রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১০

অরকুট কবি.... ~ সুকন্যা

অরকুট কবি আমি লিখে যাই পদ্য
অর্থহীন শব্দ শিখছি এই সদ্য.
গাছ তারা জল পাখী মিলেমিশে একাকার
হাত পা চোখ নাক একসাথে ছারখার.
anatomy করে ফেলি কবিতার লাইনে
শব্দগুলো চলে বামে,অর্থ তার ডাইনে.
নাই থাক তার মানে নাই থাক অর্থ
কবিতা আমি লিখি বাপু একদম যথার্থ.
কখনো কবিতা নিয়ে ভালবাসা হয়নি
লেখাগুলো তাই কারো মন ছুঁয়ে যায়নি.
অরকুটে এসে আমার বড় মনে সাধ হয়
আমিও লিখব কিছু, কবি কবি ভাব হয়.
যেই ভাবা সেই কাজ,লিখে ফেলি একরাশ
লেখা শেষে দেখি আমি কবিতার সর্বনাশ.
গাদাগাদা চিন্তা,এলোমেলো কিলবিল
অর্থ আর শব্দের কিছুই পাইনা মিল.
বোঝাতে চাই একমানে, হয়ে যায় অন্য
তবু আমি লিখবই, হব স্বনামধন্য.
নামডাক হবে খুব,হবে ছেলেবন্ধু
কবিতার আড়ালে প্রেমনদী সিন্ধু.
আমার পদ্য পড়ে পাঠকের প্রান যায়
ছেঁড়ে দে মা অনেক হল, পাগল হবার প্রায়.
ধুর,তোমরা বোঝনা কিছু কবিতার মর্ম
মন দিয়ে করে যাই লেখালেখি কর্ম.
এলোমেলো কথা সব, তালকাটা ছন্দ
মাতৃভাষা পালিয়ে বাঁচে, হাওয়াটা আজ মন্দ.
বানানভুলের লেখাগুলো সাবধানে পড়বেন
অরকুট কবি ভেবে মার্জনা করবেন.

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১০

যত দূর মনে পড়ে ~ জ্যোতি বসু



"১৯৪০ সালেই কলকাতা ফিরে আমি এখানকার পার্টিনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। পার্টির নির্দেশ অনুযায়ী আমি আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলাম না - তবে আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ছিল আমার অন্যতম একটি প্রধান কাজ।

আমি ব্যারিস্টার হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টেও নাম লিখিয়েছিলাম। কিন্তু প্র্যাকটিস করিনি কোনদিনই। কারণ আমরা (ভুপেশ, আমি এবং অপর কয়েকজন) লন্ডনে থাকতেই পার্টির সারাক্ষণের কর্মী হিসাবে কাজ করার জন্যে মনস্থির করে ফেলেছিলাম। তবে বাবা এতে খুশি হলেন না; তিনি চেয়েছিলেন আমি প্র্যাকটিস শুরু করি, রোজগার করি। বাবার অবশ্য মনোভাব উদার ছিল। তিনি বুঝতে পারছিলেন না - প্র্যাকটিস করে রাজনীতি করা যাবে না কেন? দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস যদি ব্যারিস্টারি আর রাজনীতি এক সঙ্গেই করতে পারেন, তাহলে আমি কেন পারব না?" - ভারতের কম্যুনিস্ট আন্দোলনের সাথে মিশে যাওয়া সম্পর্কে, ১৯৪০।


"আমাদের গ্রেপ্তার করে গাড়িতে নিয়ে যেতে যেতে পুলিশ বলল, চীন একতরফাভাবে গুলিবর্ষণ বন্ধ করেছে, তাই আপনাদের বেশিদিন জেলখানায় থাকতে হবে না। যুদ্ধ হলো ১৪ দিনের, কিন্তু আমাদের জেলখানায় এক বছর আটকে রাখা হলো। আমাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরা হোল এবং এক বছর জেলে রেখে দেওয়া হলো বিনা বিচারে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে আমি মুক্তি পেলাম।"  চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ে, ১৯৬২- ৬৩।

"দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকার আর তার সহযোগীরা আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও কলঙ্ক রটনার এক বিষাক্ত অভিযান চালিয়ে আসছে। আমাদের বিরুদ্ধে সরকার তীব্র দমনকার্য পরিচালনা করে চলেছে। এই সবকিছুরই উদ্দেশ্য হলো একটি, তা হলো একটি বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক বিরোধী দল - যে দল সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, এমন একটি দলের বিকাশ ও বৃদ্ধির পথে বাধা দেওয়া। আর  ডাঙ্গে-চক্র পার্টির জীবনে অভূতপূর্ব বিপর্যয় সৃষ্টি করে সরকারের এই কর্মপ্রক্রিয়াকেই সাহাযয় করেছে।" সি পি আই এম গঠন ও তেনালী কংগ্রেস ১৯৬৪।


"বামপন্থি সুবিধাবাদীদের আসলে জনগণকে ঐক্যবধ্য করা, সঠিক রণকৌশল নির্ধারণ করা, সংস্কারপন্থী ও সংশোধনবাদী যারা শ্রমিকশ্রেণীর ও কৃষক জনগণের মনোবলকে ভেঙ্গে দিতে চাইছে, তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং শাসকশ্রেণীর জনবিরোধী নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তোলার অত্যন্ত কঠিন কাজগুলিকে অস্বীকার করতে চেয়েছিল। এইভাবে গণ-সংগঠন গড়ে তোলার প্রধান কাজকে উপেক্ষা করে, জনগণের প্রতিটি ছোটখাটো স্বার্থের জন্যেও লড়াইকে অস্বীকার করে, জনগণের আশু দাবি ও সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক চেতনা অর্জনের প্রতি যথাযোগ্য মনোযোগ না দিয়ে, কেবলমাত্র শক্তির সংগঠিত হবার ওপর নিছক নির্ভরশীলতায় কিছু ব্যাক্তি উগ্রপন্থী কার্যকলাপে মেতে উঠেছিল এবং বিপ্লবের নাম করে গণ-আন্দোলনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী গণ-সংগঠনের কোন ভুমিকা নেই, জনগনকে নাকি জয় করতে হবে কেবল বিপ্লবী কর্মপরিকল্পনার দ্বারা - এসবই মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের মূল শিক্ষার বিরোধী।" নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে, ১৯৬৭।

একটি চিঠির কথা উল্লেখ করব। এই সময়েই আমাকে লেখা এই চিঠি আসে আমার হাতে। শিয়ালদা থেকে একজন আমাকে এই চিঠিতে লেখেন - "কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেও আজ আপনাকে এদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে কিছু লিখছি কারণ আপনাকে শ্রদ্ধা করি। বিশ্বাস করুন, আর না করুন একাজ করে এবার প্রচুর টাকা আমি পেয়েছি। আপনাদের এ শোচনীয় পরিণতি হবে ভাবিনি। আমাকে অরা মদ খাইয়েছিল, ওরা অনেক গুন্ডা ঠিক করেছিল। আমাদের ওপর আদেশ ছিল যে সি পি এম কে যেন কেউ ভোট দিতে না পারে। আর রাত্রেই ভোট দেওয়ার কাজ শতকরা ৭০ ভাগ এগিয়ে রাখতে হবে। কোন ভয় নেই। সহযোগিতা করবে সি আর পি। অসুবিধা হলে তারা আছেন।" - ১৩ই মার্চ, ১৯৭২


"সরকার গড়ার পরে এক কঠিন দায়িত্ব আমাদের উপর এসে পড়ল। একটি বুর্জোয়া-জমিদার রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে অঙ্গরাজ্যে সরকার গঠন করে সাধারন মানুষের স্বার্থে তাকে পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ, সংবিধান, আইন, প্রশাসন, আমলাতন্ত্র সবই কায়েমীস্বার্থের সুবিধার জন্যে তৈরী। রাজ্য সরকারগুলির হাতে আইনগত এবং আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ এসে পড়ে। এই অবস্থায় সরকারে এসে ঘোষিত ৩৬ দফা কর্মসূচীকে রুপায়ণের উপর আমরা জোর দিলাম। আমাদের প্রথম কাজই ছিল সাধারণ মানুষের লুন্ঠিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে আনা। মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা।" ২৫শে জুন, ১৯৭৭

"জনতা সরকার ক্ষমতায় আসায় রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রেও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘদিন এই রাজ্যে কোনও বৃহৎ শিল্প হয়নি। কেন্দ্রের বাধা, মাশুল সমিকরণ নীতি, লাইসেন্স রাজের কবলে পড়ে শিল্পজগত কার্যতঃ ধুঁকছিল। আমরা সরকারে এসে প্রথমেই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প্র গুরুত্ব দিই। একই সঙ্গে সরকারী উদ্যোগে বৃহৎ শিল্প গড়ার দিকেও উদ্যোগ নেওয়া হলো। হলদিয়ায় পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স এবং সল্টলেকে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স গড়ার জন্য কেন্দীয় সরকারের কাছে অনুমোদন চাইলাম। মোরারজী সরকারের আমলেই আমরা হলদিয়ায় পেট্রোকেমিক্যালস গড়ার লেটার-অফ-ইনটেন্ট পাই। কিন্তু পরবর্তীকালে শ্রীমতি গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর আমলে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস এবং সল্টলেক ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স প্রকল্পকে নিদারুন বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছিল দশ বছরের উপর ধরে।" -  বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম বছর, ১৯৭৮।

""১৪ই মে সকালে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি সংখ্যাগরিষ্টের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকে। নিজের কথা বলতে পারি, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত আমাকে একদিক থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে হলে এই বয়েসে  ও এই শরীরে আমার ওপর খুব চাপ পড়ে যেত। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে কোয়ালিশন সরকার চালানো মোটেই সুখের কাজ নয়।" ১৪ই মে, ১৯৯৬

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১০

কমরেড তুমি ঘুমাও ভরসা রেখে ~ দীপ্তানুজ



তোমার সঙ্গে শ্মশানের পথে যাবনা -
ওই পথে যেতে তুমিই করেছ মানা,
শরীর দিয়েছ মানুষ গড়ার কাজে -
তুমি ছিলে তাই কমরেড ষোল আনা।

সকাল যখন ঘন কুয়াশায় ঢাকা -
বন্ধু - স্বজন-ও খন্ডিত ভাগে ভাগে,
হয়তো তোমার ভাল লাগলোনা তাই-
তুমি চলে গেলে 'বারোটা' বাজার আগে।

আমরা যারা এখনো স্বপ্ন দেখি,
সারা দেশ জুরে তারা রইলাম জেগে -
স্বপ্নের কুঁড়ি ফুল হবে যেনো ঠিক,
কমরেড তুমি ঘুমাও ভরসা রেখে!!

মশাল জ্বালো ~ সিদ্ধার্থ


নিভে গেছে আমাদের আলো...
সাথী মশাল জ্বালো
রাত্রি বোধ হয় হবে আরো কালো আরো ক্রুর
আঁধারের হিংস্র প্রেতেরা দেখো বেঁধেছে জটলা
বাতাসে তাই মৃত সাথীর রক্তের গন্ধ আর মাটিতে ক্লেদ
ওই ওরা ভাঙ্গে বেড়া...ওই বুঝি আমাদের ঘরে আসে ঢুকে
সাথী আগুন ধরো ওদের মুখে !
সাথী আরো মশাল জ্বালো...
শত মশালের আলোয় আবার জাগুক আমাদের জ্যোতি

শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১০

অরকুট বিপ্লবী ~ তুলি

এখনো পাঁজরের বাম দিকে দাগ আছে,
ছোট্ট ক্ষতের চার পাশে সে' সময়ের স্মৃতি-
মুক্তির দশকের কয়েকটা কাটা কাটা ছবি,
'হ্যান্ডস-আপ' - ১৪৪ এর উদ্ধত অভিব্যক্তি।


শরীরের কোন এক ইঞ্চি তে
শানিত রিভলভারের নল - শক্তির উৎস,
কোষে কোষে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে থাকা-
আত্মরক্ষার হাতিয়ার - 'তিন' অক্ষরে বিশ্বজয়।

মাঝে মাঝে জীপের হুটারে ভেঙ্গে যাওয়া নৈঃশব্দ,
ত্রৈমাসিক বুলেটিনের নিষিদ্ধ ইস্তেহারে আরোহী - 'বিপ্লব';
সমাজচেতনার গভীর চোরাকুঠুরীতে বসবাস - মধ্যবিত্ত বিপ্লবীর,
সে সময়ে চায়ের দোকান - কফি হাউসের কবিচক্র...

আর এখন... "অরকুট"!

হৃদয় থাকে বামদিকটায় ~ সুকন্যা

আমি অন্ধকারের রঙ শুষে নিয়ে
সূর্য্য কে কাছে ডাকি....
আমি স্তব্ধ শিথিল সমুদ্র গভীরে
জীবাশ্ম খুঁজে থাকি.
আমি লিখেছি অনেক ফুটপাথ
আমি শুনেছি মৃত্যুভিক্ষা....
আমি ধ্বংসের পরে সৃষ্টি করবো
অর্থ আমার শিক্ষা.
কুরুর মাঠে কর্ন দাঁড়িয়ে
বীর অর্জুন রথে....
সব হাহাকার পিছনে সরিয়ে
হাত ধরে নামি পথে.
আমি ঢালতে দেখেছি কেরোসিন
বুকফাটা শুধু ক্রন্দন....
আন্দোলনের ঢেউ বয়ে চলে
মঞ্চ মিছিল নন্দন.
কন্ঠ আমার উর্ধে উঠেছে
দৃঢ়তায় বাঁধা মন....
আমি তবুও করিনি চুরমার
শুধু সৃষ্টি সুখের পণ.
অবাক পৃথিবী অজানা অনেক
জুড়ে চলি ছেঁড়া পাল....
হৃদয় থাকে বামদিকে
আর, রক্তের রঙ লাল.