তো জহর। ডহর? না না, ডহর না স্যার। পদবি? ওর পদবি কি আর মনে রেকিচি আমি স্যার? ও মামনি, দেখ না মা, জহরের পদবি কি? স্যার জিজ্ঞেস করচেন। কি বললি? দাস? জহর দাস? ও, তা হবে। ডহর? না স্যার ডহর বলে তো কাউকে চিনি না। শুনিনি। ওই হুল এর একটা সাঁওতাল নেতা? একটা না? তিনটে নেতা? সিদো, কানহো আর ডহর? তিনজনেই শহিদ হয়েচিলো? বলেন কি স্যার? সে তো আমাদের বিনয় বাদল দিনেশের মতো ব্যাপার। ভারি সাহস তো। ও আপনি সেই ডহর বাবুর পরিবারের লোকজন কে খুঁজছেন? তারা কি স্যার কিচু পাবে সরকারের থেকে? আমাদের জহরের পদবি টা দাস কিনা একটু দেকে বলবো স্যার। বলা তো জায়না, হয়তো ও ই ডহর। যদি হয় , একটু মনে রাকবেন স্যার। আমার নামটা, ওই যে ওকেনে দরজায় লেকা। খাঁটি পেতলের নেমপ্লেট স্যার।

 

এখন তো ছোট পরিবার স্যার। আমার গিন্নি আচেন, আর এই টি আমার কন্যা। নাম বলো মা। কি বললে মামনি? ডহর মানে রাস্তা? না না, শুনলে না স্যার কি বলচেন? ডহর একজন মহাবীর শহীদ। হুল করেচেন। ওই যে শোন, স্যার কি বলচেন। আমাদের মুক্কুমন্ত্রী ও বলেচেন। ডহরের কতা। তাই তো আমাদের স্যারের মতো সরকারি আপিসার রা ডহর বাবুর পরিবার কে খুঁজচেন। না না স্যার। ওর কতায় কান দেবেন না। বাচ্চা মেয়ে, কি বলতে কি বলেচে, তার ঠিক নেই। বলে কিনা, সিদো কানহোর নামে রাস্তা বলে ওটার নাম সিদো কানহো ডহর। ডহর মানে নাকি রাস্তা। আজকাল ইস্কুলে কিচ্চু সেকায় না স্যার। আমাদের শিক্কা-দিক্কা শেষ করে দিয়ে গেচে সব। আপনি ভাববেন না স্যার।ডহর বাবুর কোনো খবর পেলেই আপনাকে দিয়ে আসবো আমি নিজে গিয়ে। শুদু যদি কোন পুরস্কারের ব্যাপার থাকে, একটু দেকবেন স্যার।

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১১

খেরোর খাতা ~ অবিন দত্তগুপ্ত


"কখনো সময় আসে জীবন মুচকি হাসে/ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চো‍‍‌দ্দো আনা"

     মাঝে মাঝে এমনটা হয়।ফেলে আসা কোনো কিছু ফিরে পেতে ইচ্ছে করে।অনেক দিন না ছোয়া কোনো পুরোনো ভালোলাগাকে ছঁুয়ে দেখতে ইচ্ছা করে।আমার ক্ষেত্রে এই ইচ্ছেগুলো মূলত দিনান্তের ক্লান্তির পর আমায় জুড়ে বসে।

      আজ সেরকমই একদিন।সারাদিনের ক্লেদ সঞ্চনের শেষে আজ হঠাৎই সেই পেছন ফেরার ক্যারাটা মাথার ভেতর তাণ্ডব নেত্ত আরম্ভ করলো।এখন সমস্যা হলো এাই যে এই নির্বাসনা,যেখানে আমার জামা-জুতো আর দু চারটে বই ছাড়া নিজস্ব বলতে কিছুই নেই,সেখানে "পুরানো" পাই কোথায়।হঠাৎ চোে পড়লো একটা ধুলো মাখা লাল ডায়েরি।কোনো কোনো শীতের সকালে কুয়াশাঢাকা সমস্ত কিছু নিজের বড় নিের বলে মনে হয়;তেমনি ওই ডায়েরিটা -- আড়াই বছরের নির্বাসনে যার উপর কোনোদিন
ও চোখ পড়েনি,ওকেই বড্ডো আদরের মনে হলো।হাতে তুলে নিলাম।

     পাতা ওল্টাতে গিয়ে প্রথমেই লক্ষ্য করলাম অনেকগুলো পেজ স্টেপল করা।তারপর বাবার হাতের লেখা।আর কি লেখা তাতে -  না কোন অসুখের জন্য ঠিক কোন ওষুধটা খাওয়া উচিত। বাঁদরের থেকে উদ্ভুত প্রজাতি আমরা,সুতরাং বাঁদরেরই মতো অকারণ অনুসন্ধিৎসা শিরায় শিরায়।ছিঁড়ে ফেল্লাম স্টেপল করা পেজগুলো।
লেখা রয়েছে ;
পূজা ২০০৪
২০/০৯;
--------
গুড্ডুর প্যান্ট -> ৬৫০
গুড্ডুর টি-শার্ট-> ০২৫০
গুড্ডুর শার্ট -> ৩৫০
গুড্ডুর (ইনার্স) -> ৪০
শাড়ি বাবদ নাড়ুকে (ফার্স্ট ইনস্টলমেন্ট) -> ৩০০০
মাতৃবস্ত্রালয় (তুতুন) -> ১৫০০
মায়ের শাড়ি -> ৫০০
বাবার ফতুয়া + লুঙ্গি -> ০৩৫০
.
.
.
সোনালি রেস্টুরেন্ট -> ৭৫
বাসফেয়ার -> ২০
রিক্সা -> ৫
বেশ কিছুদূর পরে এসে পুজোর দিনের খরচগুলো পড়লাম।অক্ষরে অক্ষরে তুলে দিচ্ছি
০৬/১০/০৪ (আজ সপ্তমী)
--------------
১.রিক্সা -> ২৪.০০
২.বাস ->৫.০০
৩.মিষ্টি -> ৫৩.০০
০৭/১০/০৪ (আজ অষ্টমী)
--------------
১.কাগজ ->৩.০০
২.সিগারেট ->২২.০০
৩.মাংস ->১২০
৪.মদ ->২০০
৫.গুড্ডু ->৫০
৬.গুড্ডু (ওর মাকে দেওয়া ও জানেনা) -> ২০০
এরপর আরো অনেক অনেক।
             পড়তে পড়তে ফিরে গেছিলাম আমাদের পুরানো দিনগুলিতে।পোদদার-পার্কের দু কামরার ঘর।দাদু-ঠামি একটায় আর আমরা তিনজন আরেকটায়।সত্য যুগ থেকে কাঠের দরজায় লাগানো 'U'শেপের ছিটকিনিটা তখনো বিশ্বস্ত।অফিস ফেরতা বাবা পকেটের আধুলি-চারআনা-একটাকা গুলোকে ক্যামেরার ফিল্মের কৌটোয় ভরে রাখতো।আর ওই ফিল্মের কৌটোগুলোকেই পাখির চোখ করতাম-আমি..বাপের সুপুত্র।তখন প্রেম চলছিল যে!বাড়ি থেকে ফোন করা মানা সুতরাং পাবলিক বুথ।প্রচুর
কয়েনের দক্কার।

             কিন্তু সব ছাপিয়ে মনে পড়ে যায় ওই েমে নেয়ে আসা মানুষটার একা ডায়েরিতে নিত্য দিনের হিষেব লিখে রাখার  ঘটনাটা।আমি ছোটবেলায় মাকে জিগ্যেস করেছি " মা...বাবা অত কি লেখে?". মা হেসে উত্তর দিয়েছিলো " আগে বিতা লিখতো,স্বপ্ন লিখতো....এখন খেরোর খাতা"
             স্বচক্ষে কোনোদিনও  সেই মহামূল্যবান খাতাটি দেখে উঠতে পারিনি।সব সময়েই তা রেখে দেওয়া হয়েছিল,আমার চোখের আড়ালে।আজ দেখতে দেখতে অনেক কথা স্বচ্ছ হলো।প্রতিদিন বাঁচতে গিয়ে রোজ দুপুরের স্বপ্নগুলো কেন হারিয়ে যাচ্ছে,বুঝতে পারিনি.............বুঝলাম।মাসের শেষে গোল্ড ফ্লেক যখন শুধুই ফ্লেক হয়ে গেছে তখন কপালে হাত দিয়ে ভেবেছি " কি বাজে খরচাটাই না করলাম!!"।বুঝলাম..আমার কোনো হিষেবই ছিল না।আসলে আমরা বেহিষেবির মতো খরচা করেছি এমন অনেক কিছু..যা কিভাবে পেয়েছি,খরচের ব্যস্ততায় তা মনে রাখার প্রয়োজন-ও বোধ করিনি।একটা দুটাকার নোট বাঁচানোর জন্য যে লোকটা পিচের রাস্তায় রীতিমতো ডাইভ মেরেছিলো.....তাররি সন্তান,তার "সব পেয়েছি" সন্তান অবলীলায় হারাতে পারে মোবাইল,মূল্যবোধ,প্রেম,সম্পর্ক্য..........

            বাবার হাতের লেখায় ডুবে যাছ্ছিলাম।খেরোর খাতাও-যে এত্তো রোম্যান্টিক হতে পারে,এমন ধারণা ছিলনা! ডুবতে ডুবতে  হিষেব করলাম নিজের জীবনে 'চোদ্দ আনা' স্বপ্নকে নিলাম তুলে দিয়ে ভদ্রলোক খরিদ করেছেন তার সন্তানের দু-আনা বেঁচে থাকা।
                                  বড্ড বেহিষেবি বাবা আমার

বুধবার, ২২ জুন, ২০১১

গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করাই আজ সবচেয়ে বড় চ্যাতলেঞ্জ ~ অজয় দাশগুপ্ত

গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে দীর্ঘ সংগ্রামের ফলশ্রুতিতেই পশ্চিমবাংলায় গঠিত হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারগত ৩৪ বছর ধরে গোটা দেশে বামফ্রন্টের পশ্চিমবাংলাই ছিল গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুরক্ষিত ও সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ। বামফ্রন্ট সরকার ছিল মানুষের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী।
  
কৃষকের জমি ও ফসলের অধিকার, ক্ষেতমজুরের মজুরি অধিকার, বর্গাদার-পাট্টাদারের চাষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রক্ষায় বামফ্রন্ট সরকারই ছিল গ‌্যারান্টি। শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, মালিকপক্ষের সঙ্গে বেতনসহ বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য দর কষাকষির অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষক-অধ‌্যাপকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছিল বামফ্রন্ট। বামফ্রন্টের পশ্চিমবাংলায় শ্রমিকের দাবি ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে মালিকের হয়ে পুলিস গিয়ে গুলি চালায়নি, বরং সরকার শ্রমিকের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর দাবি আদায়ে বাধ্য করেছে মালিককে। সংখ‌্যালঘু মানুষের সম্প্রীতির পরিবেশে সমমর্যাদায় জীবন অতিবাহিত করার নজিরবিহীন নিশ্চয়তা দিয়ে ছিল এই বামফ্রন্ট সরকার। আদিবাসী জনগণ, তফসিলী জাতি, আর্থিক ও সামাজিকভাবে অনগ্রসর মানুষকে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে, অরণ্যসম্পদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের অরণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গোটা দেশে সামনের সারিতে ছিল বামফ্রন্ট সরকারই। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুব-মহিলাসহ সমাজের সব অংশের মানুষের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, তাকে সম্প্রসারিত করা এবং অর্জিত অধিকার রক্ষা করাই ছিল বামফ্রন্ট সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

        কী ছিল বামফ্রন্টের আগের পশ্চিমবাংলা? মানুষের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল আজকের তৃণমূলের পূর্বসুরী কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার। স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে নিয়ে লড়াই করেছেন, জেল খেটেছেন, লাঠি-গ‌্যাস-গুলি খেয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন বামপন্থীরাই। দীর্ঘ কংগ্রেস শাসনে বামপন্থীরাসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার কখনই পায়নিপ্রতিটি অধিকারই লড়াই করে অর্জন করতে হয়েছে। তার জন্য এমনকি  জ্যোতি বসুসহ কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম দলগুলির শীর্ষনেতাদের, এমনকি বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও কংগ্রেস আমলে বারবার বিনা বিচারে কারাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে বিরোধীদের প্রতি এই ধরণের অগণতান্ত্রিক আচরণের একটিও নজির নেই।

   কৃষকদের জমির অধিকার, নিজের জমিতে ফসলের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই বামপন্থীরা লড়েছে, তা আজো পশ্চিমবাংলাসহ দেশের গণ-আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তেভাগার আন্দোলন হয়েছিল বামপন্থীদের নেতৃত্বেই। ছয়ের দশকে জমির আন্দোলন আরো তীব্র আকার নেয়। ১৯৬৭ সালে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার এবং ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার সেই জমির আন্দোলনকে সহায়তা করেছিলো। ক্ষমতা দখল করার জন্য জমি নিয়ে যারা বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করেছে, সেই তৃণমূল বা তাদের পূর্বসুরীরা কখনো জমির আন্দোলনের ধারেকাছে ছিল না, ছিল উল্‌টোদিকেই। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারে এসেই পাট্টা রেকর্ড করে, বর্গা রেকর্ড করে ভূমিহীনদের জমির অধিকারকে আইনসম্মত করেভূমি সংস্কারের সেই কর্মসূচী গত ৩৪ বছর ধরেই চলেছে। এমনকি সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও প্রায় ১২ হাজার একর জমি গরিব ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিলি হয়েছে। সারা দেশে সবচেয়ে বেশি ভূমি সংস্কার হয়েছে পশ্চিমবাংলায়। তথ্যেই প্রমাণিত বামফ্রন্ট সরকারের ভূমিসংস্কার কর্মসূচীর ফলে আদিবাসী, তফসিলী জাতি এবং সংখ্যালঘু মানুষই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন।

     বামপন্থীদের নেতৃত্বে বাস্তুহারা মানুষের আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, ট্রামভাড়া বৃদ্ধি আন্দোলন, শিক্ষক আন্দোলন, জমির আন্দোলন, আধা-ফ‌্যাসিবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এরাজ্যে গঠিত হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। এরাজ্যে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারকেও তাই প্রতিষ্ঠিত করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত এরাজ্যে কংগ্রেসী আধা-ফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসে খুন হয়েছিলেন প্রায় ১১০০ সি পি আই (এম) নেতা ও কর্মী। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত বিনা বিচারে আটক আইন প্রয়োগে, মিথ্যা মামলায়, হাজার হাজার সি পি আই (এম) নেতা ও কর্মীকে বছরের পর বছর জেল খাটতে হয়। শিক্ষক, অধ্যাপক, উপাচার্য, সরকারী কর্মচারী, খেতমজুর, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সব অংশের মানুষের ওপর নেমে আসে খুন, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা, বরখাস্ত হন অনেক সরকারী কর্মী ও শিক্ষক। সন্ত্রাসের জন্য অনেকে কাজে যোগ দিতে পারেননি। ১৯৭৫ সা‍‌লে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার ২০ মাসে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার, বাক্‌ স্বাধীনতা হরণ, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ, যথেচ্ছ পুলিসী অত্যাচার, সভা-মিছিল-আন্দোলন নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি গণতন্ত্র-ধ্বংসের কোনো আয়োজনই কংগ্রেস বাকি রাখেনি। সমাজবিরোধী, পুলিস, কারখানার মালিক ও জোতদার ও কায়েমী স্বার্থের ছিল পোয়াবারো। রাজনৈতিক ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হয়। পুলিসের সাহায্যে কংগ্রেসী গুণ্ডারা মালিকদের দ্বারা পুষ্ট হয়ে অনেককে কাজে যোগ দিতে দেয়নি। এই মালিকরা এবং স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিতির অজুহাতে তাঁদের ছাঁটাই করে দেয়। কোর্টের আদেশ সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের কাজে যোগ দিতেও দেওয়া হয়নি। অসংখ্য ট্রেড ইউনিয়ন অফিস দখল করে নেওয়া হয়। বাসস্থান থেকে উৎখাত হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার বামপন্থী কর্মী-সমর্থক পরিবার।

   কিন্তু ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারে এসে কোনো প্রতিহিংসা যাতে না হয়, তা যেমন সুনিশ্চিত করেছিল, তেমনি বিনা শর্তে রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে সব দলের রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়েছিলমুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ১৭০০ নকশালপন্থী ও কংগ্রেসী বন্দী। ১৯৭২-৭৭ সালে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অনেককে মিসা ও অন্যান্য আটক আইনে এবং ফৌজদারি মামলায় জেল খাটতে হয়েছিল। এই বন্দী কংগ্রেসীরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে চালু প্রায় ১০ হাজার ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। 'মিসা'য় আটক ২১৮ জনকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জরুরী অবস্থার সময় যে সব দমনমূলক ব্যবস্থা জারি করা হয়েছিল সব প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বাক্ স্বাধীনতা, মতামত ও বিরোধিতা করার অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা; সভা-সমিতি ও সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং আন্দোলনের স্বাধীনতা বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে সুনিশ্চিত করে। রাজনৈতিক কারণে যে সব শিক্ষক ও সরকারী কর্মীদের কংগ্রেস আমলে বরখাস্ত করা হয়েছিল তাদের কাজে পুনর্বহাল করা হয়। বামফ্রন্টবিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া হয়।

ভূমি সংস্কার কর্মসূচী যেমন গরিব ভূমিহীন কৃষকের জমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, গ্রামের মানুষের আয় বেড়েছে, অর্থনৈতিক অধিকার এসেছে, তেমনি পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রামের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার গোটা দেশের মানুষের সামনে পঞ্চায়েতে নজির গড়েছে বামফ্রন্টের পশ্চিমবাংলাই। আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণেও মডেল হয়েছে এরাজ্য। ১৮বছরের ভোটাধিকার, মহিলাদের পঞ্চায়েত ও পৌরসভায় আসন সংরক্ষণেও নজির গড়েছে বামফ্রন্টের পশ্চিমবঙ্গ। শান্তি, সুস্থিতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব সময় সামনে থেকেছে এরাজ্য।
আজ যখন পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্ট সরকারের বদলে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন গত ৩৪ বছর ধরে তিল তিল করে অর্জিত এই অধিকার রক্ষার লড়াই করাই রাজ্যের মানুষের সামনে সবচেয়ে বড় চ‌্যালেঞ্জ।