মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০০৯

এদেশ তোমার, এদেশ আমার ~ পারিজাত ভট্টাচার্য্য

এইবার পঞ্চদশ নির্বাচনের ফলের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে কংগ্রেস নেতৃত্বে ইউ পি এ , সরকার গঠন করলো এবং সাথে ৪৮ জন সাংসদ সরকারকেবাইরে থেকে সমর্থন করলো। এই বাইরের সমর্থন দেওয়া ৪৮ জন সাংসদের মধ্যে এমন সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাংসদরা আছেন যাদের ভাবাই যায়নি যে তারা একইসঙ্গে একই মেরুতে অবস্থান করবেন। যেমন ধরা যাক উত্তর প্রদেশ এর চিরশত্রুবহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টী দুইপক্ষই এই সরকার কে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছে। এই বি এস পি এবং জ়ে ডি ইউ দুই রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে আগে তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে অ-কংগ্রেস এবং অ-বি জ়ে পী জোট করার জন্যে এবং এই জোট কে কেন্দ্রে জয়যুক্ত করার জন্যে দেশ বাসী কে আহবান করেছিলো কিন্তু দেখা গেলো নির্বাচনের পরে তারা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। সেরকম ভাবেই মুখ ঘুরিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ এর টি আর এস। এনারাও কিন্তু নির্বাচনের আগে সেই প্রস্তাবিত তৃতীয় ফ্রন্টের সাথেই ছিলেন কিন্তু নির্বাচনের পরে ওনারা এন ডি এ জোট এর সাথেয় চলে যান। সি পি আই (এম) কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরো এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি টিকে বিশ্লেসণ করে জানায় যে নির্বাচনের ঠিক আগেই এই অ-কংগ্রেস এবং অ-বি জ়ে পি জোট , দেশের মানুষের কাছে কেন্দ্রে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প শক্তি হিসেবে পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্ত সি পি আই (এম) বহুদিন থেকেইতার বিভিন্ন পার্টি কংগ্রেস গুলতে দেশে বিকল্প শক্তি গড়ার লক্ষ্যে প্রস্তাব গৃহিত করলেও ঠিক নির্বাচনের আগে এই রকম কম্পিঊটার মাফিককাট-পেস্ট পদ্ধত্বি অবলম্বন করলে কখনই নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়, এই বিশয় টি কেন্দ্রীয় কমিটির সভ্যদের বোঝা উচিত ছিলো। এই বিকল্প রাজনৈতিক অভ্যুথান সম্ভব হতো বিশাল ( ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনের মতন) জনগনতান্ত্রীক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামে। এখানে কোনো শর্ট- কার্ট পদ্ধতিনেই, এই অবস্থান টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বোঝা উচিত ছিলো। এই নির্বাচনের ফলাফলে আমাদের পার্টির অবস্থা , আমাদের দেশের বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে, পার্টির ফলাফলের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, এই ফলাফল টি পার্টির সবথেকে বিপর্যয়কর অবস্থান টি তুলে ধরে। কোনো সময়তেও আমাদের পার্টি এতো খারাপ ফল করেনি। আমাদের দেশে আমাদের পার্টির প্রথম নির্বাচনে, ১৯৬৭ সালে, দেশের বাম আন্দোলনের সংশোধনবাদী , প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেও আমাদের পার্ট ১৯ টি আসনে জয়লাভ করেছিলো কিন্তু এবার তার থেকেও কম, মাত্র ১৬ টি সারা দেশে এবং সমগ্র বামফ্রন্ট সর্বসাকুল্লে ২৪ টি। এই পর্যায়ে মানুষের আস্থা ফেরাবার জন্যে দরকার, চুলচেরা বিশ্লেসণ, শাখা স্তর থেকে। এবং সাথে দরকার ভুল-ভ্রান্তির,তা সে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে রাজ্য স্তর থেকে শাখা স্তর, সঠিক বিশ্লেসন এবং তার প্রতিকার । পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এই নির্বাচনী ফলাফল মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়। এই বার হয়ত আমাদের লড়তে হয়েছে, শুধু কমিউণিষ্ট বিরোধী শক্তির সাথে নয়, কিন্ত আমাদের লড়তে হয়েছে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে, গ্লোবালফিন্যানশিয়ালকমিউনিটির সাথে , আমেরিকার মদতপূষ্ট গোয়েন্দা দপ্তর সি আই এর সাথেও। কিন্তু এই পরিস্থিতিও আমাদের পার্টির কাছে নতুন নয়। ১৯৬৪ সালে আমাদের পার্টির জন্ম থেকে আমাদের নানান দন্দ এবং প্রতিক্রিয়াশিল শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হয়। আমাদের বলা হতো "চিনের দালাল' এবং এখন কার মতন মার্কিন্মদতপুষ্টসংবাদ্মাধ্যমের দৌরাত্য এবং দুরভিসন্ধি ততো গভির না হলেও , তখনও ওনাদের আক্রমণ ছিলো স্বাবাভিকভাবেই তাদের প্রভুদের "প্রকৃত" শ্রেনীশত্রুরা। সেই সময় বহু কমরেড রা জেল থেকে নির্বাচন লড়েন এবং জেতেন। ১৯৭০ সালে, পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৯৬৭ সালে এবং ১৯৬৯ সালে অগনতান্ত্রীক ভাবে ভেঙ্গে দেবার পর, কমিঊনিষ্ট দের অপর সারা দেশ এবং বিশষত পশ্চিমবঙ্গে প্রবল অত্যাচার হয়, সিদ্ধার্থ রায় সরকার উদ্যত হয়, কমিউনিষ্টদের বিলুপ্তির পথে, কিন্ত তারপরও সারা দেশে কমিউনিষ্ট রা বিপুল জনসমর্থনে ফিরে আসে। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমাদের রাজ্যে আমরা পাই ৪২ টার মধ্যে ৩৮ টি আসন। গত দুই দশক ধরে আমাদের দেশে সরকার গঠনের মধ্যে কমিউনিস্টদের প্রচুর আদর্শগত প্রধান ভুমিকা নিতে হয় গরিব এবং শ্রমিক শ্রেনীর সার্থে। গতো নির্বাচনে (২০০৪) পরবর্তিকালিন অবস্থা পর্যন্ত বিশাল কর্পরেট লবির , পূজিবাদী শ্রেনীর স্বার্থরক্ষা কারী রাজনৈতিক শক্তির বিভিন্ন জনস্বার্থবিরোধী নীতি গুলো কে কমিউনিষ্ট রা ঠেকিয়ে রাখেন এবং প্রতিহত করেন। কিন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার যে কমিউনিষ্টদের এই জনহিতকারী সংগ্রাম গুলোর প্রচার ভারতবর্ষের সাধারণ সঙ্খ্যাগরিষ্ট আর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল শ্রেনীর মধ্যে সঠিক ভাবে এবং সঠিক সময়ে প্রচার পায় নি। প্রচার শুরু হয় যখন বামপন্থীরা সরকার থেকে সমর্থন সরিয়ে নেন এবং তাও নির্বাচনের ৬ মাস আগে। এই দূর্বলতার সুযোগ নেয় বুর্জুয়া সংবাদমাধ্যম এবং বুর্জুয়া শ্রেনীর মদতপূষ্ট কংগ্রেস এবং তার জোটসংগীরা। নির্বাচনী প্রাক্কালে, বামপন্থীদের সাফল্যে গুলিকে ওরা নিজেদের ঝুলিতে নিয়ে নির্বাচন জেতে। শেষ পর্যন্ত অবসান হয় শেয়ার বাজাররের দীর্ঘদিনযাবৎ আশঙ্কিত "ব্লাডি বাথ" এর পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক ফিনান্স কমিউনিটির আশঙ্কা। উচ্ছসিত কর্পরেট মহল, উচ্ছসিত পূজিবাদী অর্থনিতির প্রবক্তারা, কারণ এতদিন যাবৎ ওনারা বোধহয় একটি রাস্তা পেয়ে গ্যাছেন, লগ্নিপূজির পূণর্জীবনের। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি সারা বিশ্বের কমিউনিস্টদের কাছে নতুন নয়। কমিউনিস্টদের তাই বিশ্লেশণ করা দরকার ঐতিহাসিক শ্রেনীদ্বন্দগুলির চরিত্র এবং পরবর্তি পরিস্থির মার্কসবাদী সুত্রে সঠিক মুল্যায়ন। এই বিশ্লেসণ টি দরকার বিশেষত শ্রমিক শ্রেনী এবং ভারতের কৃষক সমাজের স্বার্থে কারন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ১০০ দিনের কর্ম্পদ্ধতি এবং পরবর্তিকালীণবাজেটে যেসব অর্থনৈতিক সংস্কারে এগোবে, তাতে গরিব মানুষের জীবন আরো ওষ্টাগত , নিষ্পেসিত হবে। সুতরাং তাদের স্বার্থেই কমিঊনিস্ট পার্টি কে বর্তমান পরিস্থিতি সঠিক মূল্যায়ন, (ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি তে, দ্বন্দমূলক শ্রেনীসম্পর্কে বিশ্লেশণ, এবং সংশোধনবাদী চরিত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে)। পার্টির নেতৃত্বের সাথে পার্টির সভ্য এবং সমর্থক বিশেষ সামাজিক দায়বদ্ধতা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং দর্শনের ওপর নিয়মিত অধ্যয়ন( যতটা সম্ভব এই অভ্যাস টাকে টিকিয়ে রাখা খুবই জরুরি)। জেলাস্তর থেকে শাখা স্তর অবধি নিজেদের এবং শ্রমিক শ্রেনীর ভূমিকা অর্জনকারী সি আই টি ইঊ এর স্বীকৃত বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ান সদ্যস্য দের মার্কস বাদী দর্শনে এবং লেনিন মাও এর দৃষ্ঠিভঙ্গি তে শিক্ষিত করা। ট্রেড ইউনিয়ান কে জঙ্গি মনোভাব জায়গা বিশেষে পরিহার করা এবং জায়গা বিশেষে অবলম্বন করা। এরই জন্যে চাই রাজনৈতিক শিক্ষা। তার সাথে ট্রেড ইউনিয়ান থুড়ি পার্টির নেতৃত্বের চাই ধৈর্য্য, একনিষ্টতা এবং সর্বপরি সততা। সমাজে বিভিন্ন শ্রেনীর অবস্থান এবং নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া এবং দ্বন্দ কে সঠিক ভাবে বিশ্লেশন করে শ্রমিক শ্রেনির সংগ্রাম কে সঠিক পথে চালিত করাই বর্তমান সময়ে পার্টির নেতৃত্বের আশু কর্ত্যব্য হওয়া উচিত। স্বাধিনতার আগে ভারতের শ্রমিক শ্রেনীর সংগ্রাম, তার সংগঠন এর চরিত্র এবং শ্রমিক শ্রেনীর আন্দোলনের চরিত্রের এবং তার আন্দোলনের দাবী দাওয়া বর্তমানের শ্রমিক শ্রেনীর আন্দোলনের দাবি-দাওয়া, সংগঠনের চরিত্রের প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। বৈগ্যানিক সমাজতন্ত্রের সুত্র মানলে এই পরিবর্তন হওয়া টাই খুব স্বাবাভিক। কারণ স্বাধিনতার আগে এবং স্বাধিনতা উত্তর সময়ে শ্রমিক শ্রেনীর চেতনা র বিকাশ এবং তখনকার সমাজে যে সব শ্রেনী শক্তির ভারসাম্য ছিলো একের সাথে অপরের দ্বন্দ এবং সমঝতা, বর্তমান সময়ে তা এখন অনেক পালটিয়ে গেছে। আজ বর্তমান সমাজে আমরা যে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন বা শ্রমিক শ্রেনীর অগ্রনী ভুমিকায় ট্রেড ইউনিয়ানের যে রকম সংগঠিত রুপ দেখি তা আজ থেকে একশ কেনো, পঞ্চাশ বছর আগেও ভাবা যেতো না। স্বাধিনতার প্রাক্কালেশ্রমিক শ্রেনীকে সংগঠিত করতে হয়েছিলো নানান প্রতিকুলতার মাধ্যমে। কমরেড হারকিষেণ সিং সুরজিৎ, বি টি রনদিভে, এস এ ডাঙ্গে এবং কমরেড মুজফফর আহমেদ এর নানা লেখা থেকে আমরা সেই সব প্রতিকূলতা সম্মন্ধে জানতে পাই। তখনকার সময়ে শ্রমিক শ্রেনীর গঠিত ট্রেড ইউনিয়ান কে লড়তে হয়েছিলো দুই তরফের শত্রুর সাথে। একদিকে শ্রমিক শ্রেনির সংগ্রাম কে পরিচালিত করতে হয়েছিলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক , সামাজিক বৈষ্যমের মধ্যে দিয়ে আর আরেক দিকে দেশী বূর্জুয়া শ্রেনীরতীব্র শোষণ এর বিরুদ্ধে। দেশী বুর্জুয়াদের এই তীব্র শোষণ স্বাধীন রাষ্ট্রের শ্রমিক দের শোষণ এর থেকেও তীব্র কারণ দেশী বুর্জুয়াদের ও পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক নীতি ছিলো স্বাধিন রাস্ট্রের থেকে একদমই পৃথক এবং বৈষ্যম্যমূলক। এবং তাইএই উপনিবেশে পূজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার বিকাশ হাওয়া শূরুহলেও, দেশী পূজিপতিরা তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে শ্রমিক শ্রেনীর অপর আরো নীপিড়ণ এবং শোষণ করতো। বাধ থাকতো না পাঁচ বছরের বাচ্চাও। নানান শিল্পে যেমন বস্ত্রকল , চটকল বাগিচা , কয়লা খনিইত্যাদি তে পুরূষ শ্রমিক দের মজুরি এতই কম ছিলো যে নূনতম জীবন ধারণের জন্যে তাদের সপরিবারে কাজ করতে হতো। নারী এবং শিশু শ্রমিক দের মজুরি ছিলো আরো অনেক কম। ছিলো না তাদের কোনো সামাজিক সুরক্ষা এবং ছিলো না তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং স্বাভাবিকবাসস্থানের জন্যে কোনো অধিকার। কোনো কোনো শিল্পে তো পুরুষ শ্রমিকদের দিনে ২০ থেকে ২২ ঘন্টা খাটতে হতো এবং নারীদের ও শিশুদের দৈনিক শোলো সতেরো ঘন্টা করে। এই নিদারূন পরিস্থিতি আজকের যুগে ভাবাই যায় না। অসুস্থ্য হলে বা কারখানায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা অংগচ্যুতি হলে তাদের ক্ষতিপূরণের কোনো প্রশ্নই আসতো না। এই তীব্র নীপিড়নের মধ্যে যদি কোনো শ্রমিক কাজ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতো তখন মালিকপক্ষ্য সরকারি স্বাসনযন্ত্রের মাধ্যমে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত শাশ্তী মূলক ব্যাবস্থা নিতো। আরো প্রতিবন্ধকতা ছিলো জাতিয়ো কংগ্রেসের নেতৃত্বে অবস্থিত বুর্জুয়া শ্রেণী। গান্ধীজির ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে স্বজনপোষণ এবং জাতিয়ো কংগ্রেসের মধ্যে নানানরকম বিভ্রান্তি এবং সুবিধেবাদী আচরণ। গান্ধীজি কোনোদিনই আমাদের দেশে শ্রমিক শ্রেনীর নীপিড়ণ এবং তাদের সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ানের সরকারের বা মালিকদেরবিপক্ষে গঠিত নানবিধ ধর্মঘট এবং জঙ্গি আন্দোলন কে সমর্থন করেন নী বরং তিনি মালিক পক্ষের সাথে "শান্তি তে" সালিশি সভার মাধ্যমে শ্রমিক দের দাবি-দাওয়ার প্রক্রিয়ায় রাজি ছিলেন। তাই প্রথম দিকে জাতিয়ো কংগ্রেসের নানান নেতা-নেত্রী শ্রমিক শ্রেনীর তৎকালিন গঠিত ট্রেড ইউনিয়ানের নেতৃত্বে থাকলেও পরে তারা সেই আন্দোলন থেকে সরে আসেন। শ্রমিক শ্রেনীর সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ান এর শক্তি কে খর্ব করার জন্যে গান্ধিজি নিজেই আমেদাবাদে মজুর - মহাজন বলে একটি শ্রমিক শ্রেনীর সংগঠন তৈরি করেন। পরে অবশ্য এই মজুর মহাজন সঙ্ঘের অবলুপ্তি হয় এবং মালিক পক্ষের স্বার্থরক্ষাকারী ট্রেড ইউনিয়ানের আই এন টি ইউ সি র সাথে মিশে যায়। আজও পর্যন্ত সারা দেশে শ্রমিক শ্রেনীর অনেক ট্রেড ইউনিয়ানের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও শ্রমিক শ্রেনীর স্বার্থ রক্ষাএবং তাদের সংগ্রাম কে সংগঠিত ভাবে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে নানান প্রশ্নে এবং সরকারের নানান বৈষ্যম্যমূলক আচরনে ট্রেড ইউনিয়ান স্পনসরিং কমিটির মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে, একমাত্র আই এন টি ইউ সি বাধে। যাই হোক স্বাধিনতার প্রাক্কালে, শ্রমিক শ্রেনির চেতনার বিকাশ এবং তাদের ট্রেড ইউনিয়ান কে অর্থনৈতিক এবং কিছু অংশে রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা করার দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তৎকালিন কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যরা। ব্রীটিশ সামরাজ্যের শাসক গষ্টি কংগ্রেসের সাথে অশুভ আঁতাত করে কমিঊনিস্টদের অপর নানান দমনপীড়ন করে। কমিঊনিস্ট পার্টি এবং তার প্রচারিত(মস্কো থেকে) নানান পত্রপত্রিকা বেয়াইনি ঘোষনা করা হয় এবং ধরা পড়লে কঠিন স্বাস্তির মুখে পড়তে হয়। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা এবং পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে প্রচুর কমিঊনিস্ট দের আটক করা হয় এবং তাদের অপর নানান দমনপীড়ণ মূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হয়। কমিউনিষ্ট রা এতো দৃঢপ্রত্ইয় ছিলেন যে তারা সরকারী বিচার ব্যাবস্থার মাধ্যমে সারা দেশে মার্কসী দর্শনের সুত্রে শ্রমিক এবং ণীপিড়িত মানুষের মধ্যে ঐক্যের ডাক দেন। পরবর্তিকালে শ্রমিক শ্রেনীর অগ্রনি ভুমিকার এবং তাদের সংগ্রাম কে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামেররুপ দেবার আশু লক্ষ্যে কমিঊনিস্ট পার্টিকে এই আই টি ইউ সি মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। কখনো কাজ করতে হয় জাতিয়ো কংগ্রেসের মধ্যে থেকে আবার কখণো কোনো রাজনৈতিক দল (যেমন ওয়ার্কাস এন্ড পেজেন্টস পার্টি) বা ট্রেড ইঊনিয়ানের মাধ্যমে ( যেমন গিরনি কামগড় ইউনিয়ান এবং রেড ইন্টারন্যাশনাল)। স্বাধিনতার পরবর্তিকালেও জহরলাল নেহেরুর আমলে আমাদের দেশে কমিউনিষ্টদের অপর প্রচুর অত্যাচার হয়। যা এখনো জায়গায় জায়গায় হচ্ছে। কারণ কমিঊনিষ্ট পার্টি একমাত্র পার্ট যার দর্শনের এবং যুক্তিরকাছে অন্যান্য রাজনৈতিক দল কেসর্বসময়ে হার মানতে হয়। এই বাস্তব দুনিয়াতে একটাই মাত্র রাজনৈতিক দল, কমিউনিষ্ট পার্টি যারা শ্রমজ়ীবি সর্বসাধারণ এর স্বার্থে সংগ্রাম করে। শ্রমজীবি মানুষের চিন্তা চেতনার মধ্যে সমাজপরিবর্তনের বৈজ্ঞ্যানিক চিন্তাধারার বিকাশ চায়, তাদের সংগঠিত করতে চায় অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের মঞ্চে। তাদের হাথেই কমিউনিষ্ট পার্টি তুলে দিতে চায় রাষ্ট্রক্ষমতা। এই ব্যাবস্থাই হল সমাজতান্ত্রীক ব্যাবস্থার শুরু এবং সারা পৃথিবিতে কমিউনিজম গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ। সমাজতন্ত্র থেকে কমিউনিজমের উত্তরনের পথ কিন্তু অতিব সরল মোটেই নয়, বরং তা অত্যন্ত বাকা-চোরা, আর্থনৈতিক সংস্কার এর মাধ্যমে, ধৈর্য্যশীল বিশ্লেষণ এ এগোতে হয়।পৃথিবিতে এখণো সেই অর্থে কমিউনিজমের বিস্তার হয়নি। এই সমাজতন্ত্র থেকে কমিউনিজমের উত্তরণের প্রক্রিয়ারবিশ্লেশণে সোভিয়েত রাশিয়া তে সেখানকার নেতৃত্ব ঠিক মতন করতে পারেন নি। সংশোধনবাদী অবস্থান এর সাথে সারা পৃথিবিতের আরেক বিকল্প সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিকাশের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার সমাজতন্ত্রের পতন হয়। সংশোধনবাদীঅবস্থানে কখনই মার্কসবাদের প্রয়োগ করা যায় না এবং মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রেস সুত্রকেও বোঝা যায়না। সর্বহারাদের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে যদি কমিউনিস্ট পার্টি পেটি বুর্জোয়া মানসিকতায় চালিত হয়, তাহলে শ্রমিক শ্রেনির বা সর্বসাধারনের সংগ্রামের লড়াইএর মুল ধারাথেকে ছিটকে যেতে হয়। এই রূপ পেটি বুর্জুয়া নয় কিন্ত পেটি বুর্জুয়া মানসিকতারপার্টিতে প্রবেশ সম্নধে কমরেড লেনিন বহুবার সতর্ক করেছেন। বর্তমানেও তাই আমাদের পার্টির মধ্যে এই রূপ প্রবনাতা দেখা যাচ্ছে যেখানে সর্বসাধারণের সাথে বিচ্ছিন্নতার ফল, আমলাতান্ত্রীক মানসিকতার জন্ম, ব্যাক্তিগত আত্মগরিমা, ছল, কপটতা, এবং পার্টির সাথে সরকারের একই পথে চলার নীতি দায়ী আজকের ফলাফল। এই অবস্থা তৎকালিন সোভিয়েতে সমাজতন্ত্রের পতনের আগে পরিলক্ষিত হয়। কমিউনিস্ট পার্টি এমনই একটি রাজনৈতিক দল যাদের দর্শন বলে যে পৃথিবীতের কমিউনিজম বিস্তারের পরে, কমিউনিস্ট পার্টি থাকাও যুক্তিহীন হয়ে পড়ে। অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল তা সে যতই প্রগতিশীল হোক না কেনো, যারা সর্বসাধারণের জন্যে কিছু তাৎক্ষনিক সুযোগ- সুবিধে দিয়ে এবং তাদের কিছু তাৎক্ষনিক পরিবর্তণের স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়, এই সমাজব্যাবস্থাই তাদের কাছে শ্রেয়, কিন্ত কমিউনিস্ট পার্টির নীতি ও আদর্শ এই তাৎক্ষনিক পরিবর্তনের ত্বত্য বিশ্বাস করেনা। কারণ তা বিজ্ঞ্যান্সন্মত নয়। কমিঊনিস্ট পার্টি চায় শ্রমিক শ্রেনী এবং সর্বসাধারণ গরিব মানূষের অধিকার লাভের জন্যে চায় এই সমাজব্যাবস্থার আমূল পরিবর্তন। বিজ্ঞ্যানভিত্তিক প্রকৃতিক দ্বান্দিকপরিবর্তনের দর্শনে যার মধ্যে সমাজ একটি প্রধান ও অবিচ্ছিন্ন অংশ।যাই হোক এই সমাজপরিবর্তনের বিজ্ঞ্যানসম্মত দর্শন আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেই এবং তাই এরা কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য, কর্মিদের কাছে যুকিত তর্কে বশীভূত হয় এবং তখন সানায় আক্রমণ। ভারতের স্বাধিনতার পরও কামিঊনিস্ট পার্ট ি সদস্যদের ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার। খুন, জখম জেল ভরো মাধ্যমে পার্টি সভ্যদের আন্ডারগ্রাঊণ্ডে চলে যেতে হয়। শ্রমিক শ্রেনির সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন এর সংগ্রাম যার অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিকাশের সমস্ত কৃতিত্ব ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অপর, সেই ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষমতা ও অধিকার নানাভাবে খর্ব করার চেষ্টা চালানো হয়। এসমা, মিসা ইত্যাদি আইনের মাধ্যমেট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক শ্রেনীর (সরকারী এবং বেসরকারী ক্ষেত্রে) অধিকার খর্ব করা প্রচেস্টা চালানো হয়। এই অবস্থা মোরারজী দেশাইএর আমলেও (তৎকালীন ভূতলিঙ্গম কমিটির প্রস্তাব)ছিলো এবং ভি পি সিং আমলেও নানান প্রতিশ্রুতি স্বত্বেওশ্রমিক শ্রেনীর অধিকার রক্ষায় কেন্দ্রে কোনো সরকারই এগিয়ে আসেনি। ১৯৮৯ এর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম লোকসভা নির্বাচনে ভি পি সিং - এর নেতৃত্বে যে অ-কংগ্রেস সরকার গঠিত হয় সেই সরকার শ্রমিক ও সাধারণ জনগনের স্বার্থে কতকগুলি সীমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও পূর্বতণ কংগ্রেস সরকারের জনবিরোধী নীতির কোন পরিবর্তণ ঘটায় নি। বরং এর মাত্র ১১ মাস ব্যাপী স্বল্পকালীন শাসনে পূর্বতন রাজীব গান্ধী সরকারের আর্থিক ও শিল্পনীতিকেই জোরকদমে এগিয়ে নিয়ে যায়। যাই হোক , ১৯৯০ সালের অক্টোবরে চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে লোকসভার কিছু সদস্যের দল ছেড়ে যাওয়ায় ঐ সরকারের পতন ঘটে এবং কংগ্রেসের সমর্থনে চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে এক সরকার গঠিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, কংগ্রেসের সমর্থনে অতি সঙ্ক্যালঘু এই সরকার কংগ্রেসেরই অঙ্গুলী হেলনে চলতে বাধ্য হয়। চন্দ্রশেখরের সরকার ক্ষমতাহীন হওয়ার পর এই সরকারের প্রথম ঘোষনা হয় যে নয়া উদারবাদী অর্থণীতি বহাল থাকবে যদিও ভি পি সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চন্দ্রশেখর উদারণিতির বিপক্ষেই মত প্রকাশ করেছিলেন। এরই সঙ্গে আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডার থেকে পুনরায় শর্তাধীন ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকি হ্রাস করা এবং গনবন্টন প্রথাও সীমিত করার কথা ঘোষিত হয়। ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডার ভারতকে দুই কিস্তিতে ঋণদানের কথা ঘোষিত করে। দুইটি কিস্তির মোট পরিমাণ ১.৭৮ বিলিয়ান মার্কিন ডলার । এই সময় যে উপমহাসাগরীয় যুদ্ধ (Gulf War) শুরু হয় তাতে ভারত সরকারের প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত বিদেশী মুদ্রার। যুক্তি দেখানো হয় যে আন্তজার্তিক অর্থভান্ডার থেকে গৃহিত এই ঋণ সরকারকে বিদেশী মুদ্রার দায় মেটাতে সাহায্য করবে। এই ঋণের জন্যে আন্তজার্তিক মুদ্রাভাণ্ডার যে দীর্ঘ মেয়াদী শর্তাবলী চাপিয়ে দেয় তার মধ্যে ছিলো বেসরকারী ক্ষেত্রে শিল্পের প্রতি উদারনীতি গ্রহণ করতে হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে বেসরকারী ক্ষেত্রে লগ্নি ও উৎপাদনকে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। একচেটিয়া পুঁজি বিরোধী নিয়ম কানুন বিদেশী প্রযুক্তি আমদানির ক্ষেত্রে শিথিলতা অবলম্বন করতে হবে যাতে বেসরকারী শিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। বিদেশি প্রযুক্তি ক্রয়, রয়ালিটি প্রদান, ভারতীয় শিল্পে বিদেশী পুঁজির অংশগ্রহণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় উদারনীতি গ্রহণ করতে হবে। ভারতের নিজ্বস্ব শিল্পকে আন্তজার্তিক প্রতিযোগিতার সন্মুখীন করার জন্যে দেশি শিল্পকে সুরক্ষা দান আরো নামিয়ে আনতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলির ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরজার নীতি গ্রহণ এই পদক্ষেপগুলির সহায়ক হবে। শিল্পের এই বহির্মুখীতার জন্যে বানিজ্য নীতিকেও প্রয়োজনীয় ভাবে সংশোধন করতে হবে। মূল্য বা দর নির্ধারণে বাজারের শক্তির উপরই নির্ভরশীল হতে হবে- ঐ মূল্য বা দর কৃষিপন্য, শিল্পজাতপন্য বা উপভোগ্য যে কোন দ্রব্যই হোক না কেন। এছাড়াও আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডার সরকারের আর্থিক নীতিকে সংশোধনের জন্যে আরো শর্ত রাখে যে , ভারতের আর্থিক সঙ্গতি যা তখন ছিলো জাতিয় গড় উৎপাদনের শতকরা ৮ ভাগ, তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনতে হবে এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হ্রাস করতে হবে। এর উপর খাদ্য এবং কৃষি সারের উপর ভর্তুকি হ্রাসের জন্যও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই ধরণের আর্থিক নীতি শুধুমাত্র বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডারের নিকট আত্মসমর্পণ করার ফলশ্রুতিই নয়, স্বভাবতই এই নীতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ারও ফলাফল। ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যখন ইরাকের উপর ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে তখন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই আক্রমণের নিন্দা করা হয়নি উপরন্তু মার্কিনী সামরিক বিমানগুলিকে ভারতের বিমানঘাঁটিতে তেল ভরার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে এই আক্রমণের সময় ভারতের জনগনের সহানুভুতি ছিল আক্রান্ত ইরাকের প্রতিই এবং মার্কিনী আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের অনেক শহরেই শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ সংঘটিত করে। চন্দ্রশেখর কংগ্রেসের বিরোধিতা করে নির্বাচনে জয়ী হলেও অবশেষে বিরোধীপক্ষ্য ত্যাগ করে কংগ্রেসে সমর্থনেই প্রধানমন্ত্রী হন। ফলে এই অতীব সঙ্ক্যালঘু সরকার খুব নড়বড়ে অবস্থায় থাকে এবং অবশেষে এপ্রিল'৯১ তে কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে এই সরকারের পতন ঘটে। মে - জুন '৯১ তে অনুষ্ঠিত লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল একক সঙ্ক্যাগরিষ্টতা পায় না যদিও কংগ্রেস বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভুত হয় এবং প্রবীন কংগ্রেস নেতা নরসিং রাওয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে ২১ শে জুন ১৯৯১ সালে সরকার গঠিত হয়। যদিও সঙ্ক্যালঘু হিসেবেই এই সরকার গঠিত হয়। এর পরই বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তজার্তিক মুদ্রাভাণ্ডারের নির্দেশ মতন নয়া-উদারবাদী বিশ্বায়নের পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শ্রমিক কর্মচারিদের জীবনে এই পূর্নাঙ্গ আক্রমণ এক অসাধারণ দূর্দশার সৃষ্টি করে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনও সংগঠিত হয়। শুধু এই আর্থিক সঙ্কটই নয়, দেশ এই সময়ে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবল সমস্যার সন্মুখীন হয়। একদিকে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় মৌলবাদ এবং অপরদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং নিরপরাধের নির্মম হত্যালীলা দেশে এক অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্ঠি করে। নির্বাচন অভিযানের কালে রাজীব গান্ধীর মর্মান্তীক হত্যা ছিল এই পরিস্থিতির সর্বাপেক্ষা শোচনীয় দিক। অর্থনৈতিক দিক থেকে পরিস্থিতিটা ছিল অতিশয় সঙ্গীন। বিদেশী ঋনের পরিমাণ ইতিমধ্যে এক লক্ষ্য কোটি টাকা অতিক্রম করে গেছে। এই ঋণের জন্যে সরকাররী রাজস্বের শতকরা ২৪ ভাগই সুদ হিসেবে পরিশোধ করতে হত এবং এর অর্থ সরকার প্রায় ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার অবস্থায় ক্রমে পৌঁছে গিয়েছিল। ঋণের মাপকাঠিতে ঋণ জর্জরিত ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পরেই ছিলো ভারতের স্থান। চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে পূর্বতণ সংখ্যালঘূ সরকার প্রায় ৩৩০০ কোটি টাকা আন্তজার্তিক অর্থভান্ডারের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে দেশকে ঋণদাতাদের নিকট জাতীয় স্বার্থের ক্ষতিকারক শর্তে আবদ্ধ করেছিলো। নরসিং রাও এই অবস্থায় আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডারের কাছ থেকে আরেক দফা ঋণের পরিকল্পনা করে। চন্দ্রশেখরের আমলেই এটা প্রতিভাত হয়েছিল যে আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডার ঋণগ্রহীতা দেশের উপর যে ধরনের শর্ত চাপিয়ে দেয় তাতে ঐ দেশের পক্ষে অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোন স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা থাকে না। যে শর্তাবলী চন্দ্রশেখরের সরকারের ওপর চাপানো হয়েছিলো তা হলো, সার্বজনীন ক্ষেত্রে শিল্পনীতি পরিবর্তন করে তা ব্যাক্তিমালিকানার শিল্পের পক্ষে নিয়ে আসতে হবে, যে সমস্ত কল-কারখানা প্রতিযোগিতার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে সেইগুলিকে বন্ধ করে দিতে হবে, বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির কার্যকলাপের উপর সমস্ত বাধা-নিষেধ প্রত্যাহার করে নিতে হবে, লাইসেন্স প্রথা এবং আমদানি নীতির উদারীকরণ করতে হবে, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাতে হবে যাতে দ্বি-পাক্ষিক বানিজ্যে শিল্পোন্নত দেশগুলি সুবিধেভোগ করে, খাদ্য এবং সারের উপর সমস্ত ভর্তুকি তুলে দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর গনবন্টন ব্যাবস্থা ভেঙ্গে দিতে হবে, যাত্রী পরিবহণ শিল্পে- রেল, বাস, বিমান প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে এবং শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন সংকোচন করতে হবে। এই শর্তগুলির স্বীকারের অর্থ দেশী শিল্পের সর্বনাশ, প্রবল বেকারী বৃদ্ধি, মূল্য-বৃদ্ধি এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের চরম দূর্দশা, দারিদ্র ও অনাহার।

চন্দ্রশেখর সরকার এই শর্তাবলি মেনে নেয় এবং তারপর নরসিঙ্ঘ রাও ক্ষমতায় এসে চন্দ্রশেখর সরকারের এই সর্বনাশাকর নীতিগুলির একটি পূর্নাঙ্গ আনুষ্টানিক রূপ দিয়ে "সংস্কার" নামে প্রয়োগ করতে উদ্যত হয়। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দুইদিনের মধ্যে কংগ্রেস সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং সরাসরি জানিয়ে দেন যে আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডারের কাছ থেকে পুনরায় ঋণগ্রহণ ব্যাতিরেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করার আর কোন পথ নেই। অর্থমন্ত্রী ৭০০০ কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাব করেন। স্বভাবতই প্রস্তাবিত ঋণের শর্ত হবে অর্থনীতিকে আই এম এফ নির্দেশিত পথে "সংস্কার" করা। অত্যান্ত দ্রুততার সাথে এই তথাকথিত সংস্কার শুরু হয়ে যায় এবং ১৯৯১ সালের ১ লা জুলাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বিদেশি মুদ্রার তুলনায় ভারতীয় মুদ্রার এক ব্যাপক অবমূল্যায়ণ ঘটিয়ে নির্দেশ জারি করা হয়। ৩রা জুলাই ভারতীয় মুদ্রার পুনরায় অবমূল্যায়ণ ঘটানো হয়। পরপর দুইবার টাকার এই অবমূল্যায়ণ (devaluation in respect of the hard currency) ফলে টাকার মূল্য প্রায় শতকরা ২২.৮ ভাগ হ্রাস পেয়ে যায়। ভারত সরকার যখন বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তজার্তিক মুদ্রাভাণ্ডারের নির্দেশে জাতীয় স্বার্থের পক্ষে এই ক্ষতিকারক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে তখন ও মার্কিন সরকার ভারত সরকারকে super 301 প্রয়োগ করে এবং দেশরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর হস্তক্ষেপের ভীতি প্রদর্শণ করে চলেছিল। আর এই পরিস্থিতিতে বেকারদের চাকুরি, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা, শিল্প পরিচালনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের বিষয়গুলিকে সম্পূর্ণ ধামাচাপা দিয়ে রাখা হল। অধিকন্ত ৮ই জুলাই ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এক বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে জনগণকে শক্ত করে কোমর বাঁধবার পরামর্শ দেন এবং অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া, লাইসেন্স প্রথা বাতিল করা, বহুজাতিক কর্পোরেশণগুলির জন্যে ভারতের অর্থনীতির দরজা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা স্পষ্ঠ ভাষায় ঘোষণা করেন। স্বভাবতই, ভারত সরকারের এই অর্থনীতি শ্রমিক-কর্মচারী সাধারণ মানুষের জীবনে চরম বঞ্চনা অ দুর্দশা আনে এবং ফলস্বরুপ এই নীতির প্রতিরোধ ভারতের শ্রমিক আন্দোলন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই সর্বনাশাকর অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে ট্রেড ইউনিয়নগুলির স্পন্সরিং কমিটির আহ্বাণে ১৭ ই সেপ্টেম্বর'৯১ নয়াদিল্লির সপ্রু হলে যে জাতিয় কনভেশন অনুষ্ঠিত হল তাতে আই এন টি ইউ সি ও বি এম এস বাদে সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও জাতিয় ফেডারেশনগুলির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। অল ইন্ডিয়া স্টেট গর্বনমেন্ট এমপ্লিজ ফেডারেশন সহ বিভিন্ন জাতীয় ফেডারেশনগুলিও এই কনভেনশনে যোগদান করে। বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তজার্তিক মুদ্রাভান্ডারের সরাসরি নির্দেশে ও তাদের শর্তাবলী মেনে যে নয়া অর্থনীতি চালু হয় তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের লক্ষ্যে এই কনভেনশন বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে। কনভেনশন এই সর্বনাশা নীতির বিরুদ্ধে ২৯ শে নভেম্বর ১৯৯১ সারা ভারত ব্যাপী ঐক্যবদ্ধ ধর্মঘটের আহ্বান জানায়। অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ানের পক্ষ থেকে কনভেনশনের প্রস্তাবকে সমর্থন করে বক্তব্য পেশ করা হয়। এ আই টি ইউ সি - র পক্ষ্য থেকে ওয়াই ডি শর্মা আলচনা গুটিয়ে আনেন এবং সি আই টি ইউ - র এম কে পান্ধে সভাপতিমন্ডলীর পক্ষ থেকে সমাপ্তি ভাষণে ২৯ শে নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘটের প্রস্তুতির জন্যে রাজ্যে রাজ্যে কনভেনশন করা এবং সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের জাগরুক করার আহ্বান দেন। প্রস্তাবে সরকারের শিল্পনীতি ও অর্থনীতির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সরকারের ক্ষতিকারক দিকগুলির বিশ্লেশণ করা হয়। এই কনভেনশন ও তাতে গৃহিত প্রস্তাব ভারতে নয়া-উদারবাদী অর্থনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে, কারণ উদারনীতির বিরুদ্ধে এই প্রথম দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের আহ্ববান দেওয়া হয়। কনভেনশনে গৃহিত প্রস্তাবটির যথেষ্ট মূল্য আছে । এই কারণে যে এই প্রস্তাবে সরকারের নয়া উদারবাদী অর্থনীতি ও শিল্পনীতির সর্বানাশা দিকগুলির উন্মোচন করে শ্রমিক কর্মচারীদের নিকট এর প্রতিরোধের আহ্বান দেওয়া হয়। এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবটির বিশয় এখানে ইংরাজি তে তুলে দেওয়া হল।


The Declaration of the Convention

The All India Trade Union Convention against policies of the Government of India held in New Delhi on 17th September 1991 expresses its resolute opposition to the sweeping economic policy changes adopted by the Government of India in the interest of the Indian and foreign big business and multinationals under the pressure of the International Monetary Fund, which seriously endangers India's goal of building a self-reliant economy and exposing the country to neo-colonial exploitation. It is reprehensible that the Government did not disclose the conditionalities of the IMF to the Parliament, nor consulted the working class before announcing these policy measures.

The devaluation of the rupee to the tune of 20 percent will make imports costlier and country will have to export 20 percent more goods to earn the same quantum of foreign exchange. It would push up the prices of all commodities having import content and considerably reduce domestic consumption to meet the growing export obligations.

The Official spokesmen justified the devaluation on the plea of overcoming the balance of payment crises in the wake of the foreign exchange reserves reaching the rock bottom level. They tried to hide the fact from the people that the BOP crises was created due to the policies of import liberalization pursued by the Congress (I) Government during eighties which considerably increased the import bill and enhanced the adverse trade balance. Several non-essential luxury products like consumer durables were imported for the benefit of the upper strata of the society causing huge drainage of foreign exchange resources. India's foreign debt increased by four times during the eighties to a colossal amount of about Rs 2,00,000 crores which only underlines the reckless external borrowings throwing the Indian economy in the vortex of the foreign debt trap. To create a panicky situation, the Government of India mortgaged 67 tonnes of gold to the foreign banks.

The Industrial policy announced by the Narasimha Rao Government delicenced the industries and allowed the big business houses to freely invest in any industry of their choice. It would concentrate industry in certain areas leaving vast hinterland backward leading to uneven development of different regions making a mockery of the whole concept of planning in India. By removing all the ceilings of assets, the MRTP Act has virtually been dismantled opening the floodgates of the growth of monopoly capital in India. The unabashed permission granted to forieign companies to own 51 per cent equity capital in Indian companies will only increase the strangehold of the Multinational Corporations over the Indian Economy and India's Capital goods Industry. 100 per cent equity has been opened out for foreign companies who export all their products, which as past experience shows, is conveniently violated.

The threat posed by the Super 301 and Special 301 to the service and agricultural sectors and to the pharmaceutical Industry has considerably increased.

The welcome with open arms to all foreign technology, irrespective of whether it is essential and suitable to India's requirements and removal of all restrictions on engaging foreign technicians will cost India very dearly making redundant the established indigenous technology and manufacturing technological capability.

While Investment from NRI is welcome, it is necessary to exercise caution to ensure that concessions given to them are not misused.

The Privatization of Public sector undertakings on a big scale is now on cards threatening liqudation of several public sector units. Disinvestment of 20 per cent equity will make the matters worse. Private sector has been given full freedom to penetrate into the core sector of economy such as steel, energy, oil and heavy engineering while sick public sector units would be referred to BIFR to pave the way for their ultimate liquidation or handing over to the private sector. The non-availability of foreign exchange to several sector units will reduce their production capacities.

The 24 per cent participation permitted to the big business houses and multinationals in small scale industry will enable the monopoly houses to swallow the small units or control them as appendages of large business houses. In the name of technical collaboration the foreign companies will be allowed to control the small scale sector. Massacre of a large number of small scale units will come on the agenda when the new policy will be implemented in full swing. When already large number of units have been closed down and the Government has failed to reopen them, this will only aggravate the existing problem of closures and sickness in the economy.

The Railway Budget and the General Budget have been prepared under the shadow of IMF conditional ties. The fare and freight hike in the Railway Budget will impose heavy burden on common people. The General Budget instead of imposing additional direct tax on the Industry, on the rural and the urban rich, imposes crushing burden on the common people through the indirect taxation and deficit financing.

The basic thrust of the economic policy accentuates the orientation in favor of the elitist and the affluent section of the people accelerating the process of pauperization of the vast mass of the people.

The Proposed Exit Policy gives full freedom for the Capitalist to close down the unit at his sweet will and throw out of job large number of workers without any fault of theirs. It will further aggravate the already hugh unemployment in the country. The so-called relief in the name of rehabilitation or restraining will give only symbolic relief without any guarantee of job, making them totally unprotected from the depredations of the Capitalist class.

The new economic measures will bring unprecedented inflationary pressure on the Indian economy. Already the prices of essential commodities has gone to astronomical heights. The rate of inflation is projected to go upto 20 per cent which will push up the prices of essential commodities to astronomical heights. The loss of jobs of lacs of workers will lead to shrinkage of domestic market and cause further stagnation in economy.

The new policy will further result in more attacks on 'worker's living and working conditions and on their trade union and democratic rights.

The Convention urges upon the trade unions to fight for alternative policy measures to overcome the present critical situation through steps such as : reduction of all non-essential imports, mopping up of all black money and strong action against tax evaders, protection to small scale industry, introduction of genuine land reforms to generate more jobs in the rural sector, more taxation against larger industrial houses and monopolists, bring back to India foreign exchange resources kept abroad by the Industrial houses, improve the efficiency of our undertakings through genuine scheme of employees' participation in management etc. These measures will pave the way for advancing towards a self-reliant economy.

This Convention, therefore endorses the call given by the Sponsoring Committee of this Convention for an all India Strike to voice the protest of the Indian working class against these anti-national, anti-people and anti-working class economic policies and demand their reversal.

Accordingly, the Convention unanimously resolves to observe an one –day country wise industrial general strike o Friday, the 29th November 1991.It appeals to all sections of workers and employees in the Public sector, private sector, Central and State Government employees all over the country, to join this massive strike action on November 29.

In preparation of the strike, the Convention calls upon all the trade unions to jointly organize convention state wise, districtwise and at each important industrial centers of the Country.

The Convention further calls upon the trade unions and all sections of workers and employees to launch massive 'Jail Bharo' action all over the country on November, 18, 1991.

The Convention appeals to all other mass organizations of peasants, agricultural workers, students, youth and women and the patriotic and democratic sections of the people, and to all those adversely affected by the retrograde economic policies to support this massive countrywide action.

এই প্রস্তাবটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের শ্রমিক কর্মচারীরা ২৯ শে নভেম্বর এক অভূতপূর্ব ধর্মঘট সংঘটিত করলেন। ধর্মঘটের ফলে সারা ভারতের পাব্লিক সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর এবং সরকারী কর্মচারি সব ক্ষেত্রেই কাজকর্ম ঐ দিনের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ব্যাঙ্ক বীমা, সাধারণ বীমা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইস্পাত, খনি, বস্ত্র, ঔষধ, ইলেকট্রনিক, সড়ক পরিবহণ, হোটেল, দোকান ইত্যাদি সমস্ত প্রতিষ্টানের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখলেন। ১৭ ঐ নভেম্বর দিল্লি কনভেনশনে এ আই টি ইউ সি, সি আই টি ইউ, এইচ এম এস, এইচ এম কে পি, ইউ টি ইউ সি, ইউ টি ইউ সি (লেনিন সরণী), টি এই সি সি যেমন যোগদান করেছিল তেমনি অল ইণ্ডিয়া স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন সহ ৪০ টি জাতিয় ফেডারেশন যোগদান করেছিল। ফলে এদের সকলের আহবান ও প্রচেষ্টায় ধর্মঘট অত্যান্ত সফল হয়। রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা অধিকাংশ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় কর্মচারীরাও অনেক রাজ্যে ধর্মঘটে যোগ দেন। এই ধর্মঘটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল যে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়েত্ব শিল্পে শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বহু উচ্চস্তরীয় কর্মচারীরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও অসঙ্ঘঠিত শিল্পের শ্রমিকরাও ব্যাপক ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যদিও আই এন টি ইউ সি ও বি এম এস এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছিল, তদস্বত্বেও নীচুতলার তাদের সদস্যও ও শ্রমিকদের এই বিরাট অংশ ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিল। ভারত সরকারের আর্থিক নীতি আই এন টি ইউ সি ও বি এম এস বিরোধিতা করে নি তাদের শ্রেনীস্বার্থেই। কারণ এই দুইটি সংঘটন বুর্জুয়া শাসকশ্রেনীর স্বার্থবাদীই ছিল। এই সময়ের ট্রেড ইউনিয়ানের বা শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের চরিত্র , তাদের এবং তাদের নেতৃত্বের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গ্যান এবং চেতনার বিকাশের এর ধারা তখন কালমানে ৫০ বছর আগের থেকে অনেক ভাবে বিকশিত হয়েছে এবং আরো হবে। চেতনার বিকাশ এক উন্নত রুপ ধারণ করেছে। সাথে সংগ্রাম, আদর্শ, ণীতিগত অবস্থান, আন্দোলনের রুপ এবং ধারাবাহিকতা , ব্যাপকতা এবং তার চারিত্রিক গঠন এর সাথে সাথে শ্রমিক শ্রেণীর ট্রেড ইউনিয়ানের গুনগত পরিবর্তন এর বস্তুগত দিক টিকে ভালো ভাবেই প্রত্যক্ষ করা যায়। এখনকার সময় বা সমাজব্যাবস্থা থেকে প্রায় দুই দশক আগে ভারতের ট্রেড ইউনিয়ানের এরকম শৃংখালাগত বিকাশলাভ সেই সময়কার শ্রমিক শ্রেনীর নানাবিধ আন্দোলনের মাধ্যমেই টের পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে এই নির্বাচনের শেষে কেন্দ্রীয় সরকার তার একশ দিনের কাজের প্রকল্প এবং তারপরবর্তি কালিন বাজেট যে কোন শ্রেনীর স্বার্থ্য দেখবে তা বর্তমান ভারতের শ্রমিক শ্রেনীর একমাত্র স্বার্থরক্ষাকারী ট্রেড ইউনিয়ন সি আই টি ইউ নেতৃত্ব বুঝতে পেরে আগে ভাগেই তারা কেন্দ্রীয় অর্থমনন্ত্রীর কাছে দাবী সনদ পেশ করেছে। বর্তমান সি আই টি ইউ সভাপতি এম কে পান্ধে এবং সর্বভারতীয় সম্পাদক মহঃ আমিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী প্রনব মূখার্জ়ীর সাথেয় গত ৩ রা জুন ,২০০৯ তে দেখা করেন প্রি বাজেট আলোচনার জন্য এবং একগুচ্ছ দাবী সনদ তাঁরা পেশ করেন। বর্তমান সারা বিশ্বে আর্থনৈতিক মন্দা সারা দেশের গরীব-সর্বসাধারনের জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলেছেন। সাধারণ মানুষের জ়ীবনযাত্রার বেহাল অবস্থা। ভারত সরকার বৃহৎ শীল্পপতি এবং করপরেট সংস্থার জন্যে অনেক প্যাকেজ ঘোষনা করেছে (bail out packages) কিন্তু সাধারণ মানুষের জ়ীবন যাত্রা সেই তিমিরেই। সবথেকে কষ্ট (আর্থনৈতিক কষ্টে) আছেন শ্রমজীবি মানুষ। তাঁদের রিলিফের জন্যে কোনো কর্মসূচি সরকারের নেই। গত ২০০৮ এর সেপটেম্বর মাসের মধ্যে ১৫ লক্ষ্য শ্রমজীবি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ভারত সরকারের তাদের ত্রানের জন্যে সর্বাগ্রে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত। বিশ্বায়ন , উদারীকরণের ফলের আমাদের দেশের সাথে সারা বিশ্বে আর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। আমাদের দেশের ৪৮ জন বৃহৎ পূঁজিপতি জাতিয় আয়ের এর চতুর্থংশ নিয়ন্ত্রণ করছে অথচ দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষের নির্ভর করতে হয় দৈনিক ২০ টাকা রোজগারের ওপর। দেশের প্রচুর শ্রমজীবিমাণুষ এবং বেকার আত্মহত্যা করছে। বিশ্বের দ্বিতিয় বৃহত্তম আর্থনৈতিকবিকাশীল দেশের এই আর্থণৈতিক বিকাশের ফল (তথাকথিত trickling down effect) নীচু তলার মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।



এই অবস্থায় দেশের সি আই টি ইউ কেন্দ্রীয় কমিটি দেশের চালনাকারীদের কাছে সঠিক অবস্থার মূল্যায়ণের দাবী তে কিছু প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাব গুলি ইংরাজী তা তুলে দেওয়া হলো।

  • Effective measures to arrest the spiraling price rise of food and other essential commodities; Universalize and strengthen the Public Distribution System. Rationalize taxes/duties of Petroleum Products, like reduction of excise duty on diesel vis-à-vis ATF;
  • Review the basis of Compilation of Consumer Price Index Number (Base 2001 = 100) and take corrective measures;
  • Ensure at least 25% allocation of Government revenue for social sector, covering health, education and housing, Integrated Child Development Scheme (ICDS) to be universalized as directed by the Supreme Court. Allocation of Rs 12000 crore minimum for this purpose out of which Rs 2500 crore should be specifically allocated for improvement of the conditions of anganwadi workers;
  • Increase annual plan expenditure to 10 % of India's current GDP (Currently it is below 5%);
  • Make massive public investment to augment agricultural production; Ensure remunerative prices for agricultural produce through effective procurement scheme;
  • Review Unorganized sector Worker's Act, which in its present form does not have any funding provision, factoring in the unanimous inputs of the trade unions on funding and Universalization of coverage, with a budgetary allocation to the extent of 3 % of GDP;
  • In view of the ongoing huge loss of jobs caused by the present global financial crises , immediately withdraw the ban on recruitment in government departments, autonomous institutions and PSUs;
  • Bailout/stimulus package to industry should be conditioned with strict ban on retrenchment, lay-off and wage reduction;
  • Requisite budgetary allocation for addressing the problem of sickness and crises in traditional industries such as jute, Textile, Plantations, Handloom, Coir, Beedi, Khadi & Village industries etc;
  • Expedite revival of sick CPSUs like Hindustan Fertiliser Corporation, Fertiliser Corporation of India, Hindustan Cables, Hindustan Photofilms Ltd, HMT, Burn Standard etc through necessary budgetary support and financial restructuring;
  • Hike the interest rate on SDS to at least 9.5 % to roll back the reduction in interest rates on Provident Funds and small savings since 2005-06; All savings on social security account and the superannuated senior citizens' savings in particular should be given differential treatment through higher interest rate; Enhance the coverage under EPF Act covering all wage earners; Hike the income limit to Rs 10,000 per month on par with that in the ESI scheme; the PF and Pension fund should not be handed over to private fund managers and so called Asset management companies.
  • Enhance the exemption limit for income tax to Rs 2 Lakh per annum. Rescind the taxation for availing of Company – quarters and fringe benefits extended to workers. Extend the benefit of standard deduction to pensioners and retirees;
  • No disinvestments of profit making, strategically important and potential viable units to make up budgetary deficit. Expansion of CPSUs utilizing its vast reserves and surplus of more than RS 4 lac crore. Profit making PSUs including Navaratna PSUs should approach debt market because of their high equity base instead of Capital market for resource mobilization;
  • To ensure strong regulation of financial sector, halt any further dilution of government equity in public sector banks. Strengthen public sector in banks and insurance. Ensure strict adherence to priority sector lending norms;
  • Increase the tax-GDP ratio by taxing the rich and affluent and by increasing tax coverage;
  • End the 'fiscal profligacy' of showering scores of incentives/concessions to the corporate industrial houses, MNCs, SEZs etc. Review the same vis-à-vis employment;
  • Review the Double Taxation Avoidance Agreements to curb speculative profiteers avoiding tax;
  • Stop participatory notes in share market transactions;
  • Enhance the rate of personal and corporate income tax for those in the higher income brackets;
  • Introduce wealth tax in view of the enormous accumulation of wealth by a tiny segment of the population;
  • Set targets for recovery of huge tax arrears and bank loan defaults by the big business borrowers;
  • Reintroduce the long term Capital gain tax;
  • Increase the rate of Securities Transaction tax;
  • Increase the tax on luxury goods and imports;
  • Impose tax on lavish spending on ostentatious consumerism and social functions;
  • Take aggressive measures to unearth black money within and outside the country;
  • Bring under the service tax net ITES and outsourcing sectors, educational institutions, health services and other service outfits run on commercial basis.

এই প্রস্তাবে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয় দেশে রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার বিলগ্নীকরণের সর্বনাশা দিকগুলি। এই বিলগ্নিকরণের সাথে' জনগনের মালিকানা' র নাম নিয়ে সরকার যা ভন্ডামি করছে, তার নেতিবাচক দিক এবং চরম সর্বনাশা দিক গুলিকে উল্লেখ করা হয়। এখানে বলা দরকার যে সরকার জনগনের সামনে পাব্লিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজের রিপোর্ট টিকে তুলে না এনে, অন্য বিভ্রান্তিকর তথ্যে সাধারণ মানুষের হাত তালি কুড়োবার চেষ্টা করছে। পাব্লিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ বা রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার মালিক যখন সরকার তখন তার মানে দাঁড়ায়, জনগনি তার মালিক। কিন্তু এই সরকার পক্ষ্য যেহেতু আই এম এফ এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তখন তাঁরা তাদের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। এখানে বোঝা দরকার যে দেশের ০.৭ % লোক সেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করে এবং গত সেপটেম্বর ২০০৮ সাল থেকে দেশে সাধারণ মধ্যবিত্ত্ব আর শেয়ার বাজারের ধারেবাড়ে হচ্ছে না, কারণ গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল কোমিঊনিটির দানবিক চেহারা সাথে দৈন্যতার রূপ তারা টের পেয়ে গেছে। বাকি থাকলো দেশে ও বিদেশের বৃহৎ পূঁজিপতি এবং আন্তজার্তিক লগ্নিপূঁজি যাঁরা আজ এই সঙ্কটে ধুঁকছে। তাঁদের সেই ফিনান্সিয়াল অক্সিজেন দেবার জন্যে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টি সাথে তাদের নব্য জুনিয়ার পার্টনারদের এত দৌড় ঝাঁপ। লোকসভা নির্বাচনের পর তাই কর্পরেট মিডিয়া এবং তাদের ধামাধারী সংবাদমাধ্যমের তাই এতো উল্লাস। শেয়ার বাজার ফুলে ফেঁপে ঊঠছে। স্বল্পবাজেট ঘাটতির দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থা গুলির বিলগ্নীকরণ চাইছে কেন্দ্র এবং তা করার জন্যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দি ইকনমিস্টের খবর সরকার ৪৯ % শেয়ার বেচে বাজার থেকে ৪.৯ লক্ষ্য কোটি টাকা তুলে ঘাটতিকে এড়াতে চাইছে। কিন্তু এর সুদুপ্রসারি প্রভাব এবং পরিনাম কি হবে তা আমাদের দেশের পরিচালকেরা যেনেও না যানার ভান করে বসে আছেন। পাব্লিক সেক্টর সার্ভে বলে গত আর্থিক বছরে সরকারের কোষাগারে রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার অবদান ১২৪০০ কোটি টাকা যা আগের আর্থিক বৎসরের থেকে ৪০০০ কোটি টাকা বেশী । জনমূখী উন্নয়নমূলক কাজে বাজেট ঘাটতি হলেও সেই ঘাটতি টি বাজার থেকে স্বল্প মেয়াদী ঋণ নিয়ে সরকারী কোষাগার থেকে সঞ্চিত উধ্রত লাভের অঙ্ক থেকে তা অনায়াসেই শোধ করা যায়। কিন্তু রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থা বিলগ্নিকরণ করলে সেই অর্থের যোগানের ভরসা অনেক কমে যায়। বছরের পর বছর ধরে কেন্দ্রীয় রাস্ট্রায়েত্ব সংস্থা গুলিতে বিপুল পরিমাণ উদ্ধৃত অর্থ পড়ে আছে। যে অর্থ কিন্তু উৎপাদনের কাজে লাগানো হচ্ছে না। পাব্লিক এন্টারপ্রাইজ সার্ভে উল্লেখ করেছে যে ২০০৭-০৮ সালে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার মোট সঞ্চয় এবং সারপ্লাস অর্থের পরিমাণ ছিলো ৪.৮৫ লক্ষ্য কোটি টাকা। অপরদিকে ২০০৭-০৮ সালে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থাগুলিরতে মোট প্রকৃত বিনিয়গের পরিমান ২০০৬-০৭ সালের তুলনায় ১০.১৬ % বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সঞ্চয় ও সারপ্লাসের পরিমাণ বেড়েছে ১৬.৫৬ %। পরিচালনগত স্বশাসন বা managerial autonomy না থাকার জন্যে এই সংস্থা গুলি তাদের সম্প্রসারণ , আধুনিকিকরণ এবং বহুমুখিকরণের জন্যে ঐ সঞ্চয়কৃত অর্থ নিয়োগ করতে পারছে না। যদি কেন্দ্রীয় রাস্ট্রায়েত্ব সংস্থাগুলির সম্পদ কাজে লাগানো হতো তাহলে তাদের শেয়ার বিক্রির পথের চাইতে বিশষ লভ্যাংশ পাওয়ার একটা পথ পাওয়া যেত (resource generation and mobilization to cater to the budget deficit)। ২০০৬-০৭ সালের কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থা গুলির কার্যকারি করের হার একত্রিত ভাবে ছিলো ৩০.৭৮ % এবং বেসরকারী ক্ষেত্রের কোম্পানিগুলির হার ছিলো যথাক্রমে ১৯.৫ % ( ২০০৮-০৯ স্টেটমেণ্ট অন রেভেনিউ, receipt budget অনুসারে)। যখন বেসরকারী ক্ষেত্রের কার্যকর কর হার নির্ধারিত কর হারের থেকে ৩৩.৬৬ % কম হয়েছে বিভিন্ন কর ছাড়ের মাধ্যমে, তখন কেন কিছু কর ছাড় প্রত্যাহার করে বেসরকারী কোম্পাণির ক্ষেত্রে বেশী কর আদায় করা হচ্ছে না? সমাজ কল্যাণমূলক কাজে অর্থসংস্থান করা উচিত বেসরকারী কোম্পানী এবং ধনিক শ্রেনীদের কাছ থেকে আরো বেশী কর আদায়ের মাধ্যমে। সংবাদমাধ্যম এর কৃতিত্বে মনমোহিনি কৃপায় এইসব তথ্য সর্বাসাধারনের কাছে আনা উচিত এবং বামপন্থীদের এই তথ্য সংক্রান্তনীবিড় প্রচার করা উচিত। বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ানের সভ্য এবং নেতৃত্বের অনুধাবন করা উচিত যে এখন নেবার সময় নয়, কিছু দেবার সময়, গরিব এবং সর্বসাধারণকে, শ্রমিক শ্রেনীর স্বার্থরক্ষার্থে। এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন এবং পার্টিরসামনে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে । প্রথমত, দেশে এবং জগৎজোড়া সঙ্কটজনিত নতুন পরিস্থিতির চরিত্রের তত্বগত ও ব্যাভারিকভাবে সঠিক মূল্যায়ন কি পার্টি এবং ট্রেড ইউনিয়ান নেতৃত্বের পক্ষে সম্ভব হবে এবং তা শাখা স্তরে নিয়ে যেয়ে নতুন পরিস্থিতির সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে? দ্বিতীয়ত, এই নতুন পরিস্থিতির মূল্যায়নের ভিত্তিতে পার্টি এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন কি পুরাতন এবং যা আজ এই নতুন পরিস্থিতিতে মোটামুটি অচল- তার পরিবর্তে সময়োপযোগি ট্রেড ইউনিয়ন, ছাত্র-যুব, কৃষক আন্দোলনের নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারবে এবং সেই নতুন কৌশল শাখা স্তরের শ্রমিক-ছাত্র-যুবদের চেতনায় প্রবেশ করাতে পারবে? তৃতীয়ত এবং যা খুব জরুরি- যখন সরকার, মালিকপক্ষ্য, বিশ্বব্যাঙ্ক, আই এম এফ, সংবাদমাধ্যম- এক যোগে কমিউনিষ্টদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তুলেছে তখন তার মোকাবিলার জন্যে উপযুক্ত রনকৌশল অবলম্বণ করা এবং শ্রমিক শ্রেনী এবং দেশের সর্বসাধারণের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য কি প্রতিষ্টা করা যাবে? ভারতের শ্রমিক শ্রেনীর সংগ্রামের এবং চিন্তা , -চেতনা, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গ্যানের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। পরিমানগত এবং গুনোগত ভাবেই। সারা পৃথিবির বর্তমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিশ্লেসন করে প্রমান হয় লেনিনের সেই বিখ্যাত উক্তির যথার্থতা, " মার্কসবাদ সত্য কারণ তাহা বিগ্যান"। নেতৃবৃন্দের এই গুনগত পরিবর্তন এর সময় টাকে বিশেষ ভাবে নজর ও বিশ্লেসন করা উচিত । না হলে বিপ্লব মুখ থুবড়ে পড়বে। পরিমানগত পরিবর্তন হলো অথচ গুনগত পরিবর্তনের সময় টাকে ঠিক মতন অনুধাবন করা গেলো না, বোঝা গেলো না, তাহলে সেটি শ্রমিক শ্রেনীর আন্দোলনকে দিক ভ্রষ্ট করবে, দেশের সাধারণ মানুষ, বুর্জুয়া সংবাদমাধ্যমের " ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেপ্টবা opinion" এর কৃপায় বিভ্রান্ত ও চেতনা বিকাশে দিকভ্রষ্ট হবে, গঠনমুলক পরিবর্তন এর সাথে ধ্বংসাত্বক পরিবর্তনের রাস্তা গুলিয়ে ফেলবে। বিশ্বায়ণের আক্রমণ কেবলমাত্র আর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সাংস্কৃতিক জগতকেও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন দারূনভাবে প্রভাবিত করছে। সাথে প্রভাবিত করছে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবি মহল কে। তৈরি করছে আমাদের দেশে তাদের পচ্ছন্দসই "সুশীল গোষ্টি" এবং তাদের মুখ ঢেকে দিচ্ছে মেকি এবং অতি বামপন্থার মুখশ দিয়ে। মার্কিন দেশউন্নত উতপাদন শীল দেশ , যে সব কিছুর উতপাদনেই বিশ্বের বাজার দখলের শীর্ষে। তার মধ্যে ওনারা অপিনিয়ান বা দেশের মানুষের নিজ্বস্ব বোধবুদ্ধি, চিন্তা - চেতনা বিকাশের সব দায়িত্ব হাথে তুলে নিয়েছেন। প্রত্যাক টা দেশের জনমত তৈরি করার দ্বায়িত্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বৃন্দ করায়ত্ব করার চেষ্টায় আছে। তাই সব কিছু ম্যানুফ্যাকচারিং এর বিশ্বায়নেরসাথে এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের আরেক অপ-প্রচেষ্টা, জনমত তৈরি এবং তার প্রধান দ্বায়িত্ব নিয়েছে বাজারি কিছু সংবাদমাধ্যম। যাতে দেশ দখল করার আগে আমাদের মত কিছু বুদ্ধিজীবিদের মস্তিষ্ক বিকৃত করা যায়। সাথে সাম্রাজ্যবাদীদের তৎপরতা থাকে যেকোনো ভাবে ইতিহাস এর প্রকৃত ঘটনা র বিকৃতি ঘটিয়ে জনমত তৈরি করার। এই ফর্মূলাতে কমিউনিষ্ট দের জনসমক্ষে কাটগড়ায় দার করানো এবং নিজেদের তৈরি জনমতের ভিত্তিতে কমিউনিষ্ট নিধন যজ্ঞ চালানো। এরা কমিউনিষ্ট দের হত্যা করার লিষ্ট তৈরি করে, ঠিক যেমন তৈরি করেছিলেন হিটলার। ব্রীটিশ দ্বীপপুঞ্জে ওনার তথাকথিত "গেস্টাপো" রাজ্য তৈরি করার ক্ষেত্রে কমিউনিষ্ট দের হত্যা করা জন্যে লিস্ট তৈরি করেছিলেন। কমিঊনিস্ট নিধন যজ্ঞ শুরু হয়েছিলো মানুষকে ভ্রান্ত করে ক্ষেপিয়ে এবং পরবর্তি কালে আক্রমন নেমে এসেছিলো সাধারণ মানুষ, চিন্তাশীল ব্যাক্তি, প্রগতিশীল সাহিত্যিক এবং দার্শনিক দের ওপরেও। চার্চিল ও এই নিধন যজ্ঞের লিস্টের বাইরে ছিলেন না। মেকি বামপন্থীর মুখোশ পরেছিলেন হিটলার। তৈরি করেছিলেন national socialist party যার সঙ্কক্ষিপ্ত অর্থ nazi। সেই মেকি বামপন্থার মুখোশ পরে মানুষকে সাময়িক বিভ্রান্ত করেন হিটলার এবং মানুষকে এই ওপিনিয়ান ম্যানুফ্যাকচারিং এর শিকার বানান। পরে মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং এমন পরিস্থিতে হিটলার আত্যহত্যা করতে বাধ্য হন। মানুষ সচেতন হয়ে শাস্তি দেন মুসোলিনি কে। ভারত চিন যুদ্ধের সময়তেও দেশের কমিউনিস্টদের সংবাদ্মাধ্যম এবং তৎকালীন কংগ্রেস জনমত তৈরি করে , কাঠগড়ায় দাড় করায়। ভারতিয় কমিউনিস্টদের তখন বলা হতো চিনের দালাল বা পরবর্তিকালে পাকিস্তানের দালাল।

সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের মুল দর্শন হলো- মুনাফা এবং আরও মুনাফা বা অর্থ এবং আরো অর্থ। এক কথায় যাকে বলে অর্থললুপতা। যেমন শিক্ষার বেসরকারিকরণ বা চিকিৎসার বেসরকারীকরণ। এর সরল অর্থ শিক্ষা সেই- ই পাবে যে শিক্ষার জন্য শিক্ষা ব্যাবসায়ীকে মুনাফা সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে। শিক্ষা এখন সার্বজনীন নয়- শিক্ষা বিক্রয়যোগ্য সামগ্রী, চিকিৎসাও বিক্রয়যোগ্য সামগ্রী, কৃষকের জন্যে চাষের জলও বিক্রয়যোগ্য সামগ্রী- এক কথায় স্বাস্থ্য - শিক্ষা থেকে চাষের জল, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ ইত্যাদি সব কিছুই হবে মুনাফা নির্ভর। বিশ্বায়নের এই পর্বে পুঁজিপতিদের একটাই স্লোগান- আরো মুনাফা চাই- চাই মুনাফার পাহাড়। এই মুনাফালোলুপতা বা অর্থলোলুপতা এক প্রবল জোয়ার সৃষ্টি করছে। তার ফলে জন্ম নিচ্ছে স্বার্থন্ধতা ও আত্ম-সর্বস্বতা। বহু মানুষ যুগ সঞ্চিত মানবিক মূল্যবোধগুলি হারিয়ে ফেলছে। এই মুনাফা লোলুপতা সমষ্ঠিকে করে দিচ্ছে অমানবিক। তার ফলে বিশাল অংশের মানুষের মন থেকে সুন্দর ও নম্র গুনাবলীর অবসান ঘটিয়ে দিচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে তাই ছেয়ে ফেলেছে জঘন্য দূর্নীতি, অনায়াসে খুনোখুনি, যৌনতা ইত্যাদি মানুষের অন্ধকারতম পাপাচারগুলি। প্রযুক্তির এই অসাধারণ প্রগতির যুগে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন টি ভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি মাধ্যপমে যে সংস্কৃতি প্রচার করা হচ্ছে তা হচ্ছে এক অর্থলোভী স্বার্থ সর্বস্ব ও যৌনতা সর্বস্ব সংস্কৃতি- যে সংস্কৃতি খুন, জখম, যত্রতত্র বলাৎকার ইত্যাদিতে ভরপুর। মানব প্রগতির পথে এই সাম্রাজ্যবাদী অবক্ষয়ী সংস্কৃতি এক দারুন বিপদ। সুস্থ- সবল সংগ্রামের পথে এক দারুন বাধা। বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না- এই সংগ্রামকে বিকশিত করতে হবে সংস্কৃতির স্তরেও যাতে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ সমাজের যা কিছু সুন্দর, যা কিছু সুস্থ, যা কিছু মানবিক তাকে ধবংস করতে না পারে। তাই পরিবর্তনের তত্ব্য প্রাসঙ্গিক মানুষের চেতনার বিকাশের জন্যে যাতে একটি সুন্দর , সুস্থ্য, আপসহীন, হিংসাহীন সমাজব্যাবস্থা তৈরি হয়। এই সমাজব্যাবস্থা তৈরি দ্বায়িত্ব মানুষকে নিতে হয়, ইতিহাস তাই প্রমান করে এবং বর্তমান সমাজব্যাবস্থায় কমিউনিস্টদের মানুষের মধ্যে এই চেতনার বিকাশ ঘটানতে নির্দিষ্ট দায়িত্ব এবং ভূমিকা জরূরি। কমিউনিস্টদের এগতে হয় তাই উথান পতনের মাধ্যমে, আভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত নানান দ্বন্দে। কয়েকদিন আগে রাজ্যে বামপন্থীরা ১৫ টি আসনে জয়লাভ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে দেখিয়ে দিয়েছে সিঙ্ঘদুয়ারের আড়াল থেকে কেউ কেউ নিজের সরকারের বিরুদ্ধে চিৎকার করে বিরোধিদের উৎসাহ দেবার নেতৃত্ব দিলেও কিংবা সি আই এ - র বার্লে এন্ড কোম্পানী কলকাতার নানা হোটেল, বসতবাড়ী বা ভাংগরের বাগানবাড়ীতে নিজেদের নিজেদের তৈরি তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের অথবা বিভিন্ন ধর্মীয় সংঘঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে গোপন শলাপরামর্শ করলেও বামপন্থীরা এখনো ১ কোটি ৮৫ লক্ষ্যের ও বেশি ভোট পাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই এই জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মাপকাঠিতে এর বিচার করলে ভূল হবে। গত পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচণ ছিলো বামপন্থীদের কাছে সবচাইতে কঠিন লড়াই। এর আগেও পশ্চিমবঙ্গে ও কেরালায় বামপন্থীদের হারাবার জন্যে আমেরিকা কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে। ময়নিহানের রচিত 'A Dangerous Place" গ্রন্থটির স্বরণ করা যেতে পারে। সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা এধরণের একা কৃতদাসসূলভ সরকার আমাদের দেশে ছিলো না। জওহরলাল নেহেরূ ও ইন্দিরা গান্ধীর স্বাধীন বিদেশ নীতি থেকে সরে এসে সোনিয়া- মনমোহনের নেতৃত্বে কংগ্রেস- জোট সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাই নির্বাচণের আগেই তারা মার্কিণীদের কাছে ভারতের বাজার উপঢৌকন দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলো। আর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে এই নির্বাচন ছিলো বাঁচা-মরার সমস্যা। সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির নিয়ম মেনেই অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক মন্দায় মার্কিনীদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। প্রতিদিন ছাঁটাই হচ্ছে শয়ে শয়ে কর্মচারী। দেশের ভেতরে বিক্ষোভ তীব্রতর হচ্ছে। ইরাক, আফগানিস্তানের পর এই মুহূর্তেই নতুন করে যুদ্ধ বাধাবার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও অস্ত্রহীন যুদ্ধে ( applying and adopting the policy of hate campaign) ভারতের বাজার দখল করাই ছিলো মূখ্য উদ্দেশ্য। 'ঘৃণাজর্জ্রিত প্রচার-যুদ্ধ' বর্তমান সাম্রাজ্যবাদের একটা বড় হাতিয়ার। এর জন্যে নানা নামে নানা ধরনের টি ভি চ্যানেল ও ওয়েবসাইট খোলার ব্যাবস্থা করা হয়। শ্রেনী বিভক্ত সমাজে কেউ শ্রেনী নিরপেক্ষ্য নয়। নিরপেক্ষ্যতার মুখোশের আড়ালে নানান এজেন্সী বা বুদ্ধিজীবি গোষ্টী সাম্রাজ্যবাদের হয়ে কাজ করে। রাজনৈতিক বা অন্যান্য স্বার্থপূরণের উদ্দেশ্যেই এই গোষ্টীগুলি কাজ করে এইধরণের। সঠিক তথ্যকে চাপা দিয়ে ক্রমাগত মিথ্যা ও বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করে কখনো কখনো সাময়িক ভাবে মানুষকে ভূল বোঝাতে সক্ষম হয়। আশির দশকে নিকারাগুয়েতে ড্যানিয়েল ওরতেগার সরকারের পতনের উদ্দেশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রেগানের ইরান-কনট্রা ষড়যন্ত্রের জন্যে আমেরিকাকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে তিরষ্কৃত হতে হয়েছিলো। কিন্ত ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ওরতেগার সান্দিনিস্তা দলের বিপুল জয় সম্বন্ধে কারো মনে কোনো সন্দেহ ছিলো না। অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে চরম অসন্তোষ ছিলো সর্বত্র। দেশী- বিদেশী সমস্ত প্রাক- নির্বাচনী সমীক্ষায় সান্দিনিস্তার জয় অবশ্যম্ভাবী বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উলটো ফলাফলে নোয়াম চামস্কির মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এই সব ষড়যন্ত্রের নানারকম পোশাকী নাম দেওয়া হয়, যেমন যুগোস্লাভিয়ায় ২০০০ সালে 'বুলডোজার- বিপ্লব' এর নামে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো। কোথাও কোথাও রঙ্গীন (কালার) বিপ্লব নামেও কাজ করা হয়ে থাকে। জর্জিয়ায় ২০০৩ সালে বিপুল ভোটে জয়ী সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্যে 'গোলাপ- বিপ্লব' ( কিছুদিন আগে এই রাজ্যে মোমবাতি জ্বালানো আন্দোলনের মতন), ২০০৪-০৫ সালে ইউক্রেনে কমলা বিপ্লব, ২০০৫ সালে কির্গিস্তানে 'টিউলিপ - বিপ্লব' ইত্যাদি নামে ষড়যন্ত্র হয়েছে। চীনের তিয়েন-এন-মান স্কোয়ারের ঘটনাতো সারা বিশ্ব জানে। উল্লেখ্যে বিষয় যে এই সমস্ত ষড়যন্ত্র ঘটানো হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী মদতপুষ্ট নানান এন জি ও -র মাধ্যমে। শয়ে শয়ে এন জি ও মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের জমায়েতের মাধ্যমে কয়েকটি ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য চরিতার্থকরতে পেরেছে। আমাদের দেশেও প্রায় লক্ষ্যাধিক বিদেশী মদতপুষ্ট এন জি ও তৎপরতার সাথে তাদের কাজ করে চলেছে। এবং পশ্চিমবঙ্গে এন জি ও র সঙ্খ্যা প্রায় ১০ হাজার। সদস্য সঙ্খ্যা প্রায় কয়েক লক্ষ্য। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মায়ায় বশীভূত কংগ্রেস, তৃণমুল, বি জ়ে পি এবং প্রচার জগতের প্রায় গোটা অংশ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা কবে সচল ছিলো এদের কাছে? ভারতের সামনে বড় বিপদ হলো, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি, বৃহৎ শিল্প পরিবার এবং প্রকান্ড প্রচার জগৎ মার্কিন কীর্তনে দেশ কাপাচ্ছে, যখন যুগোস্লাভিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, গাজার উপর আগ্রাসনের দগদগে ক্ষত পৃথিবীর সামনে স্পষ্ট; যখন বুশ আমলের হাইড আইনে মার্কিন বিদেশ নীতি ভারত মেনে নিতে বাধ্য, অর্থনৈতিক নীতি এবং প্রতিরক্ষায়ও ভারতকে হতে হবে মার্কিন অনুগামী। এমন সাম্রাজ্যবা- তোষনেও কোনো সাধারণ আমেরিকান লজ্জা পাবে। পশ্চিমী সংবাদসংস্থা বি বি সি, সি এন এন, এন বি সি, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ইত্যাদি মার্কিন বর্বরতার উচ্চ-নিনাদ প্রশংসা ও মানবিক ব্যাখ্যায় সদাব্যাস্ত। বুঝতেই হবে যে তারাও জীবিকার দাস। শয়তান - রাস্ট্র নাম দিয়ে অনেক দেশে চলে সামরিক আগ্রাসন। মানবাধিকার রক্ষায় কর্মিদের বলা হয় সন্ত্রাসবাদীদের চর, গনতন্ত্রপ্রিয় নিরীহ মানুষকে হত্যা করে তাদের আখ্যা দেওয়া হয় সন্ত্রাসবাদী, গেরিলা, ঠান্ডা মাথায় খুন করে বলা হয় সংঘর্ষে মৃত্যু, শান্তিপ্রিয় মানুষকে সামরিক বাহিণী দিয়ে উৎখাত করে বলা হয় শান্তিকরণ প্রক্রিয়া। এই প্রচারের ভারতিয় মক্কেলরাও একই পদ্ধতি অনুকরণ করে চলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় একহাজ়ার মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আছে। ভারত মহাসাগরের দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপ থেকে চাগোসিয়ান জনজাতিকে সামরিক বাহিনী দিয়ে উৎখাত করে বিরাট সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে। ভারত কে মার্কিন কর্তৃত্বের বিশ্বস্ত সহায়ক হিসেবে বেঁধে ফেলেছে আইনি সর্তে, চুক্তিতে, আর্থিক ও সামরিক দায়বদ্ধতায়। ভারতের পক্ষে বিপজ্জনক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি আনুগতের, বংশবদতার নীতি। দুনিয়া নাকি বদল হয়েছে, হালফিলের ভাষায় 'পরিবর্তন' হয়েছে। উর্ধগতি না অধোগতি- সেটা দেখা প্রয়োজন। হতে পারে আমেরিকা বর্তমান দুনিয়ায় আর বেশী আগ্রাসী, আরো বেশী কর্তৃত্বকারী - এই অধোগতি পরিবর্তনটাই বাস্তবতা যখন, তাই মেনে নিয়েছে সকলে। এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার উপদেশ এর ভার তাই মনমোহন সিং এবং আনন্দবাবু সহ প্রচারজগতের। সাম্রাজ্যবাদ- বিরোধিতা অচল হয়নি দেশপ্রেমিকদের কাছে বরং শান্তি ও স্বাধিনতাকামী মানুষের কাছে তা আরো সচল। সাম্রাজ্যবাদীদের নির্দেশিত আর্থিক নীতি থেকে নতুন কেন্দ্রীয় সরকার যেন না সরে আসে, বরং আরো বেশী সেই নীতি চাপিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের উপর, তার জন্যে প্রচারজগৎ এবং আনন্দবাবুরা কোঁমর বেঁধে নেমে পড়েছে। ২৬ শে মে আনন্দবাজার লিখছে " বামপন্থীদের বাধা হইতে মুক্ত নতুন সরকারের নিকট সংস্কারের প্রত্যাশা বিপুল। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার বিল্গনীকরণ জরুরী... পেট্রোলিয়াম জ্বালানির মূল্য এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে আসা প্রয়োজন। বাজার যে পথে চালাইবে, দাম ও সেই পথে চলিবে- ইহাই অর্থনীতির স্বাভাবিক ও ন্যায্য যুক্তি।" কিন্তু বাজার চালায় কে? আনন্দবাবুরা নিরুত্তর কেনো? ডুব দিয়ে জল খেলে শিবের বাপ ও জানতে পারে না। নতুন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী প্রথম দিনেই বলে দিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণের বাইরেই থাকবে পেট্রোল- ডিজেলের দাম। স্বাভাবিকভাবেই সব কিছুরই দাম নিয়ন্ত্রণহীন হইবে এবং স্বাধারণ মানুষের জীবন আরো নিষ্পেষিত হউক, তাহাতে আনন্দবাবুদের কি এসে যায়, আর মনমোহনী সরকারের বা কি এসে যায়। দামে হাঁসফাস করিবে মানূষ এবং মনমোহোনী সরকার সব দায় ঝাড়িয়া ফেলিয়া সব দোষ তখন চাপাইবেন তাহাদের মূল অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় নির্দেশিত বাজারেরউপর। "জয় হো মার্গারেট থ্যাচারজয় হো টিনহা (TINHA)পদ্ধতি, জয় হো রেগান ও বুশ বাবা"( আমাদের দেশের নতুন বাবা সংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন)। মানুষ মরুক দোষ বাজারের, এই হোলো কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন উদারনীতি। এটাকেই চালানো হচ্ছে ন্যায্য যুক্তি হিসেবে। মানুষের যুক্তি নয়, এই যুক্তি সংখ্যাগরিষ্ট মানুষখেকো বৃহৎ পূজিপতিদের 'ন্যায্য' যুক্তি। অথচ শিক্ষা, চিকিৎসা, রোজগার ও খাদ্যের অধিকার দান ও রুপায়ণ কংগ্রেস ও 'বামপন্থী' তৃনমূল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পরিবর্তণ কে না চায়। এটা স্বরণ করিয়ে দিলে তথাকথির পরিবর্তণ ওয়ালাদের অস্বস্তি বাড়ে। কংগ্রেস ফেল করেছে বারবার, আবার ফেল করলে (করবেও) প্রতিশ্রুতি স্বরণ করিয়ে দেবার অপরাধে তখন মাতব্বরেরা আবার নতুন নতুন ছকে পুরোনো কৌশলে বামপন্থীদের চোদ্দপূরূষ উদ্ধার করবে। টর্নেডো, হারিক্যান, ক্যাটেরিনা,টুইস্টার, বিজলি বা আইলার মতন ঘূর্নিঝড় সারা পৃথিবীতে চলতেই থাকবে এটাই নিশ্চিত।


বর্তমানে বিশ্ব পূঁজিবাদী ব্যাবস্থার প্রবক্তারা উল্লাসে ফেটে পড়েছেন ভারতবর্ষের এই লোকসভা নির্বাচণের ফলাফলের নিরিখে। আর্থনৈতিক মন্দায় জরাজীর্ন পূজিবাদী আর্থনৈতিক ব্যাবস্থার চরম পর্যায়ে, লগ্নীপূজি মারাত্মক সংকট জনক অবস্থায় প্রতিয়মান। এই নির্বাচনের ফলে, এই লগ্নীপূজিকে বেশ কিছু মাত্রায় জীবনদায়ী অক্সিজেন দেবারযে চেষ্টা হবেএই চিন্তা সঠিক। ্তাই এই লগ্নিপূজির বেলুনআবার আগের্মতন ফোলাতে গেলে এবার দরকার সাম্রাজ্যবাদীদের নির্দেশেদেশের ব্যাঙ্ক, বীমা ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার বিলগ্নীকরণ। সাথে থাকবে পূজিবাদী সংস্কৃতির অবাধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা। এই উল্লাস তাই যতটা বিজয়ী রাজনৈতিক দলের মধ্যে, তার থেকে অনেক বেশী শিল্প-বানিজ্য মহলে। নব্য উদার অর্থনীতির একনিষ্ট ভক্ত মনমোহন সিং্যের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকারের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনায় দেশী-বিদেশী বৃহৎ পূঁজির প্রতিভূ এবং তাদের সমর্থক - মূখপাত্ররা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে। এই উচ্ছাস- উল্লাসের আগ্রাসী বহিপ্রকাশ ঘটে শেয়ার বাজারে। ফল ঘোষণার পর ১৮ ঐ মে প্রথম শেয়ার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঘটে যায় এক অভাবণীয় ও অভূতপূর্ব ঘটনা যা ভারতের শেয়ার বাজারের ইতিহাসে কোনোদিন ঘটেনি। মূহুর্তের মধ্যে বাজারে ঝড় তুলে মাত্র ৬০ সেকেণ্ড কেনাবেচায় ৫.৬ লক্ষ্য কোটি টাকা লাভ করে নেয় মুষ্টিমেয় কিছু ব্যাবসায়ী। বামপন্থীদের সমর্থন ছাড়াই দিল্লী তে সরকার হবে। উদার অর্থনৈতিক সংস্কারের ঢালাও রূপায়ণে আর কোনো বাধা থাকলো না। পূঁজিপতি-শিল্পপতি- ব্যাবসায়ীদের লাগামছাড়া মুনাফা অর্জনের পথে যাবতীয় বাধা- প্রতিবন্ধকতা ঊঠে যাবে। এমন বিদ্যুত বার্তা ছড়িয়ে পড়ে বিত্তবানেদের মধ্যে। মনোজগতে দেখা যায় মাত্রাতিরিক্ত উল্লাস। ভারতীয় বুর্জুয়া এবং তাদের সহযোগীদের ঘাড় থেকে যেন বামপন্থার ভূত সরে গেছে। বৃহৎ পূজিবাদী ব্যাবস্থা তাড়িত মিডিয়ায় তাই প্রত্যাশার পর প্রত্যাশার ফোয়ারা। এই সব কিছুরই বাংময় প্রতিচ্ছবি তাই ফুটে ওঠে শেয়ার বাজারে। আজ বামপন্থীরা নেই তাই পাঁচ বছর পর ডিপ ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে এসেছে বিলগ্নীকরণের অপচেষ্টা। পাঁচ বছর আগে কমরেড হারকিষেণ সিং সুর্জিৎ এবং এ বি বর্ধণ এই বিলগ্নীকরণ মন্ত্রক তুলে দেবার দাবি জানিয়েছিলেন। এ বি বর্ধন বলেছিলেন' ভাড় মে যায়ে উয়ো মন্ত্রক (বিলগ্নীকরণ) , আউর উনকা মন্ত্রী ( অরুণ শৌরি)'। বর্তমানে এখন জাতিয়ো বিনিয়োগ তহবিললে গুটিয়ে দেবার কথা বিবেচনা করছেন অর্থ মন্ত্রক। আর্থিক এবং রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার শীর্ষ কর্তারা এর মধ্যেই নেমে পডেছেন পথনিশানা তৈরির কাজে। জাতিয় বিনিয়োগ তহবিলকে গুটিয়ে দিয়ে বিলগ্নীকরণ মন্ত্রককে পুনরুজ্জিবন দিতে চাইছেন নতুন সরকার। 'সামাজিক খাতে খরচ' ও 'রুগ্ন রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থাগুলির পূনরুজ্জীবনের' নামে পাঁচ বছর আগে জাতিয় বিনিয়োগ তহবিল তৈরি করেছিম ইউ পি এ সরকার। মন্ত্রীসভা বৈঠকের শেষে সেসময়ে তথ্য ও সম্রচার মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডী জানিয়েছিলেন, 'তহবিলের বার্ষিক আয়ের ৭৫ % অর্থ খরচ করা হবে সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রকল্প রুপায়নে, আর মূলধণী বিনিয়গ খাতে বাকি পঁচিশ % অর্থ দেওয়া হবে লাভজনক ও পূনরুজ্জীবনযোগ্য রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থাগুলিকে'। কিন্ত এখন 'বিপুল ব্যায়বরাদ্দের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার শেয়ার বিক্রি থেকে সেই প্রাপ্ত অর্থ ব্যাবহারের' কথা বিবেচনা করছে সরকার। আর 'এজন্য কোনো আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই। বিলগ্নীকরণ থেকে আসা অর্থ ব্যাবহারের জন্যেশুধুমাত্র মন্ত্রিসভায় একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ঠ'। জানিয়েছেন সরকারের দুই পদস্থ কর্তা। এই মুহুর্তে তহবিলে রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৪৫ লক্ষ্য টাকা। অন্যদিকে বাজার বলছে, রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থাগুলিতে সরকারের শেয়ার ৫১ % পর্যন্ত রেখে বাকিটা বিক্রি করলেই আসবে বিপুল অঙ্কের অর্থ। তার নাকি হিসেব নিকেশ হয়ে গিয়েছে। হিসেব বলছে তালিকাভুক্তরাষ্টায়েত্ব সংস্থাগুলিতে সরকারের শেয়ারের পরিমাণ ৮ লক্ষ্য ৮০ হাজার কোটি টাকার উপরে। সরকার যদি এগুলির ৫০% রেখেও বাকিটা চলতি বাজার দরে বিক্রি করে, তবে সরকারের ঘরে আসবে অন্তত তিন লক্ষ্য কোটি টাকা। শুধু শীর্ষ দশটি রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার মাত্র ১০% শেয়ার বিক্রিই এনে দেবে ৮৫০০০ কোটি টাকা। জাতিয় বিনিয়োগ তহবিল এই মুহুর্তে রয়েছে বাজেটের বাইরে। পরিকাঠামো খাতে ব্যায়বরাদ্দ বাড়ানোর নামে সরকার এখন এই তহবিলকে বাজেটের মধ্যে আনতে চাইছে। বিশ্ব পূজিবাদের ডাকসাইটে মুখপাত্র ইকনমিস্টের পরামর্শ ' ভারতকে যদি ৯ % হারে বাড়তে হয়, তবে বছরে অন্তত ২৫ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে'। কিন্ত বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে গেলে আগামী তিন বছরে অন্তত ১০ লক্ষ্য কোটি টাকা দরকার। তাহলে কোথা থেকে আসবে এই বিপুল অঙ্কের অর্থ? ইকনমিস্ট সজাগ করে দিয়ে বলেছে ' নির্বাচনী অঙ্ক এখন (সরকারের) অনুকুলে হলেও, কোষাগারীয় পাঠিগনিত আদৌ তাদের রেহাই দেবে না। সরকারের বাজ়েট ঘাটতি (রাজ্যগুলিকে নিয়ে) এ বছর ছাপিয়ে যেতে পারে জি ডি পি র ১১ % কে। ' তাই একমাত্র পথ বিলগ্নীকরণ এবং খুব সম্ভত রাষ্ট্রায়েত্ত্ব বিদ্যুৎ সংস্থার দিয়েই নতুন সরকার শুরু করতে চলেছে তাদের মহতার্ঘ বিলগ্নীকরণের পদক্ষেপ। আগামী কয়েক বছরেই বিক্রি করা হবে লাভজনক রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থা এন টি পি সি, এন এইচ পি সি, পাওয়ার গ্রীডের মতন লোভনীয় শেয়ার। লক্ষ্য ৬০ হাজার কোটি টাকা তোলা। অন্তত যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বাধীন কমিটি, যাতে বিদ্যুৎ ও অর্থমন্ত্রকের অফিসার ও আমলারা রয়েছেন, তারা এমনই সুপারিশ করেছেন যে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন। চলতি পরিকল্পনাতেই এই সুপারিশ রুপায়িত হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী একাদশ যোজনায় লাভজনক রাষ্ট্রায়েত্ব বিদ্যুৎ সংস্থা এন টি পি সি, এন এইচ পি সি, রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কর্পরেশন (আর ই সি), পাওয়ার গ্রীড এবং এন ই ই পি সি ও কে বাজারে শেয়ার ছেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা তোলার জন্যে উৎসাহিত করা হবে। বাজার অর্থনীতির পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিল্লিও তাই পেট্রোল, ডিজেলের অপর ভর্তুকি তুলে দেওয়া র কথা বিবেচনা করা হয়েছে। ওয়াশিংটনের পছন্দের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মুরলি দেওরা ( ডব্লিঊ টি ও-র দোহা রাউন্ডের আলোচনায় অগ্রগতির প্রশ্নে মার্কিনীদের বিরাগভাজন কমলনাথ এবার তার আগের শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রক হারালেও, মনি শঙ্কর আয়ারকে সরিয়ে মালফোর্ডের পছন্দের মুরলি রয়ে গিয়েছেন তার নিজের মন্ত্রকেই)। এরমধ্যেই ঘোষনা করেছেন, জ্বালানি তেলের দামের ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার প্রস্তাব আগামী ছয় থেকে আট সপ্তেহের মধ্যেই মন্ত্রীসভায় পেশ করা হবে। পেট্রোল, ডিজেল ভরতুকি থাকার জন্যেই নাকি রাষ্ট্রায়েত্ব তেল সংস্থাগুলির লাভ কমছে। ফলে চাপ পড়ছে সরকারী কোষাগারে। আর এখন, এই সাহসী পদক্ষেপ নিতেও আর কোনো অসুবিধে নেই। কারণ মনমোহন সিং সরকার অবশেষে মুক্তএবং সগৌরবে সাম্রাজ্যবাদের দাসত্বে ব্রতি। বিকাশের নামে শিল্প পেতে চলেছে হায়ার এন্ড ফায়ার সহ আরো বেশী সময় কাজ করিয়ে নেবার অধিকার। শ্রম আইন পরিবর্তনের ব্লু প্রীন্ট তৈরি করছে ইউ পি এ সরকার। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বাজেট পেশ করার জন্যে যখন অর্থ মন্ত্রক ব্যাস্ত, তখন যোজনা কমিশন ব্যাস্ত শ্রম আইন সংস্কারে। পরিবর্তনের এই অংশে খতিয়ে দেখা হবে শিল্প বিরোধ আইন ১৯৪৭, ঠিকা শ্রমিক আইন ১৯৭০ এবং ট্রেড ইউনিয়ান আইন ১৯২৬। শ্রম আইন পরিবর্তন শিল্পের কাছে বহুদিনের দাবি। পূজিবাদী শিল্পব্যাবস্থা চায় অবাধ ছাঁটাইয়ের অধিকার, স্থায়ী কর্মিকে ঠিকা শ্রমিক হিসেবে ব্যাবহার, মজুত বেকার বাহিনী তৈরি করে, মজুরি কে আরো নামিয়ে এনে নিজেদের উদ্ধৃত মূল্য কে বজায় রাখা নাহলে এই প্রতিযোগি মুক্ত বাজার অর্থনীতি তে টেকা দায় হবে। পূজিবাদী শিল্প আরও চায় সাপ্তাহিক শ্রম ঘণ্টাকে ৪৮ ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে ৬০ ঘণ্টা করার। ফিকির বক্তব্য ' অধিকাংশ আইনই ৬০ বছরের পুরোনো হয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে শিল্পের পরিবর্তন হয়েছে। পরিষেবা ক্ষেত্রএখন জি ডি পি'র ৫৫ %। এই আইনগুলি অবশ্যই খতিয়ে দেখা উদিত। আজকেরচাহিদা মেটাতেতাদের আধুনিক চেহারা দেওয়া উচিত। ইকনমিস্ট একই সময়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে একটি কঠোর এবং রুঢ বাস্তব' প্রায় ২ কোটি ৭০ লক্ষ্য ভারতীয়ের জন্ম হবে এই বছরে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, এদের মধ্যে প্রায় প্রায় ২০ লক্ষ্য মারা যাবে পরের ভোটের আগেই। আর যারা বেঁচে যাবে, অপূষ্টির কারণে তাদের ৪০ % হবে শারীরিকভাবে বাড় বদ্ধ হাওয়ার শিকার। অধিকাংশ হয়তো স্কুলে ভর্তি হবে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। স্কুলে মাষ্টার পাবে না। পাঁচ বছর পর, এদের আর ৬০ % এরো কম ছোটো গল্প পড়তে পারবে, আর ৬০ % এরো বেশী সরল পাঠিগনিত করতে গিয়ে হোঁচট খাবে'।

উপরক্ত আলোচনায় বোঝা যায় যে বর্তমান জাতিয় ও আন্ত্ররজার্তিক রাজনৈতিক পরিস্থিতে লগ্নিপূঁজির স্বল্পমেয়াদী পূনুজ্জিবন ঘটানোর মরিয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতিয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবার শেয়ার বাজারের পূনরুজ্জিবন এবং সরকারের বিলগ্নিকরনের ভ্রান্ত নীতি গুলি শ্রমিক শ্রেনী এবং সর্বসাধারণের উপর নিয়ে আসবে এক কঠিন আর্থনৈতিক সঙ্কট। কৃষক আত্য-হত্যার মিছিল এর সংখ্যাএখন ক্রমবর্ধমান। বামপন্থীদের এই দুর্বিষহ হার এবং বর্তমান সংসদীয় গনতন্ত্রে মারাত্মক দূর্বলতা শ্রমিক শ্রেনীর সঙ্ঘঠিত ট্রেড ইউনিয়ানের অপর নিয়ে আসবে এক প্রচন্ড আঘাত। কমিউনিষ্ট পার্টি নেতৃত্বের কিছু মারাত্মক নীতি গত ভূল আজ এই সার্বিক কঠিন পরিস্থিতির জন্যে দায়ী। জাতিয় স্তরে ১৯৯১ সাল থেকে নব্য উদার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়ন এর পক্ষে দেশের সরকার যখন সায় দেয় এবং তৎপর ডাঙ্কেল চুক্তি রুপায়িত ডাব্লিউ টি ওর নির্দেশে গ্যাট চুক্তি সই এর বিরুদ্ধে তখন বামপন্থীরা সারা দেশ ব্যাপি ব্যাপক স্তরে আন্দোলন সংঘটিত করেন। দেশে বেশ কয়েকটি সফল সর্বাত্মক শিল্প ধর্মঘট এবং সাধারণ ধর্মঘট হয়। কিন্তু সরকারসেই নির্লজ্য নীতি থেকে কোনো ক্ষেত্রেই সরে দাঁডায় নি। গত ইউ পি এ সরকারকে বামপন্থীরা বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলো অ-সাম্রদায়িক সরকার গঠন এর লক্ষ্যে এবং সরকারকে দিয়ে কিছু জনমূখি আর্থণৈতিক নীতি রুপায়ণের লক্ষ্যে। রেগা আইনের ক্ষতিকারক দিক গুলির সংশোধন, বনাঞ্চল পাট্টা বিলির আইনকে বাধ্যতামূলক করা এবং তার প্রয়োজনীয় সংশোধন, সরকারের উপর চাপ দিয়ে সাচার প্রতিবেদন সংসদে পেশ করা এবং একশন প্ল্যান তৈরির দাবি, অসংঘটিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন প্রদানের আইন এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষা, কৃষক দের জন্যে কৃষি ঋণ মকুব এবং কৃষি পন্যের বিমা প্রনোয়ন ইত্যাদি প্রচুর দাবি দাওয়া ইতিবাচক দিক দিয়ে দেশের বামপন্থীরা অর্জন করতে পেরেছিলেন । ব্যাঙ্ক বিমা ক্ষেত্রে বিদেশী পূঁজি অনুপ্রবেশের বিরোধিতা (FDI)করে , পেনশন বিল আটকে রেখে, রাষ্ট্রায়েত্ব সংস্থার বিলগ্নীকরন আটকে রেখে , পেনশন ফাণ্ড রেগুলেটরি কমিটির প্রস্তাবিত পেনশন বিল নীতিগতভাবে বিরোধিতা করেবামপন্থীরা সারা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্য হয়েছিলোঠিকই । এই লড়াই পরমানু চুক্তি এবং হাইড আইনের বিরোধিতা নৈতিক ভাব ঠিক ছিলো, কিন্তু তাই বলে এই বিরোধিতার করতে গিয়ে কিছুতেই সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার উচিত ছিলো না। বিগত ডাঙ্কেল চুক্তির সাথে বর্তমান হাইড আইন মার্কিন সরকারের সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা বিস্তারের সহায়ক এবং এটা বোঝা উচিত ছিলো ইতিহাস থেকে যে সরকার এই চুক্তির বিরোধে কখনই যাবে বাবরং বামপন্থীদের উচিত ছিলোসরকারকে চাপে রেখে এই বিশ্ব আর্থনৈতিক মন্দ কবলিত লক্ষ্য কবলিত দেশের মানুষ কে কিছু আপৎকালীন সহায়তা (immediate relief) করতে বাধ্য করা উচিত ছিলো। রাষ্ট্রীয় রুগ্ন এবং বেসরকারী কলকারখানা গুলির পুনরুজ্জিবনের দাবীকে আরো জোরদার করে সরকারকে বাধ্য করা উচিত ছিলো এই বিশয়ে কিছু ইতিবাচক ভুমিকা পালন করার ক্ষেত্রে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ১৮৯৪ এবং ১৯৪৮ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনের অ-বৈজ্ঞ্যানিক এবং নেতিবাচক দিক গুলি সংশোধনের জন্যে সংসদের ভেতরে ও বাইরে দেশব্যাপি আন্দোলন করা দরকার ছিলো। সরকারের কাছে দাবী করা উচিত ছিলো জমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে দেশব্যাপি জমির চরিত্রে অপর বৈজ্ঞ্যানিক সম্মতক্ষতিপূরণের প্যাকেজ। এবং এই আন্দোলন সংঘটিত করতে হতো জমি দাতাদের এবং কৃষকদের নিয়ে। শুধু সেজ আইনের জমির চরিত্র অনুযায়ী জমির উপরসীমা নির্ধারণের দাবির ফলের কৃতিত্ব নিয়ে সন্তুষ্ঠি যথেষ্ট নয়। প্রথম থেকেই (১৯৯৫ সাল)তৃন-স্তরে থেকে কৃষক-জমিদাতাদের কাছে শিল্পায়ন প্রকৃয়ার যথার্তা বোঝাবার পাশাপাশি সরকারের কাছে জমি দাতাদের এবং কৃষকদের পক্ষে ক্ষতিপূরণ প্যাকেজের জন্যে জোর সওয়াল করা এবং আন্দোলন সংঘটিত করা অত্যান্ত দরকার ছিলো। এইস্তরে পার্টির এবং তার সংগঠনেরএকটি ব্যাপক দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে জমি দাতা এবং কৃষকদের ভ্রান্ত করতে ঢুকে পড়েছে কিছু প্রতিক্ক্রিয়াশীল মেকী কৃষকদরদী। এর সাথে বামপন্থীদের দাবী করা উচিত ছিলো ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পের পূনরুজ্জিবনের জন্যে। বিশ্বায়নের ফলে আজ এই ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্প মারাত্মক ভাবে জ্বরাগ্রস্ত। এবং এদের পূনরুজ্জিবনের দাবিতে ট্রেড ইউনিয়ানের মাধমে শাখা স্তর থেকে জোরালো সাওয়াল এবং আন্দোলন সংঘটিত করা একান্তকাম্য ছিলো। সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার এর প্রধান কারণ শুধু পরমানু চুক্তি সইএর সাথে সাথে বাকি দাবি গুলি যদি দেশব্যাপি আন্দোলনের মধ্যে থাকতো তাহলে হয়তো বামপন্থীদের এই নিদারূণ দশা হত না। হয়তো পরিমানু চুক্তি বিষয়ে বামপন্থীদের দাবী না মানলেও অন্যান্য কিছু আশু দাবী গুলি সরকারের কাছ থেকে আদায় করা যেত। কংগ্রেসী নেতৃত্বের শ্রেনী চরিত্র বিশ্লেষণ করাতেও এক মারাত্মক ভূল হয়েছে। পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শুধু পরমানু চুক্তির বিরুদ্ধে জোর সাওয়াল করে সমর্থণ তুলে নিয়ে পার্টি ধরাশায়ী হলো। পার্টি নেতৃত্ব তিরে এসে নৌকা ডুবিয়ে ফেললেন এবং গত পাঁচ বছরে বাম্পন্থী দলগুলির আন্দোলনের সব কৃতিত্ব বিরোধী দল গুলো নিজের কৃতিত্ব হিসেবে প্রচার করে ব্যাপক জয়লাভ করলো। তথাকথিত তৃতীয় ফ্রণ্ট গড়ার ক্ষেত্রে , অ-কংগ্রেস এবং অ- বি জ়ে পি দলগুলির নেতৃবৃন্দের শ্রেনী চরিত্র বিশ্লেষণের ব্যাপক ভূল ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয়। মাওবাদীদের মতন সি পি আই এম পার্টির কিছু চিন্তাশীল নেতা- নেতৃই আজ মাও এর রেড বুককে যদি অবজেক্টিভ গ্যানেপ্রত্যক্ষ্য করেন তাহলে সেই বিশ্লেষণ কে বলে যান্ত্রীক বস্তুবাদ যার কোনো বাস্তব তাৎপর্য্য নেই। পার্টি নেতৃত্বে এই প্রস্তাবিত তৃত্বিয় ফ্রণ্ট গঠনে এতো তাড়াহুড়ো করলেন যে এই ফাকে এই তৃত্বিয় জোটে ঢুকে পড়লো কিছু সুবিধেবাদী, বিচ্ছিন্নতাকামী দল । এই অ-বাম দলগুলির কিচ্ছু নেতা-নেতৃইর সারা দেশের কাছে আগের থেকেই একটি অস্বচ্ছ ভাব-মূর্তি ছিলো এবং আছে। তাই এই তৃত্বিয় জোট গড়ার তাড়াহুড়োতে এই অ-বাম দলগুলির নেতা-নেতৃইর শ্রেনী চরিত্র এবং অবস্থান বিচার এবং বিশ্লেষনে এক বিরাট ভুল হয় । তাছাড়া রাজ্যস্তরে পার্টি কর্মী ও সদস্যদের আরো নম্র হতে হবে, সিটু এবং বামপন্থী দের অন্যান্য সদস্যদের কিছু জায়গায় জঙ্গিপনা ত্যাগ করা দরকার। এই ক্ষেত্রে প্রত্যাক জেলা কমিটিতে স্টাডি সেল খোলা প্রয়োজন, যেখানে ট্রেড ইউনিয়ন এবং ছাত্র-প্রগতিশীল নারী- যুব সংগঠন সদস্যদের ক্লাস নেওয়া, ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, সমাজপরিবর্তনের মার্ক্সিয় সুত্র বোঝা প্রয়োজন। জেলা কমিটির কোনো সদস্য__ জেলা সম্পাদকের তত্যাবধানেসেই ক্লাস এবং স্টাডি সেল পরিচালনা করতে পারেন। প্রত্যেকটি জেলা পার্টি অফিস গুলোর গ্রন্থাগারগুলিতে মার্ক্সবাদী সাহিত্যের, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পার্টির ভূমিকা, পার্টি কংগ্রেসগুলির দলিল ইত্যাদি বই তে সমৃদ্ধ হাওয়া প্রয়োজন। পার্টির অভ্যন্তরে একটা ভিজিলেন্স সেল থাকা দরকার। পার্টির নিজস্ব ভিজিলেন্স সেলযা পার্টি সদস্যদের সম্পত্তির হিসেব ঠিক ঠাক ভাবে রাখবে এবংদরকার মতন পার্টির সভ্যদের কাছ থেকে সম্পত্তির হিসেব চাইবেনিরপেক্ষভাবে। পার্টি কর্মিদের উপর প্রায়সই অত্যাচার, খুন জখম ইত্যাদি চলছে। মোর্চা, ঝাড়খন্ডি , তৃনমূলি এবং মাওবাদীদের হাতে। তাদের রক্ষা করা এবং পার্টি সদস্যদের নিজেদের আত্যরক্ষা এবং প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।সবকিছু জনগনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। তাই শাখা স্তর থেকে আত্যরক্ষার জন্যে পার্টির চিন্তা-ভাবনা করা একান্ত প্রয়োজন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং তফশিলী জাতি এবং উপজাতি উন্নয়নের বামফ্রন্টের উদ্যোগ ও সাফল্য।তাদের কাছে তথ্য দিয়ে তুলে ধরা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্টির রাজ্যস্তরের নেতৃবৃন্দের উচিত যে সর্বসময়ে আলীমূদ্দিন ষ্ট্রীটে বসে, মিটিং না করে, পালা করে নন্দিগ্রাম, লালগড়, রামগড়, সীজুয়া এবং কাটাপাহাড়ী মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্ছল গুলোতেনিজেদের গিয়ে অত্যাচারিত, নিগৃহীত কমরেড দের পাশে দাঁড়ানো।

এই সব উপোরক্ত ভূল-ভ্রান্তি, দোষ-ত্রুটি থেকে কমিউনিষ্টদের শিক্ষা নিতে হবে এবং সেগুলি প্রত্যাক্ষান করার সংকল্প নিয়ে পার্টিকে এগোতে হবে।এগোবার সময়, ভূল-ভ্রান্তি নিশ্চয় হয় এবং হাওয়াই স্বাবাভিক কারণ কমিউনিস্টরা অবজেক্টিভ গ্যান বা দর্শনে বিশ্বাসী নয়, এগতে হয়, ইতিহাস এর প্রেক্ষাপট বিচার করে এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে তাই ভূল ভ্রান্তি থেকে কমিউনিস্টরা শিক্ষা লাভ করে এগোয় এবং সর্বসমক্ষে তা স্বীকার করে সতভাবেই। মানুষের হিতে পরিবর্তনের তত্ব্য এবং তার দর্শন কমিউস্ট ছাড়া কেই সেভাবে ব্যাক্ষ্যা করতে পারে না। সমাজবিজ্ঞ্যানের সাথে আঙ্গাংগিভাবে জড়িত থাকে অর্থনীতি, রাজনীতি , দর্শন এবং প্রকৃতি বিজ্ঞ্যান যার সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িয়ে থাকে সমাজবিজ্ঞ্যান এবং সাধারণ বিজ্ঞ্যান। সমাজপরিবর্তনের তত্ব্য কে বৈজ্ঞ্যানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করাই আবশ্যিক এবং কমিউনিষ্ট দর্শনের মূল সুত্র। এই বিশ্বব্রম্মহান্ডে সবই পরিবর্তনশীল, বৃহৎ নেবুলা থেকে সুক্ষ্য কোষ , প্রতিটি অনু পরমানুর চারিত্রিক পরিবর্তন, অবস্থানগত পরিবর্তন, মানুষের জৈবিক দেহে নানান রাসায়নিক পরিবর্তন, অবস্থান বা space এর পরিবর্তন, প্রানী দেহে নানান জৈবিক ও অজৈবিক পরিবর্তন, বস্তুর গতির পরিবর্তন, এই বিশ্বে তাই সব বস্তুই পরিবর্তন শীল এবং স্বাভাবিক ভাবেই সমাজ ও পরিবর্তনশীল কারণ সমাজ প্রকৃতির বাইরে নয়। মানুষ ও পরিবর্তনশীল কারণ মানুষ ও প্রকৃতির অংশ। মানুষের দুখ্য, অর্থনৈতিক সঙ্কট, দূর্দশা তাই প্রাকৃতিক দূষনের অন্তর্ভুক্ত। কিন্ত সব কিছুর পরিবর্তনকে নানা ভাবে শ্রেনীভুক্ত করা যায়, যেমন সৃষ্ঠিমূলক এবং ধবংস্বাত্বক, অবশ্য দুটোই চারিত্রিক পরিবর্তন। একটি অবস্থা থেকে আরেকটি অবস্থায় পরিবর্তন। পদার্থবিদ্যা যেমন বলে, তরল থেকে বাস্প বা তরল থেকে সলিড বা ঘন। মানুষ বেঁচে থাকা কালিন তার মধ্যে নানান জৈব বা অজৈব পরিবর্তন ঘটে। সাথে ঘটে চিন্তা -চেতনার পরিবর্তন। প্রত্যক্ষ্য অভিজ্ঞ্যতা থেকে। এইভাবে মানুষের একদিন মৃত্যু হয়। তার বস্তুগত শরীর এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থান্থেকে রুপান্তর হয়। যাকে বলে আঙ্গিক পরিবর্তন। রসায়ণ বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যায় আমরা জানতে পারি বস্তুরনানান রকম আভ্যন্তরীন এবং বহিরাগত পরিবর্তনের প্রকার এবং পরিবর্তনের বৈজ্ঞ্যানিক কারণ। বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে বস্তুটি সেই বলের দিক নির্দেশে চালিত হয়, কিন্ত সেই দিকে চালিত হবার পথে তাকে উলটো দিকে ফ্রীক্সানাল বল বাধা সৃষ্ঠি করে। বস্তুর অপর বলের প্রয়োগের মান যেহেতু সেই উলটো দিকে বাঁধা অতিক্ক্রম করতে পারে, সেহেতু বস্তুটির অবস্থান গত পরিবর্তন আসে। ঠিক সেই ভাবে বস্তুটির আভ্যন্তরীণরাসায়নিক পরিবর্তনে সেরকম বাধাও অতিক্রম করতে হয়। ঠিক এইরকমের দৃষ্ঠিভঙ্গিতে দেখলে বোঝা যায় আমাদের সমাজব্যাবস্থার ভারসাম্য নির্ভর করে আর্থনৈতিক দিয়ে গঠিত নানান শ্রেনীর আভ্যন্ত্রীন সমঝোতা এবং দ্বন্দের মাধ্যমে। যে শ্রেনীর শক্তি বা আর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থানগত শক্তি বেশী, সেই দিকে সমাজপরিবর্তনের চেষ্ঠা চালানো হয় তাদের বা তাদের শ্রেনী ভুক্ত মানুষের কল্যাণে এবং স্বার্থে। কিন্ত এই পরিবর্তনের পথে শক্তিশালী শ্রেনীর সাথে অন্যান্য শ্রেনীর দ্বন্দে বা বোঝাপড়ায় চলতে হয়। নতুন সমাজব্যবস্থা গঠন হয় বা সমাজব্যাবস্থা কে সেই নিয়মে চালিত করার প্রয়াস থাকে যেখানে শক্তিশালী শ্রেনী তাদের শক্তি বা সম্পত্তি বিস্তারের এর রাস্তা পরিস্কার রাখতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট পদেক্ষেপ তাদের শ্রেনী স্বার্থ বজায় রাখতে পারে। নবগঠিত সমাজব্যাবস্থা গঠিত হয় নবপগঠিত শ্রেনীর আপেক্ষিক ভারসাম্যে। কিন্ত প্রাকৃতিক অবস্থায়, বৈজ্ঞ্যানিক দৃষ্ঠিভঙ্গিতে সবসময় একটা পরিবর্তন আসে দ্বন্দের মাধ্যম দিয়ে। এবং সেই পরিবর্তন নিয়ে আসে একটি ধংস্বাত্বক এবং সৃজনশীল পরিবর্তন একই সাথে। পুরোনো চিন্তা- চেতনার দ্বারা নবগঠিত চিন্তার বিকাশ আসে পুরোনো চিন্তা-চেতনার বিনাশের মাধ্যম দিয়ে। নাশকের নাশ এর মাধ্যমে। এই পরিবর্তনের এক দিকে থাকে নতুন চিন্তা ভাবনার উদয়, নতুন জীবন বা নতুন সমাজব্যাবস্থা এবং তা আসে পুরোনো এককালীন সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার, আদর্শের ধ্বংসের মাধ্যমে। পরিবর্তন তাই একই সাথে ধ্বংসাত্বক এবং সৃষ্ঠিমূলক বলা যায়। আমাদের দেখা উচিত যে সমাজপরিবর্তন বা নবগঠিতরাজনৈতিক বা আর্থনৈতিক ব্যাবস্থা কোন শ্রেনীর পক্ষ্যে সৃজনশীল এবং কোন শ্রেনীর পক্ষে ক্ষতিকারক বা ধ্বংস্বাত্মক। আমাদের মনে থাকা উচিত দৃঢ প্রত্যয় এই বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের। আমাদের এগোতে হবে, আরো এগতে হবে, সমাজের নির্যাতিত, দুর্বল শ্রেনীগুলির স্বার্থে। মনে রাখতে হবে যে এ দেশ শুধু বৃহৎ মানুষখেকো কর্পরেট হাউস পরিবার গুলির নয়, এদেশ রাস্তার মোড়ে দাডিয়ে থাকা উদবাস্তু কলোনির উলঙ্গ শিশুগুলির ও, আমাদের পাড়ার স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো রিক্সাওয়ালাদেরো, ভ্যানচালকদের ও, কারখানার শ্রমিক, কয়লা খনি শ্রমিক এবং ক্ষেতমজুরদেও। এদেশ সবার। এ দেশ তোমার , এদেশ আমার।